0
undefined undefined undefined

গল্প - ঝর্ণা চট্টোপাধ্যায়

Posted in





গম্ভীর লোকটার সঙ্গে বিনুর পরিচয় হতেই পারতো আগে। আগে মানে সেই অল্প বয়সে, যখন মন থাকে তুলতুলে, শরীরে একটুতেই খুঁজে পাওয়া যায় উৎসাহ-উদ্দীপনা। কে বলতে পারে, হয়ত তখনই প্রেম-ট্রেমও হয়ে যেতে পারত! মন্দ হত না। বিনু যেমন, তার একশ-আশি ডিগ্রি উল্টোদিকে হাঁটেন তিনি। বিনু একেবারে হ্যা-হ্যা পার্টি, মুখ হাসিতে ঝুলেই আছে আর তিনি গম্ভীর, নম্র-শান্ত স্বভাবের। কিন্তু হলে কি হবে, বিনুর সঙ্গে তার আলাপ হল কিনা ফেসবুক নামক এক নির্জীব কাগুজে পাতায়। সুতরাং প্রেমের দফা গয়া। না দেখে কি আর প্রেম হয়! চোখে চোখ পড়লনা, হাতে হাত মিলল না, সে আবার কেমন প্রেম? নিদেনপক্ষে চোখে চোখ তো পড়া চাই! বিনুর হাসি একটু যেন ধরে এল। কিন্তু লোকটাকে ভালোই লাগছে, বেশ ভালো ভালো কথা বলেন, মজা করেন। অমন জ্ঞানগর্ভের কথা বলা লোক যে এমন মজা করতে পারেন, বিনু আগে দেখেনি। বেশ লাগছে তাকে। কিন্তু দেখা নাহলে কেমন যেন লাগছে। তা বাপু তিনি যদি একটা হযবরল, হিজবিজবিজ কিংবা ধরো কাঠবুড়োর ছবি কাগুজে পাতায় দেখিয়ে বলেন ইনি তিনি, বিনু কি করে বুঝবে যে উনি কিনি! দরকার নেই বাপু, বিনু আবার একটু কটকটি। মাদ্রাজীদের মত হ্যাঁ-কে না বলে। সুতরাং গুরু-গম্ভীর লোকটার সঙ্গে বোধকরি প্রেম আর হল না।

লোকটার সঙ্গে প্রেম হলনা, কিন্তু লোকটাকে বেশ মনে ধরল। আর তাই ওই একশ- আশি ডিগ্রি উল্টোদিকের লোকটাকে তার দেখতে ইচ্ছে হল। বলতে গেলে এটা নিছক খেয়াল। কিন্তু সত্যিই কি তাই ছিল? গুরু গম্ভীর লোকটাকে বিনুর ভালো লাগতে শুরু করল। কারণ লোকটা বিনুকে পাত্তা দিত না, আবার পাত্তা দিত দুটোই ঠিক। যখন পাত্তা দেয় না, মানে পাত্তা পেত না তখন রাগ হয়। তখন বিনুর ‘আচ্ছা, হম কিসিসে কম নহী’—গোছের একটা ভাব হয়। কিন্তু আবার যখন পাত্তা দেয় একটু-আধটু, তখন গলে জল। জল বলে জল, একেবারে গঙ্গার পূত-পবিত্র মিনারেল ওয়াটার। লোকটাকে ঠিক তখনই দেখতে ইচ্ছে করে। এ তো মহা মুশকিল! ধুত্তেরি, বিনুর তো মাথা নয়, একেবারে মুন্ডু!!

একদিন সত্যি সত্যিই তার সঙ্গে দেখা করার সুযোগ এল বিনুর। মহা খুশি। দেখা হলেই কত কি বলবে ভাবতে ভাবতেই কয়েক রাত্তির কাবার। এদিকে ভয়ও করছে। বাপরে, যা গম্ভীর! আবার বুনো ষাঁড়ের মত গুঁতিয়ে না আসে। মোটের উপর জোর করে মনে সাহস নিয়ে বিনু গেল তার কাছে। .

কথামতো নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে দাঁড়াতেই দেখল সেই গম্ভীর মানুষ মোটরসাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়ে। বিনু তো আহ্লাদে আটখানা। মোটরসাইকেল? তার মানে সেই উত্তম-সুচিত্রার ‘এই পথ যদি না শেষ হয়...’ বিনুর চোখমুখ খুশিতে ঝলমল। এসব ভাবতে ভাবতে যেই না তার কাছে গিয়ে দাঁড়াল, অমনি সেই গম্ভীর লোকটা আরো গম্ভীর স্বরে বলে উঠল—আমি এগোচ্ছি, একটা অটো করে আমার সঙ্গে আসুন’। হোঁচট খেল বিনু। এ কি রে বাবা, অচেনা লোক হলেও তো মেয়েদের একটা লিফট দেয়...আর এ বলে কিনা অটো করে তার সঙ্গে যেতে?

--অটো! ঢোঁক গেলে বিনু।

আচ্ছা, তাহলে রিকশা করে নিন...’

মোটরসাইকেলের সঙ্গে কখনও পিছনে, কখনও পাশে এইভাবে প্রথম আলাপের পর্বটা গেল।

আর উত্তম-সুচিত্রার সেই গানখানা!!

থাক সেসব, বিনুকে এখন আর এসব কথা বলে লজ্জা দেবার দরকার নেই। ওই মুখ তো চেনা হয়ে আছে কবে থেকেই...
চুপিচুপি বলি, বিনু তাকে ভালোবেসেছিল প্রথমদিন থেকেই। নইলে অচেনা লোকের কাছে যায় কখনও,পাগল!!

0 comments: