Next
Previous
0

গল্প - অমৃতেন্দু মুখোপাধ্যায়







কুকুরটা ডেকে উঠলো।

অতনু সঙ্গে সঙ্গে ঘাড় ঘুরিয়ে ঘড়ির দিকে তাকালো। বারোটা বেজে তিরিশ। রাত। অতনু ঠিক এটাই আশা করেছিলো, কিন্তু আর একটু নিশ্চিত হওয়া দরকার। এক লাফে বিছানা থেকে নেমে ছাদে গেলো। না, ভুল নেই। সামনের রাস্তাটা পেরিয়ে কৃষ্ণচূড়া গাছটার নিচে কুকুরটা বসে আছে। গাছটার গায়েই ল্যাম্পপোস্টটা দাঁড়িয়ে, ঠিক যেন মধ্যরাতের পাহারাদার। ল্যাম্পপোস্টের হলুদ আলোয় কৃষ্ণচূড়ার শাখাগুলো রাস্তার ওপর আঁকিবুকি কাটছে। সেই আলোছায়ার কাটাকুটির ওপর কুকুরটা বসে। কোনোদিকে ভ্রূক্ষেপ নেই। একদৃষ্টিতে চেয়ে আছে পশ্চিম দিকে, আর তারস্বরে ডেকে চলেছে।

এখন এই ডাক থামবে না। অতনু জানে। একটা বাজার আগে ঘুম আসার সম্ভবনা নেই। ঘরে ফিরে এলো। টেবিলে ল্যাপটপটা রাখা আছে। কোম্পানি অফ হিরোস - নেক্সট মিশনটা শেষ করে ফেলবে আজ। ভিডিও গেমের পোকা ও। কিন্তু গেমে ঠিক মন বসছে না। জার্মান প্যান্থার প্যানজারের একটা ডিভিশন ওর বাংকারগুলো গুঁড়িয়ে দিয়ে গেলো। একটু চাপা অস্বস্তি হচ্ছে। সব কিছু এমন মিলে না গেলেই বোধহয় ভালো হতো। ল্যাপটপটা শাটডাউন করে মশারি টাঙালো। ঘুম না আসলেও শুয়েই পড়বে। কিন্তু আলো নেভাতে সাহস হলো না। জ্বলুক সারারাত। গত সাতদিন ধরে এটাই দস্তুর।

রোদটা মুখের ওপর পড়ছিলো। খুব একটা চড়া নয়, তবু সকালের ঘুম ভাঙ্গানোর পক্ষে যথেষ্ট। পূর্বদিকের জানলা দিয়ে সোজা খাটের ওপর এসে পড়ছে। ইশ অনেক বেলা হয়ে গেছে। চটপট ফ্রেশ হয়ে নিলো অতনু। ক্যান্টিনে ব্রেকফাস্টটা বোধহয় মিস হয়ে যাবে আজ। আজ ল্যাবেও অনেক কাজ আছে। এক্সপেরিমেন্টটা শেষ করে ফেলতে হবে। উমেশ বাড়ি চলে যাবে পরের সপ্তাহে। ডাটা এনালিসিস ওরই করার কথা। এক্সপেরিমেন্ট তার আগে শেষ না হলে সব কিছু আবার এক মাসের জন্য পিছিয়ে যাবে। সময় নেই, কিন্তু চাপ রয়েছে। এবং তা যথেষ্ট পরিমানেই।

বাড়ি থেকে বেরোনোর সময় দেখলো কালকে রাতের কুকুরটা শুয়ে আছে কুন্ডলী পাকিয়ে দরজার কাছে। ওকে দেখে গা ঝাড়া দিয়ে উঠে অল্প ল্যাজ নাড়তে লাগলো। চেঁচালো না, কারণ অতনুকে ও এবং ওর দলের আর সব সদস্যরা ভালো করেই চেনে। এখানে, অর্থাৎ এই ফিফ্থ ক্রসে ও ভাড়া আছে প্রায় পাঁচ বছর। পুরোনো লোককে সম্মান দেয় কুকুরগুলো। কুকুরটার মাথার কাছে সাদা দাগ। গায়ের রং হলুদ। একেবারেই নেড়ি কুকুর। কিন্তু ও দলের নেতা, যাকে বলে আলফা মেল। অনেক দিন ধরেই এই দলটাকে অতনু লক্ষ্য করে, নেহাত খেয়াল বশতঃই করে। অতনু এনিম্যাল বিহেভিওর নিয়ে পিএইচডি করছে। তাই খেয়ালটা বোধহয় একটু উদ্ভট। অবশ্য খেয়াল না করে ওর উপায় নেই, কারণ ফিফ্থ ক্রসটা ওদের দলের এলাকার মধ্যেই পরে। কুকুরদের নিজের নিজের এলাকা থাকে। এলাকা যখন থাকে, তখন তা দখল, বেদখল ইত্যাদি আনুষঙ্গিক ব্যাপারও থাকতে বাধ্য। এলাকা চিহ্নিত করার জন্য যে কাজটা এরা করে থাকে সেটা খুব একটা ভদ্রজনোচিত না হলেও বেশ কার্যকরী এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। এরা এলাকার সীমানা মূত্রত্যাগের মাধ্যমে চিহ্নিত করে! চক, পেন্সিল, আমিন, মাপঝোক এসবের ঝঞ্ঝাট নেই। ব্যাস, এক পা তুলে খালাস করে দিলেই হলো। তবে গোলযোগ যে একেবারেই হয় না তা নয়। আমেরিকায় একটা গবেষণা দেখিয়েছে যে এলাকায় কুকুরদের প্রবল চিৎকার ও হুজ্জুতির একটা বড় কারণ হচ্ছে কুকুরগুলোর গাড়ির চাকায় মূত্রত্যাগ করা। সেই গাড়ি যখন কেউ চালিয়ে অন্য কোনো এলাকায় যায়, তখন নতুন এলাকার কুকুরেরা ভাবে যে বেপাড়ার কুকুর তাদের এলাকায় অবৈধ অনুপ্রবেশ করেছে! বিজাতীয় গন্ধই এই সন্দেহের কারণ। অতঃপর যা হওয়ার তাই হয়, অর্থাৎ ক্ষোভ, চিৎকার ইত্যাদি ইত্যাদি।

মিনিট পনেরোর হাঁটা পথ। ইনস্টিটিউটের ব্যাক গেট দিয়ে অতনু ঢুকে পড়লো। তারপর সারাদিন যে কি ভাবে কাটলো তা অতনুই জানে। দম ফেলার ফুরসৎ পায় নি। কিন্তু সুখের কথা হলো কাজ শেষ, এবারে উমেশ বুঝবে। উইকেন্ডটা ও জাস্ট ল্যাদ খাবে। ইনস্টিটিউটের শাটল বাস ওকে ফিফ্থ ক্রসে নামিয়ে দিয়ে গেলো মধ্যরাত পার করে। ওর পাশের ল্যাবের শ্রীনিবাসনের বাইকটা রাস্তার ওপর দাঁড় করানো। শ্রীনিবাসনও এখানেই ভাড়া থাকে। এখানে বাইক লোকে রাস্তাতেই রেখে দেয়। চুরি ফুরি হয় বলে কখনো শোনে নি। নিঝুম রাতে মোড় থেকে হাঁটতে লাগলো ওর ঘরের দিকে। এ কিছু নতুন বিষয় নয়। প্রায়ই রাত হয়ে যায় ফিরতে। ল্যাবেই জীবন কাটে, ঘর ভাড়া নেওয়া আছে শুধু রাত্তিরে শোয়ার জন্য। ব্যাঙ্গালোরে রাতের দিকে বেশ একটা শীত শীত ভাব থাকে। অভদ্রের মতো হাড়কাঁপানো ঠান্ডা নয়, বেশ নরম আমেজের ঠান্ডা। সারা বছরই থাকে। চিরবসন্তের দেশ। তবে আজকাল অবশ্য আবহাওয়া গুবলেট হয়ে যাচ্ছে ক্রমশ। ব্যাঙ্গালোরে বছর পঁচিশ আগে কোনো বাড়িতে ফ্যান লাগতো না - গ্রীষ্ম কালেও লাগতো না। এখন সে রাম ও নেই আর সে অযোধ্যাও নেই। তবু মোটের ওপর এখনো আবহাওয়া অন্য জায়গার তুলনায় অনেক ভালো। গুনগুন করে একটা গান নিচু গলায় গাইতে গাইতে পা চালাচ্ছিলো। “মুসাফির হু ইয়ারো, না ঘর হ্যায়, না ঠিকানা ... ।”

রাতের নৈঃশব্দ খানখান করে দিয়ে হঠাৎ কুকুরের ডাক শোনা গেলো! মোবাইলটা পকেট থেকে বার করে সময় দেখলো। বারোটা তিরিশ! ওর বাড়িটা দেখা যাচ্ছে এখান থেকে। আর ঠিক ছটা বাড়ি পেড়িয়ে সাত নম্বরটা। বাড়ির সামনে চেনা কৃষ্ণচূড়া, চেনা ল্যাম্পপোস্ট আর তার নীচে সেই কুকুরটা। চেনা জায়গায় বসে চেনা ভঙ্গিতে ডেকে চলেছে। সারাদিন মাথা থেকে কুকুর টুকুর উধাও হয়ে গেসলো। কিন্তু এখন একটা দুর্বোধ্য ধাঁধার মতো সামনে দাঁড়িয়ে। অতনু এগোতে লাগলো। ভালো করে দেখা দরকার। না দেখলে যে খুব ক্ষতি তা নয়, তবে মনটা খচখচ করছে। ঠিক পশ্চিম দিকে কি দেখে কুকুরটা প্রতি রাতে?

ওর বাড়ির সামনে এসে গেছে অতনু। কুকুরটার কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই। যেন অতনুর অস্তিত্বই নেই এই পৃথিবীতে। অন্য কোনো এক অদৃশ্য অস্তিত্ব কুকুরটার ঘুম কেড়ে নিয়েছে। চোখ সরাতে পারছে না ও। এক দৃষ্টিতে যে দিকে চেয়ে আছে সে দিকে ফাঁকা জমি। সেটার শেষ প্রান্তে একটা বাড়ির অবয়ব। আলো নিভে গেছে। সেদিকেই তাকিয়ে রয়েছে কুকুরটা। দৃষ্টি স্থির। ক্রমাগত ডেকে চলেছে। অন্ধকার ঠেলে অতনুর কিছু চোখে পড়ল না। জীব জন্তুরা অন্ধকারে দেখতে পায়। কুকুরটা ঠিক কি দেখছে অতনু না জানলেও একটা ব্যাপারে অতনু নিশ্চিত যে কুকুরটা ভয় পেয়েছে!

সিঁড়ি ভেঙে তিন তলায় উঠে এলো অতনু। তিনতলার ছাদে একটা সিঙ্গল রুম ভাড়া নিয়ে ও থাকে। যত রাতই হোক, বাড়িওলার সঙ্গে সম্মুখ সমরের সম্ভবনা নেই, কারণ ব্যাঙ্গালোরের সব বাড়িগুলোর সিঁড়ি বাড়ির বাইরের দিকে থাকে। প্রথম বার যখন ব্যাঙ্গালোরে এসেছিলো ও অবাক হয়ে গেসলো। আজ খুব ক্লান্ত লাগছে। লম্বা একটা দিন অবশেষে অতনুকে ছুটি দিয়েছে। গিয়ে সোজা ঘুম। কুকুর কেন স্বয়ং যমরাজ এসে ডাকাডাকি করলেও আজ ঘুমের ব্যাঘাত হবে না। তবে কাল একটা ছোট্ট ইনভেস্টিগেশন করার ইচ্ছে রইলো।

সকাল বেলাটা আয়েশ করেই কাটালো। শনিবারের সকাল। ঘরেতেই টোস্টারে দুটো পাঁউরুটি সেঁকে জ্যাম লাগিয়ে খেয়ে ২ ঘন্টা অনলাইনে চেস খেলে কাটিয়ে দিলো। মন বেশ খুশি, কারণ এই প্রথমবার ওর চেস.কম এ রেটিং ১৫০০ ছাড়ালো। বেলা দশটা বাজতেই নীচে নেমে এলো। হাতে একটা ব্যাগ। হাঁটতে লাগলো।

এদিকটা বেশ ফাঁকা ফাঁকা। এই অঞ্চলটা ব্যাঙ্গালোরের উত্তরদিকে, শহরের এক্কেবারে এক টেরে। ব্যাঙ্গালোর থেকে এয়ারপোর্ট যাওয়ার যে হাইওয়ে - বেল্লারি রোড তার গায়ে গড়ে উঠেছে। বলা ভালো গড়ে উঠছে। ব্যাঙ্গালোরের নতুন এয়ারপোর্ট শহর ছাড়িয়ে বহু দূরে। বেল্লারি রোড থেকে একটা রাস্তা রেল লাইন ক্রস করে এসে মিশেছে মেজর সন্দীপ উন্নিকৃষ্ণণ রোডে। আর সেই রাস্তা অর্ধচন্দ্রকারে ঘিরে রেখেছে স্থানীয় কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সুবিশাল ক্যাম্পাস। পোশাকি নাম গান্ধী কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র। রেল লাইন আর উন্নিকৃষ্ণন রোডের মধ্যের অঞ্চলটার নাম কানাড়া ব্যাঙ্ক লেআউট। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হলো যে ধারেকাছে কানাড়া ব্যাংক দূরে থাক, কোনো ব্যাংকেরই টিকিটিও দেখা যায় না! ও যখন প্রথম ব্যাঙ্গালোরে এসেছিলো তখন রেললাইনের ধারের দিকটা প্রায় গোটাটাই ফাঁকা ছিলো। এখন প্রচুর বাড়িঘর গড়ে উঠছে। মাঠের মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অর্ধসমাপ্ত বাড়িঘরদোর। তবে ফাঁকা ফাঁকা ভাবটা এখনো রয়ে গেছে, এখনো কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরের সুবিস্তৃত আম বাগান আর জঙ্গল চোখে পরে। তবে যে হারে ফ্ল্যাট তৈরী হচ্ছে তাতে বেশিদিন যে চোখে পড়বে না তা হলফ করে বলা যায়।

ওদের বিল্ডিংটা ছাড়িয়ে পাশের ফাঁকা প্লটটা পার হয়ে এসে দাঁড়ালো সেই বাড়িটার সামনে। এই রাস্তায় এটাই শেষ বাড়ি। সাদামাটা চেহারার বাড়ি, রং ফিকে সবুজ। কেউ কোত্থাও নেই। রাস্তা থেকে একটা নাম না জানা হলুদ ফুলের গাছ ঝুঁকে পড়েছে গেটের ওপর। থোকা থোকা ফুল সারা গাছ জুড়ে। বাউন্ডারি ওয়ালের ভেতরে একটা বাগান। বাগানের বুক চিরে ছোট্ট এক ফালি রাস্তা বাড়ির দরজায় গিয়ে থেমেছে। বাগানের ডানদিক দিয়ে সিঁড়ি উঠে গেছে। ছাদের ওপরে একটাই ঘর। সামনে অনেকটা ছাদ ফাঁকা পরে আছে। এ অঞ্চলে সবাই প্রায় ছাদের ওপর ঘর বানিয়ে রাখে। ঘর ভাড়া দেওয়ার জন্য। অনেক গুলো রিসার্চ ইনস্টিটিউট রয়েছে এখানে। ছেলেমেয়েদের আসা যাওয়া লেগেই থাকে। বাগানের গেটে একটা সাদা প্ল্যাকার্ড ঝোলানো। তাতে কালো কালিতে লেখা “টু লেট্”। তলায় একটা ফোন নম্বরও আছে। অতনু ডায়াল করলো। রিং হয়ে গেলো, কিন্তু কেউ ধরলো না।

অগত্যা ফিরে এলো। উল্টোদিকে হেঁটে পাড়ার লন্ড্রির দোকানটায় এলো। ওর চেনা দোকান। মালিক বিহারী, কর্মচারীও। এই অঞ্চলে প্রচুর বিহারী আর বাঙালী খেটে খাওয়া মানুষের ভিড়। বেশিরভাগই কনস্ট্রাকশন ওয়ার্কার। এছাড়াও ছোটোখাটো দোকান দিয়ে বসেছে অনেকে। এতো বাঙালী শ্রমিক চারপাশে দেখে অতনুর বাঙালী জাত্যাভিমানে প্রথমদিকে বেশ ঘা লেগেছিলো। এখন বুঝে গেছে শুধু সংস্কৃতি দিয়ে জাতির সম্ভ্রম রক্ষা হয় না, অন্নচিন্তা চমৎকারা।

- ছোটু, ইধার আ। কুছ পুছনা থা।

- হা, পুছিয়ে না দাদা।

কথাবার্তা সব হিন্দিতেই হলো। অতনুর হিন্দি বেশ ভালো। অন্তত বিশ্রী বাঙালী টান ওর হিন্দির মধ্যে নেই। ক্রেডিট পেতে পারে বিনোদ গুপ্তা। ওর এমএসসির বন্ধু। ধানবাদের ছেলে। ওর সঙ্গে কথাবাত্রার সুবাদে হিন্দিটা ভালোই রপ্ত হয়ে গেসলো। অতনু ছোটুকে ফিফ্থ ক্রসের থেকে যে রাস্তাটা রেল লাইনের দিকে গেছে তার শেষ বাড়িটায় কে থাকে সে বিষয়ে জিজ্ঞেস করলো।

- ও। ওটার মালিক তো নাগারাজু। কিন্তু সে তো ওখানে থাকে না।

- তাহলে কে থাকে?

- থাকতো স্যার। এখন আর কেউ থাকে না।

- মানে?

- মানে এই দিন সাতেক আগে মারা গেছে। একটা ছেলে। আপনাদের মতোই বয়েস। আপনাদের মতোই পড়াশোনা করতো। আমার কাছে আসতো কখনো সখনো ইস্ত্রি করাতে। সুইসাইড কেস। গলায় দড়ি দিয়েছিলো। ছাদের ঘরে থাকতো। পরে পুলিশ ফুলিশ এলো, বডি ফডি নিয়ে গেলো।

- কখন মারা গ্যাছে কিছু জানো?

- রাতে, পোস্টমর্টেম রিপোর্ট বলছে এগারোটা থেকে একটার মধ্যে।

পেছন থেকে এলো উত্তরটা। দেখলাম গিরিশবাবু। গিরিশ পানিকার। গান্ধী কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের প্রফেসর। এই পাড়াতেই থাকেন। অতনু একবার গেছিলো ওনার কাছে। মানে ওনার অফিসে। ভারতীয় মৌমাছির ব্যবহারের ওপর ওনার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে। অতনু নিজে অবশ্য কৃষিবিজ্ঞান কেন্দ্রের ছাত্র নয়। ওদের ইনস্টিটিউট কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের লাগোয়া, ব্যাঙ্গালোর বায়ো-ক্লাস্টারের অন্তর্গত।

- ভেরি স্যাড কেস। আমাদেরই ছাত্র ছিলো। ফার্স্ট ইয়ারের। আনন্দ গুনাগে। মুম্বাইয়ের ছেলে। প্রেসারটা হ্যান্ডেল করতে পারলো না। শেষের দিকের কয়েকমাস ডিপ্রেশনে ছিলো। এখন তো সব আস্তে আস্তে জানা যাচ্ছে। পিএইচডি ছাত্রের আত্মহত্যা খুব কমন একটা ব্যাপার হয়ে যাচ্ছে আজকাল। ভেরি আনফর্চুনেট। উনি ইংরেজিতে বললেন।

- অতনুও একমত হলো। অতনুর প্রজেক্টের প্রগ্রেস জিজ্ঞেস করলেন। আরো দু একটা টুকটাক কথা বলে ছোটুকে লন্ড্রি ধরিয়ে দিয়ে চলে গেলেন।

- ছোটু জিজ্ঞেস করলো খোঁজ করছেন কেন দাদা?

- না এমনি। আসলে আমাদের ল্যাবে একটা ছেলে আসবে কিছুদিনের জন্য। ঘর ভাড়া খুঁজছে। তাই খোঁজ করছিলাম।

ছোটুকে ব্যাগটা ধরিয়ে দিয়ে দোকান থেকে বেরিয়ে এলো অতনু। বললো ইস্ত্রি করে রাখিস। অতনু এখন জানে এগারোটাতেও নয়, আর একটাতেও নয়, ঠিক সাড়ে বারোটায় মৃত্যু হয়েছে আনন্দ গুনাগের!