Next
Previous
28

গল্প - ময়ূরী মিত্র

Posted in





মাটির গৃহে সন্ধে হয় ৷ শঙ্খে শব্দ ওঠে ৷ পিদিম জ্বলে ৷ তুলসীতলায় দুটি সস্তা ধূপকাঠি জ্বালে গরীবের শ্যামা মেয়ে ৷ তাতেই এক মহান গন্ধ ছড়ায় কোণে কোণে ৷ চারপাশের গাছ আগাছা গন্ধমালায় জড়িয়ে যায় ৷ সব গাছ মিলে একটি মহাবৃক্ষ জন্ম নেয় ৷ শ্যামা ছোঁয় তাকে ৷ মনে মনে ৷
পিতা আজ চাল আনেননি ৷ চড়া দাম হাঁকিয়ে বেগুনের গুণ বলতে পারেননি ৷ বেগুন বিকোয় নি --গিমে শাক , লাল শাক কিছুই বিকোয় নি শুধু চিৎকারের অভাবে ৷ ভরা সাঁঝে খিদে সইতে না পেরে পিতা আর মেয়ে এক থালে খেয়েছে কিছু চিড়া আর রাঙা আলু সিদ্ধ ৷
জিভের জ্বালা মেটেনি মেয়ের ৷ প্রদীপ হাতে গভীর পুকুরে নামে মেয়ে ৷ হাতের আলোকখণ্ড থেকে পুকুরের জলে আলো পড়ে ৷ ছোট আলো ছোট হয়েই জলে কাঁপে ৷ অবাক চোখে শ্যামা দেখে দীপের ছোট আলোকে বিন্দু বানিয়ে দিচ্ছে সারা পুকুরে ছড়িয়ে থাকা সাদা জোছনা ৷ গরিব মেয়ে স্থির করতে পারে না -- কোন অংশের জল খাবে সে ৷ চাঁদে ভেজা জল নাকি মাটির দীপের আলো ছিটকানো কম আয়তনের জল !
বৈভব ও স্বল্পতার চিরকালীন ধন্দে পড়ে গরীব ৷ একসময় আকাশের মেঘ এসে চাঁদ ঢাকে ৷ বাতাস ঝোড়ো হয় ৷ মেয়ে দেখে সারা পুকুরের জল কালো কৈ মাছ হয়ে যায় ৷ আর তার মধ্যে ফোটে একটা আলোর ফুল ৷ প্রদীপে আলোকিত জল খেয়ে ঘরে যায় কালো মেয়ে ৷ আচঁলের তলায় আলোটুকু বাঁচিয়ে এনেছে সে ৷
ঘরে ফিরে দেখে --- পিতা পরের দিনের বিক্রির জন্য সবজির চুবড়ি সাজাচ্ছেন ৷ বেছে বেছে টাটকাগুলো তুলেছেন ৷ গলা তাঁর কালও শব্দে ভরবে না ৷ তবু মানুষের খাদ্য হবে খাঁটি ৷
মহাবৃক্ষ শত শিকড় বিকশিত করে আশীর্বাদ দেয় ৷ শ্যামা পিতার কন্ঠ জড়ায় ৷ রাতচরা পাখিরা আলোচনা করে -- ওই দ্যাখ -- মেয়েটার ঝাঁকড়া চুলে এখনো প্রদীপের আলো কাঁপে ৷ চল আজ ওর ঘরে ঠাঁই নি ৷ যা বৃষ্টি ----চ চ ৷ কাল ভোর হলে ওদের জাগাতে হবে না ? দরিদ্র কেন থাকবে পড়ে একেলা বনের মাঝে ৷ আমরা পথ চিনিয়ে দেব তাদের --- সঠিক মানুষের কাছে পৌঁছে দেব আমাদের পিতাকে৷

মাটির নিবাসে পৌঁছয় রাত্রিকালের পাখি ৷ ধূসর
কাঁথায় ডানা পেতে বসে ৷ দীপটিকে ঘিরে কুটকুট ছড়া কাটে গগনের জীব --

ওরে কালো মেয়ে
ওরে গরীবের মেয়ে
মোদের সঙ্গে আজ তোর
চন্দনফোঁটা খেলা ৷

চাঁদ তারা ফেলে
কোলে তুলে নিয়েছে যে মাটির আলো
মরণ এলেও তার মৃত্যু হবে না কখনো ৷

মানুষ মিলতে ভুলেছে
পাখি আমরা
মিলনের গান গাই ৷

গাইতে গাইতে রাতচরা পাখিদের ঝুঁটিগুলো আজ একটু বেশি লাফাচ্ছে না ? কী এক আবিষ্কারের আনন্দে চোখ ঝলমল করছে না ?
তাই তো !
গরীবকে বাঁচার পথ চেনাতে গিয়ে তারাও তো দেখবে একটি সূর্যভরা দিন --জীবনে এই প্রথম ৷