প্রচ্ছদ নিবন্ধ - রঞ্জন রায়
Posted in প্রচ্ছদ নিবন্ধ
গৌরচন্দ্রিকা
সমান নাগরিক আচার সংহিতা বা ইউনিফর্ম সিভিল কোড (ইউ সি সি) একটি স্পর্শকাতর বিতর্কিত বিষয়।
এই বিতর্কের ফ্রেমে রয়েছে মুখ ফুটে না বলা একটি প্রেমিস- হিন্দুসমাজের আইনে মেয়েরা অনেক বেশি জেন্ডার ইকুয়ালিটি এবং স্বাধিকারের স্বাদ পায়, তাই সমাজের বাকি অংশ ওদের অনুসরণ করবে –এটাই তো স্বাভাবিক, এমনটাই হওয়া উচিত।
এর প্রতিক্রিয়ায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ভাবছেন যে রাষ্ট্র তাঁদের সামাজিক ও ব্যক্তিগত পরিসরে খামোকা নাক গলাচ্ছে যা হওয়া উচিত নয়।
গত ৯ ডিসেম্বর, ২০২২ বিজেপি সাংসদ কিরোড়ী লাল মীণা রাজ্যসভায় একটি প্রাইভেট মেম্বার্স বিলে পেশ করেছিলেন যার সার কথা হল দেশে ইউনিফর্ম সিভিল কোড বা সমান আচার সংহিতা জারি করার উদ্দেশ্যে একটি কমিটি গঠন করা হোক।
সেই কমিটি যথাসময়ে রায় দিয়ে জানিয়েছে যে এই ইউনিফর্ম সিভিল কোড দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে বড্ড দরকারি।
তবে এটা নিয়ে আইন প্রণয়নের অধিকার রাজ্য সরকার এবং রাজ্যের বিধানসভার আছে। ভারতে গোয়া হল প্রথম রাজ্য যেখানে ১৮৬৭ সাল থেকে পর্তুগীজদের তৈরি ইউনিফর্ম সিভিল কোড চলছে।
স্বাধীন ভারতে উত্তরাখণ্ড প্রথম রাজ্য, যারা জানুয়ারি ২৭, ২০২৫ তারিখে ইউসিসি বা “সমান নাগরিক সংহিতা”কে আইন হিসেবে ঘোষণা করেছে। এগুলো নাকি আগামী দিনে বাকি রাজ্যের জন্যে পথ দেখাবে। সম্ভবতঃ আসাম হবে দ্বিতীয় রাজ্য যারা ইউসিসি প্রণয়ন করবে।
তবে কেন্দ্রীয় সরকার এখনও জল মাপছে। কেন্দ্রীয় স্তরে আইন পাশ করেনি।
এই শব্দকল্পদ্রুমের পরিবেশে বর্তমান প্রবন্ধে নিচের বিন্দুগুলো নিয়ে আলোচনা শুরু করছি। মোদ্দা কথা-- ইউনিফর্ম সিভিল কোড ব্যাপারটা কী? এবং এটা যদি সবার জন্যে উইন -উইন গেম হয় তাহলে আপত্তির কারণ কী? এ নিয়ে কতদূর চেষ্টা করা হয়েছে এবং কোথায় আটকাচ্ছে?
সিভিল ও ক্রিমিনাল কোড
যেকোন দেশের আইনকানুনকে মোটামুটি দুটো ভাগে ভাগ করা যেতে পারে।
এক, ক্রিমিনাল কোড –যা রাষ্ট্র এবং সমাজের বিরুদ্ধে অপরাধ; এর আওতায় আসবে চুরি-ডাকাতি, খুনজখম, শারীরিক আক্রমণ, ধর্ষণ ইত্যাদি।
দুই, সিভিল কোড—যা্র ভিত্তি হল এক দেশ বা সমাজে বাস করার আচরণ বিধির সামাজিক কন্ট্র্যাক্ট। এতে রয়েছে বিয়ের অনুষ্ঠান পদ্ধতি, বিচ্ছেদ, এবং সম্পত্তির কেনাবেচা, ব্যবসার নিয়ম, উত্তরাধিকার এবং দত্তক নেয়ার নিয়ম কানুন ইত্যদি।
ইউনিফর্ম সিভিল কোড বা সমান নাগরিক আচার সংহিতাঃ
কিন্তু এইখানে এসে কি একটু গুলিয়ে যাচ্ছে?
অনেক লিব্যারাল আধুনিক ভাবনা-চিন্তার লোকজন বলছেন যে ক্রিমিনাল কোড তো জাতিধর্ম নির্বিশেষে দেশের সমস্ত নাগরিকের জন্যে সমান। খুন-চুরি-ডাকাতির অপরাধে শাস্তি দেবার সময় আইন বা রাষ্ট্র নাগরিকের জাতধর্ম দেখে না, একই আইনে একই শাস্তি দেয়। তাহলে একটি গণতান্ত্রিক সেকুলার রাষ্ট্রে সিভিল কোড এক হবে না কেন?
--ভাল কথা; কিন্তু সিভিল কোডের অন্তর্গত অনেকগুলো আইন তো মূলতঃ সবার জন্যেই সমান!
ব্যবসা করতে কন্ট্র্যাক্টের নিয়ম ও আইন, সেলস্ অফ গুডস অ্যাক্টের আইন, জি এস টি, ইনকাম ট্যাক্স, রেজিস্ট্রির নিয়ম, জমি বাড়ি সম্পত্তি কেনাবেচার আইন, মর্টগেজ বা সম্পত্তি বন্ধক রাখার আইন –সবই তো হিন্দু-বৌদ্ধ-শিখ-জৈন-পারসিক-মুসলমান-খ্রিস্টানী সবার জন্যে এক। তাহলে?
--আছে, তফাৎ আছে। ভারতবর্ষে সিভিল কোডের অন্তর্গত কিছু বিষয় বিভিন্ন ধার্মিক এবং আদিবাসী সম্প্রদায়ের জন্যে আলাদা। সেগুলো হল মুখ্যতঃ তিনটি-- বিয়ের অনুষ্ঠান পদ্ধতি এবং বিচ্ছেদ; সম্পত্তির উত্তরাধিকার, এবং দত্তক নেয়ার নিয়ম কানুন।
সমান নাগরিক আচার সংহিতার সমর্থকেরা চাইছেন- ওই তিনটে ব্যাপারেও বিভিন্ন ধর্ম সম্প্রদায়ের লোকজনের জন্যে আলাদা আলাদা নিয়ম বন্ধ হোক। সব ধুয়ে মুছে এক হয়ে যাক, ঠিক স্কুল ইউনিফর্মের মত।
এখানে কর্ণাটকের স্কুলের হিজাব-বিতর্ক মনে পড়া স্বাভাবিক।
আমরা সংক্ষেপে আলোচনার সুবিধের জন্যে দেশের সবচেয়ে বড় দুটো ধর্মভিত্তিক সম্প্রদায়ের (হিন্দু ও মুসলিম) কোড বিল নিয়ে আলোচনা করব।
হিন্দু কোড বিল এবং মুসলিম পার্সোনাল ল’
হিন্দু ল’ এবং মুসলিম ল’এর গোড়ার কাঠামোটি তৈরি হয়েছে কোম্পানির আমলে ক্রমশঃ ১৭৮৩ এবং ১৭৮৫ সালে, অর্থাৎ প্রথম গভর্নর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংসের আগ্রহে এবং প্রাচ্যবিদ্ উইলিয়াম জোন্সের অধীনে কিছু টুলো পণ্ডিত এবং মৌলবীদের ডেকে বিভিন্ন স্মৃতি বা সংহিতা (মনু, যাজ্ঞবল্ক্য, পরাশর ইত্যাদি) এবং কুরানশরীফ ও হাদিস্ ঘেঁটে।
স্বাধীন ভারতে প্রণীত হিন্দু কোড বিলের (১৯৫৫-৫৬) অন্তর্গত রয়েছে চারটে আইন—হিন্দু ম্যারেজ অ্যাক্ট ১৯৫৫; হিন্দু সাকসেসন অ্যাক্ট; হিন্দু মাইনরিটি অ্যান্ড গার্ডিয়ানশিপ অ্যাক্ট এবং হিন্দু অ্যাডপশন (দত্তক নেয়া) এবং মেইন্টেন্যান্স (খোরপোষ) অ্যাক্ট।
তেমনই ভারতের মুসলিমদের রয়েছে মুসলিম পার্সোনাল ল (শরিয়ত) অ্যাক্ট ১৯৩৭। এতে বিয়ে, তালাক, খোরপোষ, দান-দক্ষিণা সব কিছুর ব্যাপারে নির্দেশ দেওয়া রয়েছে। প্রাচীনকাল থেকে মুসলিম জীবনযাপন পদ্ধতির নির্দেশের ব্যাপারে চারটি উৎসকে মান্যতা দেওয়া হয়েছে।
সেগুলো হলঃ কুরআন, সুন্না বা অহল -এ- হাদিস (হজরত মহম্মদের নিজের আচরণে যা সিদ্ধ), কিয়াস (ব্যখ্যা টীকা ভাষ্য ইত্যাদি) এবং ইজমা ( বিদ্বানদের সর্বসম্মত ব্যাখ্যা)।
এছাড়া রয়েছে পলিগ্যামি অ্যাক্ট ১৯৫৬; যার মাধ্যমে ভারতে বহুবিবাহ নিষিদ্ধ করা হলেও মুসলিমদের (অধিকতম চারজন স্ত্রী পর্য্যন্ত) এবং গোয়া ও পশ্চিম উপকূলের কিছু অঞ্চলে অন্য সম্প্রদায়ের জন্যেও একজন পুরুষের একাধিক স্ত্রী আইনসম্মত।
বলে রাখা ভাল বর্তমান বিশ্বে (২০২২ পর্য্যন্ত) ২০০টি দেশের মধ্যে ৫৮টি দেশে বহুবিবাহ আইনসম্মত; এর অধিকাংশই আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের।
এখানে একটা ডিস্ক্লেমার দিয়ে রাখি। আইন যাই হোক, এখন বিশ্বের সর্বত্র, এমনকি ভারতের আদিবাসী এবং মুসলিম সমাজেও একপত্নীই দস্তুর।
তার দুটো কারণ।
এক, এই ধরণের সিভিল আইনগুলো প্রেস্ক্রিপটিভ, ডিটারেন্ট নয়। যেমন হিন্দু বিধবাবিবাহ আইন মানে এই নয় যে সমস্ত বিধবাকেই বিয়ে করতে হবে বা সব পুরুষকে বিধবাকেই বিয়ে করতে হবে বা তাদের শাস্তির ভয় দেখিয়ে বাধ্য করতে হবে। এখানে ব্যক্তিগত পছন্দকে স্থান দেওয়া হয়েছে, করলে কোন বাধা নেই—এই আর কি!
তেমনই মুসলিম সমাজে দুই বা চার বিয়ের অনুমোদন মানে এই নয় যে সবাইকেই বেশি বেশি করে বিয়ে করতে হবে। এমনকি বাংলাদেশ ও ভারতে মুসলিম সমাজেও প্রথম স্ত্রীর বর্তমানে তাঁর অনুমতি বিনা দ্বিতীয় স্ত্রী গ্রহণের নিয়ম নেই। এটা আমরা পশ্চিম বঙ্গে নিজেদের চারদিকে মুসলিম লোকজনের দিকে তাকালেই দেখতে পাই। দু’একটা ব্যতিক্রম ধর্তব্যের মধ্যে নয়।
দুই, আর্থিক, সামাজিক এবং চেতনার বিকাশ।
এখন মেয়েরা বেশি বেশি করে চাকরি বা আর্থিক রোজগারের জীবিকার দিকে ঝুঁকছেন, শিক্ষার প্রসার হচ্ছে। তাঁরা পড়াশুনো করে স্বতন্ত্র রোজগারের মধ্যে নিজেদের ক্ষমতায়নের সম্ভাবনা দেখছেন। নিজেদের স্বাস্থ্য এবং শরীরের অধিকারের বিষয়ে সচেতন হচ্ছেন।
ইউনিফর্ম সিভিল কোড মানে—ওইসব বিভিন্ন আইন বাতিল করে সবার জন্য কোন ধার্মিক রেফারেন্স ছাড়া একটাই আইন চালু করা।
আচ্ছা, তাতে অসুবিধা কী? বেশ আধুনিক এবং প্রগতিশীল শোনাচ্ছে তো। ধর্মনিরপেক্ষ আধুনিক ভারতে এরকমটা হওয়ারই কথা তো! অসুবিধেটা কোথায়?
সংবিধান সভার আর্টিকল ৪৪ এ নেহরুজি এমনই কিছু বলেছিলেন কিনা?
--বলেছিলেন বটে, কিন্তু অসুবিধেটাও তখনই স্পষ্ট হয়েছিল। কন্সটিটুয়েন্ট অ্যাসেম্বলি বা সংবিধান প্রণয়ন সভার ২৩ নভেম্বর, ১৯৪৮ এর বিতর্কটি দেখলেই বোঝা যাবে।
বোম্বাই থেকে কংগ্রেসের নির্বাচিত প্রতিনিধি স্বাধীন দেশের জন্যে ধর্মের অনুশাসনের উর্দ্ধে উঠে একটি সমান নাগরিকতার পক্ষে যুক্তি দেন। বিরুদ্ধে মাদ্রাজ এবং বিহারের প্রতিনিধিরা বলেন –এতে ভারতের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য এবং বিবিধতা নষ্ট হবে। ঐক্য এবং একরূপতা এক কথা নয়।
শেষে একবছর পরে ১৪ নভেম্বর, ১৯৪৯ সালে সংবিধান সভার এই বিষয়ে বিতর্ক সমাপ্ত করে নেহরু বললেন—তাড়াহুড়ো না করে এই প্রগতি জনতার উপর চাপিয়ে না দিয়ে ধীরে ধীরে জনতার মধ্যে চেতনার বিকাশ ঘটিয়ে ওদের সম্মতি নিয়ে ট্র্যাডিশনে পরিবর্তন আনতে হবে। এবং ওঁর পরামর্শ মত ইউনিফর্ম সিভিল কোডের ধারণাটিকে সংবিধানের ডায়রেক্টিভ প্রিন্সিপলের (মার্গদর্শী সিদ্ধান্ত) অধীনে আর্টিকল ৪৪ এ নিচের শব্দে বাঁধা হলঃ
Article 44. Uniform civil code for the citizens.
The State shall endeavour to secure for the citizens a uniform civil code throughout the territory of India.
ঠিক আছে, কিন্তু করে ফেলতে কিসের অসুবিধে? সত্তর বছর হয়ে গেল যে!
হিন্দু ম্যারেজ অ্যাক্ট অনুযায়ী বিয়ে
--দেখুন, হিন্দুদের স্মৃতিশাস্ত্রে বিহিত আটরকমের বিয়ের মধ্যে শুধু ‘প্রাজাপত্য’ই আজকাল চলছে। এতে বাবা বা তাঁর অবর্তমানে পরিবারের কোন গুরুজন ‘কন্যাদান’ করে আর বিয়ের কার্ডে প্রজাপতির ছবির নীচে ‘প্রজাপতয়ে নমঃ’ লেখা থাকে। প্রজাপতির নির্বন্ধে ডিভোর্সের কথাই ওঠে না, জন্ম-জন্মান্তরের বন্ধনে হাঁসফাস করলেও।
অবশ্য আজকাল যেটাকে লাভ ম্যারেজ বলা হয় সেটা মনু’র গান্ধর্ব বিবাহের (বর কনে নিজেদের সম্মতি বা পছন্দের হিসেবে) আধুনিক রূপ মাত্র।
তবে ইদানীং হিন্দু ম্যারেজ অ্যাক্টে কিছু সংশোধন হয়েছে। তাই সময়ের দাবিতে কিছু শর্ত সাপেক্ষে ডিভোর্সের সুযোগ রয়েছে। এই বিয়ের অনুষ্ঠানে সপ্তপদী গমন এবং যজ্ঞ একটি আবশ্যিক অনুষ্ঠান। আর রয়েছে (হিন্দি বলয়ে) সাতটি শপথ (সাতোঁ বচন) নেওয়ার কথা, যেমন পরস্পরের প্রতি বিশ্বস্ত থাকা- ভাত- কাপড়ের দায়িত্ব নেওয়া, ইত্যাদি।
মুসলিম বিয়ে
কিন্তু মুসলিম বিয়ে হল পিওর কন্ট্র্যাক্ট। বিয়ে মসজিদে না হয়ে কারও বাড়িতে (কন্যার ঘরে) হয়। পুরোহিতের স্থানে কাজি বসেন বটে, তবে পাঁচ জন সাক্ষী রেখে কন্যাকে বসিয়ে তিনবার জিজ্ঞেস করা হয়—আপনি কি অমুককে কবুলনামায় লেখা শর্ত অনুযায়ী জীবনসঙ্গী হিসেবে স্বীকার করতে রাজি?
কন্যা তিনবার ‘কবুল’ বললে একই কন্ট্র্যাক্টের পাঁচ কপিতে ওরা দুজন, কাজি এবং সাক্ষীদের সইসাবুদ হয়ে গেলে বিয়ে সম্পন্ন হয়। ওদের দুজন এবং সাক্ষীদের কাছেও একটি করে ওই নিকাহ্নামা বা চুক্তির কপি থাকে। তাতে কন্যার সিকিউরিটি হিসেবে পূর্বনির্ধারিত ‘দেনমোহর’ কত টাকা তার উল্লেখ থাকে। বিয়ের সময় ওই টাকা মেয়ের হাতে দিতে হয়।
যদি কিছু বকেয়া থাকে সেটা ডিভোর্স বা তালাক দিলে তখন দিতে হয়। একেবারে কন্ট্র্যাক্ট ও তার কনসিডারেশন! তবে বাস্তবে কী হয় সেটা অন্য প্রসংগ।
চুক্তি বলেই মুসলিম ম্যারেজ অ্যাক্টে তিন রকমের তালাকের প্রথা রয়েছে—আহসান, হাসান, এবং বিদ্যৎ। ভাববার সময় না দিয়ে যখন মর্জি তখন তিনবার ‘তালাক’ বলে স্ত্রীকে ঘরের বাইরে করে দিলাম-এটাই ওই বিদ্যৎ তালাক। এটা প্রথাসিদ্ধ কিন্তু শরিয়ত অনুমোদিত নয়, তাই অধিকাংশ মুসলিম দেশে এই রকম তালাক উঠে গেছে।
ভারতেও সুপ্রীম কোর্টের রায় মেনে আইন করে শুধু ওই তালাক-এ-বিদ্যৎ নিষিদ্ধ হয়েছে, বাকি দুটো নিয়ম যথাবৎ আছে।
ক্রীশ্চান ম্যারেজ অ্যান্ড ডিভোর্স অ্যাক্টের (১৮৭২) অনুষ্ঠান চার্চে হতেই হবে। কিন্তু ইসলাম ও ক্রিশ্চানিটি দুটোই আব্রাহামিক ধর্ম, তাই অনুষ্ঠানে কিছুটা মিল রয়েছে। পাদ্রী সবার সামনে ব্রাইডকে তিনবার জিজ্ঞেস করে সম্মতি পেলে পরমপিতা পরমেশ্বরের আশীর্বাদে বা দৈব ইচ্ছায় ওই জোড়াকে তখন বিধিসম্মত স্বামী-স্ত্রী বলে ঘোষণা করেন। তারপর বলেন –এখন তোমরা একে অপরকে চুমো খেতে পার।
তখন ওরা সবার সামনে একে অপরকে চুমো খায়, ব্যস্।
হিন্দুদে্র শুধু মালাবদল হয়, সবার সামনে চুমো-টুমো খাওয়ার সুযোগ নেই। এবার বলুন, এই তিনরকমের বিয়ের আইন তুলে দিয়ে কী করতে চান? কেমন কোড আনতে চান?
চুমো খাওয়া তুলে দেবেন? নাকি সবাইকেই ভবিষ্যতে আইন মেনে চুমো খেতে হবে?
সাক্ষীসাবুদ-দেনমোহর করে রীতিমত চুক্তিপত্রে সই করে বিয়ে দেওয়া তুলে দেবেন? নাকি সবাইকেই ওইরকম করতে হবে?
সপ্তপদী, যজ্ঞ, অরুন্ধতী নক্ষত্র দেখানো তুলে দেবেন? নাকি সবাইকেই তাই করতে হবে?
আরও আছে। হিন্দু তেলুগু সম্প্রদায়ে মামাতো ভাইবোনের মধ্যে বিয়ে সবচেয়ে উত্তম সম্বন্ধ ধরা হয়। আমার এক কলীগ তিনভাই। ওরা ওদের আপন মামার মেয়েদের বিয়ে করেছে।
এটা কি বাদ যাবে? নাকি সবাইকে মামাতো পিসতুতো ভাইবোনের মধ্যে বিয়ে করতে হবে?
মুসলমানদের মধ্যেও তুতো ভাইবোনের মধ্যে বিয়ে করার চল আছে।ওদের হয়তো অসুবিধে হবে না? কিন্তু আমাদের, মানে উত্তর এবং পূর্ব ভারতীয় হিন্দুদের?
এছাড়া দক্ষিণ ভারতের হিন্দুদের বিয়ে হয় সাধারণতঃ মন্দিরে, যেমন ক্রিশ্চানদের হয় চার্চে। কিন্তু অন্য হিন্দুদের এমন নয়।
তারপর অ্যান্থ্রোপলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার হিসেবে ভারতে ৪৬০০ আদিবাসী সম্প্রদায় আছে যাদের পূজার্চনা এবং বিবাহ সংস্কারের নিয়ম আমাদের থেকে ভিন্ন। ওদের সংস্কৃতিকেও কি দুরমুশ করে আমাদের মত করতে হবে?
--ভাল জ্বালা! তার চেয়ে বিয়ের জন্যে এমন একটা আইন করা যায় না যাতে দুজন প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলেমেয়ে , নিজেদের জাত ধর্ম বাবা-মার অনুমতির তোয়াক্কা না করে ধর্মের দোহাই না দিয়ে বিয়ে করতে পারে? তাহলেই তো ল্যাটা চুকে যায়।
সে আইন তো কবেই হয়ে গেছে—স্পেশ্যাল ম্যারেজ অ্যাক্ট ১৯৫৪। অর্থাৎ হিন্দু ম্যারেজ অ্যাক্টের (১৯৫৫) একবছর আগে। তাতে শুধু ছেলের বয়েস ২১ হতে হবে, আর মেয়ের ১৮।। তবে প্রধানমন্ত্রী বলছেন শিগগিরই মেয়েদের বয়েসও আইন করে বাড়িয়ে ২১ করে দেওয়া হবে, ভাল কথা। কিন্তু মুসলিম ম্যারেজ অ্যাক্টে কনের বয়স ১৫ হলেই যথেষ্ট, কয়েক দশক আগে হিন্দুদেরও তাই ছিল।
তফাৎ হল—হিন্দু ম্যারেজ অ্যাক্টে আগে বিয়ে, পরে রেজিস্ট্রি। স্পেশ্যাল অ্যাক্টে আগে দরখাস্ত দিলে রেজিস্ট্রার দেবে একমাসের নোটিস, তারপরও যদি মিয়া-বিবি রাজি থাকে, তবে একই সঙ্গে রেজিস্ট্রি এবং বিয়ে।
তাহলে আর হৈ চৈ কিসের?
কারণটা রাজনৈতিক, পরে আসছি। আগে সম্পত্তির উত্তরাধিকার নিয়ে বলি।
হিন্দু ও মুসলিম কোডে মেয়েদের সম্পত্তির অধিকার
হিন্দু কোড বিলে মেয়েদের পৈতৃক সম্পত্তিতে কোন অধিকার ছিল না। প্রথমে সংশোধিত হয়ে মেয়েদের বসবাসের অধিকার স্বীকৃত হল, কিন্তু মালিকানা হক নয়। পরে ২০০৫ সালের সংশোধনে ভাই এবং বোনের সমান অধিকার স্বীকৃত হল। তারপর ২০২২ সালের একটি রায়ে সুপ্রীম কোর্ট বললেন যে বিবাহিত মেয়েরাও ভাইয়ের সমান অংশীদার, সমান ভাগ পাবে।
মুসলিম কোডে কিন্তু প্রাচীন কাল থেকেই সম্পত্তিতে বাবা-মায়ের পৈতৃক এবং স্বোপার্জিত সম্পত্তিতে মেয়েদের অধিকার স্বীকৃত, সে বিবাহিত হলেও। তবে সবসময় সেটা ছেলেদের সমান ভাগ নয়, কখনও ১/২, কখনও ১/৪।
ব্যাপারটা বেশ জটিল। এর জন্যে উপযুক্ত সংস্থা হল ল’ কমিশন। ওদের দিয়েই এসব আইন ও ট্র্যাডিশনের প্যাঁচ খুলে একটি আধুনিক সিভিল কোডের খসড়া বানানো হোক।
তবে ল’ কমিশন কোন সাংবিধানিক(constitutional) অথবা বৈধানিক (statutory) সংস্থা (body) নয়। এটি বিশুদ্ধ প্রশাসনিক সংস্থা যা ভারত সরকারের নির্দেশে কোন নিশ্চিত ইস্যুতে এবং নির্ধারিত সময়ের জন্য গঠিত হয়।
এর দায়িত্ব হল আইনের সংস্কারের ব্যাপারে রিসার্চ করে সরকার চাইলে বা স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে পরামর্শ দেওয়া।
বর্তমান ভারত সরকার ইউ সি সি’র বিষয়ে ২০১৬ সালে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি জাস্টিস বি এস চৌহানের অধ্যক্ষতায় ২১ তম ল’ কমিশন গঠন করে।
উনি এ’ব্যাপারে আম নাগরিক এবং সিভিল সোসাইটির অভিমত এবং পরামর্শ জানতে চেয়ে ৩/১০/২০১৬ তারিখে এক ১৬ বিন্দু প্রশ্নাবলী সম্প্রচারিত করেন। নভেম্বর মাসের মধ্যে প্রায় দশ হাজার উত্তর এবং মতামত পেয়ে বেজায় খুশি হয়ে প্রেসকে জানিয়েও দেন।
কিন্তু উনি ২০১৮ তে কোন রিপোর্ট পেশ না করেই অবসর নেন।
অবশেষে ভারত সরকার গত ৮/১১/২২ তারিখে কর্ণাটক হাইকোর্টের সদ্য অবসরপ্রাপ্ত চিফ জাস্টিস ঋতুরাজ অবস্থীর অধ্যক্ষতায় ২২তম ল’ কমিশন গঠন করেছে। জাস্টিস অবস্থী কর্ণাটকের বিবাদিত হিজাব মামলার রায়দাতা যা কর্ণাটকের বিজেপি সরকারের নীতিতেই সীলমোহর লাগিয়েছে।
আশা ছিল, মার্চ ২০২৩ নাগাদ ল’ কমিশন ইউ সি সি ইস্যুতে তাঁদের রেকমেন্ডেশন বা সুপারিশ ভারত সরকারকে জানিয়ে দেবেন। কিন্তু মে’ ২০২৩ সাল এসে গেল, কমিশন নিশ্চুপ।
সমান নাগরিক আচার সংহিতা বা ইউনিফর্ম সিভিল কোড (ইউ সি সি) ও রাজনীতি
আসলে সমান আচার সংহিতা নিয়ে এত আগ্রহের পেছনে রয়েছে আরেকটি ইস্যু – মুসলিম সম্প্রদায়ের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ।
মোদীজি ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার আগে থেকেই বিজেপি ও আর এস এসের ঘোষিত তিনটে এজেন্ডা ছিল –রাম মন্দির নির্মাণ, সংবিধান থেকে ৩৭০ ধারা বাতিল এবং ইউনিফর্ম সিভিল কোড। এর জন্যে দরকার ছিল বড় মাপের সংখ্যাগরিষ্ঠতার। সেটা পাওয়া গেল ২০১৯ সালের মে মাসের সাধারণ নির্বাচনে।
ব্যস্ ব্রুট মেজরিটির জোরে ৫ অগাস্ট ২০১৯ সালে বাতিল হল আর্টিকল ৩৭০, অবশ্য নাগাল্যান্ড, মিজোরাম ইত্যাদির আলাদা আইন, আলাদা পতাকার অনুমতি নিয়ে আর্টিকল ৩৭১ আগের মতই রয়ে গেল।
তারপর ৯ নভেম্বর ২০১৯ তারিখে অযোধ্যা মামলার রায় বেরোল। ৫ অগাস্ট ২০২০তে সংসদে মন্দির নির্মাণের জন্য বিশেষ ট্রাস্ট গঠনের ঘোষণা হল।
বাকি রইল একটাই—সমান নাগরিক আচার সংহিতা, ইউনিফর্ম সিভিল কোড।
এতসব চেঁচামেচির একটাই লক্ষ্য—মুসলিম আইনে যে চারটে বিয়ের অনুমোদন রয়েছে সেটা বাতিল করে সবাইকে এক পত্নীব্রতে থাকতে বাধ্য করা।
ওদের যুক্তিঃ বেশি পত্নী মানেই বেশি সন্তান; এর মানে মুসলিমদের জনসংখ্যা বৃদ্ধি। তার মানে কোন এক ভবিষ্যতে ওরা মেজরিটি হবে এবং আমাদের দেশকে ফের ভাগ করবে।
এটা খোলাখুলি সোশ্যাল মিডিয়ায় বলা হয় এবং বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক নেতারা এটাকে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের মোড়কে গম্ভীর মুখে বলে থাকেন।
প্রধানমন্ত্রী সে’ বছর স্বাধীনতা দিবসের অভিভাষণে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের গুরুত্বের কথা বলে এটাকে ‘a form of patriotism’ আখ্যা দেন। অর্থাৎ যাদের সন্তান বেশি তারা দেশকে ভালবাসে না।
উনি সেটা বলতেই পারেন। ওঁরা পাঁচ ভাই, এক বোন। আবার উত্তর প্রদেশের যোগীজিরা হলেন চার ভাই, তিন বোন।
মোদীজির ভাষণের একই দিনে ১৫ই অগাস্ট, ২০১৯শের স্বাধীনতা দিবসে আসাম সরকার ঘোষণা করে দিল যে যাদের দুটোর বেশি সন্তান রয়েছে তারা সরকারি চাকরি পাবে না এবং স্থানীয় স্তরে কোন নির্বাচনে দাঁড়াতে পারবে না।
অবশ্য তখন এন ডি এ জোট থেকে বেরিয়ে এসে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার স্বাধীনতা দিবসের অভিভাষণে বলেছিলেন যে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য কোন নতুন আইনের দরকার নেই। ওঁর একটিই সন্তান।
এদিকে প্রাক্তন মন্ত্রী এবং ইউপির মুজফফরনগর কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত সাংসদ সঞ্জীব বালিয়ান সেই ২০১৯ থেকে নিয়মিত সংসদে বলছেন ভারতে জনসংখ্যা যে হারে বেড়ে চলেছে যে রিসোর্সে টান পড়ছে, করদাতাদের উপর বোঝা বাড়ছে, এখনই ১৩৫ কোটি ছাড়িয়ে গেছে, ভবিষ্যতে কী হবে? ওঁর আবেদনে ১২৫ জন সাংসদের সই ছিল।
তবে ডঃ রাকেশ সিনহার (আর এস এস বুদ্ধিজীবি এবং রাজ্যসভার মনোনীত সদস্য) তিনবছর আগে পেশ করা বিলটিকে ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে স্বাস্থ্য এবং পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী মনসুখ মণ্ডাভিয়া অপ্রয়োজনীর বলে মতপ্রকাশ করে খারিজ করে দেন।
ওনার মতে দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির দর আশংকাজনক নয়। জোর করে প্রতি পরিবার দুই সন্তানের লক্ষণরেখা টেনে দেওয়ার দরকার নেই। সরকারের প্রচেষ্টায় জনতা এখন অনেক জাগরুক, বাকিটুকু শিক্ষার আরও প্রসার হলেই হয়ে যাবে।
তখন রাকেশ সিনহা বিলটি প্রত্যাহার করে নেন।
কিন্তু উত্তর প্রদেশ সরকার দুই সন্তানকে বাধ্যতামূলক করার খসড়া বিল জুলাই ২০২১ শে বিধানসভায় পেশ করে।
তবে জুলাই, ২০২১ এর সংসদে দুই বিজেপি এম পির প্রশ্নের উত্তরে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন যে NFHS III(2005-06) সার্ভে হিসেবে TFR 2.7 ছিল, তারপর NFHS IV (2015-16) অনুযায়ী কমে 2. 2 হয়ে গেছে। কাজেই আইন করে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করার দরকার নেই।
তারপর গতবছর জুন মাসে স্বাস্থ্য মন্ত্রক থেকে জানানো হয় যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মণ্ডাভিয়া কোনরকম জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ বিল আনার কথা ভাবছেন না যেহেতু NFHS V অনুযায়ী ভারতের টোটাল ফার্টিলিটি রেশিও স্থায়িত্ব দর ২.১ থেকে কমে ২.০ হয়ে গেছে।
তবু গত ৯ ডিসেম্বর তারিখে দু’জন বিজেপি এম পি নিশিকান্ত দুবে এবং রবিকিষণ লোকসভায় প্রাইভেট মেম্বার্স পপুলেশন কন্ট্রোল বিল পেশ করেছেন। রবিকিষণ, ভোজপুরি লোকগায়ক এবং গোরখপুরের বিজেপি এমপি, ওঁর তিন মেয়ে এক ছেলে।
প্রধানমন্ত্রী না স্বাস্থ্যমন্ত্রী, কে ঠিক?
দুই বিপরীত মেরুর বক্তব্য বুঝতে হলে কিছু সরকারী ডেটা দেখুন। ২০১১ সালের সেন্সাস অনুয়ায়ী আমাদের দেশে ধর্মভিত্তিক নাগরিকদের সংখ্যা ও অনুপাতঃ
সম্প্রদায় জনসংখ্যার প্রতিশত
হিন্দু ৭৯.৮০
ইসলাম ১৪.২৩
খ্রীস্টান ২.৩০
শিখ ১.৭২
অন্যান্য ১.৯৫
মোট ১০০.০০
National Family Health Survey (NFHS-5) অনুযায়ী ভারতের গড় ফার্টিলিটি রেশিও ২.২ থেকে কমে ২.০ হয়েছে। আন্তর্জাতিক রিপ্লেসমেন্ট রেশিও হল ২.১। অর্থাৎ যে অনুপাতে জনসংখ্যা বৃদ্ধি (নতুন জন্ম-নতুন মৃত্যুর সংখ্যা কাটাকুটি করে যা পাওয়া যায়) স্থির থাকে। তার মানে এখন ভারতের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার আশংকাজনক নয়।
মাত্র পাঁচটি স্টেটের টি এফ আর ন্যাশনাল অ্যাভারেজের এবং রিপ্লেসমেন্ট রেশিওর থেকে বেশি। তারা হল—
বিহার (২.৯৮), মেঘালয় (২.৯১), উত্তর প্রদেশ (২.৩৫), ঝারখণ্ড(২.২৬) এবং মনিপুর (২.১৭)। এর কোনটিই মুসলিম বহুল রাজ্য নয়। অথচ, মুসলিম প্রধান জম্মু-কাশ্মীর(১.৩) এবং বঙ্গে (১.৬) টি এফ আর ন্যাশনাল গড়ের থেকে অনেক কম।
তার মানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির দর ধর্ম নির্ভর নয়, বরং শিক্ষার হার এবং জীবনযাপনের স্তরের উপর নির্ভরশীল।
শেষপাতেঃ
এত আশকথা পাশকথার পর মোদ্দা কথাটা হলঃ
বিয়ে এবং পারিবারিক সম্পত্তির ভাগাভাগির নিয়ম বৈচিত্র্যময় এবং বিভিন্ন সম্প্রদায়ের আভ্যন্তরীণ ব্যাপার। এটি অন্য সম্প্রদায়কে স্পর্শ করে না। এর পরিবর্তন বা সংস্কার ওই সম্প্রদায়ের ভেতর থেকে হলে তবেই তা সহজে সবার জন্যে সহজে গ্রহণযোগ্য হয়। জোর করে সবাইকে বাটার সাত নম্বর জুতো পরানোত কী দরকার!
যাঁরা নারী-পুরুষের সমানাধিকারের প্রশ্নে আদালতের রায়ে মুম্বাইয়ের হাজি আলি দরগায় মুসলিম নারীর প্রবেশাধিকার নিয়ে উল্লসিত হচ্ছিলেন, তাঁরাই কেরালার শবরীমালা মন্দিরে নারীর প্রবেশের বিরুদ্ধে পথে নেমে অবরোধ গড়লেন। অর্থাৎ সমান নাগরিক সংহিতার ইস্যুটি পুরোপুরি সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক এজেন্ডা।
আবশ্যক বিভিন্ন ধার্মিক আচারের প্রগতিশীল সংস্কারগুলোর জন্যে ইউসিসি আদৌ জরুরি নয়, দরকারমত ইস্যুভিত্তিক আইন পাশ করেই কাজটি করা যেতে পারে। তিন তালাক সংশোধন এবং শবরীমালা এবং হাজি আলি ইস্যুতে সুপ্রীম কোর্টের রায় তার প্রমাণ।