গল্প - সনাতন সিংহ
Posted in গল্প(১)
…এই আমি আমি জানালার ধারে বসব। আমার খুব গরম লাগছে। তুমি এপাশে সরে এসো না প্লিজ।
…নাও বসো। শুরু করে দিলে তো!
বলেই মুখ গম্ভীর করে সরে গেল অনিক। সবার আগেই উঠে পড়ে সে হুড়োহুড়ি করে দুটো সিট ধরেছিল। নিজে জানালার ধারের সিটে বসে পাশেই রুমাল দিয়ে জায়গা আটকে রাখে। সেজন্য অন্য যাত্রীরা তাকে ট্যারা ট্যারা কথাও শোনায়। তখন মৃদুলা ওঠেনি। পরে ধীরে সুস্থে উঠে আসে সে। অন্য যাত্রীরা তা ভালো চোখে নেয়নি। গরমের সময় কে না ঐ ধারের সিট চায়? অন্যদের কথায় অনিকও ছিল খেঁপে। তার পরে মৃদুলার আবদার, সরে এলেও গজগজ করে ওঠে।
… ও, মহারানীর তো আবার এসি সিট ছাড়া চলে না।
মৃদুলা এ কথা শুনেই খিলখিল করে হেসে ওঠে।
… এই তুমি একথা জানলে কি করে?
…কি কথা?
… এই যে জানালার ধারের সিটটাকে এসি সিট বলে?
…ধুর, চুপ করতো। ভাল্লাগে এসব ন্যাকা ন্যাকা কথায়? যত্তসব ন্যাকামি !
মৃদুলা কেমন যেন অস্বস্তিতে পড়ে গেল। ট্রেন কোম্পার্টমেন্টের অন্য লোকজন তার দিকে তাকিয়ে রইল। কেউ কেউ এমন করে মুখ ঘোরালো দেখে তার লজ্জায় মুখটা কচি হয়ে গেল। চুপি চুপি মুখ খিঁচিয়ে অনিকের উদ্দেশ্যে বলল।
…কি সব ভাষা বলছো? দুদণ্ড ঠিক করে কথা বলতে পার না?
আর অনিককে পায় কে?
…আমাকে এখন বেশি ভাষা জ্ঞান দিতে এসো না। ঠিক করে কথা বলতে পারি না, না? চুপ করে থাকো। নইলে...
মৃদুলা জানে 'নইলে' বলার পর সে কি কি করতে পারে। এখানে কিছু করতে পিছপা হলেও, বাড়ি গিয়ে...
বিয়ের আগে অনিকের এমনরূপ সে কোনোদিন দেখেনি। বেশি আলাপ পরিচয়ের সুযোগও সে পেয়েছিল, তা নয়। তার বিয়েটা অনেকটা তার পছন্দ ও একটুখানি ঘটকালিরও হাত যশে। একপ্রকারে তাড়াতাড়ি করেই বিয়ে।
ইঞ্জিনিয়ারিং এর ফাইনাল ইয়ারে পড়ছে অনিক। মৃদুলার সঙ্গে লুকিয়ে লুকিয়ে বার তিনেক দেখাও করে। এমনকি মৃদুলাকে তার পছন্দের কথা জানায়। এদিকে
মৃদুলার বাবার বয়সও হয়েছে আজ যায়, কাল যায় ভাব। ছোটো মেয়ে, মৃদুলার বিয়েটা দেখে যেতে চান। ইঞ্জিনিয়ার ছেলে জেনে তার বাবাও একপ্রকারে রাজি। মৃদুলার তাকে পছন্দ। তার উপর অনিকের ক্যাম্পাসিং হয়ে গেছে। পাশ করে বেরলেই চাকরি। উচ্চাকাঙ্ক্ষায় যে স্বপ্ন মৃদুলাকে প্রতিনিয়ত হাত ধরে টানত। সে যেন তার সন্ধান পেল।
ব্যাশ, দুয়ে দুয়ে চার হয়ে গেল।
কিন্তু টের পেল বিয়ের দু'মাস না কাটতে কাটতে। ভালো লাগাটা ফিকে হতে শুরু করে। কত রকমের সমস্যা সম্পর্কে সূচ হয়ে ঢুকল। মানিয়ে নিতে না পারলে নির্যাতন। যে নির্যাতন নারী জীবনের অঙ্গীভূত, তা নতুন করে আর পাঠককে না জানানোই শ্রেয়। তাই চলুন না যাই দেখি মৃদুলা কি করছে?
মৃদুলা কথা আর না বাড়িয়ে বাধ্য হয়ে জানালার বাইরের দিকে তাকিয়ে বসে রইল।
বেশ কিছুক্ষণ হল ট্রেন ছেড়েছে। তার খোলা চুলে হাওয়া এসে দোলা দিয়ে যাচ্ছে। বাইরের গাছপালা ঘর-বাড়ি, রাস্তার লোকজন সরে সরে যাচ্ছে ক্রমশ।অনিকের ওপর রাগ হলেও অনিকের ঐ কথাটা তাকে বেশ ছুঁয়ে গেছে 'এসি সিট'।
কথাটা মনে পড়তেই মুচকি মুচকি হেসে ওঠে সে। বাইরে তখন পড়ন্ত বিকেল।মাঠের ভেতর দিয়ে ট্রেন ছুটছে হু হু করে।মৃদুলার মনও ছুটল সেদিনের সেই ভিড়ে ভরা ট্রেন কোম্পার্টমেন্টে। সেও এই সকালে দৌড়ে ঢুকছে প্ল্যাটফর্মে। ট্রেনও ছেড়ে দিয়েছে, সেও রানিং অবস্থায় উঠে পড়ল ট্রেনে। ভেতরে গিয়ে হাঁপাচ্ছে। যখন সে দৌড়ে আসছিল বিশুদার নজরে পড়ে।
পেশায় বিশুদা ব্যাঙ্ককর্মী। স্বভাবতই তাঁর কথায়ও যেন সব সময় পরিষেবা পরিষেবা দেওয়া ভাব।
… আসুন, ম্যাডাম আসুন।
অন্য যাত্রীদের উদ্দেশ্যে বললেন
… আপনারা শুনছেন? ম্যাডামকে আসার জায়গা করে দিন। দৌড়ে ফাস্ট হয়েছেন। চ্যাম্পিয়নের ট্রফিটা হাতে তুলে দেই। সবাই হাততালি দিন।
এখন মৃদুলার মুখে মৃদু হাসি। তবুও হাঁপাতে হাঁপাতে সে তার সেই পরিচিত সহযাত্রীদের কাছে গিয়ে গলির মধ্যে দাঁড়িয়ে পড়ল। জলের বোতলের মুখটা খুলে নিয়ে এগিয়ে দিলেন রণেনদা।
…নিন, খেয়ে আমাদের উদ্ধার করুন।
হাতে একটু টাইম নিয়ে বের হতে হবে না। একটা ফোন করে দিলেই তো আমরা ট্রেনটা আপনার জন্য দাঁড় করিয়ে রাখতাম। ড্রাইভারকে বলেই দিতাম যে,আমাদের ম্যাডাম বাড়ি থেকে একটু দেরি করে বেরিয়েছেন, উনি এলেই তবে ছাড়বেন।
মৃদুলা হাঁপাচ্ছে। তবু হাসতে শুরু করল।
…উঃ, আপনারা না!
দূরেই দাঁড়িয়ে ছিলেন সজলদা। ডিস্ট্যান্স এডুকেশন সেন্টার তাঁর। রোজকার যাত্রী।পাবলিক ডিলিং তাঁর বেশি। বেশ রসিকও মানুষ। ট্রেন কোম্পার্টমেন্টের এদিকটা একেবারে রোজই মাতিয়ে রাখেন তিনি।সব সময় বকবক করেন তাই সবাই তাঁর নাম দিয়েছে 'বকাসুর'।
মৃদুলার এই অবস্থা দেখে আর সেখানে দাঁড়িয়ে থাকতে পারলেন না। এগিয়ে এলেন তার কাছে।
…এই কে আছিস? ম্যাডামকে একটা এসি সিট দে। ম্যাডাম ঘামছে?
বলেই প্রতীকে টানতে লাগল। প্রতীক হাওড়া থেকেই বসে আসে। জানালার ধার তার রোজ বাঁধা।
…হতভাগা, দেখতে পাচ্ছিস না? ম্যাডাম ঘামছে। ওঠ আগে ওঠ।
এসি সিটের সঙ্গে তার এখানেই প্রথম পরিচয়। গরমের সময় ঐ 'এসি সিটের' প্রতি সবার লোভ। প্রতীককে রোজ ঐ সিটে দেখে সবার হিংসে হয়। তাকে যদি এই সুযোগে ঐ জায়গা থেকে টেনে তোলা যায় তার থেকে আর কি ভালো হতে পারে? ব্যস, সঙ্গের সবাই সজলদাকে ইন্ধন জোগাল। টেনেই তুলল তাকে।
কোম্পার্টমেন্টের ঐটুকু জায়গা নিমেষে হো হো করে উঠল।
মৃদুলার একটু লজ্জ্বা করতে লাগল।
প্রতীক তারই কলিগ। পার্মানেন্ট টিচার।মৃদুলা ডেপুটেশনে এই বছরই তাদেরই স্কুলে জয়েন করেছে। বেশ কয়েক মাস হয়েও গেছে। স্কুলের সবার সঙ্গে যেমন তার ভালো সম্পর্ক তেমনি প্রতীকের সঙ্গেও। কিন্তু সে প্রতীককে একটু আলাদা চোখে দেখে। বেশ ভালো লাগে তার। প্রতীকের পাশে বসলে তার একটা অন্য রকম অনুভূতি হয়। তা সে কাউকে বলে বোঝাতেও পারবে না।
স্টাফরুমের থেকে এখানে প্রতীকের সান্নিধ্য সে বেশি বেশি করে পায়। কিন্তু এখানে তার পাশে বসার সুযোগ খুবই কম হয়। রোজই তাকে কেউ না কেউ তুলে দেয় ঐ 'এসি সিট' থেকে। আজ তাকেই কিনা সেই জায়গায় বসতে হবে। সে ইতস্তত করতে থাকে।
সাথী ম্যাডাম ঠেলে বসিয়ে দিল তাকে।
…আরে, বস তো। এমন সুযোগ কেউ ছাড়ে রে। বস....
এই কোম্পার্টমেন্টের সহযাত্রীরা তাকে খুব ভালোবাসে। প্রথম প্রথম সে লেডিসে যেত। পরে সে এই কোম্পার্টমেন্টে আসে।কিন্তু তার চাকরি আর মাত্র কয়েক মাসের।
তার পরেই তাকে স্কুলের সঙ্গে সঙ্গে এই কোম্পার্টমেন্টও ছাড়তে হবে।
আর কোনোদিন হয়তো কারো মুখোমুখি হবে না। মনটা ভারি হয়ে এল।
"আর কভু ফিরিবে না মুখোমুখি পথে
কে কার পাইবে সাড়া অনন্ত জগতে"
তবুও, এই সব মুখগুলোর থেকে প্রতীকের মুখটা বেশি বেশি করে মনের মধ্যে ধরা দিল। সঙ্গে সঙ্গে মনটা তার কেমন করে উঠল। ভেতরে ভেতরে একটা অস্ফুট বেদনা মুচড়ে দিল তাকে
গলাটা ভারী হয়ে এল। চোখটা ছলছল করছে। নিমেষের মধ্যে চোখের কোণ বেয়ে জল বেরিয়ে মিশে গেল সেই বিন্দু বিন্দু ঘামের সঙ্গে।
রুমালটা দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বাইরের দিকে তাকিয়ে রইল সে।
(২)
বাঁধা ছকের বাইরে যে মানুষ থাকে সে মানুষই আসল মানুষ। যেখানে কোনো রং নেই,নেই কোনো কৃত্রিম আবরণ। আর সেখানেই সে বেশি করে ধরা দেয়। বেরিয়ে আসে তার খোলস জীবন থেকে। তা সবার জীবনে ঘটে। মৃদুলার জীবন তো তখন সবুজ ঘাসের মতো। তার উপরে যাই ঝরে, তা শিশিরের বিন্দুর মতো চকচক করে। আর তার স্বপ্নের ডগায় স্ফটিরের মতো চমৎকৃত করে তাকে টানে। আর সে তার ছটায় পথ হারায়।
তবে সেদিন মৃদুলা পথ হারায়নি। মন হারিয়ে ফেলেছিল। সেদিন ট্রেনের সবাই গিয়ে হাজির সজলদা বাড়ি। তাঁর ছেলের জন্মদিন।
প্রত্যেকেই এসেছে। সজলদা বাড়িটা বেশ সুন্দর। পরিপাটি করে সাজানো। বাড়ির সামনে উঠোন। নানান ফুলের গাছ মাথায় ফুল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
একটু দূরে বাগানের কোণে রাধুনিরা খাবার তৈরিতে ব্যস্ত।
আমগাছের তলায় বসল আড্ডা। ফাজলামি, রসিকতার মাত্রা ক্রমশ অতিক্রম করতে শুরু করল।
এক একটা মানুষ তাদের নিত্যদিনের চেহারা থেকে বেরিয়ে আসতে লাগল।
রূপক দেখাতে শুরু করল কেমন করে সেই একচোখা ভিখারিটা ভিক্ষা করে।
…একটা পয়সা দাও না বাবুরা। 'গাল ফ্রেন্ডকে' মেলায় নিয়ে যাবো। ও দিদিরা দাও না।
বলতে বলতে ল্যাংচিয়ে ল্যাংচিয়ে ডান হাতটা সুতপার মুখের কাছে এগিয়ে দিল।
সবাই খিলখিল করে হেসে উঠল।
উল্টো দিকে থেকে রণেনদা মশারির দড়ি বিক্রি করা লোকটার সুর নকল করে নাকি গলায় বলতে বলতে সভার মাঝখানে ঢুকছে।
…দঁড়ি, এঁইইইই সেই দঁড়ি।
সকলেই হাসতে হাসতে গড়াগড়ি দেওয়ার মতো।
সাথী ম্যাডাম সুতপাকে বলল
…একটা গান ধরনা রে।
বিশুদা হাতের মধ্যে মাইক্রোফোন ধরার মতো করে ঘোষণা করতে লাগল।
…এবার আপনাদের সামনে গান গেয়ে শোনাবেন লতানো-কণ্ঠী মিস সু–ত-পা।
রূপক বিশুদার পেছন থেকে ইকোর মতো চেঁচাতে লাগল।
…পা-পা-পা-পা....
আর কে কাকে ধরে, হেসে সব লুটোপুটি।
সুতপা যেন না করতে পারল না। গলা খাকরে নিয়ে বলল
…আমি একা গাইবো না সবাইকে গাইতে হবে।
ব্যস, বসে গেল গানের আসর। সমবেত গলা পড়ন্ত বিকেলে গাছের পাতা ছাড়িয়ে বাড়ির চিলে-কোঠায় ম্লান হতে লাগল।
…এই সুন্দর স্বর্ণালী সন্ধ্যায়। একি বন্ধনে জোড়ালে গো বন্ধু...
মৃদুলাও এসবের মজা নিচ্ছিল ঠিকই কিন্তু বাড়ি ফিরতে হবে তাকে। আর বেশি দেরি করলে বাড়ি ফিরতে তার রাত অনেক হয়ে যাবে। ওদিকে তার বাবার শরীরটা ভালো নেই দেখে এসেছে। এদিকে সবার মান রাখতে না এলে নয়। অগত্যা ম্লান মুখে তাদের সঙ্গ দিচ্ছে।
প্রতীক তাকে ইশারা করে ডাকল।
সজলদার ঘরের বারান্দায় ডেকে নিল তাকে। ফাঁকা বারান্দা। অন্য আত্মীয় স্বজন কেউ সেখানে নেই।
…কি হলো বাড়ি ফিরবে না। বেশ তো ওদের মাঝে মশগুল হয়ে আছ?
প্রতীকের চোখে চোখ রাখতে পারল না সে। মাথা নিচু করে বলল
…আমি তো কতবার ওদের বললাম। ওদের তো সব কাছাকাছি বাড়ি। তাই কারো যেন তাড়া নেই। সব পরে খাবে, পরে খাবে বলছে। এদিকে না খেয়ে গেলে সজলদা রাগারাগি করবেন। এরপর আরো দেরি করলে আমি ওপারে গিয়ে ভ্যানও পাব না। হেঁটে বাড়ি ফিরতে হবে। আর রাত হয়ে গেলে রাস্তাটা ভীষন ফাঁকা। একা যেতে খুব ভয় করবে।
…ঠিক আছে যাও দেখছি।
এদিকে টিপটিপ করে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। অন্ধকার হয় হয় ভাব।
প্রতীক ফিরে এল খাবার ব্যবস্থা করে।
…শুনুন আমরা অনেকে দূরে দূরে যাব। বৃষ্টি পড়ছে। আকাশের অবস্থা ভালো নয়। খেতে বসুন।
বলেই আমব্রেলা ছাতাটা হাতে নিয়ে
সজলদার এই ফুল বাগানেই ঢুকে গেল। খাবার জায়গা সেখানেই। ছাতা খাটিয়ে টেবিল চেয়ার সাজাতে শুরু করে দিল। সঙ্গে বিশুদা ও রণেনদা হাত লাগলো।সিএই ছোট্ট ছোট্ট ফুলগাছগুলো আলোয় ঝলমল করছে। তার ফাঁকে ফাঁকে বেশ পরিসর। সেখানেই এই টেবিল চেয়ার পাতা হলো।
বৃষ্টি থেমে গেল।
মৃদুলাও খেতে বসল। সজলদা এগিয়ে এলেন।
…প্রতীক, বিশুদা, ও রণেনদা আপনিও আছেন দেখছি। আমার ক্যাটারিংয়ের ছেলেরা একটু দেরি করে আসবে। যদি...
রণেনদা তাঁর কথা শেষ হবার আগেই বলে ফেললেন।
…আপনাকে ও নিয়ে ভাবতে হবে না। আমরা ম্যানেজ করে নেব। আপনি আপনার কাজ করুন।
প্রতীক ভাত দিতে এলো মৃদুলাদের টেবিলে। ভাত দিয়ে যাওয়ার আগে মৃদুলা প্রতীককে বলল,
…তুমি বসবে না?
প্রতীক মৃদুলার মুখের দিকে তাকিয়ে চোখ ফেরাতে পারল না।। আলোয় তার মুখটা জ্বলজ্বল করছে। আড়চোখের চাউনিতে
তাকে বেশ সুন্দর দেখাচ্ছে।
ওদিকে দূর থেকে বিশুদা চেঁচাচ্ছে।
…এই প্রতীক, এদিকে ভাত।
…আসছি বিশুদা।
মৃদুলাকে উদেশ্য করে বলল
…আর কোথাও তো সিট নেই। পরে বসছি।
…এখানেই আমাদের টেবিলে বসো না। আর একটা চেয়ার এই সাইডে দিলেই হয়ে যাবে।আমি ব্যবস্থা করছি। ঐ তো, ঐ চেয়ারটা এদিকে টেনে নিলেই হয়।যাই আমি একটা পাতা আনি।
সাথী ম্যাডামও তাকে সমর্থন করে বলে উঠলেন
…হ্যাঁ হ্যাঁ, আপনিও এখানে বসে যান। যা তুই পাতা নিয়ে আয়। এরপর ওদের লোকজন বসে যাবে। তারপর আকাশের অবস্থা ভালো নয়। আপনিও তো আমাদের থেকে বেশি দূরে যাবেন। যান তাড়াতাড়ি আসুন। এই তুই পাতা নিয়ে আয়।
মৃদুলা পাতা ধুয়ে বসে রইল। প্রতীক ভাত নিয়ে এসে পাতে ঢেলেও দিল। মৃদুলা হাত দিয়ে পরিপাটি করে ভাতগুলোকে সরিয়ে একপাশে করে রেখে বসে রইল। রণেনদা প্রতীককে হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে এসে বসিয়ে দিয়ে গেল।
…দেরি করো না। তুমিও দূরে যাবে। বসে খেয়ে নাও। আমরা সব দিয়ে দিচ্ছি।
…না, আপনারা দুজনে পার...
…আহ, বসো তো। আমরা পারবো। তুমি বসো।
বাধ্য হয়ে প্রতীক ভাতের থালায় হাত দিয়ে মৃদুলার দিকে তাকিয়ে দেখে সেও হাত গুটিয়ে বসে আছে মাথা নিচু করে। অন্যরা তখন ডাল-বেগুনি শেষ করে দই কাতলা খেতে শুরু করেছে। মৃদুলার পাতে তা সাজানো রয়েছে ভাগে ভাগে।
…কি হলো খাও।
মৃদুলা আর তার দিকে তাকাল না। খেতে শুরু করল।
একে একে ঐ টেবিলের সবাই উঠে গেল। সে প্রতীকের জন্য বসে রইল কিছুক্ষণ।
…তুমি গেলে না?
কোনো উত্তর দিল না সে। প্রতীকের খাওয়া শেষ হতে সেও উঠল। অন্যরা তখন কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে আইসক্রিমের বাটিতে চামচ ঢুকিয়ে কেটে কেটে খাচ্ছে।
প্রতীক আইসক্রিমের বাটিটা ঘরের টেবিলে রেখে মুখ ধুয়ে কাঁধে ব্যাগ ঝোললো। বাটিটা নিয়ে সজলদাকে বলে বাইরে বেরিয়ে এল।
বাইরে তখন দু-এক ফোঁটা বৃষ্টি আবার পড়তে শুরু করেছে। মৃদুলা মাথায় ওড়না দিয়ে দাঁড়িয়ে। সঙ্গে সাথী ম্যাডাম। কিন্তু কিছু যেন একটা খুঁজছে। সুতপা, রূপক, সাথীরা ততক্ষণে একটু দূরে সরে গেছে।
প্রতীক তার কাছে আসতেই সে বলল
…আইসক্রিমটা এখনো খেলে না যে?
…তোমাকে দেব বলে।
…দূর, কি যে বল না?
…সত্যিই বলছি তোমাকে দেব। তাছাড়া এখন খেলে আমার ঠান্ডা লেগে যাবে। তুমি এটা খেয়ে নাও। দেখো, এটা এতক্ষণে গলতে শুরু করেছে হয়তো!
…না না।
…নাও বলছি। নাও না। আমি দিচ্ছি বলে কি নেবে না?
মৃদুলা ডান হাতের তালুটা আলতো করে পেতে দিল প্রতীকের সামনে। বাটিটা হাতে নিয়ে মৃদুলা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল
প্রতীকের দিকে। হ্যালোজেনের আলোয় যেন তাদের একাকী শুভ দৃষ্টি হতে লাগল। মৃদুলা চোখ সরাতে পারল না। প্রতীক বলে উঠল
…কি হল এভাবে ধরে থাকবে? খাবে না?
সম্বিৎ ফিরল মৃদুলার।
…আগে তুমি একটু খাও। না হলে আমি খাবো না। খাও বলছি।
সেই বলার ভঙ্গিতে এমন অনুরাগের ছোঁয়া যা প্রতীককে কেউ কোনোদিন এমন করে বলেনি। ক্ষনিকের মধ্যে কোথায় যেন একটা ভালোলাগা তার বুকের শীতল জায়গায় একটু নাড়িয়ে দিল। একটা অজানা অনুভূতি তরতর করে বয়ে গেল। মৃদুলাকে কেমন যেন খুব আপনজন আপনজন বলে মনে হতে লাগল।
প্রতীক না করতে গিয়ে, যেন না করে উঠতে পারল না। এমন করে তাকে কেউ কোনোদিন বলেননি। আপ্লুত হয়ে গেল সে। এই মৃদুলাকে সে আগে কোনোদিন দেখেনি। তাকে যেন কেমন আপনজন আপনজন বলে মনে হতে লাগল। কিসে যেন আটকে দিল তার সেই অনিচ্ছার কণ্ঠনালিকে।
…না, মা-মানে, চামচ তো একটাই! এঁটো হয়ে যাবে যে?
মৃদুলা নিমেষে প্রতীকের ডান হাতটা ধরল। সে হাতের পরশে কেমন প্রাণের ছোঁয়া। যে হাত ধরে অনায়াসে গভীর সমুদ্রের অতল কালো জলে তলিয়ে যেতেও ইচ্ছে করে। হাজার অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাকে ছেড়ে আসতে চাইলেও সেই মোহ কিছুতেই তা আসতে দেয় না।
…হোক এঁটো। তোমার এঁটো খেলো আমার কিছু হবে না।
কাঠের চামচে করে আইসক্রিম কেটে প্রতীকের মুখের কাছে এগিয়ে দিল। কোন যাদুবলে প্রতীকের মুখও গেল খুলে। প্রতীক ভীরু ভীরু হাতে মৃদুলার হাতটা ধরল। টানতে হল না, মৃদুলাই ঠেলে দিল তার মুখের দিকে। প্রতীকের চোখ রইল মৃদুলার চোখে। আলতো করে দুই ঠোঁটের চাপে চুষে নিল চামচটা।
মৃদুলা প্রতীকের এঁটো করা সেই চামচ নিয়ে কি নিবিড় সুখে দ্বিধাহীন ভাবে আইসক্রিম কেটে কেটে খেতে লাগল। যেন তার ঠোঁটের পরশখানি সে নিজের ঠোঁটে মিশিয়ে মিশিয়ে একাকার করে নিচ্ছে।
প্রতীক তাকিয়ে রইল তার দিকে অপলকে। মৃদুলার মাথায় নীল ওড়না অর্ধেক ঢেকে আছে। মুখে তার স্নিগ্ধ হাসি। উজ্জ্বল আলোয় তার সেই মুখটা আরো আরো যেন উদ্ভাসিত হয়ে উঠছে। কতক্ষণ এভাবে কাটল কে জানে?
রূপক পিছন থেকে এসে বলল
…আরে তোমরা যাবে না? চলো।
আমাদের যারা ট্রেন ধরবে তারা মেইন রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে। চলো। তোমাদের জন্য আবার ফিরে এলাম। চলো।
বলেই গনগনে করে এগিয়ে গেল সে।
প্রতীক ও মৃদুলা সেই পথ ধরল। খানিকটা গিয়ে অন্ধকার পথে মৃদুলা প্রতীকের হাতটা চেপে ধরল আলতো করে। সে হাতের আলতো স্পর্শে কতকিছু যেন বুঝিয়ে দিতে চাইল নিমিষে। সেই স্পর্শে প্রতীক যেন হারিয়ে যেতে লাগল
অন্ধকার পথে।
কিছুক্ষণ পরে তারাও মিলিয়ে গেল অন্ধকার গলির বাঁকে।
(৩)
সেদিনের সেই ঘটনা অনুঘটকের মতো প্রতীক ও মৃদুলার জীবনে কিছু কিছু পাল্টে দিয়ে গেল। একই ট্রেনের এক জায়গায় যাতায়াত করলেও তাদের সরাসরি কথা গেল কমে। তারা আগের মতো আর সাবলীল নয়। আগের চেয়ে বেশি চুপ করে থাকে দুজনে।
এমনকি স্টাফরুমেও সরাসরি সম্পর্ক গেল কমে। আগের মতো 'এই খাবারটা মা করেছে' বলে প্রতীকের দিকে বাড়িয়ে দিতে তার কেমন যেন কুণ্ঠাবোধে জড়িয়ে ধরল। আর দিতে পারল না।
ভালো করে পরস্পরের দিকেও তাকাতেও কোথায় যেন একটা সংকোচ বোধ বাধা দিতে লাগল।
এখানে কথা যত কমল তত কথা বাড়ল তার বাড়িতে। মা'ই তার সেই কথার একমাত্র শ্রোতা। তার কথায়, ভালো লাগায়, খাওয়ায়, আলোচনায় প্রতীক ফিরে ফিরে আসত।
মৃদুলার মা মেয়েকে দেখে আর অবাক হয়ে যান। একদিন রাতে খেতে বসে প্রতীকের কথা তুললেন। প্রতীকের কথা শোনামাত্র মৃদুলার মুখে আলাদা একটা স্নিগ্ধতা খেলে গেল। তার মায়ের নজর এড়াল না।
…তা তোর প্রতীককে একদিন আন না এখানে। দেখি সে কেমন ছেলে।
কেমন একটা বিড়ম্বনায় পড়ে গেল মৃদুলা।
…না, মানে, কে-কেন?
……না,ঐ সব সময় তো ওরই প্রশংসায় তুই তো পঞ্চমুখ। তাই। আর ওর কথা শুনে শুনে আমারও ওকে কেমন একটা ভালো ভালো লাগে। আনিস তো একদিন।
…আমি বলতে পারবো না আসার জন্য। পারলে তুমিই বলো।
বলেই খাওয়া ফেলে উঠে গেল বেসিনের দিকে।
…বেশ, আমি বলব। ফোনটা কর দেখি। ফোনটা করে ধরিয়ে দিয়ে ছিল মৃদুলা।
সেদিন প্রতীকের সঙ্গে কথা বলে মৃদুলার মার খুব ভালো লাগে প্রতীককে। যেতেও বলে। প্রতীকও জানায়
…সময় পেলে নিশ্চয়ই একদিন ঘুরে আসব মাসিমা।
এদিকে স্টাফদের মধ্যে মাঝে মাঝে একটা গুঞ্জন উঠতে লাগল। কেউ কেউ প্রতীককে নিয়ে নানান রকমের পরামর্শ দিতে লাগল।
…ভালো মেয়ে ভায়া লেগে যাও। আর মাত্র কয়েকদিন। ফেয়ার ওয়েল দেওয়ার আগেই ব্যাপারটা পাকিয়ে নাও।
কেউ কেউ আবার শোনাতে লাগল।
…খাসা জিনিস। আমরা কি কথা তুলব? হলে আমরা কিন্তু দুটো নিমন্ত্রণ পাব এই যা।ভেবে দেখো!
ওদিকে আবার কেউ কেউ শোনায়।মুখে তাদের রসিকতার ছাপ।
…কারো কথায় বেশি এগিও না,
প্রতীকদা। ও পাখির ডানা বাঁধা আছে। যার তার ডাকে সাড়া দিয়ে উড়ে যাবে না।
প্রতীক সবই শুনত। আর হেসে হেসে তাদের এড়িয়ে যেত।
…আপনারা এত ভাববেন না। সময় ঠিক আপনাদের মনোবাঞ্ছা পূরণ করবে।
হিসেব নিকেষ করে মন বাঁধা পড়ে না ঠিকই কিন্তু হয়তো ক্ষনিকের জন্য মন দোলা খায়।
মৃদুলার মন যে দোল খায়নি তা নয়। তার সহকারী দিদিরা তাকে এ নিয়ে যে স্টাফরুমে গোপনে কিছুই বলেনি, এমনও নয়। কিন্তু সে তাদের এড়িয়ে গেছে।
ওদিকে তখন অনিকের সঙ্গে তার দেখাদেখি চলছে। একপ্রকারে পাকা কথাও শেষের পথে। শুধু দিনক্ষণ ঠিক হলেই হয়।
ওদিকে দিন এখনও ঠিক না হলেও স্কুলে তার বিদায়ের দিন ঠিক হয়ে গেল। স্টাফরা তাকে পরিপাটি করে ফেয়ারওয়েল দিচ্ছে। প্রশংসায় ভরিয়ে দিচ্ছে তার এই ডেপুটেশনের শিক্ষিকা জীবনকে। ছাত্রছাত্রীরা ও খুব কাছের সহকারী শিক্ষক-শিক্ষিকারা উপহার দিল যে যার মতো। ক্লাস রুমের অনুষ্ঠান মঞ্চে তারই ফেয়ার ওয়েলে অনুষ্ঠান সঞ্চলনা করছে প্রতীক। যত সে অন্যদের বিদায়ী ভাষণ শুনছে তার চেয়ে আরো তার গলা ধরে আসছে প্রতীকের কথা শুনে। চোখ ছলছল করছে। শেষে বলার সময় তার ভাষা হারিয়ে গেল। গলা স্তব্ধ হল। এই কয়েক মাসের কর্মজীবনে সে যেন অনেক ভালো কিছু পেয়ে হারাচ্ছে। তাদের আর কোনোদিন সে ফিরে পাবে না। সেই বেদনায় কোনো ভাষা আর মুখ দিয়ে বেরিয়ে এল না।
টপটপ করে জল গড়িয়ে পড়তে লাগল তার চিবুক বেয়ে।
ফেরার পথে সারাক্ষণ তার মন ভারি। অটো থেকে নেমে স্টেশনে উঠল। প্রতীক ব্যাগ থেকে একটা বই আর একটা কলম প্যাকিং করা অবস্থায় ধরিয়ে দিল তার হাতে।
সেটা হাতে নিতেই তার চোখ বেয়ে হু হু করে জল গড়িয়ে পড়ল নিমেষে।
ট্রেনে অনেক কথা বলবে বলেও সে প্রতীককে কিছুই বলতে পারল না।
রামনগর এসে যেতে প্রতীক বলল
…এতসব গিফ্ট একা নিয়ে ফিরতে পারবে না। আমি কি সঙ্গে যাব।
কিছুক্ষণ সে তাকিয়ে রইল প্রতীকের দিকে। তারপর বলল
…মা প্ল্যাটফর্মে আছে। অসুবিধা হবে না।
সবাই মিলে তাকে নামিয়ে দিল প্ল্যাটফর্মে। গাড়ি ছাড়বে ছাড়বে ভাব। হঠাৎ জানালা ধারে এসে মৃদুলা বলে উঠল
…এই আমার মা। মা, এই তোমার প্রতীক। ইনি সাথীদি, আর ঐ যে রণেনদা।
জানালার বাইরের থেকে তার মা
স্নেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন প্রতীকের দিকে।
…বাবা, একদিন এসো কিন্তু। আপনারাও আসবেন।
প্রতীকরা ট্রেন থেকে শুধু মাথা নেড়ে সমর্থন জানাল। ট্রেন চলল গড়িয়ে।
হঠাৎ চড়চড় করে বাজ পড়ার শব্দে মৃদুলা চমকে ওঠে। হারিয়ে গিয়েও যেন আবার ফিরে এল।
আকাশটা মেঘে ছেয়ে গেছে। পরন্ত বিকেলের রোদ্দুর আর নেই। হাসা হাসা মেঘ দূর গ্রামের সবুজ গাছপালার উপর এক অপরূপ লাবণ্য তৈরি করেছে। দু'একটা পাখি যেন ভেসে রয়েছে শূণ্যে। থেকে থেকে বাজ পড়ার আওয়াজ আসছে তার কানে। চিড় চিড় করে আলোক রেখা শিকড়ের মতো যেন উদ্ভাসিত হয়ে উঠছে আকাশ ফেঁড়ে।
ট্রেনও ছুটছে দ্রুত গতিতে। এখন এদিকেও বৃষ্টি ও বাজ পড়া শুরু হল।
অনিক ঘুমিয়ে পড়েছিল মৃদুলার গায়ে ঠেস দিয়ে। বাজ পড়ার শব্দে তার ঘুম গেল ভেঙে।
মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হল। ঝড় উঠল জোরে। গাছপালা দুলতে শুরু করল তার দাপটে। জানালা নামিয়ে দিল সবাই। ট্রেন গেল দাঁড়িয়ে। বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে আছে।
ভেতরটা কেমন গুমোট গরম হয়ে উঠল।
সন্ধ্যে হয়ে গেল এল। আর একটু গেলেই তাদের প্ল্যাটফর্ম। নেমেই যাবে তারা।
জানালার কাচ বেয়ে বৃষ্টি ধারা গলগল করে নামছে।
প্রতীকের কথা মনে পড়ছে মৃদুলার।
সেদিনও এই রকম বৃষ্টি হচ্ছিল। প্রতীক জানালার সিটে বসে। মৃদুলা তার পাশে। দেখে, প্রতীক জানালা থেকে হাত বাড়িয়ে বৃষ্টির জল ধরে চোখে মুখে মাখছে।
……এই তুমি বৃষ্টির জল ধরে মাখছ কেন?
প্রতীক হাসতে হাসতে বলে ছিল
…এ সবাই বুঝবে না।
অনিক হঠাৎ মৃদুলাকে তাড়া দিতে লাগল।
…ওঠো ওঠো। ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে। ব্যাগটা আমি নিচ্ছি। এসো-সো-সো....
অনিক এগিয়ে গেল গেটের দিকে।
মৃদুলা জানাল খুলে বাইরের দিকে ডান হাতটা বাড়িয়ে দিল। বৃষ্টির ফোঁটা এসে আছড়ে পড়ছে তার হাতের উপর। শাঁখা-পলার বেড় বেয়ে বৃষ্টির ফোঁটা গড়িয়ে পড়ছে টপটপ করে।
…কই? এসো-সো-সো...
…আসছিইইইই...
হাতের তালুতে বৃষ্টি ধরে নিল মৃদুলা।
চোখে মুখে তা মাখতে মাখতে ট্রেন থেকে নেমে ভিড়ে হারিয়ে গেল।
0 comments: