গল্প - প্রদীপ ঘটক
Posted in গল্প-একবার বাবার ভিটেতে নিয়ে যাবি বাবা?
ছেলে রাজি হয়। রাজি হয়েছিল আগেও -দক্ষিণ্বেশ্বর, তারাপীঠ, কালিঘাট, বেলুড় মঠ।
বুড়ি বেশ শক্ত এখনও। বার্ধক্যের রোগ নেই। আপন মনে কাজ করে।
তবু পাড়াপড়শি প্রশ্ন করলে বলে "কবে কি হয়! মরণ কি আর বলে আসে রে ভাই!"
অবশেষে ৪০ বছর পর বুড়ি হাজির হয় বাপের ভিটেয়। সংসারের জাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে গেছে বছরের পর বছর। ভাই-ভাজকে শুধু প্রবোধ দিয়ে গেছে "যাব যাব"। এখন ভরা সংসার- ছেলে-ছেলের বউ, নাতি-নাতনি, নাতজামাই।
বুড়ি খোঁজে চৌড়ি ঘর ,চৌড়ি পিঁড়ে, কাজ করা শালকাঠের খুঁটি, উঠোনের কোণে সেই গন্ধরাজ লেবুগাছ, সরু খিড়কি দরজা। ঘোলা চোখে বুড়ি প্রাণপণে স্মৃতি হাতড়ায়। চেনামুখ কমে গেছে গাঁয়ে, চেনা বাপের বাড়িও।
স্নান করে ধূপ নিয়ে চলে বাড়ি পিছনে দুর্গা বাংলায়,থপথপে পায়ে, ব্লাউজহীন সাদা শাড়িতে। ধাক্কা খায় বুড়ি। সেই আভিজাত্যের পলেস্তারা কবেই খসে পড়েছে। ভগ্নপ্রায় মন্ডপে শুধুই ছিন্ন অতীত। বেঁচে আছে শুধু তিনটে পঁইটে।
বুড়ি সেখানেই প্রণাম ঠোকে, গড় হয়ে। সঙ্গে সঙ্গে চোখে ভাসে সেই জাগ্রত টানা চোখের মূর্তি, রামগোপাল ভটচাজের মন্ত্রোচ্চারণ, ধূপ-ধূনোর গন্ধ, অসংখ্য লোকসমাগম, চারখানা ঢাকের গমগমে বাদ্যি, পাঁঠাবলি, মোষবলি, নবমী নিশির বিষাদ, দশমীর সিঁদুর খেলা।
বুড়ির প্রণামে মন্ত্র নেই। বুড়ি বলে চলে "আবার এস মা,আবার এস মা, আবার এস মা এই মন্ডপে"।
বুড়ি বলে চলে, বলে চলে, বলেই চলে।
তারপর সূর্য মধ্যাহ্নে এল, সূর্য পশ্চিমে গেল, সূর্য আবার পুবে উঠল। বুড়ি উঠল না।