ধারাবাহিক - নন্দিনী সেনগুপ্ত
Posted in ধারাবাহিক১
বেলা বারোটা নাগাদ লোকজন বেরিয়ে এলো কাজের জায়গা থেকে। বাসে ট্রামে একেবারে গাদাগাদি ঠাসাঠাসি অবস্থা। পুলিশগুলো রাজপথের চৌমাথার মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে সাদা দস্তানা পরে যান নিয়ন্ত্রণ করছে। সাইকেল আরোহীরা গাড়িগুলোর ফাঁকফোকর গলে গলে সিগন্যালের সামনে গিয়ে লাইন দেবার চেষ্টা করছে। নতুন করে মানুষের স্রোত বেরিয়ে আসছে অফিসবাড়িগুলোর খোলা দরজা দিয়ে। আরও মানুষ এসে ফুটপাথের ভিড়ে অশান্ত ভাবে হেঁটে যাওয়া মানুষগুলোর সঙ্গে যোগ দিয়ে ভিড় বাড়িয়ে তুলছে।
একজন ছোটখাট চেহারার তরুণী ভিড়ে অপেক্ষমান গাড়িগুলির মধ্য দিয়ে পথ করে চলে যাবার চেষ্টা করে। একটা গাড়িতে ড্রাইভারের সিটে বসে থাকা এক তরুণ তাকে সতর্ক করে হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে। সেই তরুণের মাথায় কোনো টুপি নেই। গাঢ় রঙের চুলের গুচ্ছ এসে পড়েছে কপালে; তার গায়ের রঙ রোদ্দুরে পুড়ে তামাটে হয়ে গেছে, এমনকি তার হাতগুলো অবধি বাদামি; স্টিয়ারিংয়ের উপরে রাখা হাতে সে কোনো দস্তানা পরেনি, ফলে তার গায়ের রঙ বোঝা যাচ্ছে। অবশেষে ট্রাফিক পুলিশ সিগন্যাল ছেড়ে দেওয়ার পরে সেই তরুণ, গের্ট যার নাম, সে অধৈর্য ভঙ্গিতে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে যানজটের লাইন ধরে চৌমাথার দিকে চলে গেল। এর মধ্যে এক গলিপথ ধরে এক সদ্যতরুণ, তার নাম বের্নহার্ড, সে এসে পড়ল বড় রাস্তায়। তার পিয়ানো শেখার ক্লাস ছিল; বাঁ হাতে সে আঁকড়ে ধরে আছে স্বরলিপির ফাইলটা। তারও মাথাতেও কোনও টুপি নেই; কিন্তু তার সোনালি চুল সুন্দরভাবে আঁচড়ানো, ফলে তার ফ্যাকাশে কপালটা পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। সে পথে কোনওদিকে বিশেষ তাকাচ্ছে না। সে মনে মনে জানে যে তার চলার পথের শেষে এক শান্ত নিরালা পাড়ায় একটা বিশাল চওড়া ফটকের পেছনে তার ঠাকুমার বাড়িটা দাঁড়িয়ে আছে তাকে স্বাগত জানাবার জন্য। এর মধ্যে মানুষজন এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেছে। রাস্তাটা ফাঁকা ফাঁকা হয়ে গেছে। কিছু বিড়াল পথে দৌড়াদৌড়ি করছে। পথের ধারে রেস্তরাঁগুলো ভরে উঠছে এখন। পথ দিয়ে যেতে যেতে থালাবাসন ছুরি কাঁটার ঠুংঠাং ঝনঝন এরকম নানা শব্দ শোনা যাবে। পরিবেশনকারী মেয়েরা, ওয়েটারেরা দৌড়াদৌড়ি করছে রেস্তরাঁয়। খাবার ডেলিভারি করবার জানালাগুলোতে উঁচু হয়ে উঠছে খাবারের ট্রের স্তর। গৃহস্থের বাড়ি হোক বা রেস্তরাঁ, রান্নাঘরের চিমনিগুলো দিয়ে একনাগাড়ে ধোঁয়া বেরচ্ছে। অপেক্ষাকৃত ফাঁকা আবাসিক এলাকাগুলোতে কালো রঙের স্যুটপ্যান্ট পরা অফিসবাবুরা নেমে যাচ্ছেন নিজেদের গাড়ি থেকে। গাড়ির চালক অভিবাদন জানিয়ে চলে যাচ্ছে গাড়ি চালিয়ে, চাকার নিচে গুঁড়িয়ে যাচ্ছে পথের নুড়ি পাথর, জানালার বন্ধ গ্রিলের ওপাশে কুকুরেরা চিৎকার করে কোথাও কোথাও।
সাদা কুকুর, যার নাম ফ্লক, সে ইনেস নামের তরুণীর গায়ের উপরে আহ্লাদে লাফিয়ে উঠল। ফ্লক দৈনন্দিন ভ্রমণের পরে পথের সব ধুলো গায়ে মেখে ভারি নোংরা হয়ে এসেছে। তাকে একপাশে সরিয়ে ইনেস বাড়ির সামনের দরজা খুলে ঢোকে। একজন তরুণ গৃহসহায়ক তাড়াতাড়ি দৌড়ে এসে ফ্লকের কলার ধরে নিয়ে যায় এবং ইনেসকে জানায় যে বাড়ির মালিক ইতিমধ্যেই খাবার ঘরে চলে এসেছেন। ইনেস নিজের ঘরে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়ায়। তারপর দৌড়ে যায় খাবার ঘরে, যেখানে গৃহসহায়ক এর মধ্যেই খাবার পরিবেশন করতে শুরু করেছে। ইনেসের বাবা তার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। সে বাবার গালে চুমু খায়।
শহরে মধ্যদিনের শান্তি বিরাজ করে।
বের্নহার্ড… এই সদ্যতরুণ, যাকে বন্ধুমহলে সবাই ডাকে ‘বের্শেন’ বলে, সে এখন বিকেলবেলা তার ঠাকুমার বাড়িতে পিয়ানোর সামনে বসে আছে। সে পিয়ানোতে বসে অভ্যেস করছে আবার। আজকের ক্লাস ভালই হয়েছিল। কিন্তু পিয়ানোর শিক্ষক বলেছেন যে উঁচু স্কেলে গিয়ে তার বাজনা যেন ঠোক্কর খেতে খেতে যাওয়া এক এবড়োখেবড়ো পথ। শিক্ষক বলেছেন যে মসৃণ সমতল অ্যাসফাল্ট করা রাজপথের মত হওয়া দরকার বাজনার চলন। এমন অদ্ভুত হাতে কলমে তুলনা শুনে বের্নহার্ড স্থির করেছে যে প্রতিদিন অন্তত ঘণ্টা খানেক স্কেল অনুশীলন করা প্রয়োজন তার। স্কেল অভ্যাস করবার পরে নিজের পরিতৃপ্তির জন্য, পরিতোষের জন্য সে বাখের একটি অত্যন্ত কঠিন অথচ আনন্দদায়ক ফিউগ১ বাজাবে সে। বাখ সম্বন্ধে এই সেদিন অবধি তার কোনো উচ্চ ধারণা দূরে থাক, বিশেষ কোনও ধারণাই ছিল না। কিন্তু এখন বাখ সম্বন্ধে জানতে পেরে তার মনে হচ্ছে সে একেবারে ভেসে যাবে সুরের নদীতে। উদাহরণস্বরূপ, বাখের ‘দাস ভলটেম্পেরিয়ের্তে ক্লাভিয়ের’ এই কম্পোজিশনের চতুর্থ ফিউগ তার মনে এক লাজুক এবং নির্মল পবিত্রতার ভাব নিয়ে আসে। তার অনুভবে এমন চিন্তা আসে, মনে হয় যেন বাস্তব পৃথিবী থেকে অনেক দূরে এক ঐন্দ্রজালিক কল্পনার জগতের সন্ধান সে পেয়ে গেছে।
প্রথমে বের্নহার্ড স্কেল বাজানো অভ্যেস করে। তার শিক্ষক অবিরাম ধৈর্য এবং উত্তেজনাপূর্ণ স্থৈর্যের সঙ্গে তাকে যেসব জিনিস শিখিয়েছেন, সেই অনায়াস অথচ নিখুঁতভাবে পিয়ানোর রিড স্পর্শ করা, হাতের মসৃণ ও অবিশ্রান্ত চলনের ক্রিয়া, সবকিছু মনে করে বারবার প্রয়োগ করবার চেষ্টা করে যায় সে। তার শিক্ষক তাকে বুঝিয়েছেন যে প্রায় পিয়ানোর ভেতরে প্রবেশ করে যেতে হবে, যাতে প্রতিটি স্বরকে সে স্পর্শ করতে পারে, আকার দিতে পারে এবং অন্তরে ধারণ করতে পারে। ‘ইল ফো মোদলি লে পিয়ানো’২ … শিক্ষক প্রায় মুদ্রাদোষের মত বারেবারে বলেন এই কথাটা, যেটা তিনি প্যারিস থেকে তার সঙ্গে নিয়ে এসেছেন। তিনি জাতে ফরাসি এবং অদূর ভবিষ্যতে তিনি ফ্রান্সে নিজের অখ্যাত এবং বঞ্চিত ছোট শহরে ফিরে যাবেন। ছাত্র বের্নহার্ডকেও সঙ্গে করে নিয়ে যাবার ইচ্ছে আছে তার। সব ছাত্রের মধ্যে একমাত্র এই জার্মান তরুণের প্রতিভার সমাদর করেন এবং তার ভবিষ্যতের শিক্ষার দায়িত্বটুকু আনন্দের সঙ্গে গ্রহণ করতে চান তিনি।
বের্নহার্ডেরও যথেষ্ট ইচ্ছে আছে তার শিক্ষকের সঙ্গে ফ্রান্সে যাবার; কিন্তু সে জানে না যে আদৌ শেষ অবধি তার বাবা মা এই ব্যাপারটা অনুমোদন করবেন কি না, কারণ তাদের কাছে এই পরিকল্পনাটা অদ্ভুত বলে মনে হয়। তার বয়স সবে সতেরো, এখনও স্কুলের গণ্ডি পেরোয়নি সে এবং নিজের বাবা মাকে সে বেশ মেনে চলে। তাছাড়া এটাও হতে পারে যে দেশের বাইরে পড়াশুনো করতে যাবার জন্য যতখানি টাকাকড়ির প্রয়োজন, সেটা হয়তো তার বাবা মায়ের পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়। যদিও গ্রামে বেশ বড় বাড়িতে এবং গাড়ি ঘোড়া ইত্যাদি নিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে তারা বসবাস করে, তবুও বাবার বেশ কিছু কথায় বের্নহার্ডের মনে হয়েছে যে টাকাপয়সা একটা বড় কারণ এই ক্ষেত্রে। নিজেদের যতখানি স্বচ্ছল বলে অতীতে তার মনে হত, আদপে যদি সেরকম সচ্ছলতা এখন নাও থাকে, সেটা নিয়ে বের্নহার্ড একেবারেই চিন্তিত নয়। তার বেশির ভাগ বন্ধুদের বিশেষ টাকাকড়ি নেই; যেমন সঙ্গীতবিদ্যালয়ের ছাত্র ফার্দিনান্দের কথাই ধরা যাক না কেন! কিন্তু তার বাজনা? আহা, তার বাজনা মনে এমন আনন্দ এবং উচ্চ ভাবনা জাগিয়ে তোলে, যার কোনো তুলনা নেই। গের্ট অবশ্য নিজে গাড়ি চালিয়ে আসে, বাবা মা যথেষ্ট ধনী। ইনেসও বেশ ধনী এবং আহ্লাদী, নাকউঁচু এবং স্বাধীনচেতা প্রকৃতির। ফলে ইনেস কোথাও কোনো সমস্যায় পড়েছে এরকম ভাবনা একেবারেই অবাস্তব। গের্ট এবং ইনেস হল ব্যতিক্রম। বাকিরা বেশিরভাগ মাসের শেষে একটা ছোট পাবে খেতে যায়, যেখানে আনা নামে একটা মেয়ে খাবার পরিবেশন করে এবং সেই পাবে সসেজ আর বিয়ার ছাড়া কিছু পাওয়া যায় না।
বের্নহার্ডের চেনাজানার মধ্যে আরও অনেকেই আছে, যাদের পোশাক আশাক সবসময়ই বেশ ভালো এবং তারা নিয়মিত বেশ ভালো হাতখরচ পায় বাড়ি থেকে। এরা হচ্ছে তার স্কুলের সহপাঠী। কিন্তু এরা বেশির ভাগ তার কাছে ততখানি চেনাজানা নয়; অর্থাৎ সঙ্গীতবিদ্যালয়ের ফার্দিনান্দ এবং অন্যান্য ছাত্রছাত্রীদের সে তার স্কুলের সহপাঠীদের চেয়ে ভালো চেনে। অবশ্য এক দু’ জন আছে স্কুলের সহপাঠী, যারা তার বন্ধু; যেমন কার্ল নামে একটা ছেলে আছে, যার বাবা মা তাকে সপ্তাহে একদিন দুপুরে খেতে ডাকেন এবং তারা একসঙ্গে ল্যাটিন ভাষার হোমওয়ার্ক সারে। এছাড়াও আছে ছোটখাট বাচ্চা বাচ্চা দেখতে হালকা ব্লন্ড চুলের হান্স আহ্লব্যের্গ, যার মা বেশ সুন্দরী, লম্বা। হান্সের মায়ের হাত খুব নরম, হাতের পাতাদুটোর ভেতরের অংশ একদম ভেলভেটের মত কোমল। বের্নহার্ডের মনে আছে একবার তিনি তার জ্বর হয়েছে শুনে দেখতে এসেছিলেন, তারপর তার উত্তপ্ত কপালে হাত বুলিয়ে দিয়েছিলেন। স্কুলে কেবলমাত্র কার্ল এবং হান্স আহ্লব্যের্গের সঙ্গেই তার বন্ধুত্ব; কারণ আসলে বের্নহার্ড একটা দ্বিধাবিভক্ত জীবনে বেঁচে আছে। বের্নহার্ডের জীবনে সেই অর্থে স্কুলের কোনো ভূমিকা নেই, বরঞ্চ সে সঙ্গীত, তার হৃদয়ের অভিলাষ, তার ভালো লাগা নিয়েই ভবিষ্যৎ জীবনে অগ্রসর হতে চায়। তবে বের্নহার্ড কোনো ভাবেই খারাপ ছাত্র নয়। চট করে যেকোনো জিনিস শিখতে পারে সে, যথেষ্ট পরিশ্রমী ছাত্র। তবে পাঠ্যবিষয়ের ভালোলাগার ব্যাপারটা তার ক্ষেত্রে আবার শিক্ষকের উপরে অনেকখানি নির্ভরশীল, বিশেষত অঙ্ক। অদূর অতীতে অঙ্ক নিয়ে তাকে বেশ বেগ পেতে হয়েছিল। কোনো ধ্যানধারণা মাথায় ঢুকছিল না তার; অবশেষে এক তরুণ শিক্ষক এলেন স্কুলে, যার বোঝানোর পদ্ধতি খুব ভালো। বিশেষ কোনো চেষ্টা ছাড়াই সেই শিক্ষকের সুন্দর কণ্ঠস্বরের লেকচার শুনে সে বুঝতে পারে আজকাল সব। অতীতে যে সব অধ্যায়গুলো তার কাছে দুর্বোধ্য বলে মনে হত, এখন সেগুলো ক্রমেই সহজ বলে মনে হচ্ছে তার কাছে। দৈনন্দিন জীবন থেকে নেওয়া এমন সুন্দর উদাহরণ দিয়ে এই শিক্ষক সবকিছু বুঝিয়ে দেন যে অঙ্কের মূল প্রণালীগুলো সহজেই সবাই বুঝতে পারে। এত সহজ জিনিসগুলো এত জটিল কেন ভেবেছিল তারা এতদিন, সেটা জেনেই ভারি অদ্ভুত লাগতে থাকে তার ক্লাসের সবার। অঙ্ক বিষয়টিকে ভারি রোমাঞ্চকর বলে মনে হয়। সমগ্র মহাবিশ্বের গঠনতন্ত্রের পিছনে অঙ্কের খেলা আছে, এমনটি জেনে সবাই চমৎকৃত হয়। যদিও সে সব জটিল রীতিনীতি এখনও স্পষ্টভাবে বুঝে উঠতে পারেনি তারা সবাই, কিন্তু বিষয়ের প্রতি ভক্তি এবং আগ্রহ দিন দিন বেড়ে চলেছে।
অঙ্কের এই ভাষণ শুনবার সময়ে বের্নহার্ডের মনে পড়ল ইয়োহান সেবাসটিয়ান বাখের কথা। বাখের স্বর্গীয়, শৈল্পিকভাবে সংযুক্ত নিখুঁত স্বরমালা, যেন পাখির মত ডানা মেলে উড়িয়ে নেওয়া সুরের কিছু ফিউগের কথা মনে পড়ল তার। মাঝে মাঝে সে অন্যমনস্ক হয়ে যায়। কিন্তু হঠাৎ সে খুব ঘাবড়ে গেল যখন অঙ্কের শিক্ষক তার নাম ধরে ডেকে এখন যে বিষয়টা নিয়ে তিনি বলছিলেন, সেটা পুনরাবৃত্তি করতে বললেন। সে দিশেহারা হয়ে চুপ করে রইল; আবার তার শিক্ষক জানতে চাইলেন যে সে এখন কী ভাবছে। অঙ্কের ভাষণ থেকে সে কী ভাবে বাখের সিম্ফনিতে পৌঁছে গেল, সেটা সে বলতে চাইলেও, এই যোগসূত্রটা তার কাছে একটু ঝামেলার মনে হল সেই মুহূর্তে। তাছাড়া সবাই তাকে ভুল বুঝতে পারে, এমনটাও মনে হল তার। শিক্ষক খুব স্নেহশীল ভঙ্গিতে তাকে আবার জিজ্ঞেস করলেন যে সে বিষয়টা বুঝতে পেরেছে কি না। তখন সে শিক্ষকের নির্দেশ মেনে খুব সাহসের সঙ্গে নিজের জায়গা থেকে উঠে ব্ল্যাকবোর্ডে গিয়ে সেই লেকচারে শোনা সব ফর্মুলার বিশ্লেষণ লিখে ফেলল। তবে নিঃসন্দেহে বের্নহার্ডের উপর দিয়ে আজকাল বেশ ধকল যাচ্ছে। স্কুলের সময়টুকু ছাড়াও আলাদাভাবে সঙ্গীতের অভ্যাস, সন্ধ্যায় সব বিষয়ের তাত্ত্বিক পড়াশুনা, সব মিলিয়ে তার হাতে একেবারেই সময় থাকে না। সকালে সে বেশ তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠেছিল। কিন্তু আবার ঘুমিয়ে পড়েছিল। তারপর লাফ দিয়ে উঠে, হাতে সময় নেই দেখে কাঁপতে কাঁপতে পোশাক পরে তাড়াহুড়ো করে ব্রেকফাস্ট না খেয়েই স্কুলে চলে এসেছে আজ। এরকম কাণ্ড সে কমই করে। তবে আজ ব্রেকফাস্ট খেতে বসলে সে কিছুতেই ঠিক সময়ে স্কুলে পৌঁছাতে পারত না।
(চলবে)
১. ফিউগ (Fugue) সুরের সমাহারে তৈরি স্বরমালিকা২. ‘ইল ফো মোদলি লে পিয়ানো’ (Il faut modeler le piano) ফরাসি এই বাক্যবন্ধের অর্থ হল ‘পিয়ানোর মধ্যে প্রাণপ্রতিষ্ঠা করতে হবে তোমাকে’।