Next
Previous
1

সম্পাদকীয়

Posted in


সম্পাদকীয় 



সময়টা ছিল কঠিন। প্রতিদিনই সম্পাদকমণ্ডলীর বিদগ্ধ সদস্যদের সঙ্গে কখনও আলাদা করে, কখনও একসঙ্গে বার বার কথা চলছে। কিন্তু সুরাহা হওয়া তো দূর অস্ত, পরিস্থিতি প্রতিদিন জটিলতর আকার ধারণ করছে। পত্রিকা  প্রকাশ ও পরিচালনার সামগ্রিক দায়িত্ব আমার, অথচ কোনও রকম সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা নেই। কার অনুমতি নিতে হবে, তাও স্পষ্ট নয়। যত রকম ভাবে অসহযোগিতা করা যায়, সমস্ত প্রচেষ্টা অব্যাহত। সবচেয়ে মর্মান্তিক সিদ্ধান্ত, যে লেখা যেমন আসবে তেমনই প্রকাশ করতে হবে। -কোনও কাটছাঁট, অদল বদল - এক কথায়, কোনও রকম এডিটিং চলবে না। এই সিদ্ধান্ত যিনি নিয়েছিলেন, তিনি আর পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত নন অফিশিয়ালি, কিন্তু তাঁর প্রচলিত নিয়ম অপরিবর্তনযোগ্য। সবচেয়ে বড় কথা, এডিটর হিসেবে যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। প্রশ্ন যাঁরা তুলছেন, তাঁদের এই ‘প্রশ্ন তোলার যোগ্যতা’ নিয়ে প্রকাশ্যে প্রশ্ন করার সাহস কারোর নেই! 

সমস্যা হচ্ছিল। একাধিক। স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া না গেলে কাজের মান বজায় রাখা কঠিন। তাছাড়া আমার ব্যক্তিগত ভাবে মনে হয়, একজন দায়িত্বশীল এডিটরের একটা অলিখিত দায়িত্বও থাকে। সেটি হল, নতুন যাঁরা লিখতে আসছেন, নিজের লেখা যাঁরা আরও উন্নত করতে চান, সম্ভব হলে, প্রয়োজন মতো বার বার এডিট করে তাঁদের এ বিষয়ে সাহায্য করা। সেক্ষেত্রে এডিটিং করার স্বাধীনতা না থাকা কাজের দায়িত্ব খর্ব করারই নামান্তর। সবচেয়ে বড় কথা, একটি পত্রিকায় অধিক সংখ্যায় অপরিণত, অসম্পাদিত লেখা থাকলে প্রথিতযশা কবিসাহিত্যিকরা যেমন লেখা দিতে দ্বিধান্বিত হন, এডিটর হিসাবে লেখা চাইতেও কম সঙ্কোচ হয় না। আর শেষ পর্যন্ত পত্রিকাটিরও মান থাকে না, অথবা, বলা ভাল – মানোন্নয়ন হয় না। 

সিদ্ধান্ত নিতেই হল। কষ্ট হচ্ছিল। আগেও বহুবার বলেছি, পত্রিকা সম্পাদনার কাজের সঙ্গে আমি যুক্ত অনেক ছোটবেলা থেকেই। কিন্তু ওয়েব পত্রিকা হিসেবে সেটাই ছিল প্রথম। মনে পড়ছিল, সেই সব গোড়ার দিকের দিনগুলির কথা। একেবারে জন্মেরও আগের লগ্ন থেকে যে পত্রিকার সঙ্গে সম্পৃক্ত, তিলে তিলে পরম যত্নে অক্লান্ত পরিশ্রমে যাকে বড় করে তোলা, এক মুহূর্তে তার সঙ্গে সমস্ত সংস্রব ছিন্ন করতে কষ্ট তো হবেই। তবুও ছাড়তেই হল। ৬ই জুলাই, ২০১৪। 

কিন্তু মন খারাপ করে বসে থাকার সময় পাওয়া গেল না এক মুহূর্তও। ফোন আর ইনবক্স... ওপেন ওয়ালেও অনেকেই লিখতে লাগলেন। বক্তব্য সেই একই... শুরু কর আবার নতুন করে, আমরা কাকে লেখা দেব? ৩০ শে আগষ্ট, ২০১৪ শুরু হল একটি অন্য ধারার বাংলা মাসিক ওয়েব পত্রের জয়যাত্রা। স্বনামধন্য ব্লগার ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায়ের অতিথি সম্পাদনায় প্রকাশিত হল ঋতবাক, প্রথম বর্ষ, প্রথম সংখ্যা। 

ঋতবাক-কে একটি অন্য ধারার বাংলা মাসিক ওয়েব পত্র বলা যে অত্যুক্তি নয়, তা প্রমাণ হয়ে গেছে মাত্র এগার মাসেই। লেখার বিষয় নির্বাচন ও গুনগত মান নির্ধারনে একাধারে প্রখর সচেতনতা ও নিবিড় নিষ্ঠা ঋতবাক-কে স্বাতন্ত্র্যমণ্ডিত করেছে নিঃসন্দেহে। মূলতঃ গদ্যধর্মী এই সাহিত্য পত্রটি সমকালীন ওয়েব পত্র-পত্রিকা গুলির তালিকায় বেশ ওপরের দিকেই জায়গা করে নিয়েছে, ইতিমধ্যেই। 

কিন্তু লক্ষ্য যে শ্রেষ্ঠত্বের শিরপা! তাই আরো অনেক সচেতনতা প্রয়োজন। মুদ্রিত সংস্করণ তো আসছেই। আর আসছে ঋতবাক পাবলিকেশন – অদূর ভবিষ্যতেই। 

এক বছরের যাত্রা পথ পুরোটাই মসৃণ ছিল না। সহযোগিতার অজস্র হাত যেমন ছিল, তিক্ত অভিজ্ঞতা যে হয়নি, তাও নয়। ম্যাগাজিনের মান বজায় রাখতে অনেক সময়ই সিদ্ধান্তের বিষয়ে কঠোর হতে হয়েছে, রূঢ় হতে হয়েছে। কিন্তু সে সবই যে ম্যাগাজিনের স্বার্থেই, এ কথা বুঝেছেন বিদ্বদ্জনেরা। 

ঋতবাক ওয়েব ম্যাগাজিন নিয়ে অনেক স্বপ্ন, সে স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার দায়ও আমাদের-ই। বিগত কুড়ি বছরের ওয়েব ম্যাগাজিনের অগ্রগতির ইতিহাস আমাকে আশান্বিত করে। প্রাকৃতিক এবং সমাজতাত্ত্বিক কারণেই মানব সভ্যতা রক্ষার প্রয়োজনে একদিন অবশ্যম্ভাবী ভাবেই প্রিন্টেড ম্যাগাজিনের তুলনায় ওয়েব ম্যাগাজিনগুলির প্রয়োজনীয়তা ও জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাবে। সে ভবিষ্যৎ বিশেষ দূরে নয়। আর সেদিন যাঁরা ইতিহাসের এই বিবর্তনের মূল্যায়ন করবেন, অনিবার্য ভাবেই ঋতবাক-এর নাম তাঁদের উল্লেখ করতেই হবে, আমি নিশ্চিত। আপনাদের নিরন্তর সাহচর্যে সমৃদ্ধ ঋতবাক-এর এই যাত্রাপথ মসৃণ ও সুগম হোক।

শুভেচ্ছান্তে

সুস্মিতা বসু সিং