Next
Previous
0

সম্পাদকীয়

Posted in


সম্পাদকীয়



বসন্ত এল। লাল পলাশের রঙে রঙে নতুনের ডাক দিয়ে প্রকাশিত হলো ঋতবাক তৃতীয় বর্ষ, অষ্টম সংখ্যা। 

আচ্ছা, কোনও নতুনই কি এই বসন্তের মতো আপনাআপনি আসে? যাও পুরাতন বললেই কি নতুন খেলা আরম্ভ হয়? এই যে গত ৮ই মার্চে এত মত মতান্তর, নারী দিবস না মানব দিবস তা নিয়ে কথার তুফানের কি সত্যিই প্রয়োজন আছে? শতাব্দী প্রাচীন এই স্মারক দিবসটির ইতিহাস সকলের জানা। সে নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। কিন্তু যে কোনও একটি বিশেষ বিষয়ে আন্তর্জাতিক স্তরে একটি দিবস চিহ্নিত করা এবং সেটিকে যুগপৎ নিষ্ঠা ও উত্তেজনার সঙ্গে পালন করার অর্থই হলো বিষয়টি সম্বন্ধে ব্যপক সচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়াস ও প্রয়োজনীয়তা। আর এই প্রয়োজনীয়তার মধ্যেই কোথায় যেন নিহিত রয়েছে পুরুষের প্রচ্ছন্ন অহংকার। পৃথিবীতে ‘পুরুষ দিবস’ পালনের প্রয়োজনীয়তা তো কই অনুভূত হচ্ছে না এমন ব্যপক ভাবে? এর কারণ একটাই হতে পারে। ক্ষমতার অসম বন্টন। বারবার দেখা যায় এই 'প্রয়োজন' অনুভব করে তারাই যারা ক্ষমতাবৃত্তের মধ্যে থেকে এই অসাম্যের জন্য একটা অস্বস্তি বোধ করে এবং মোটামুটি স্থিতাবস্থা বজায় রেখেই এক ধরণের 'রিফর্মেশনের' তাগিদ অনুভব করে। যদি অধিকার থেকেই থাকে তাহলে আজও সেটা অর্জন করার কথা বলতে হবে কেন নারীকে? একটা বিশেষ দিন বরাদ্দ করাটাই তো ফারাককে মনে করিয়ে দেওয়া। একবার ভাবুন, মাধ্যমিকে প্রথম দশের মধ্যে থাকা কোনও ছাত্রীকে মেয়েদের মধ্যে প্রথম বলে পিঠ চাপড়ানোর প্রবণতা আসে কোন অবস্থা থেকে? অবস্থাটা হলো এই যে সারা বিশ্বে সমগ্র মানবজাতির অগ্রগতির নিরিখে নারীর অগ্রগতির হার এখনও বেশ কম। বিভিন্ন পরিসংখ্যান বারবার সেটা প্রমাণ করে। একটা উদাহরণই যথেষ্ট হবে। চাষের কাজে সাহায্য, গ্রামাঞ্চলে দূর দূরান্ত থেকে গৃহস্থলীর কাজের প্রয়োজনে জল সংগ্রহ করা, ইঁট ভাটায় সাহায্যকারী হিসাবে কাজ করার মতো অজস্র কাজে মেয়েদের অংশগ্রহণ ছেলেদের তুলনায় ৬৫% বেশী। অথচ বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই কর্মসংস্থানের প্রয়াসে একই শিক্ষাগত যোগ্যতা ও কর্মদক্ষতাসম্পন্ন একজন নারী পারিশ্রমিক এবং দায়িত্বশীল পদাধিকার লাভে এখনও অনেকটাই পিছিয়ে পুরুষদের তুলনায়। সামগ্রিক সামাজিক সুরক্ষা লাভের অভাবে উচ্চকোটির স্বনিযুক্তি প্রকল্পেও মেয়েদের অংশগ্রহণ দুঃখজনক ভাবে কম। আন্তর্জাতিক স্তরে উচ্চপর্যায়ের অধিকর্তা পর্যায়ে মেয়েদের কাজ পাওয়ার অধিকার এখনও মাত্র ২৫%। সমাজের অন্যান্য স্তরে মেয়েদের বহুল চর্চিত বঞ্চনার বিবরণে আর নাই গেলাম। সচেতনতা বেড়েছে, নিঃসন্দেহে। কিন্তু, সচেতনতা বাড়ার অর্থ কি শুধুই জ্ঞান সংগ্রহ, মোমবাতি মিছিল, অবস্থান ধর্মঘট, বিক্ষোভ প্রদর্শন আর ফেসবুক-ট্যুইটারে পাতা ভরানো? এখনও যদি ঘুম না ভাঙ্গে, তাবে আর কবে? আমার সন্তানকে কোন্‌ মুল্যবোধ, কোন্‌ বাসযোগ্য পৃথিবীর উত্তরাধিকার দিয়ে যাবো, সে কথা ভাবার সময় কি এখনও আসেনি? আর শুধু ভেবে ভেবে বসে থাকাই বা কেন? আসুন না, হাতে হাত মিলিয়ে সক্রিয় প্রয়াস ও সদ্‌ভাবনাকে বাস্তবায়িত করার লক্ষ্যে সম্মার্জনাকে জীবনচর্চার প্রাসঙ্গিক অন্তরঙ্গ সঙ্গী করে তুলি! আলাদা করে নারী বা পুরুষ নয়, সসম্মানে মানুষ হিসাবে মিলে মিশে ভালো থাকা কি নিতান্তই অসম্ভব?

এই মাস আমাদের এক অপূরণীয় ক্ষতিও করেছে। পথ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন প্রিয় গায়ক কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্য। বন্ধ হয়ে গেল লোকসঙ্গীত চর্চা ও গবেষণার এক ধারা। 

তবুও বসন্ত আসে, নতুনের নিশান ওড়ায়, আমরা বসন্ত উৎসব করি।

ঋতবাকের বসন্ত-উদযাপন এবার হলো দিল্লীতে। বেঙ্গল অ্যাসোশিয়ন আয়োজিত দিল্লী বইমেলায় ১৪ই মার্চ থেকে ১৯শে মার্চ পাঠকের রঙ ছড়ানো মনে খুঁজে পেলাম বসন্তকে। সঙ্গে ছিলেন ঋতবাক পরিবারের দিল্লিবাসী আত্মজনেরা।

স্বস্থ থাকুন। সুস্থ থাকুন। শুভেচ্ছা নিরন্তর।