গল্প - আর্যা ভট্টাচার্য
Posted in গল্পচারপাশটা কী সাদা! যে সে সাদা নয়, মার্বেল পাথরে পূর্ণিমা চাঁদের আলো পড়লে যে ট্রান্সলুসেন্ট নরম সাদা আলো বেরোয় অনেকটা সে রকম। সেই ট্রান্সলুসেন্ট নরম সাদা আলো পাঞ্চালীকে ঘিরে রয়েছে। আর সেই আশ্চর্য সাদা আলোর পথ দিয়ে পাঞ্চালী আস্তে আস্তে এগিয়ে যাচ্ছে।কী নিষ্কলঙ্ক সাদা! কোথাও একটু রঙ নেই। দাগ নেই।
আস্তে আস্তে কেমন একটা সুগন্ধি বাতাস বইতে থাকলো। রজনীগন্ধার গন্ধের মতো আর তার সঙ্গে একটা খুব পরিচিত আফটার শেভের গন্ধ! কী ব্যাপার ? ওমা একী! অনীশ দাঁড়িয়ে রয়েছে যে! স্যুট বুট পরা রোজকার অনীশ নয়।
সেই বিয়ের দিনের অনীশ।ধুতি পাঞ্জাবি পরা , গলায় গোড়ের মালা।
তখন ও কী অনীশের চোখে তীব্র বিদ্বেষ আর বিরক্তির দৃষ্টি ছিল , যেভাবে সে এখন পাঞ্চালীর দিকে তাকায় ?
সেই দৃষ্টি শুধু পাঞ্চালী চেনে আর কেউ নয়।
বাইরের সবাই ভাবে পাঞ্চালী আর অনীশের মতো কাপল্ এক দূর্লভ বস্তু। কী ভালোই না বাসে অনীশ পাঞ্চালীকে!
পাঞ্চালী ও প্রথম প্রথম তাই ভাবতো। তার সব ভালোবাসা উজাড় করে অনীশকে দিতে চেয়েছিল। কিসে অনীশ ভালো থাকবে, খুশি থাকবে, এই ছিল তার একমাত্র চিন্তা।
তবে এ সবই ছিল তার দিক থেকে। অনীশের একমাত্র ধ্যানজ্ঞান তখনও তার কেরিয়ার ই ছিল। বিজনেস টাকে আরো বড় করাই ছিল তার অর্জুনের পাখির চোখ। আর আজ ও তাই।
পা্ঞ্চালী তার বউ, বড় বড় বিজনেস পার্টিতে অন্যদের ইমপ্রেস করার, প্রদর্শনের ট্রফি - আর কিছু নয়। বিশেষ করে পেইনটার হিসেবে পাঞ্চালীর খ্যাতি হবার পর।
পাঞ্চালীর ভালোবাসা, আবেগ প্রথম থেকেই অনীশকে বিরক্ত করতো। সে সব সময় নিজের মতো থাকতে পছন্দ করে।পাঞ্চালী যে তাকে আঁকড়ে ধরে থাকতে চাইতো সেটা অনীশের ভাষায়, “সাফোকেটিং"। অনীশের এই দূরে থাকা পাঞ্চালীকেও অনীশের থেকে অনেক দূরে নিয়ে গেছিল। এক বাড়িতে থেকেও তারা যেন ভিন্ন গ্রহের জীব।
হয়তো সন্তান থাকলে তাদের সম্পর্কের বাঁধন অন্য রকম হতো।
বা হয়তো হতোনা !
উফ্, কী ঠান্ডা হাওয়া,…
আররে এটা তো রোটাংপাস। তাদের সবে বিয়ে হয়েছে আর তারা মানালি এসেছে হনিমুনে। কী সুখ ! কী সুখ ! মানে তার আরকি। জীবনে সেই তার প্রথম বরফ দেখা। বরফে লুটোপুটি খেয়ে, সিনেমায় যেমন দেখায়, ঠিক তেমন ভাবেই অনীশের গায়ে বরফের বল ছুঁড়ে মেরে সে একেবারে অস্থির হয়ে যাচ্ছিল।
অনীশ অবশ্য সারা জীবনের মতন তখনও নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে ছিল। যেন একটা রোবট।
কিন্তু অনীশ কী হঠাৎ আজ পালটে গেল ? ওর হাতে একটা প্রজাপতি ছটফট করছে। কিন্তু সেই প্রজাপতিটাকে হাতের ফাঁদে আটকে না রেখে,মেঘের মতো পেঁজা পেঁজা বরফের ভেতর থেকে প্রজাপতিটাকে আস্তে পাঞ্চালীর দিকে ভাসিয়ে দিল অনীশ।
একটা কালচে হলুদ প্রজাপতি। আর সেই প্রজাপতিটা উড়তে উড়তে এসে পাঞ্চালীর হাতের ছোট্ট কারুকার্য করা টুকরিটার ভেতরে শান্ত ভাবে বসে পড়লো।
ওমা, এতো সেই টুকরিটা,দেখতে ঠিক যেন সোনার তৈরি; আর তার গায়ে নানা রঙের ছোট ছোট পাথর বসানো। আগ্রার মিনা বাজারে দেখে খুব কিনতে ইচ্ছে হয়েছিল।
কিন্তু তখন সে ইচ্ছে গুলোকে বুকের মধ্যে কবর দেওয়ার কায়দা শিখে নিয়েছিল। অনীশ এসব , তার মতে, ‘হাবিজাবি’ জিনিস কেনা একেবারে পছন্দ করতোনা।
আর আজ দেখো, কেমন করে সেই না পাওয়া অপরূপ সাজিটা পাঞ্চালীর হাতে এসে গেছে !
সেই সাদা পথ ধরে একটু একটু করে সামনের দিকে এগিয়ে চলে পাঞ্চালী। তার দাঁড়াবার সময় নেই যেন। পেছনে পড়ে থাকে অনীশ। ক্রমশ আরো দূরে , আরো ছোট হয়ে আসতে থাকে সে।
একি! সমুদ্র এলো কোথা থেকে ! সে যে ডুবে যাচ্ছে।
পাঞ্চালীর মনে হয় সমুদ্রের ঢেউ প্রবল টানে তাকে একেবারে ভেতরের দিকে, সমুদ্রের তলায় নিয়ে যেতে চাইছে।তার সবটুকু নিঃশ্বাস খেয়ে নিচ্ছে। উঃ, একটু বাতাস! ধরার মতো একটা কিছু!
পঞ্চালীর হাত আঁকুপাঁকু করে একটা কিছু খুঁজতে থাকে, যা ধরে সে একটু মাথাটা উঁচু করতে পারবে। একটু বাতাস পাবে।
আর তখনই একটা দৃঢ় হাত পাঞ্চালীর হাতটাকে শক্ত করে ধরে তাকে পাড়ে নিয়ে এলো। হ্যাঁ, কলেজ থেকে এক্সকারশানে পুরীতে গিয়েই তো সে ডুবে যাচ্ছিলো, আর পার্থ সমুদ্রে ঝাঁপিয়ে পড়ে তাকে বাঁচিয়েছিল।
আরে, পার্থ এখানে কোথা থেকে এলো ? ও সিডনিতে থাকে না ? কেমন পাঞ্চালীর দিকে তাকিয়ে আছে! সেই পার্থ! কলেজের ফার্স্ট ইয়ারে তাদের সঙ্গে পড়তে এসেছিল। আর আসা মাত্রই একেবারে হৈচৈ পড়ে গেছিলো।
ক্রিকেট, ডিবেট, অভিনয়, এবং পরে দেখা গেল সাঁতার- সব ব্যাপারেই তুখোড়। মেয়ে মহলে তুমুল সাড়া পড়ে গেল। সবাই তার সাথে কথা বলতে চায়। বন্ধুত্ব করতে চায়।
আর ক্লাসে যে তার পাশে বসতে পারে তার তো জীবন যেন ধন্য হয়ে যায়। এক কথায় বলতে গেলে, ক্লাসের মেয়েরা তার প্রেমে একেবারে হাবুডুবু।
এমনকি অন্য ডিপার্টমেন্টের মেয়েরাও নানা ছুতোনাতায় তার সঙ্গে ভাব জমাতে চাইতো।আর ছেলেগুলো এমন স্টার ছেলেকে সামনে কিঞ্চিৎ তৈলমর্দন করলেও , আড়ালে তুমুল হিংসে করতো।
এসবের একমাত্র ব্যতিক্রম ছিল পাঞ্চালী। ওই আ্যটেনশন সিকিং প্রতিযোগিতার ভিড়ে সে নিজেকে কখনো নামায়নি।
পার্থকে তার যে ভালো লাগতোনা তা নয়। পার্থর ও তাকে ভালো লাগতো বলেই মনে হয়। কিন্তু একটা ছেলের মনোযোগ আকর্ষণ করার জন্য ঐ প্রতিযোগিতা তার ভীষণ কুশ্রী লাগতো।
তবে ক্লাসের মধ্যে কোনো কথা না বললেও কলেজের করিডোরে, বাসস্ট্যান্ডে একেবারে যে কথা হয়নি তা নয়। আফটার অল ব্যাচমেট।
তবে পুরীর ওই ঘটনাটার পর থেকে তাদের যোগাযোগ একটু একটু করে বাড়তে শুরু করেছিল।
কতোদিন কলেজ কেটে তারা কোনোদিন গড়ের মাঠে, কোনোদিন সেন্ট প্যাট্রিক চার্চের বাগানটায় চলে যেত। পাঞ্চালীর কোলে মাথা রেখে শুয়ে থাকতে খুব ভালো বাসতো পার্থ। আর যত আগরুম বাগরুম কথা।
কেমন তারা জঙ্গলে বেড়াতে যাবে, পাহাড়ের মাথায় একটা ছোট্ট হাটে থাকবে…এইসব।
পরীক্ষা শেষ হয়ে যাবার পর হঠাৎ যখন পার্থর প্রাণের বন্ধু রিজুর কাছে শুনেছিল যে তার পরের সপ্তাহে হায়ার স্টাডিজের জন্য পার্থ অস্ট্রেলিয়া চলে যাচ্ছে একেবারে হতভম্ব হয়ে গেছিল পাঞ্চালী।
বিদেশে তো হুট বলতে যাওয়া যায়না, নিশ্চয়ই অনেক দিন ধরে প্রস্তুতি চলছে। আর পাঞ্চালীকে কিচ্ছু বলার প্রয়োজন মনে করলোনা পার্থ !... কিচ্ছু না।এতো বিট্রেয়াল।
দুঃখে, অপমানে পাঞ্চালীর বুকের ভেতরটা একেবারে দুমড়েমুচড়ে যাচ্ছিল। সবাই…সবাই সমান। কেউ তাকে ভালোবাসে না। তার কোনো মূল্য নেই এই পৃথিবীতে। সে একা। একেবারে একা। ডানাভাঙা প্রজাপতি সে একটা সেই ছোট থেকে।
পার্থর কাছ থেকে পাওয়া এই আঘাত, প্রতারণা তার বুকটাকে ঝাঁঝড়া করে দিচ্ছিল। আর সেই তীব্র যন্ত্রণা প্রকাশের একমাত্র মাধ্যম তার কাছে ছিল ছবি আঁকা।
সেই তার আঁকার শুরু। ছবিগুলো ছিল তার লুকোনো কষ্টের, একাকীত্বের এক্সপ্রেশন। তার বাঁচার শক্তি।
আজ এই মেঘে, কুয়াশায় বরফে পার্থকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে পাঞ্চালীর মনে ক্ষোভ, দুঃখ.. কোনো তরঙ্গ ই উঠলোনা।
বরং সে পার্থর দিকে তাকিয়ে একটু হাসলো। আর পার্থ তার দিকে একটা গোলাপী প্রজাপতি অর্ঘ্য দেবার মতন করে ভাসিয়ে দিল । হালকা হাওয়ায় ভর করে প্রজাপতিটা এসে পাঞ্চালীর টুকরিটার ভেতর শান্ত হয়ে বসে পড়লো।
আরে,পাঞ্চালীর আঁকা ছবিগুলোকে এখানে কে নিয়ে এলো ? হাজার রঙে সাদা বরফের উপর কেমন স্বর্গীয় ফুলের মতন ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। যেন একেকটা রঙীন বৃষ্টির ফোঁটা।
আর পাঞ্চালীর সব থেকে প্রিয় ছবি, পাঞ্চালী যেটার নাম দিয়েছে “বাটারফ্লাই এন্ড লাভ” ; এ ছবিটা নানা এক্সিবিশনে গেছে ।দেশে বিদেশে প্রশংসা ও পেয়েছে প্রচুর।তাই এটা কেনার জন্যে আকাশ ছোঁয়া দাম দিতেও অনেকে প্রস্তুত ছিল। কিন্তু প্রচুর চাহিদা সত্ত্বেও এটিকে সে প্রাণে ধরে বিক্রি করতে পারেনি পাঞ্চালী।
আর এখন সেই ছবিটা বুকে ধরে দাঁড়িয়ে রয়েছে ইথান। সেই লম্বাসোনালী চুল, একমুখ দাড়ি আর তার ফাঁকদিয়ে একটা দুষ্টু বাচ্চার মতো হাসি।
ইথানের সঙ্গে তার প্রথম দেখা নিউইয়র্কে নিজের ছবির এক্সিবিশন করতে গিয়ে।
তার ছবির কালেকশন দেখে তো ইথান একেবারে মুগ্ধ। তার স্টুডিওতে নিয়ে গিয়ে নিজের আঁকা ছবির সম্ভার খুলে দিয়ে সে বিষয়ে পাঞ্চালীর মতামত জানতে চেয়েছিল।
ছবিগুলো সত্যিই অসাধারণ ছিল। আর আজ তো শিল্পরসিক শিল্প বোদ্ধাদের মধ্যে ইথান এক পরিচিত নাম।
পাঞ্চালীর চেষ্টায় দিল্লীতেও ইথানের এক্সিবিশন হয়েছিল।
সেইথেকে কয়েকবার ইথান ভারতে এসেছিল। সেও প্যারিসে গেছে অনেকবার। মূলতঃ ছবির কাজেই।
আর ততদিনে নিউইয়র্কের পাট গুটিয়ে , ইথান ও পারমানেন্টলি প্যারিসে চলে এসেছিল।
ওখানেই কনসার্ট থেকে ফেরার পথে এক শীতের রাতে, এমন ই অনর্গল ঝরে পড়া বরফের মাঝখানে হাঁটতে হাঁটতে ইথান বলেছিল,’কেনো একটা প্রেমহীন সম্পর্কে আটকে আছো পাঞ্চালী? বেড়িয়ে এসো প্লীজ”।
হাসতে হাসতে পাঞ্চালী বলেছিল, “তুমি কেনো আরো পনেরো বছর আগে জন্মালেনা ইথান ? বা আমি পনেরো বছর পরে ?
আর জানো তো, ভালোবাসা প্রজাপতির মতো; সংসারের চাপ নিতে পারেনা। মরে যায়। এই ভালো। আমাদের এই বন্ধুত্ব বলো ভালোবাসা বলো….মুক্ত থাক। প্রজাপতির মতো।
না হলে এর আয়ু ফুরিয়ে যাবে যে। প্রজাপতি আর প্রেম বড় স্বল্পায়ু ইথান। শুধু কষ্টের রঙটুকু ফেলে রেখে চলে যায়।“
ওই যে , ছবি থেকে প্রজাপতি টা বেড়িয়ে এসে ইথানের সবটুকু ভালোবাসা আর শিশিরের মতো একফোঁটা চোখের জল ডানায় নিয়ে আস্তে করে এসে পাঞ্চালীর টুকরিতে বসে পড়লো।
আরো খানিকটা পথ এগিয়ে এলো পাঞ্চালী হিমবন্ত পথে।
সব কেমন সিনেমার রীলের মতো পরপর চলে যাচ্ছে না ?
বাবা ! বাবা এখানে ! ওমা সেই ছোটবেলার মতো ছোট্ট পাঞ্চালীকে কোলে নিয়ে যাচ্ছে বাবা। বাবা তো খুব রোগা। তাই বাবার কোমরের কাছটাতে একটা হাড় পাঞ্চালীকে খোঁচা দিচ্ছে। দিক্। পাঞ্চালী চুপ করে থাকবে। কিচ্ছু বলবেনা, তাহলেই পাঞ্চালীকে মার কোলে দিয়ে দেবে আর হাসতে হাসতে বলবে, “নাও, তোমার গাবলুগুবলু কোল ছাড়া তোমার মেয়ের চলবেনা।“
পাঞ্চালীর সব কাজে বাবা। বাবা তার বন্ধু, খেলার সাথী আর সেও বাবার আহ্লাদী পুতুল।
মা বলে ‘বাপ সোহাগী’।
বাবার ছুটির দিনগুলো সবথেকে আনন্দের। সারাদিন শুধু সে আর বাবা। খাওয়া, নাওয়া, খেলা সব বাবার সাথে। বাবা তাকে ছাড়া আর কাউকে ভালোবাসতে পারবেনা। এমনকি মাকেও না। সেই বাবার প্রিন্সেস। একমাত্র ভালোবাসা।
এই তো বাবা তাকে একটা সবুজ মাঠের মধ্যে দাঁড় করিয়ে দিল আর অনেক অনেক প্রজাপতি বাবার মতন আদরে পাঞ্চালীকে উড়িয়ে নিয়ে চললো।
হঠাৎ সে চমকে দেখে কেউ কাছে নেই। বাবা ? বাবা কোথায় ?ও, বাবা তো আর নেই। তার প্রিন্সেসকে ফেলে কবেই চলে গেছে! আর বাবার প্রজাপতিদের সে শুধু খুঁজে যাচ্ছে সারা জীবন ধরে।
বাবা অনেক অনেক দূরে পিছিয়ে গেছে। টুকরিতে বসা প্রজাপতিগুলো ও সব মরে কালো হয়ে গেছে।
বেঁচে নেই ঠিকই, আহা তবুতো প্রজাপতি। পরম মমতায় তাদের একটা একটা করে বরফের উপর শুইয়ে দেয় পাঞ্চালী।
আর সোনালী টুকরিটা উড়তে উড়তে কোথায় যেন মিলিয়ে যায়।
একেবারে একা পাঞ্চালী হুহু বরফের মধ্যে দাঁড়িয়ে কাঁপতে থাকে।
এই বরফের দেশে সে একা।
আর তখনই অনেক পথ যেন পার করে,এগিয়ে আসে ইথান|
পরম ভালোবাসায় তার গায়ে একটা গরম কোট জড়িয়ে দেয়। খুব আদরে বলে, “আই আ্যম হিয়ার টু হোল্ড ইউ পাঞ্চালী। এই দেখো, আমি তোমাকে ধরে আছি। তোমার কোনো কষ্ট নেই। দুঃখ নেই। প্রজাপতির পাখা তোমাকে উড়িয়ে নিয়ে যাবে।“
পাঞ্চালীর মনেহয় বাবা আবার তাকে বুকের ভেতর জড়িয়ে নিয়েছে।
ইথানের স্পর্শটা ঠিক বাবার মতো…ভরসার। ভালোবাসার। নির্ভরতার।
ইথান তাকে ধরে রেখেছে আর তার সামনে দ্বিধাবিভক্ত দুটো পথ দুদিকে চলে গেছে। একটা পথ হালকা সাদা আলোয় ভরা। অনেকটা যেন চাঁদের জ্যোৎস্না দিয়ে ধোওয়া।তার শেষ যে কোথায় কে জানে !
অন্য পথটা ধোঁয়াটে মেঘে ভরা। দার্জিলিং এ যাবার সময় মেঘ এসে যেমন রাস্তা ঢেকে দেয়, অনেকটা সেই রকম। আর সেই পথের শেষে কে যেন দুহাত বাড়িয়ে আছে। সম্পূর্ণ অচেনা। তবু যেন চেনা।
কোন পথে যাবে এখন পাঞ্চালী?
ক্লান্তিতে চোখদুটো ঘুমে ভারী হয়ে আসে আর একটা সোনালী প্রজাপতি বাবার আদরে, ইথানের কোমল স্পর্শে তাকে ডানার আশ্রয়ে মুড়ে নেয়।
“ ইইজি মেশিন টা এবার খুলে নিন সিস্টার। দেখি কী রিডিং দিচ্ছে”
“ শেষ তিরিশ সেকেন্ডের কার্ভগুলো দেখুন। স্মৃতি বা স্বপ্নের মতন। কোনো তফাৎ নেই ডক্টর। এই যে দেখুন”
“ আমাদের রিসার্চ তাহলে ঠিক পথেই যাচ্ছে।মৃত্যুর ঠিক আগের অবস্থাটা আমরা প্রায় আবিষ্কার করে ফেলেছি। এটা হবে একটা পাথ ব্রেকিং ডিসকভারি।… মৃত্যুর মুহূর্তের রহস্য…ওঃ”
“অক্সিজেন বাইপ্যাপটা এবার খুলে নিন সিস্টার। পঞ্চালী সেন ইজ নো মোর”।।
(আমেরিকান ডক্টর রা আবিষ্কার করেছেন, ইইজি অনুযায়ী শেষ তিরিশ সেকেন্ড স্বপ্ন বা স্মৃতির মত।এটুকুই সত্য। বাকিটা কাল্পনিক)
0 comments: