Next
Previous
0

সম্পাদকীয়

Posted in


সম্পাদকীয়




দারুণ দহনবেলা... নাই রস নাই... প্রখর তপনতাপে আকাশ তৃষায় কাঁপে, বায়ু করে হাহাকার। এমনই এক ক্লান্ত দীর্ঘ দগ্ধ দিনের অবসানে এক ডালি সুবাসিত সাহিত্য নিয়ে পাঠকের দরবারে হাজির ঋতবাক ২য় বর্ষ, ২১তম সংখ্যা। 

আগেও অনেকবার বলেছি, ভারতবর্ষের আবহমান অপৌরুষেয় সংস্কৃতির উৎস সন্ধানই ঋতবাক-এর সুদূরপ্রসারী অভিক্ষেপের মূল উপজীব্য বিষয়াভিলাস। কিন্তু এ কোন ভারতবর্ষ? কোন অপৌরুষেয় সংস্কৃতি? সমগ্র মানবসভ্যতার অগ্রগতির বৈশ্বিক ইতিহাসে ভারতীয় জনজাতি যে চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে গরিমান্বিত হয়ে এসেছে এতদিন, আজ তো সেখানেই একটা বড়ো প্রশ্নবোধক চিহ্ন স্থান করে নিয়েছে সব কিছু সরিয়ে। যে দিকে তাকাই, অসহিষ্ণুতা। ধৈর্যহীনতা। আত্মগর্বের উন্মত্ত উল্লাস। আত্মদম্ভের নির্লজ্জ, অশালীন, উৎকট প্রচার। কিন্তু কেন এই অসহিষ্ণুতা, ধৈর্যহীনতা? কিসের এত দম্ভ? একই মানুষের একাধিক মুখাবয়ব। আজ যিনি প্রাতঃস্মরনীয়, কালই তাঁর সংশ্রব ভদ্রসমাজে লজ্জার কারণ। আধুনিকতা ও ঋজুতার নামে চরম আত্মকেন্দ্রিকতা। সেন্স অফ কারেক্টনেস – নৈতিক মূল্যবোধের নামে আত্মপক্ষ সমর্থনের “ছাগলেরও দাড়ি আছে, রবীন্দ্রনাথেরও দাড়ি আছে...” জাতীয় অকাট্য কুযুক্তি নির্মান। ভারতবর্ষের আবহমান অপৌরুষেয় সংস্কৃতির উৎস কি শুধুই যুক্তিনির্ভর? সেখানে কি কোথাও হৃদয়বেত্তার উচ্ছ্বসিত উষ্ণতা, প্রাণের কোমল পরশ, আবেগের দিশাহারা আকুল আহ্বান, কিছুই ছিলো না? তবে কোন পার্থিব প্রবৃত্তিতে শক, হূণদল, পাঠান, মোঘল একদেহে হয়েছিল লীন? কোথায় গেল ভারত আত্মার সেই ‘দিবে আর নিবে, মিলাবে মিলিবে’র মহান উপলব্ধি? প্রকৃত জ্ঞান তো মানুষকে বিনয়ী করে, বিনম্র করে। তবে কি জ্ঞানের অসম্পূর্ণতার দৈন্যের কারণেই এমন সামগ্রিক অবনমন? আর তাই বুঝি সর্বংসহা ধরিত্রীও আজ তাঁর গর্ভজাত শ্রেষ্ঠতম সন্তানটির এমন সার্বিক অধঃপতনে লজ্জায়, ঘৃণায়, শোকে, দুঃখে বারংবার শিউরে উঠছেন। 

এখানেই স্তব্ধ হোক আজ লেখনী। শুধু প্রার্থনা মন্ত্র উচ্চারিত হোক – উপলব্ধি করো নিজেকে, স্মরণ করো তোমার জন্মের কারণ, আত্ম-অক্ষে স্থিত হও, শুধু যুক্তি নয় – মানবিক বৃত্তির চর্চায় পূর্ণতা লাভ করো। 

নিরন্তর শুভকামনা...

সুস্মিতা বসু সিং