Next
Previous
3

সম্পাদকীয়

Posted in


সম্পাদকীয়




হায় হেমন্তলক্ষ্মী, তোমার নয়ন কেন ঢাকা–
হিমের ঘন ঘোমটাখানি ধূমল রঙে আঁকা॥
সন্ধ্যাপ্রদীপ তোমার হাতে মলিন হেরি কুয়াশাতে,
কন্ঠে তোমার বাণী যেন করুণ বাষ্পে মাখা॥

লাবণ্যময়ী ঋতুকন্যা হেমন্তের অনিন্দ্যসুন্দর রূপলাবণ্যে বিশ্বচরাচর বিহ্বল। শিশিরসিক্ত স্নিগ্ধ শীতল ভোরে সবুজ ঘাসের আগায় হীরের কুঁচি, মায়াবী নীল আকাশে নরম সোনা রোদ, মৃদুমন্দ হিমেল সমীরণে শিহরিত প্রাণ। মোহিনী প্রকৃতির রহস্যময়ী সৌন্দর্যে প্রেমমুগ্ধতার আকুল আহ্বান। তাই তো বাংলার কবি বার বার ফিরে আসতে চান নতুন ধানের মৌ মৌ সুঘ্রাণ শুভেচ্ছায় ‘ধানসিঁড়িটির তীরে- এই বাংলায় … এই কার্তিকের নবান্নের দেশে’ যেখানে ‘সোনালি ধানের ক্ষেতে ঈষৎ শীতার্ত হাওয়া লাগে/আনন্দ অশ্রুতে যেন ভিজা ভিজা আঁখির পল্লবে/মাটি মাতা হেরিতেছে নবান্ন আসন্ন উৎসবে,/বিমুগ্ধ নয়নে হেরে পরিপূর্ণ ফসলের ভার,/অঙ্গ ভরিয়া আছে- আমার বাংলার’ (কবি সুফিয়া কামাল )।

প্রকৃতির এই কাব্যময়তা কেমন করে যেন ছুঁয়ে গেল ঋতবাক-এর এই সংখ্যার অন্তরাত্মা। অতীতে তো কতবার বলেছি, ঋতবাক মূলতঃ একটি গদ্যধর্মী মাসিক পত্র। কিন্তু প্রকৃতি যে কারোর সপ্রকাশ ঔদ্ধত্য সহ্য করে না! তাইতো সাহিত্য সরস্বতীর এমন অসাধারণ মধুর শাস্তি বিধান। আসলে ভুল তো আমাদের-ই। সাহিত্যের সূচনা তো কাব্যেই। তাকে অস্বীকার করা যায় কেমন করে! আজকের ঋতবাক তাই ঋতনিষ্ঠ লাবণ্যময় তরুণ যুবক। সর্বাঙ্গে তার কাব্যালংকারের সুশোভন সজ্জা। মননে তার কাব্যের ঈশ্বর নির্মাণের প্রবল প্রয়াস। উপলব্ধিতে তার অনন্ত প্রেমময়তার উজ্জ্বল উদ্ভাস। চেতনায় তার কাব্য সরস্বতীর চরণকমলে নিঃশর্ত উৎসর্গের হৈমন্তী নৈবেদ্য। সে কাব্য সরস্বতীর সঙ্গে ‘স্বপ্নে যদি না হয় দেখা, কাব্যে হবে তবে...’

অনন্ত প্রেমময়তার নিরন্তর মুগ্ধতায় সততঃ নিমজ্জমানতার আন্তরিক কামনা...

সুস্মিতা বসু সিং