ধারাবাহিক - রঞ্জন রায়
Posted in ধারাবাহিক৮
কিস্যু ভাল লাগছে না। রমেন একমাসের জন্যে বাড়ি গেছে। ওর বাড়ি বিহারে, বাবা কোন ব্যাংকে কাজ করেন। ও আমাদের থেকে একবছরের বড়। অংকটা বেশ স্ট্রং। মুকেশ ও রফির গানগুলো ভাল গাইত। হিন্দি উচ্চারণ একেবারে অরিজিনাল গায়কদের মত।
ওর গলায় "দিল তড়প তড়প কে কহতা" আর " আসলি ক্যা হ্যায়, নকলি ক্যা হ্যায়" আমাদের নিজস্ব অর্কেস্ট্রায় হিট গান ছিল।
ও ছিল ভারি আমুদে ।
অন্য একজন মেয়েলি আওয়াজে লতার বা আশার হিট দু'কলি গাইত। আর রমেন বিছানার চাদর কুঁচিয়ে ঘাঘরার মত করে নিয়ে একটি গামছা ওড়নার মত করে মুখে একটা বোকা বোকা হাসি নিয়ে আমাদের আশা পারেখ বা বৈজয়ন্তীমালা হয়ে নেচে নেচে বেড়াত। লাফিয়ে খাট বা চেয়ারে উঠত অথবা ডাঁই করে রাখা বিছানার উপর।
আমরা দেখতে পেতাম নায়িকা পাহাড়ের চুড়ো থেকে তরতর করে নীচে নেমে নদীর পাড়ে গাছের ডাল ধরে নাচছে , অথবা লজ্জা লজ্জা মুখ করে আলিঙ্গন উদ্যত নায়কের হাতের ফাঁক দিয়ে গলে বেরিয়ে যাচ্ছে। হাততালি! হাততালি!
সেবার এমনি একটি নাচের সময় চটপট হাততালির মাঝখানে কেউ উঠে বাথরুম যাবে বলে দরজা খুলেছে কি সুনীল মহারাজ চট করে ঢুকে পড়লেন। কেউ খেয়াল করেনি।
নর্তকী রমেন কে দেখে উনি হাসবেন না কাঁদবেন বুঝে উঠতে পারছেন না। আমরা তিনজন দরজার দিকে ঘষটে গিয়ে ওনার পেছন দিয়ে কাট; উনি অবাক বিস্ময়ে শুধু রমেনকে দেখে যাচ্ছেন।
অমন রমণীয় বেশভূষা! ও কোথায় পালাবে? নিরুপায় রমেন সোজা দুহাতে মুখ ঢেকে বিছানায় ডাইভ মারল। শত বকুনিতেও মুখ তুলে তাকালো না।
সেই রমেন এখন সাসপেন্ডেড? ক্লাস মিস করছে! আমরা তো ক্লাসে যাচ্ছি, নোটস্ নিচ্ছি। সায়েন্সের ছেলেরা ল্যাব অ্যাটেন্ড করছে, রমেনও তো সায়েন্সের। অ্যানুয়াল পরীক্ষার বেশি দেরি নেই। ভগবান আছে না নেই?
কানাইদাকে আর একবার বলে ওর সাসপেনশনের মেয়াদ কমিয়ে দেওয়া যায় না? বলে দেখি?
রোববার দিন কলতলায়, আমরা বলতাম তেরো কলের পার্ক, কয়েকজন মিলে কাপড় কাচছি। আমি বললাম-- এই শালার আশ্রমে আমাদের কিছু হবে না। এখানে খালি অয়েলিং চলে। যে যত--!
কোথা থেকে ছুটে এসেছেন প্রাইভেট বাস সুনীল মহারাজ।
-- কী বললি পোদো? কী বললি? অয়েলিং চাই, অয়েলিং না হলে কিচু হয় না? তুইও কি রমেনের মত সাততাড়াতাড়ি বাড়ি যেতে চাস?
আচমকা যেন একটা আপাত নিরীহ বল হটাৎ স্যুইং করে আমার বেল উড়িয়ে দিয়েছে। আমার মুখে উত্তর জোগাল না। এইসময় বিপ্লবের মাথায় প্রেরণা দেবী অধিষ্ঠান করলেন।
-- না মহারাজ, ও অয়েলিং বলেনি। আপনি ভুল শুনেছেন। ও বলছিল--ডিসিপ্লিন চাই, ডিসিপ্লিন না হলে এখানে কিছু হবে না।
-- কী? ডিসিপ্লিন? আমি যেন অয়েলিং শুনলাম।
ততক্ষণে আমরা গানের ধ্রুবপদ ধরে ফেলেছি।
-- ডিসিপ্লিন সুনীলদা, ডিসিপ্লিন! আরও কড়া ডিসিপ্লিন চাই। আপনি ভুল শুনেছেন।
সুনীলদা অন্যমনস্ক হয়ে কিছু ভাবতে ভাবতে এগিয়ে গেলেন।
--মিতা, এক প্যাকেট পানামা! আমার তরফ থেকে। খুব বাঁচান বাঁচিয়েছিস! ভগবান আছেন!
সেদিন রাত্তিরে আমার জিদ চেপে গেল। কালকে ম্যাথস এর ক্লাস টেস্টে ভাল নম্বর পেতে হবে। আর্টসের ছেলে হয়েও হায়ার ম্যাথ্স কম্বিনেশন নেওয়ায় সবাই খ্যাপায়। বলে--গরীবের ঘোড়া রোগ! অতই যদি অংকের শখ তো সায়েন্স নিলি না কেন? পোঁদে নেই ইন্দি, ভজরে গোবিন্দি!
নাইনে উঠে জ্যামিতি এত কঠিন লাগছে কেন? পাইথাগোরাস অবদি ঠিক ছিল। কিন্তু অ্যাপোলোনীয়াস থিওরেম? অর্থোগোনাল প্রোজেক্শন? আর ট্রিগোনোমেট্রির হাইট অ্যান্ড ডিস্ট্যান্স? কোনটা যে অ্যাঙ্গেল অফ এলিভেশন আর কোনটা ডিপ্রেসন এর শেষ দেখে ছাড়ব। সবাই শুয়ে পড়লে বারান্দায় আলোর তলায় একটা মাদুর নিয়ে বসে পড়লাম। দূরে কোথায় বৃষ্টি নেমেছে, ব্যাঙ ডাকছে। জোলো হাওয়ায় গা জুড়িয়ে যাচ্ছে।
রাত দুটো নাগাদ সবাই কব্জায় এল। অ্যাপোলীনিয়্স আর গ্রীক রইলেন না, আমার পাড়ার কাকু হয়ে গেলেন। আনন্দে ঘুম এল না --বৃষ্টি নেমেছে ঝেঁপে। খানিকক্ষণ পরে আশ্রমের পানাপুকুর উপচে ঘরের সামনের পাকা নালায় জলের মধ্যে মাছ ভেসে বেড়াতে লাগল। ধরলে কেমন হয়? খাতাপত্তর তুলে রেখে ঘর থেকে গামছা নিয়ে নালায় নাবলাম। খলসে কইগুলো ধরেও রাখতে পারলাম না। পিছলে বেরিয়ে গেল। ধরা পড়ল গোটা কয়েক চ্যাং মাছ। কিন্তু রাখি কোথায়? ফের ঘরে গিয়ে ঘরমোছার বালতি নিয়ে এলাম। দরজায় ঠুং ঠাং শব্দে কারও ঘুম ভাঙল বোধহয়। কুছ পরোয়া নেই।
বালতিতে গামছায় বাঁধা মাছগুলো ছেড়ে দিয়ে আবার জাল পাতছি এমন সময় পিঠে কারও হাত। ভীষণ চমকে ঘুরে দেখি বিপ্লব।
--এসব কী হচ্ছে রে লাকি! বুঝেছি, কাল অংকে ভাল করবি। এখন শুতে চল। এই চ্যাং মাছগুলো নালায় ফেলে দে। ওগুলো কেউ খায় না। আর বৃষ্টিতে ভিজে জ্বর বাঁধালে তোর অংক পরীক্ষার হাতে হ্যারিকেন হয়ে যাবে।
--ঘুম আসছে না মিতা।
-- আমার বিছানায় চল। তোকে ঘুম পাড়িয়ে দেব।
নাঃ, ভগবান আছেন।
সত্যিই ভগবান আছেন নইলে এমন হয়!
আজ সক্কালে এক ভদ্রলোক যুগান্তর পত্রিকা হাতে করে আশ্রমে এলেন। যদুনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় কে?
-- মানে? আমরা ঐতিহাসিক যদুনাথ সরকারের নাম জানি, ওইসব মোগল-মারাঠা ক্যালাকেলির ইতিহাস; তাই তো?
--- হ্যাঁ, কাকু। সেই যে আফজল খাঁ, মানে বাঘনখ?
--ধেৎ, আমি কি তোমাদের জেনারেল নলেজের পরীক্ষক? এই দেখ, বন্যপ্রাণী পোষা নিয়ে বাংলা রচনা প্রতিযোগিতায় বাঁকুড়া মিশনের ক্লাস নাইনের যদুনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় সারা বাংলা প্রথম হয়েছে আর ৫০০/- সরকারের থেকে প্রাইজ পেয়েছে।
--- দেখি, দেখি, তাই তো! অ্যাই যদু, শীগ্গির আয়। তোর নাম বেরিয়েছে যুগান্তরে।
-- অনেক ধন্যবাদ কাকু!
-- না, না; ভাই তুমি আমাদের বাঁকুড়ার আর স্কুলের নাম উজ্বল করেছ। তোমাকে অভিনন্দন। আমি পাশের গলিতে থাকি। খবরটা পড়ে মনে হল ছেলেটিকে দেখে আসি। ভগবান তোমার মঙ্গল করুন।
উনি চলে যেতেই বিপ্লব ঝাঁপিয়ে এল।
-- কী রে যদু? ওই সরকারী ' রচনা’ প্রতিযোগিতার লেখাটা তুই নিজে লিখেছিলি? বুকে হাত দিয়ে বল তো?
গুরু অমিয়দা এগিয়ে এল। কী কেস রে?
-- এই 'এসে' টা কে লিখেছে?
--- কোন এসে’ ?
--এই যে, যুগান্তর দেখ। সরকারের ফরেস্ট ডিপার্টমেট দ্বারা আয়োজিত " কোন বন্য প্রাণী তুমি পুষতে চাও" শীর্ষক বঙ্গের প্রবন্ধ প্রতিযোগিতায় বাঁকুড়া স্কুলের শ্রীমান যদুনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বঙ্গের সমস্ত স্কুলের মধ্যে বাংলা রচনায় প্রথম হইয়াছে। শ্রীমানের পছন্দের পোষ্য জন্তুটির নাম বাঘ। শালা, যোদো, তুই বাঘ পুষবি? বল, কে লিখে দিয়েছিল? সবার সামনে বল।
প্রশান্ত বলল-- এ নিয়ে এত ক্যান্টার করার কী মানে? ওর বাবা-কাকা বা ওর স্যার যেই লিখে দিক পত্রিকায় ওর নাম বেরিয়েছে, স্কুলের নাম বেরিয়েছে; ব্যস্। ও আমাদের খাইয়ে দিক।
সবাই সায় দিল।
কিন্তু বিপ্লবের চোখ য্দুর মুখের থেকে সরছে না। যদু চোখ নামিয়ে নিল।
অমিয়দা বলল-- কী ব্যাপার রে? বিপ্লব , তুই ওর পোঁদে লাগছিস কেন?
বিপ্লব দেঁতো হেসে বলল--ওই বলুক কেন লেগে রয়েছি।
যদু কিছু বলছে না।
গুরু কিছু আঁচ করে বলল-- বেশ, এত যখন হড়কাচ্ছিস তো তুইই বল। ফালতুকার সাসপেন্স, সাত সকালে কোন মানে হয়?
--- আমার সামনে য্দু আমাদের প্রদ্যুম্নকে বলেছিল রচনা লিখে দিতে। প্রদ্যুম্ন বলে যে দেবে কিন্তু এক শর্তে--যদুকে লাইব্রেরি থেকে খুঁজে বাঘের ওপর দুটো সলিড কোটেশন, বাংলায় ও ইংরেজিতে , নিয়ে আসতে হবে। যদু পরের দিন নিয়ে এল। একটা টাইগার টাইগার বার্নিং ব্রাইট, আর একটা হিংস্র ব্যাঘ্র অটবীর--।
তিনদিনের মাথায় পোদো যোদোকে ৬০০ শব্দের একটা রচনা লিখে দিল। আমার সামনে--বল্লে হবে।
সবার চোখ আমার দিকে ঘুরল।
-যদু কাঁদো কাঁদো হয়ে আমার হাত চেপে ধরল। ভাই প্রদ্যুম্ন, প্লীজ তোরা কজন বন্ধু ছাড়া আর কেউ যেন না জানে! প্লীজ, বাবা জানে যে আমিই লিখেছি। গতকালই আমাদের বাড়িতে সরকারি ডাকে চিঠি এসেছে। বাবা কত খুশি হয়েছে! তুই তো আবৃত্তি করিস, নাটকে প্রাইজ পাস। আমি যে কিছুই পারি না। বাবা কত খুশি হয়েছে। টাকাটা হাতে আসুক। তোদের কজনকে আমি শীতের ছুটিতে কোলকাতায় গেলে শ্যামবাজারের পাঁচমাথার মোড়ের পাঞ্জাবী হোটেলের কাটলেট খাইয়ে দেব।
সবাই চেঁচিয়ে ওঠে-- থ্রি চিয়ার্স ফর যোদো-পোদো!
চিৎকারের চোটে ওয়ার্ডেন শিশিরদা ছুটে এলেন।
--- সবকটাকে দিনের বেলায় তারা দেখিয়ে ছাড়ব। হয়েছেটা কী?
-- শিশিরদা, আমাদের যোদো প্রাইজ পেয়েছে।
-- কিসের প্রাইজ? কিসের কম্পিটিশন?
--- পোদো হওয়ার প্রাইজ, মানে পাদের কম্পিটিশন!
শিশিরদা চড় উঁচিয়ে অমিয়দাকে তেড়ে গেলেন।
ভগবান আছেন, ঠাকুর আছেন, ঠাকুরের আশীর্বাদ আছে।
তাই পনেরদিনের মাথায় রমেন আশ্রমে ফিরে এল। রামকানাই মহারাজ ওকে মাপ করে দিয়েছেন। আমাদের আনন্দ ধরে কে?
ক'দিন ধরে বেশি রাত অব্দি আড্ডা, টিচারদের নিয়ে মিমিক্রি, রমেনের সাসপেনশন পিরিয়ডে বাড়ি গিয়ে দেখা তিনটে সিনেমার গল্প আর বৈজয়ন্তীমালার 'ক্যা করু রাম মুঝে বুঢ্ঢা মিল গয়া' নাচের নকল করার অক্ষম চেষ্টা সব মিলে সকালে ঘুম আর ভাঙছিল না। সবাই প্রেয়ারে গেল,আমরা মশারির ভেতরে। তিনজন ধরা পরে গেলাম। ডাক পড়ল অফিস ঘরে। আমি বিপ্লব আর প্রশান্ত।
গুটি গুটি পায়ে দুটো বিল্ডিং পেরিয়ে যেতে যেতে ডিফেন্স স্ট্র্যাটেজি ঠিক করা হল।
প্ল্যান এ’-- সত্যি কথা বলা; স্বীকার করা যে আড্ডা এবং সিনেমাঘেঁষা অশ্লীল নাচগানের ফলে ঘুম থেকে উঠতে পারিনি।
--ক্যানসেল; এটা স্বীকার করা মানে বাড়ি ফিরে যাওয়া, ঠিক রমেনের মত।
প্ল্যান বি- আমাদের কেউ ডেকে দেয় নি।
--- চলবে না; ঘন্টা বেজেছে। আবার ডাকা কিসের? বাকি ছেলেদের কে ডেকেছে?
প্ল্যান সি- --- কোন ডিফেন্স নয়; কথার উত্তর না দেওয়া। প্রশ্ন করলে মাথা না তুলে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকা। শাস্তি ঘোষণা হলে কেঁদে ফেলে ক্ষমা চাওয়া আর একটা চান্স দিতে অনুরোধ করা। তাতে কয়েকদিন খেলা বন্ধ হতে পারে, প্রেয়ার হলে তিনদিন মেজে মোছার দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে, মায় বাগানের আগাছা সাফ করা। কিন্তু ঠিকমত ঠাকুরের নাম নিয়ে চোখের জল ফেলে অনুতপ্ত হলে সাসপেনশন হবার চান্স নেই বল্লেই চলে।
অগত্যা; এই চলুক।
কিন্তু রমেনের জিভে আজ দুষ্ট সরস্বতী ভর করেছেন।
-- শোন; এটা সেই আমাদের বইয়ের কমলাকান্তের দপ্তরের কুক্কুর জাতীয় পলিটিক্স হল। ছ্যাঃ ছ্যাঃ; আমরা করব বৃষজাতীয় পলিটিক্স। অফেন্সে খেলব, ডিফেন্সে নয়।
-- সে আবার কী?
-- আরে আমার মাথায় একটা মারকাটারি প্ল্যান এসেছে। যদি ঠিকমত খেলতে পারিস-- বিপ্লব পারবি, এই পোদো হাঁদাটাকে নিয়েই ভয়।
বিপ্লব দাঁড়িয়ে পড়ে। আরে সবাই পারবে, তুই আমাদের ঠিক করে বুঝিয়ে দে কী কী করতে হবে।
ফিস্ফিস্ ফিস্ফিস্। হি-হি-ই-হি-হি-ই-ই।
এবার সবাই গম্ভীর। বুক ঢিপ ঢিপ করছে। মারকাটারি প্ল্যানই বটে!
অফিসে সুনীল মহারাজ টেবিলের সামনে নির্দিষ্ট চেয়ারে বসে। আমাদের জন্যেই অপেক্ষা করছিলেন বোঝা যাচ্ছিল। তবু তিন মূর্তিকে দেখে গম্ভীর মুখ করে একটা রাইটিং প্যাড টেনে নিয়ে কিসব আঁকিবুকি কাটতে লাগলেন।
-- তোমাদের কিছু বলার আছে?
আমরা চুপ।
-- বলে ফেল; সত্যি কথা বলবে। তাতেই শাস্তি কিছু কম হতে পারে।
সন্নাটা সন্নাটা।
-- মুখ বুজে থেকে কোন লাভ হবে না। গত মাসেও তোমরা প্রেয়ারে একদিন ফাঁকি দিয়েছিলে। আশ্রমের নিয়ম সবার জন্যেই সমান।
ঠিক আছে। তোমাদের আজ বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হবে। আমি তোমাদের গার্জেনের নামে চিঠি লিখে দিচ্ছি। তোমরা ভোরে প্রেয়ারে আসতে চাও না। কাজেই বাড়ি যাচ্ছ। এরপর তোমাদের গার্জেনরা যা ভাল বুঝবেন।
--- না মহারাজ।
--- মানে? তোমাদের শাস্তি দেওয়া যাবে না? তোমরা এতই--?
রাগে সুনীলদার কথা আটকে যায়।
এবার বিপ্লব মুখ খোলে।
-- তা বলছি না মহারাজ। আমরা দোষ করেছি, শাস্তি দিন, এটা আমাদের প্রাপ্য। কিন্তু চিঠিতে সঠিক কারণটা লিখবেন।
-- সঠিক কারণ?
-- প্রেয়ারে না এসে ঘরে পড়ে পড়ে ঘুমিয়েছ; এর আবার সঠিক বেঠিক কী? প্রদ্যুম্ন উসখুস করছ কেন?
-- আসলে মহারাজ আমরা প্রেয়ারে আসতে চাইছিলাম, প্রেয়ার খুব ভাল লাগে। কিন্তু ঠিক ভোরের বেলায় নাইটফল৮
কিস্যু ভাল লাগছে না। রমেন একমাসের জন্যে বাড়ি গেছে। ওর বাড়ি বিহারে, বাবা কোন ব্যাংকে কাজ করেন। ও আমাদের থেকে একবছরের বড়। অংকটা বেশ স্ট্রং। মুকেশ ও রফির গানগুলো ভাল গাইত। হিন্দি উচ্চারণ একেবারে অরিজিনাল গায়কদের মত।
ওর গলায় "দিল তড়প তড়প কে কহতা" আর " আসলি ক্যা হ্যায়, নকলি ক্যা হ্যায়" আমাদের নিজস্ব অর্কেস্ট্রায় হিট গান ছিল।
ও ছিল ভারি আমুদে ।
অন্য একজন মেয়েলি আওয়াজে লতার বা আশার হিট দু'কলি গাইত। আর রমেন বিছানার চাদর কুঁচিয়ে ঘাঘরার মত করে নিয়ে একটি গামছা ওড়নার মত করে মুখে একটা বোকা বোকা হাসি নিয়ে আমাদের আশা পারেখ বা বৈজয়ন্তীমালা হয়ে নেচে নেচে বেড়াত। লাফিয়ে খাট বা চেয়ারে উঠত অথবা ডাঁই করে রাখা বিছানার উপর।
আমরা দেখতে পেতাম নায়িকা পাহাড়ের চুড়ো থেকে তরতর করে নীচে নেমে নদীর পাড়ে গাছের ডাল ধরে নাচছে , অথবা লজ্জা লজ্জা মুখ করে আলিঙ্গন উদ্যত নায়কের হাতের ফাঁক দিয়ে গলে বেরিয়ে যাচ্ছে। হাততালি! হাততালি!
সেবার এমনি একটি নাচের সময় চটপট হাততালির মাঝখানে কেউ উঠে বাথরুম যাবে বলে দরজা খুলেছে কি সুনীল মহারাজ চট করে ঢুকে পড়লেন। কেউ খেয়াল করেনি।
নর্তকী রমেন কে দেখে উনি হাসবেন না কাঁদবেন বুঝে উঠতে পারছেন না। আমরা তিনজন দরজার দিকে ঘষটে গিয়ে ওনার পেছন দিয়ে কাট; উনি অবাক বিস্ময়ে শুধু রমেনকে দেখে যাচ্ছেন।
অমন রমণীয় বেশভূষা! ও কোথায় পালাবে? নিরুপায় রমেন সোজা দুহাতে মুখ ঢেকে বিছানায় ডাইভ মারল। শত বকুনিতেও মুখ তুলে তাকালো না।
সেই রমেন এখন সাসপেন্ডেড? ক্লাস মিস করছে! আমরা তো ক্লাসে যাচ্ছি, নোটস্ নিচ্ছি। সায়েন্সের ছেলেরা ল্যাব অ্যাটেন্ড করছে, রমেনও তো সায়েন্সের। অ্যানুয়াল পরীক্ষার বেশি দেরি নেই। ভগবান আছে না নেই?
কানাইদাকে আর একবার বলে ওর সাসপেনশনের মেয়াদ কমিয়ে দেওয়া যায় না? বলে দেখি?
রোববার দিন কলতলায়, আমরা বলতাম তেরো কলের পার্ক, কয়েকজন মিলে কাপড় কাচছি। আমি বললাম-- এই শালার আশ্রমে আমাদের কিছু হবে না। এখানে খালি অয়েলিং চলে। যে যত--!
কোথা থেকে ছুটে এসেছেন প্রাইভেট বাস সুনীল মহারাজ।
-- কী বললি পোদো? কী বললি? অয়েলিং চাই, অয়েলিং না হলে কিচু হয় না? তুইও কি রমেনের মত সাততাড়াতাড়ি বাড়ি যেতে চাস?
আচমকা যেন একটা আপাত নিরীহ বল হটাৎ স্যুইং করে আমার বেল উড়িয়ে দিয়েছে। আমার মুখে উত্তর জোগাল না। এইসময় বিপ্লবের মাথায় প্রেরণা দেবী অধিষ্ঠান করলেন।
-- না মহারাজ, ও অয়েলিং বলেনি। আপনি ভুল শুনেছেন। ও বলছিল--ডিসিপ্লিন চাই, ডিসিপ্লিন না হলে এখানে কিছু হবে না।
-- কী? ডিসিপ্লিন? আমি যেন অয়েলিং শুনলাম।
ততক্ষণে আমরা গানের ধ্রুবপদ ধরে ফেলেছি।
-- ডিসিপ্লিন সুনীলদা, ডিসিপ্লিন! আরও কড়া ডিসিপ্লিন চাই। আপনি ভুল শুনেছেন।
সুনীলদা অন্যমনস্ক হয়ে কিছু ভাবতে ভাবতে এগিয়ে গেলেন।
--মিতা, এক প্যাকেট পানামা! আমার তরফ থেকে। খুব বাঁচান বাঁচিয়েছিস! ভগবান আছেন!
সেদিন রাত্তিরে আমার জিদ চেপে গেল। কালকে ম্যাথস এর ক্লাস টেস্টে ভাল নম্বর পেতে হবে। আর্টসের ছেলে হয়েও হায়ার ম্যাথ্স কম্বিনেশন নেওয়ায় সবাই খ্যাপায়। বলে--গরীবের ঘোড়া রোগ! অতই যদি অংকের শখ তো সায়েন্স নিলি না কেন? পোঁদে নেই ইন্দি, ভজরে গোবিন্দি!
নাইনে উঠে জ্যামিতি এত কঠিন লাগছে কেন? পাইথাগোরাস অবদি ঠিক ছিল। কিন্তু অ্যাপোলোনীয়াস থিওরেম? অর্থোগোনাল প্রোজেক্শন? আর ট্রিগোনোমেট্রির হাইট অ্যান্ড ডিস্ট্যান্স? কোনটা যে অ্যাঙ্গেল অফ এলিভেশন আর কোনটা ডিপ্রেসন এর শেষ দেখে ছাড়ব। সবাই শুয়ে পড়লে বারান্দায় আলোর তলায় একটা মাদুর নিয়ে বসে পড়লাম। দূরে কোথায় বৃষ্টি নেমেছে, ব্যাঙ ডাকছে। জোলো হাওয়ায় গা জুড়িয়ে যাচ্ছে।
রাত দুটো নাগাদ সবাই কব্জায় এল। অ্যাপোলীনিয়্স আর গ্রীক রইলেন না, আমার পাড়ার কাকু হয়ে গেলেন। আনন্দে ঘুম এল না --বৃষ্টি নেমেছে ঝেঁপে। খানিকক্ষণ পরে আশ্রমের পানাপুকুর উপচে ঘরের সামনের পাকা নালায় জলের মধ্যে মাছ ভেসে বেড়াতে লাগল। ধরলে কেমন হয়? খাতাপত্তর তুলে রেখে ঘর থেকে গামছা নিয়ে নালায় নাবলাম। খলসে কইগুলো ধরেও রাখতে পারলাম না। পিছলে বেরিয়ে গেল। ধরা পড়ল গোটা কয়েক চ্যাং মাছ। কিন্তু রাখি কোথায়? ফের ঘরে গিয়ে ঘরমোছার বালতি নিয়ে এলাম। দরজায় ঠুং ঠাং শব্দে কারও ঘুম ভাঙল বোধহয়। কুছ পরোয়া নেই।
বালতিতে গামছায় বাঁধা মাছগুলো ছেড়ে দিয়ে আবার জাল পাতছি এমন সময় পিঠে কারও হাত। ভীষণ চমকে ঘুরে দেখি বিপ্লব।
--এসব কী হচ্ছে রে লাকি! বুঝেছি, কাল অংকে ভাল করবি। এখন শুতে চল। এই চ্যাং মাছগুলো নালায় ফেলে দে। ওগুলো কেউ খায় না। আর বৃষ্টিতে ভিজে জ্বর বাঁধালে তোর অংক পরীক্ষার হাতে হ্যারিকেন হয়ে যাবে।
--ঘুম আসছে না মিতা।
-- আমার বিছানায় চল। তোকে ঘুম পাড়িয়ে দেব।
নাঃ, ভগবান আছেন।
সত্যিই ভগবান আছেন নইলে এমন হয়!
আজ সক্কালে এক ভদ্রলোক যুগান্তর পত্রিকা হাতে করে আশ্রমে এলেন। যদুনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় কে?
-- মানে? আমরা ঐতিহাসিক যদুনাথ সরকারের নাম জানি, ওইসব মোগল-মারাঠা ক্যালাকেলির ইতিহাস; তাই তো?
--- হ্যাঁ, কাকু। সেই যে আফজল খাঁ, মানে বাঘনখ?
--ধেৎ, আমি কি তোমাদের জেনারেল নলেজের পরীক্ষক? এই দেখ, বন্যপ্রাণী পোষা নিয়ে বাংলা রচনা প্রতিযোগিতায় বাঁকুড়া মিশনের ক্লাস নাইনের যদুনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় সারা বাংলা প্রথম হয়েছে আর ৫০০/- সরকারের থেকে প্রাইজ পেয়েছে।
--- দেখি, দেখি, তাই তো! অ্যাই যদু, শীগ্গির আয়। তোর নাম বেরিয়েছে যুগান্তরে।
-- অনেক ধন্যবাদ কাকু!
-- না, না; ভাই তুমি আমাদের বাঁকুড়ার আর স্কুলের নাম উজ্বল করেছ। তোমাকে অভিনন্দন। আমি পাশের গলিতে থাকি। খবরটা পড়ে মনে হল ছেলেটিকে দেখে আসি। ভগবান তোমার মঙ্গল করুন।
উনি চলে যেতেই বিপ্লব ঝাঁপিয়ে এল।
-- কী রে যদু? ওই সরকারী ' রচনা’ প্রতিযোগিতার লেখাটা তুই নিজে লিখেছিলি? বুকে হাত দিয়ে বল তো?
গুরু অমিয়দা এগিয়ে এল। কী কেস রে?
-- এই 'এসে' টা কে লিখেছে?
--- কোন এসে’ ?
--এই যে, যুগান্তর দেখ। সরকারের ফরেস্ট ডিপার্টমেট দ্বারা আয়োজিত " কোন বন্য প্রাণী তুমি পুষতে চাও" শীর্ষক বঙ্গের প্রবন্ধ প্রতিযোগিতায় বাঁকুড়া স্কুলের শ্রীমান যদুনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বঙ্গের সমস্ত স্কুলের মধ্যে বাংলা রচনায় প্রথম হইয়াছে। শ্রীমানের পছন্দের পোষ্য জন্তুটির নাম বাঘ। শালা, যোদো, তুই বাঘ পুষবি? বল, কে লিখে দিয়েছিল? সবার সামনে বল।
প্রশান্ত বলল-- এ নিয়ে এত ক্যান্টার করার কী মানে? ওর বাবা-কাকা বা ওর স্যার যেই লিখে দিক পত্রিকায় ওর নাম বেরিয়েছে, স্কুলের নাম বেরিয়েছে; ব্যস্। ও আমাদের খাইয়ে দিক।
সবাই সায় দিল।
কিন্তু বিপ্লবের চোখ য্দুর মুখের থেকে সরছে না। যদু চোখ নামিয়ে নিল।
অমিয়দা বলল-- কী ব্যাপার রে? বিপ্লব , তুই ওর পোঁদে লাগছিস কেন?
বিপ্লব দেঁতো হেসে বলল--ওই বলুক কেন লেগে রয়েছি।
যদু কিছু বলছে না।
গুরু কিছু আঁচ করে বলল-- বেশ, এত যখন হড়কাচ্ছিস তো তুইই বল। ফালতুকার সাসপেন্স, সাত সকালে কোন মানে হয়?
--- আমার সামনে য্দু আমাদের প্রদ্যুম্নকে বলেছিল রচনা লিখে দিতে। প্রদ্যুম্ন বলে যে দেবে কিন্তু এক শর্তে--যদুকে লাইব্রেরি থেকে খুঁজে বাঘের ওপর দুটো সলিড কোটেশন, বাংলায় ও ইংরেজিতে , নিয়ে আসতে হবে। যদু পরের দিন নিয়ে এল। একটা টাইগার টাইগার বার্নিং ব্রাইট, আর একটা হিংস্র ব্যাঘ্র অটবীর--।
তিনদিনের মাথায় পোদো যোদোকে ৬০০ শব্দের একটা রচনা লিখে দিল। আমার সামনে--বল্লে হবে।
সবার চোখ আমার দিকে ঘুরল।
-যদু কাঁদো কাঁদো হয়ে আমার হাত চেপে ধরল। ভাই প্রদ্যুম্ন, প্লীজ তোরা কজন বন্ধু ছাড়া আর কেউ যেন না জানে! প্লীজ, বাবা জানে যে আমিই লিখেছি। গতকালই আমাদের বাড়িতে সরকারি ডাকে চিঠি এসেছে। বাবা কত খুশি হয়েছে! তুই তো আবৃত্তি করিস, নাটকে প্রাইজ পাস। আমি যে কিছুই পারি না। বাবা কত খুশি হয়েছে। টাকাটা হাতে আসুক। তোদের কজনকে আমি শীতের ছুটিতে কোলকাতায় গেলে শ্যামবাজারের পাঁচমাথার মোড়ের পাঞ্জাবী হোটেলের কাটলেট খাইয়ে দেব।
সবাই চেঁচিয়ে ওঠে-- থ্রি চিয়ার্স ফর যোদো-পোদো!
চিৎকারের চোটে ওয়ার্ডেন শিশিরদা ছুটে এলেন।
--- সবকটাকে দিনের বেলায় তারা দেখিয়ে ছাড়ব। হয়েছেটা কী?
-- শিশিরদা, আমাদের যোদো প্রাইজ পেয়েছে।
-- কিসের প্রাইজ? কিসের কম্পিটিশন?
--- পোদো হওয়ার প্রাইজ, মানে পাদের কম্পিটিশন!
শিশিরদা চড় উঁচিয়ে অমিয়দাকে তেড়ে গেলেন।
ভগবান আছেন, ঠাকুর আছেন, ঠাকুরের আশীর্বাদ আছে।
তাই পনেরদিনের মাথায় রমেন আশ্রমে ফিরে এল। রামকানাই মহারাজ ওকে মাপ করে দিয়েছেন। আমাদের আনন্দ ধরে কে?
ক'দিন ধরে বেশি রাত অব্দি আড্ডা, টিচারদের নিয়ে মিমিক্রি, রমেনের সাসপেনশন পিরিয়ডে বাড়ি গিয়ে দেখা তিনটে সিনেমার গল্প আর বৈজয়ন্তীমালার 'ক্যা করু রাম মুঝে বুঢ্ঢা মিল গয়া' নাচের নকল করার অক্ষম চেষ্টা সব মিলে সকালে ঘুম আর ভাঙছিল না। সবাই প্রেয়ারে গেল,আমরা মশারির ভেতরে। তিনজন ধরা পরে গেলাম। ডাক পড়ল অফিস ঘরে। আমি বিপ্লব আর প্রশান্ত।
গুটি গুটি পায়ে দুটো বিল্ডিং পেরিয়ে যেতে যেতে ডিফেন্স স্ট্র্যাটেজি ঠিক করা হল।
প্ল্যান এ’-- সত্যি কথা বলা; স্বীকার করা যে আড্ডা এবং সিনেমাঘেঁষা অশ্লীল নাচগানের ফলে ঘুম থেকে উঠতে পারিনি।
--ক্যানসেল; এটা স্বীকার করা মানে বাড়ি ফিরে যাওয়া, ঠিক রমেনের মত।
প্ল্যান বি- আমাদের কেউ ডেকে দেয় নি।
--- চলবে না; ঘন্টা বেজেছে। আবার ডাকা কিসের? বাকি ছেলেদের কে ডেকেছে?
প্ল্যান সি- --- কোন ডিফেন্স নয়; কথার উত্তর না দেওয়া। প্রশ্ন করলে মাথা না তুলে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকা। শাস্তি ঘোষণা হলে কেঁদে ফেলে ক্ষমা চাওয়া আর একটা চান্স দিতে অনুরোধ করা। তাতে কয়েকদিন খেলা বন্ধ হতে পারে, প্রেয়ার হলে তিনদিন মেজে মোছার দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে, মায় বাগানের আগাছা সাফ করা। কিন্তু ঠিকমত ঠাকুরের নাম নিয়ে চোখের জল ফেলে অনুতপ্ত হলে সাসপেনশন হবার চান্স নেই বল্লেই চলে।
অগত্যা; এই চলুক।
কিন্তু রমেনের জিভে আজ দুষ্ট সরস্বতী ভর করেছেন।
-- শোন; এটা সেই আমাদের বইয়ের কমলাকান্তের দপ্তরের কুক্কুর জাতীয় পলিটিক্স হল। ছ্যাঃ ছ্যাঃ; আমরা করব বৃষজাতীয় পলিটিক্স। অফেন্সে খেলব, ডিফেন্সে নয়।
-- সে আবার কী?
-- আরে আমার মাথায় একটা মারকাটারি প্ল্যান এসেছে। যদি ঠিকমত খেলতে পারিস-- বিপ্লব পারবি, এই পোদো হাঁদাটাকে নিয়েই ভয়।
বিপ্লব দাঁড়িয়ে পড়ে। আরে সবাই পারবে, তুই আমাদের ঠিক করে বুঝিয়ে দে কী কী করতে হবে।
ফিস্ফিস্ ফিস্ফিস্। হি-হি-ই-হি-হি-ই-ই।
এবার সবাই গম্ভীর। বুক ঢিপ ঢিপ করছে। মারকাটারি প্ল্যানই বটে!
অফিসে সুনীল মহারাজ টেবিলের সামনে নির্দিষ্ট চেয়ারে বসে। আমাদের জন্যেই অপেক্ষা করছিলেন বোঝা যাচ্ছিল। তবু তিন মূর্তিকে দেখে গম্ভীর মুখ করে একটা রাইটিং প্যাড টেনে নিয়ে কিসব আঁকিবুকি কাটতে লাগলেন।
-- তোমাদের কিছু বলার আছে?
আমরা চুপ।
-- বলে ফেল; সত্যি কথা বলবে। তাতেই শাস্তি কিছু কম হতে পারে।
সন্নাটা সন্নাটা।
-- মুখ বুজে থেকে কোন লাভ হবে না। গত মাসেও তোমরা প্রেয়ারে একদিন ফাঁকি দিয়েছিলে। আশ্রমের নিয়ম সবার জন্যেই সমান।
ঠিক আছে। তোমাদের আজ বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হবে। আমি তোমাদের গার্জেনের নামে চিঠি লিখে দিচ্ছি। তোমরা ভোরে প্রেয়ারে আসতে চাও না। কাজেই বাড়ি যাচ্ছ। এরপর তোমাদের গার্জেনরা যা ভাল বুঝবেন।
--- না মহারাজ।
--- মানে? তোমাদের শাস্তি দেওয়া যাবে না? তোমরা এতই--?
রাগে সুনীলদার কথা আটকে যায়।
এবার বিপ্লব মুখ খোলে।
-- তা বলছি না মহারাজ। আমরা দোষ করেছি, শাস্তি দিন, এটা আমাদের প্রাপ্য। কিন্তু চিঠিতে সঠিক কারণটা লিখবেন।
-- সঠিক কারণ?
-- প্রেয়ারে না এসে ঘরে পড়ে পড়ে ঘুমিয়েছ; এর আবার সঠিক বেঠিক কী? প্রদ্যুম্ন উসখুস করছ কেন?
-- আসলে মহারাজ আমরা প্রেয়ারে আসতে চাইছিলাম, প্রেয়ার খুব ভাল লাগে। কিন্তু ঠিক ভোরের বেলায় নাইটফল হয়ে গেল।
--নাইট ফল?
সুনীল মহারাজ ভিরমি খেলেন।
-- হ্যাঁ, মহারাজ। ওই খারাপ স্বপ্ন দেখে।
-- মানে প্যান্ট ভিজে গিয়ে আমরা অশুদ্ধ হয়ে গেছি তো! স্নানটান করে শুদ্ধ না হয়ে কি করে প্রার্থনায় যাব? তাই। এবার যা শাস্তি দেবেন। খালি সঠিক কারণ লিখে দেবেন।
-- আচ্ছা, আচ্ছা! আমি এখনই গেটপাস লিখে দিচ্ছি। ৯ টা নাগাদ মিউনিসিপ্যাল হসপিটালে চলে যাও। আমার চিঠি নিয়ে মধুসূদন ডাক্তারবাবুকে দেখাও। পয়সা লাগবে না। হয়ে গেল।
--নাইট ফল?
সুনীল মহারাজ ভিরমি খেলেন।
-- হ্যাঁ, মহারাজ। ওই খারাপ স্বপ্ন দেখে।
-- মানে প্যান্ট ভিজে গিয়ে আমরা অশুদ্ধ হয়ে গেছি তো! স্নানটান করে শুদ্ধ না হয়ে কি করে প্রার্থনায় যাব? তাই। এবার যা শাস্তি দেবেন। খালি সঠিক কারণ লিখে দেবেন।
-- আচ্ছা, আচ্ছা! আমি এখনই গেটপাস লিখে দিচ্ছি। ৯ টা নাগাদ মিউনিসিপ্যাল হসপিটালে চলে যাও। আমার চিঠি নিয়ে মধুসূদন ডাক্তারবাবুকে দেখাও। পয়সা লাগবে না।
0 comments: