2

প্রচ্ছদ নিবন্ধ - প্রদোষ ভট্টাচার্য্য

Posted in






গানে কোনো পূর্বসুরীর গায়কীর প্রভাব নেই, রবীন্দ্রসঙ্গীতের ভাবমাধুর্যে সরস অথচ স্বকীয় ব্যক্তিত্বের দীপ্তিতে উজ্জ্বল – এমন কোনো শিল্পীর গানের উদাহরণ দিতে হলে সুমিত্রা সেনের হাসি-খুশী মাখা নম্র রূপটিই মনে ভাসে। অনাড়ম্বর স্বভাবের ছায়া পড়ে ওঁর গানে। তাই সে গানে শিল্পীর বক্তব্যও স্বচ্ছ হয়ে ওঠে। সকল সঙ্গীত অল্পবিস্তর জানা থাকলেও রবীন্দ্রসঙ্গীতেই যেন ওঁর মনটা খুঁজে পায় তার এক্সপ্রেসন।

(সন্ধ্যা সেন, সুরের আগুন, ২য় খণ্ড পৃঃ ১৯৯)

প্রথম বাক্যেই শিল্পীর অনন্যতা ধরে ফেলেছেন সন্ধ্যা সেন। সত্যিই তো, সুমিত্রার সমসাময়িক মহিলা রবীন্দ্রসঙ্গীতশিল্পীদের প্রায় প্রত্যেকেই দুটি ধারার একটির অনুগামী। যেমন, পূর্বা দামের গান শুনলে মনে পড়বে সুচিত্রা মিত্রের কথা, নীলিমা সেন মনে করাবেন কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। কিন্তু সুমিত্রাকে এই দুই শিবিরের কোনটিতেই ফেলা যায় কি?

সম্ভবত পঞ্চাশের দশকে সুমিত্রা সেনের সঙ্গীতজীবন শুরু হয়। প্রথম রেকর্ড ছিল দু’খানি নজরুলগীতির – ‘বেদনার বেদীতলে’ ও ‘গোঠের রাখাল’ –তারপর কিছু পল্লীগীতি। প্রথম রবীন্দ্রসঙ্গীতের ডিস্ক ‘ওগো সাঁওতালী ছেলে’ এবং ‘দিনের পরে দিন যে গেল’। রবীন্দ্রশতবর্ষে তিনি রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী হিসেবে এতটাই প্রতিষ্ঠিত যে তাঁর কণ্ঠে আলাদা ৭৮ গতির রেকর্ড বেরোয় – ‘মেঘ ছায়ে সজল বায়ে’ আর ‘আমার সকল দুখের প্রদীপ’। সত্তরের দশকে কিছু গান তিনি এমন ভাবে তাঁর আপন করে নেন যে অন্য প্রথিতযশা শিল্পী সে গান গাইলেও সাধারণ শ্রোতার কাছে তা তেমন গ্রহণযোগ্যতা পেতে ব্যর্থ হয়। উদাহরণ ১৯৭৩ সালে তরুণ মজুমদার পরিচালিত শ্রীমান পৃথ্বীরাজ ছবিতে লতা মঙ্গেশকরের কণ্ঠে ‘সখী, ভাবনা কাহারে বলে’।

ত্রিবেণী গোষ্ঠী প্রতিষ্ঠা করে সুমিত্রা সেন তাঁর রবীন্দ্রসঙ্গীত-শিক্ষিকা সত্তার ছাপও রেখে গেছেন, বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষামূলক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। সন্ধ্যা সেন লিপিবদ্ধ করেছেন ‘সুরের আকাশ’, ‘মেঘের পরে মেঘ’, ‘দিনদিনান্তের গান’ প্রমুখ নৃত্যনাট্যের কথা, যেখানে ‘পাশাপাশি উচ্চাঙ্গ ও রবীন্দ্রসঙ্গীত পরিবেশন করে একটির ওপর আর একটির প্রভাব’ দেখানো হয়েছে। সুমিত্রা সেন বলেছেন এই অনুষ্ঠানগুলি ছিল কিছু শাস্ত্রীয় সঙ্গীত বিশারদের রবীন্দ্রসঙ্গীতের প্রতি অবজ্ঞার জবাব। সুমিত্রার ভাষায়, ‘রবীন্দ্রসঙ্গীত কনভেনশন-বর্জিত উদ্ভট কোনো বস্তু নয় অথবা শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের সঙ্গে এর দূরত্বের সম্পর্কও নয়।’ (সন্ধ্যা সেন, পৃঃ ২০১)

এবার বলব এই শিল্পী-শিক্ষিকার সঙ্গে আমার নিজের যোগাযোগের কথা।

গান শুনতে আর গাইতে ভালোবাসতাম ছোটবেলা থেকেই, এ কথা আমাকে নিয়ে মা-বাবার স্মৃতিচারণায় লেখা আছে। ১৯৭২ সালে আমার ভাগ্যে দেবদর্শন ঘটলো যুগপৎ দেশের স্বাধীনতার রজত জয়ন্তী এবং ঋষি অরবিন্দের জন্মশতবার্ষিকী উৎসব উপলক্ষে কলকাতার শ্রীঅরবিন্দ ভবনে অনুষ্ঠিত সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের সময়। এক সন্ধ্যায় সঙ্গীত পরিবেশন করতে এলেন সুচিত্রা মিত্রের পর হেমন্ত মুখোপাধ্যায়।

সে সময়ে বাবা কর্মরত ছিলেন খিদিরপুরে অবস্থিত Voltas সংস্থায়। আমার সঙ্গীতপ্রীতি দেখে তিনি গানের জন্য গৃহশিক্ষক নিযুক্ত করলেন বেতারে যুববাণী কেন্দ্রের শিল্পী জগৎবন্ধু মোদককে। ভাগ্য সুপ্রসন্নঃ গুরু ছিলেন শিষ্যের মতোই হেমন্তভক্ত!

এই সময়ে বাবার এক অবাঙালী সহকর্মী ঘটনাচক্রে দমদমে গ্রামোফোন কোম্পানির গিয়ে শুনে এলেন, তখন পশ্চিমবঙ্গে নিত্য আপদ, বিদ্যুৎ বিভ্রাটের অন্ধকারে, স্টুডিওতে এক সুমধুর মহিলাকণ্ঠ; কণ্ঠের অধিকারিণী শ্রীমতী সুমিত্রা সেন।

১৯৭৩-এর গোড়ায় রবীন্দ্র সদনে এক প্রভাতে গেলাম সঙ্গীতানুষ্ঠানে, সঙ্গে দিল্লী থেকে আগত আমার এক হেমন্তভক্ত কাকীমা। শিল্পীরা ছিলেনঃ প্রথমে সুমিত্রা সেন, তারপর অনুপ ঘোষাল, এবং হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। শ্রীমতী সেন শুরু করলেন ‘তোমার দ্বারে কেন আসি’ দিয়ে। এরপরে দেখেছি, একাধিক রবীন্দ্রসঙ্গীতানুষ্ঠানে তিনি ঐ গানটি দিয়েই আরম্ভ করতেন।


হেমন্তভক্ত হিসেবে তখন বাড়ীতে বেতার জগৎ পত্রিকা আনিয়ে আমি নিয়মিত গান শুনতে ব্যস্ত। রবীন্দ্রজয়ন্তীর ধারেকাছে শিল্পীরা তখন বেতারে গাইতেন তাঁদের প্রকাশিত বা প্রকাশিতব্য গান। এই উপলক্ষেই একদিন শুনলাম সুমিত্রা সেনের কণ্ঠে মুগ্ধ করা এই গানটিঃ ‘আর নাইরে বেলা, নামল ছায়া ধরণীতে’।


অনেক পরে, আশির দশকের গোড়ায় এই একই গান শুনব আমার ঈশ্বরের কণ্ঠে, কিন্তু, নির্দ্বিধায় বলছি, যিনি কিছুদিন পরে আমার সঙ্গীতশিক্ষা-জীবনে সরস্বতী-রূপে আবির্ভূতা হবেন, তাঁর উপস্থাপনার পাশে স্বয়ং ঈশ্বরও ম্লান! নিজেরাই শুনে বিচার করুনঃ


১৯৭৩ হলো সেই বছর যে বছরে আমি জীবনের প্রথম ‘পাবলিক’ পরীক্ষা দেব – আই-এস-সি। অতএব সঙ্গীতশিক্ষায় সাময়িক ছেদ পড়লো। নভেম্বরে পরীক্ষা শেষ হবার পর ডিসেম্বর/জানুয়ারিতে গেলাম চন্দননগর বেড়াতে, কারণ সেখানে আমার দাদা মহকুমা শাসক বা এস-ডি-ও পদে নিযুক্ত। সেখানে তখন ফরাসী নাট্যকার মলিয়েরের বিভিন্ন নাটকের বাংলা রূপান্তর অভিনীত হচ্ছে। এসবের মাঝখানে একদিন দেখি বাংলা কাগজে বিজ্ঞাপনঃ কলকাতার রবীন্দ্র সদনে শ্যামা নৃত্যনাট্য, বড়-বড় করে লেখা, কণ্ঠে হেমন্ত মুখোঃ। কিন্তু, আমার কাছে বাড়তি প্রাপ্তি শ্যামার গানে সুমিত্রা সেন! সহৃদয় দাদা কলকাতায় ফেরার ব্যবস্থা করে দিলেন। অনুষ্ঠান চলাকালীন উইংসের ধারে গায়ক-গায়িকাদের মধ্যে দৃশ্যমান ছিলেন একমাত্র হেমন্ত, কিন্তু ‘প্রেমের জোয়ারে’ সুমিত্রার সঙ্গে দ্বৈত গাইবার সময় শেষে তিনি হঠাৎ ‘ভাসাবে দোঁহারে’ গেয়েই ছেড়ে দিলেন, সুমিত্রার একক কণ্ঠে শোনা গেল ‘বাঁধন খুলে দাও, দাও দাও দাও’!

আমি স্থির করেছিলাম, অনুষ্ঠানের শেষে সুমিত্রাদির সঙ্গে দেখা করব। স্টেজের পেছনে গিয়ে তাঁর অটোগ্রাফ নিলাম, আর ভয়ে-ভয়ে বললাম, “আপনার কাছে গান শিখতে চাই।” তিনি বললেন, “বেশ তো, ফোন ক’রো।” এখন লুপ্ত, কিন্তু সে সময়ে নতুন কারোর সঙ্গে যোগাযোগ করার মুখ্য উপায়, টেলিফোন ডাইরেক্টরি, খুলে দেখলাম, ‘সুমিত্রা সেন’ নামে দু’জন আছেন। গায়িকার নিবাস রাইফেল রেঞ্জ রোডে, তাঁর কাছ থেকে জেনে রেখেছিলাম। ফোন ধরলেন তাঁর স্বামী। আমার ইচ্ছে ছিল ওঁর নিজস্ব সংস্থা ত্রিবেণীতে যোগ দেবার, কিন্তু তার ক্লাস হতো উত্তর কলকাতায় বাদুড়বাগান লেনে। আমাদের মধ্য কলকাতার রাসেল স্ট্রীট নিবাস থেকে রাসবিহারী অ্যাভেনিউয়ের বাণীচক্রই সুবিধের।

অবশেষে এলো কাঙ্খিত দিন! দেশপ্রিয় পার্ক সংলগ্ন প্রিয়া সিনেমার পাশে মূল বাণীচক্রে নয়, সুমিত্রাদি বলে দিয়েছিলেন যে তিনি ক্লাস নেন গড়িয়াহাটের কাছে রমণী চ্যাটার্জী রোডের শাখায়। একটি ঘরে তবলচি রথীন নাথকে নিয়ে হারমোনিয়াম সহ বসেছিলেন তিনি। বললেন, ‘দেখি কেমন গাইতে পার।” কিছুতেই মনে করতে পারছি না কোন গানটি গেয়েছিলাম। শুনে সুমিত্রাদি শেখাতে রাজী হলেন বটে, কিন্তু একটু মুখ নীচু করে বললেন, “তুমি তো হেমন্ত মুখোপাধ্যায়কে নকল করছো, নিজের মতো করে কিন্তু গাইতে হবে!” এই হেমন্ত-অনুকরণের একটি মুখ্য (বদ) বৈশিষ্ট্য হলো মুখ যথেষ্ট হাঁ না করা – যে দোষ হেমন্তর নিজের গায়কীতে একেবারেই নেই! এরপর থেকেই গান শেখানোর সময় যখন সুমিত্রাদির গাওয়া অনুসরণ করে গাইছি, উনি মাঝে-মাঝেই আমার মুখের সামনে হাত এনে ফাঁক করে ইঙ্গিত করতেন যে দাঁত চেপে গাওয়া হচ্ছে।

সুমিত্রাদির কাছে শেখা প্রথম গান আমারই নির্বাচিত (এবং হেমন্তকণ্ঠে শোনা) ‘আমার আর হবে না দেরি’। মনে আছে, বাড়ীতে আমাদের অখণ্ড গীতবিতান ছিল না, আর মা’র কেনা তিন খণ্ডের প্রথম খণ্ডে গানের শেষ লাইন ছাপা ছিলঃ ‘এখন আর হবে না দেরি’! পরের দিন আমি সেইমতো গাইতেই সুমিত্রাদি ভুরু কুঁচকে বললেন, “ ‘এখন’ এলো কোত্থেকে? সব সময় ‘আমার’ গাইবে।” অখণ্ড গীতবিতান এবং স্বরবিতান-এও তাইই আছে!

ক্লাস হতো সম্ভবত প্রতি শনিবার। এক শনিবার আসার আগেই আমার সর্দি হয়ে গলা বসে গেল। সেই অবস্থাতেই গুরু-মা সমীপে হাজির হলাম। আজ কি আর কোন গান তুলতে পারব? তবুও আরাধ্যার সঙ্গে তো খানিকটা সময় কাটবে! ঘাবড়ে গেলাম দেখে যে সুমিত্রাদি বললেন, “আজ আবার একটা গান তোলাব!” আমি কোনরকমে চিঁচিঁ করে বললাম, “কিন্তু গলা যে উঠবে না!” তা সত্বেও দিদি গান ধরলেন, ‘লুকালে ব’লেই খুঁজে বাহির করা’। কি নিখুঁত নির্বাচন! আমার অবস্থা দেখেই বুঝে নিয়েছিলেন অন্তরা আর আভোগে ঠিক কতটা গলা উঠবে!

এরপর, তাঁর নিজের পছন্দের গান বলে শিখিয়েছিলেন ‘যখন তুমি বাঁধছিলে তার, সে যে বিষম ব্যথা’। বাণীচক্রের বাৎসরিক অনুষ্ঠানে একক গাইবার জন্য নির্দিষ্ট করে দিয়েছিলেন এই গানটি আর আমার নিজের পছন্দ করে শেখা ‘বাহিরে ভুল হানবে যখন, অন্তরে ভুল ভাঙবে কি’।

এবার দিদি সুযোগ করে দিলেন রবীন্দ্র সদনে ত্রিবেণীর অনুষ্ঠানে সমবেত কণ্ঠে গাইবার। অনুষ্ঠানটির নাম ছিল ‘ওগো বিদেশিনী’। রবীন্দ্রনাথের যে সব গানে বিদেশী প্রভাব আছে বা সরাসরি বিদেশী সুর ব্যবহার করা হয়েছে, সেগুলি নিয়ে গীতি আলেখ্য। ভাষ্যপাঠ করেছিলেন প্রদীপ ঘোষ, আর একক কণ্ঠে ছিলেন দেবব্রত বিশ্বাস, চিন্ময় চট্টোপাধ্যায় আর সুমিত্রাদি স্বয়ং। ত্রিবেণী শিল্পীগোষ্ঠীর সম্ভবত দু’জনের একক কণ্ঠ শোনা গিয়েছিলঃ দিদির বড় মেয়ে ইন্দ্রাণী সেন এবং শক্তিব্রত দাসের।

পরের অনুষ্ঠান ছিল তাসের দেশ নৃত্যনাট্য। রাজকুমারের ভূমিকায় সাধন গুহ, কণ্ঠে দেবব্রত বিশ্বাস ও অশোকতরু বন্দোপাধ্যায়। এছাড়া অন্যান্য চরিত্রে নৃত্যে ছিলেন পলি গুহ, এবং কণ্ঠে সুমিত্রাদি, শৈলেন মুখোপাধ্যায়, ইন্দ্রাণী সেন, প্রভাত ভঞ্জ, এবং শক্তিব্রত দাস। সমবেত কণ্ঠে বাকী আমরা।

এছাড়া, সুমিত্রাদির পরিচালনায় আকাশবাণীতে ত্রিবেণীর পক্ষ থেকে রবীন্দ্রসঙ্গীত পরিবেশনায় অংশ নিয়েছি অন্তত দু’বার। এই সুযোগে বেশ কিছু নতুন গান তোলা হয়ে গিয়েছিলঃ ‘ডাকিল মোরে জাগার সাথী’, ‘অকারণে অকালে মোর পড়ল যখন ডাক’, ‘ডাকব না, ডাকব না, অমন করে বাইরে থেকে’, ‘আজি যত তারা তব আকাশে’ ইত্যাদি।

গান শেখার সময় কমে আসছিল। এবার কলেজে ভর্তি হবার পালা। সুমিত্রাদিকে বিদায় সম্ভাষণ করে ওঁর কাছে শেষ গান নিজেই নির্বাচন করে শিখেছিলামঃ

পথিক আমি এসেছিলেম তোমার বকুলতলে।
পথ আমারে ডাক দিয়েছে, এখন যাব চলে।
ভরা যূথীর পাতায় ঢেকে আমার বেদন গেলেম রেখে –
কোন ফাগুনে মিলবে সে যে তোমার বেদনাতে!

কিছুদিন আগে সুরলোকে পাড়ি দিয়েছেন আমার জীবনে সরস্বতীর রূপধারিণী প্রথম গুরু-মা। ঠিক এর পরেই কলেজ জীবনে পাব দ্বিতীয় সরস্বতীকেঃ অধ্যাপিকা কাজল সেনগুপ্ত। সে আরেক ইতিহাস।

সবশেষে একটি আবেদন রাখব। সুমিত্রা সেন প্রধানত রবীন্দ্রসঙ্গীতের শিল্পী এবং শিক্ষিকা হিসেবেই প্রসিদ্ধ হয়েছিলেন এবং খ্যাত আছেন। কিন্তু, রবীন্দ্রসঙ্গীত ছাড়াও তিনি অন্য অনেকরকম গান গেয়েছেন। এই প্রতিবেদনেই উল্লেখ আছে যে তাঁর প্রথম রেকর্ড নজরুলগীতির। সন্ধ্যা সেনকে তিনি তাঁর পল্লীগীতির রেকর্ডের কথাও বলেছেন। এছাড়া বেতারে তাঁর কণ্ঠে শুনেছি সৌমেন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান। সেই বেতারেই বিশিষ্ট শিল্পীদের নিয়ে সমবেত কণ্ঠে প্রচারিত হয়েছিল দ্বিজেন্দ্রলালের ‘যে দিন সুনীল জলধি হইতে’। এক-একজন কয়েকটি নির্বাচিত পংক্তি একক কণ্ঠে গেয়েছিলেন। সুমিত্রা সেনের কণ্ঠে ছিল, যতদূর মনে পড়ে ‘ললাটে গরিমা, বিমল হাস্যে অমল কমল-আনন দীপ্ত’ লাইনটি। বাণীচক্রে একদিন শুনেছিলাম হারমোনিয়াম বাজিয়ে নিজের মনে গাইছেন অতুলপ্রসাদের ‘কী আর চাহিব বল’। পরে সংবাদপত্রে পড়েছিলাম যে কোন এক অনুষ্ঠানে তিনি অতুলপ্রসাদী গান পরিবেশন করেছিলেন। বাকী রইল ত্রিবেণী গোষ্ঠীর কিছু ব্যতিক্রমী সঙ্গীতালেখ্য। ক্যাসেটে ‘অন্য আমি’ নাম দিয়ে কিছু থিমভিত্তিক রবীন্দ্রসঙ্গীতের সংকলন শুনে ভাল লেগেছিল। আর সত্তরের দশকে সমালোচকদের প্রভূত প্রশংসা কুড়োয় ‘মেঘদূত’, যেখানে কালিদাস ও রবীন্দ্রনাথের সহাবস্থান ঘটেছিল। স্বয়ং হেমন্ত মুখোপাধ্যায় এক সাক্ষাৎকারে এই প্রচেষ্টা রেকর্ডে সংরক্ষণ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন।

এগুলি কি উদ্ধার করা সম্ভব? তাহলে প্রয়াত শিল্পী-শিক্ষাগুরুমায়ের কর্মের প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা ব্যক্ত করা হবে।

2 comments: