Next
Previous
14

রম্য রচনা: দেবাশিস কাঞ্জিলাল

Posted in




রম্য রচনা



বুড়ি aka সদানন্দ চক্রবর্তী 
দেবাশিস কাঞ্জিলাল 



বুড়ি কোন মেয়ের নাম নয়, সে একজন পুরুষ মানুষ, খাতাকলমে তা অবিশ্যি হল সদানন্দ চক্রবর্তী । 

আমার পুরোনো পাড়ায় থাকত । আজ সকাল ছটা নাগাদ বেরিয়েছিলাম, ওই যাকে বাংলায় মর্নিংওয়াক বলে সেই অনিচ্ছার দায়বদ্ধতা পালনের জন্য। দেখা হল তার সাথে। আমার উল্টোদিকে ফিরছে । 

একটা বারমুডা-দ্বীপের আধাপ্যান্টের ওপরে হাতকাটা গেঞ্জী পরা । পায়ে একটা ডাকব্যাক কোম্পানীর গামবুট। এক হাতে একটা একগজ মত কাঠের ডান্ডা, দরজার খিল মত যা’হোক কিছু একটা হবে । অন্য হাতে একটা ঠোঙ্গা, তার থেকে জিলিপী ছড়াতে ছড়াতে চলেছে, সাথে গোটা দশেক রাস্তার কুকুর, বুড়িকে ঘিরে তারা গার্ড-অব-অনার দিয়ে জিলিপী খেতে খেতে চলেছে । 

বুড়িকে কিছু বলার আগেই সে একদমে বলে গেল, ‘কেমন আছো দেবুদা, ও বাড়িতে আর যাওনা বুঝি, তা’বেশ, সে যাকগে, তুমি বুঝি রোজ এই সময়ে আসো মর্নিংওয়াকে, আচ্ছা তাও বেশ ভালো । এখানে একটা কথা বলে রাখি, চিরকাল সব কথায় এই ‘বেশ’ আর ‘ভালো’ মুদ্রাদোষের জন্য অনেকবার বিপদে পড়েছে সে । যেমন তার কোন বন্ধুর মাতৃবিয়োগের খবর পেয়ে সেই বন্ধুকে সে বলেছিল,’তা ভালো, অনেকদিন তো বাঁচা হয়ে গেছে, কেমন বেশ চলে গেলেন, এই বয়সে বেঁচে থাকার বড়ো কষ্ট ।‘ 

তাকে যখন তার হাতের লাঠির ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলুম, সে বললে, ‘আমি তো রোজ ভোর চারটেতে আসি, তখন এত কুকুরের উৎপাত থাকে তাই এই লাঠিটা আনি, কুকুরেরা এখন আমার কাছে আর অত ভোরে ঘেঁষে না লাঠি দেখে। 

আমি বললাম, কিন্তু বুড়ি, কুকুররা তো দেখছি সব ‘লেঠেল-তুমি’র সাথেই চলছে, আর তুমিই বা খামোকা ওদের জিলিপী খাওয়াচ্ছ কেন ? 

বুড়ি হাসলে, হেসে বললে, দেবুদা, কি আর বলি ! আমি যে বৈষ্ণব তা ওরা বুঝে গেছে, আর আমি আসলে যে ওদের কিছুতেই মারতে পারব না তাও জেনে ফেলেছে । তাই অত ভোরে লোকজন না থাকলে বেশী কাছে ঘেঁষে না। 

কিন্তু একটু লোকজন বাড়তে শুরু হলে তখন সাহস পায়, তখন এসে পায়ে পায়ে চলতে শুরু করে। কেষ্টর জীব তো, আমারও একটু মায়া পড়ে গেছে, তাই মাঝে মাঝে ওদের একটু গরম জিলিপী খাওয়াই । তুমি খাবে নাকি এক পিস ? 

আমি বললাম, না ভাই, আমি ওই জিলিপী খেলে কুকুররা রেগে যাবে, বলবে তোমার এখনো কুকুরত্বে প্রমোশন হয় নি, তুমি তবে আমাদের ভাগের জিলিপী খাবে কেন ! সে যা হোক গে, এখন তুমি বলত, এই যে তুমি কুকুরদের জন্য লাঠিও আনছো, আবার জিলিপীও খাওয়াচ্ছ, এই দুই উলটো, ব্যাপার কি ভাবে মেলাচ্ছো ভাই ? 

বুড়ি অম্লান বদনে বললে, এটা আমি সাহেবদের কাছ থেকে শিখেছি দেবুদা, একে বলে Carrot & Stick Theory. এই থিয়োরীতে তুমি কাউকে যখন পিটবে, তখন মাঝে মাঝে তাকে গাজরের হালুয়া খাওয়াবে, এই জগতে এখন এই থিয়োরীরই জয়-জয়াকার, খুব চলছে ! 

আমি বললাম, কিন্তু এটা কেমন ব্যাপার হল ? 

বুড়ি বললে, বুঝতে পারলে না ! নাঃ, তোমার শেখার আর কোনই আশা নেই দেখছি ! আচ্ছা, একটা এক্সাম্পল দি, এই ধরো গাজায় ইজরায়েল বোমা ফেলে বাচ্চাদের মারচে তো, আবার দেখো সেখানে বন্ধুদের দিয়ে মড়াদের বাঁচানোর জন্য কি সুন্দর ওষুধপত্তর পাঠাচ্ছে । 

আর তাছাড়া, দেবুদা, এখন আর কেউ অত কিছু মেলায় না, যার যখন যা ইচ্ছে করে, তাই করে। তুমি যা করবে তাই নিয়ম হবে, দেখছো না চাদ্দিকে ! সে যাকগে, এখন চলি, আপিসের দেরী হয়ে যাবে । 

এই বলে আমার আর কোন উত্তরটুত্তোর না শুনেই বুড়ি হনহন করে তার কুকুরদের নিয়ে জিলিপী খাওয়াতে খাওয়াতে হাঁটা লাগাল ওই পাড়ার দিকে। 

আর আমি বুড়ির কথাটা ভাবতে ভাবতে রেলকোম্পানীর গাছের ছায়া ঘেরা পথ ধরে হাঁটতে শুরু করলাম উল্টোদিকে ।