সম্পাদকীয়
Posted in সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়
গ্রীষ্মস্ তে ভূমে বর্ষাণি
শরদ্ হেমন্তঃ শিশিরো বসন্তঃ।
ঋতবস্ তে বিহিতা হায়নীর্
অহোরাত্রে পৃথিবি নো দুহাতাম্ (অথর্ববেদ। কাণ্ড ১২। সুক্ত ১। শ্লোক ৩৬।)
গ্রীষ্ম তোমার, ওগো ভূমি, বর্ষা শরৎ হেমন্ত
শিশির এবং বসন্ত
বাঁধাধরা এই ঋতুরা, বছরগুলি, দিন ও রাত
মোদের 'পরে, ও পৃথিবী, দুধের ধারা ঝরঝরাক (অনু. গৌরী ধর্মপাল)
গ্রীষ্ম তার উপস্থিতি প্রবলভাবেই জানান দিচ্ছে। এই গ্রীষ্মে ঋতবাক চায় যে তার সকল ঋতব্রতী আপনজন বঙ্গবাণীর মাতৃদুগ্ধের ধারাস্নানে সিক্ত হোন। আজ থেকে ছিয়ানব্বই বছর আগে এই গ্রীষ্মেই জন্মেছিলেন সত্যজিৎ রায় (০২.০৫.১৯২১ ---২৩.০৪.১৯৯২)। ঋতবাক এই সংখ্যায় তাঁকে স্মরণ করছে। আমাদের তৃতীয় বর্ষ, দশম সংখ্যার নাম সত্যজিৎ সংখ্যা।
এই সংখ্যা থেকে শুরু হলো ঋতবাকের নতুন বিভাগ 'আলাপ বিস্তার'। জীবনের এক অন্যতর অভিজ্ঞতা - সরাসরি।
একটা অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে ইচ্ছে করছে। গত ৫ই মে, দুপুর ১.৩০ আমরা গিয়েছিলাম আশানিকেতনে। এফ-এম-আর (Fellowship with Mentally Retarded)ইন্ডিয়ার অধীনে ১৯৭২ সালে ব্যাঙ্গালোরে শুরু হওয়া আশানিকেতনের এখন ভারতে মোট ৫টি শাখা। ব্যাঙ্গালোর, চেন্নাই, কেরালা, কলকাতা, আসানসোল। ১৯৭৩এ কলকাতার আশানিকেতন শুরু হয় একা কাশীদাকে নিয়ে। এখনও আছেন কাশীদা। বয়স হয়েছে। আর্থারাইটিসের ব্যাথাটা মাঝে মাঝেই বড় কাবু করে ফেলে।
'সরকারী সাহায্য পাওয়া যায়না কিছুই। আসলে ওদের প্রোডাক্টিভিটি তো তেমন বেশি নয়! সরকার প্রোডাকশন চায়।' ওয়ার্কশপ আর শোরুম দেখাতে দেখাতে বলে চললেন সুব্রতাদি। 'অনেক খরচ, জানেন। সবচেয়ে বেশি খরচ ওষুধের। সকলেরই প্রায় মৃগীর সমস্যা। ডে-কেয়ার আর রেসিডেন্স্যিয়াল মিলিয়ে ১১৫ জন ওরা। সকলকেই চেষ্টা করি ওষুধটুকু অন্তত দিতে। পুরোটা না পারলেও, খানিকটা। পুজোর সময় নতুন জামা দেওয়ারও চেষ্টা করি। প্রতি বছর সবাইকে পারিনা। গতবছর পেরেছিলাম, জানেন! টাকা জোগাড় করতে পেরেছিলাম।'
'কতজন থাকেন এখানে?' -জানতে চাই
'১৬ জন। ওদের সব খরচ আমাদের। আগে আগে একটা ফেসবুক গ্রুপ এই ১৬ জনের ব্রেকফাস্টের খরচটা দিতো। তারপর গ্রুপটাই ভেঙ্গে গেল।'
'কত খরচ হয় মাসে?''
'ব্রেকফাস্টের জন্য? মাসে দু'হাজার টাকা'
এলাম কম্যিউনিটি হলে। সেখানে তখন অপেক্ষাকৃত বড়রা প্রার্থনা করছেন। পুরো হলটার সবকটা দেওয়াল জুড়ে সব ধর্মের প্রতীক চিহ্ন। সর্ব ধর্ম সমন্বয় এখানে চর্চা করানো হয়। ওদের বিশাল বিশাল হৃদয়ের উত্তাপে ওরা হিংসা-গ্লানি-অসম্মান-পরাজয়-কুটিলতার বিষ-পাঁক নীলকন্ঠের মতো শুষে নিতে জানে। নিজেদের বড় শুদ্ধ মনে হচ্ছিল। নিজেদের কাছেই নিজেরা কথা দিয়েছি, ওদের জন্য কিছু একটা করব। কি করব, জানিনা। কিন্তু কিছু একটা করতেই হবে। আপনারাও আছেন সঙ্গে, বুঝেছি। এরই মধ্যে পেয়েছি সাহয্যের প্রতিশ্রুতি এবং বেশ কিছু চেক FMR INDIA-র নামে। আরও যাঁরা সাহায্য করতে চান, FMR-INDIA-র নামে একটা অ্যাকাউন্ট পেয়ি চেক পাঠাতে পারেন, SWAPAN DEB, 16B RAJA NABA KRISHNA STREET, KOLKATA-700005 -এই ঠিকানায়। চেকের সঙ্গে একটা আলাদা কাগজে আপনার নাম, মোবাইল নং এবং মেল আইডি লিখে দেবেন। পাঠানোর আগে মোবাইলে চেকের একটা ছবি তুলে রাখবেন। চেকে তারিখ বসাবেন না। যাঁর চেক তাঁকে জানিয়েই চেক ব্যাঙ্কে ফেলা হবে।
সঙ্গে থাকার কথা বলতে মনে এল আগামী ১৮ই জুনের কথা। ঐ দিন ৩ আষাঢ়, ১৪২৪ ঋতবাক বর্ষাবন্দনা করবে শোভাবাজার রাজবাড়ীর গোপীনাথ জিউয়ের নাটমন্দিরে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে আর প্রকাশ পাবে ঋতবাকের পাঁচটি বই। আপনারা আসছেন নিশ্চয়ই?
সকলে ভালো থাকুন। সুস্থ থাকুন। সৃজনে থাকুন।
শুভকামনা নিরন্তর।