প্রবন্ধ - ইন্দ্রনীল মজুমদার
Posted in প্রবন্ধগণিত— বিষয়টি অনেকের কাছে বেশ জটিল ও কঠিন। আবার অনেকের কাছে বেশ সোজা ও মজার। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে গণিত বেশ জড়িয়েই আছে সে যেকোনো জিনিস কেনার জন্যে হোক বা কটা বাজে অর্থাৎ সময় দেখার জন্যে হোক বা পুজোর নৈবেদ্য হিসেবে কটা ফুল বা বেল-তুলসী পাতা লাগবে বা কত উপকরণ লাগবে, আবার রান্নায় কত চামচ নুন লাগবে বা চায়ে কত চামচ চিনি লাগবে ইত্যাদি সবই বেশ হিসেবনিকেশের ব্যাপার। আমরা তো হিসেবনিকেশেই আছি— প্রতিনিয়ত, প্রতিমূহুর্তে। তবুও, কেন গণিত আমাদের কাছে এত জটিল ও এত অধরা? এর কারণ অবশ্য এর শিক্ষণপদ্ধতি ও একে ভালোভআবে জানার জন্যে আমাদের কারুর তীব্র অনীহা। আসলে, স্কুলে ও কলেজ স্তরে বেশ কিছু অর্ধশিক্ষিত শিক্ষক-শিক্ষিকা তাঁদের পড়ানোর ত্রুটি এবং পরিমার্জিত জ্ঞান ও সৃজনশীলতার অভাবে ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে গণিত বিষয়টি বেশ জটিল করে তুলে বড়সড় গোল করে বসেন। আদৌ কিন্তু বিষয়টি জটিল বা কঠিন নয়। খেলাচ্ছলে বা আগ্রহবশত বিষয়টিতে বেশ আগ্রহী হয়ে ওঠা যায়। আর হয়ে ওঠা যায় একজন গণিতজ্ঞ বা গণিএ পারদর্শী ব্যক্তি। আর গণিতবিদ হতে গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাশভারী ডিগ্রি যে প্রয়োজন তা কিন্তু নয় বরং রোজ অধ্যবসায় দরকার। অর্থাৎ নিয়মিত অঙ্কচর্চার মাধ্যমে যে কেউ যে কোনও অবস্থায় হয়ে উঠতে পারে গণিতবিদ। আর নিয়মিত চর্চা বা অধ্যবসায় আসবে কোথা থেকে? গণিতের প্রতি এক নিখাদ ভালোবাসার মাধ্যমে। আর এই প্রবন্ধে আমরা এমনই একজনকে নিয়ে আলোচনা করব যিনি গণিতকে ভালোবেসে, গণিতের কথাকে সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রচার করে বিশ্বশ্রুত গণিতজ্ঞ হিসেবে খ্যাতিলাভ করেছিলেন। তিনি একজন অনন্যা মহীয়সী নারী, নাম তাঁর হাইপেশিয়া। গোঁড়া পিতৃতন্ত্রের ধারক ও বাহকেরা বেশ নিন্দার সাথে নারীজাতিকে হেয় করার জন্য কুৎসা করে বেড়ায় যে, নারীরা গণিতজ্ঞ হতে পারে না, নারীরা গণিত-বিমুখ। অথচ এদিকে রান্নার নুন-চিনির হোক কিংবা সংসারের সমস্ত জটিল হিসেবনিকেশ নারীরাই খুব সুন্দরভাবেই সামলান। আর তাই এইসব অশিক্ষিত গোঁড়াদের প্রতি এক প্রতিবাদের নাম হলেন হাইপেশিয়া বা তাদের গোঁড়ামি, কুৎসা ও উগ্র পিতৃতন্ত্রের প্রতি এক থাপ্পড় স্বরূপ হলেন হাইপেশিয়া ও তাঁর কাজকর্ম। যিনি স্বমহিমায় দেখিয়ে দিয়েছিলেন যে— হ্যাঁ, মেয়েরা বা নারীরাও পারেন গণিতের অতল জ্ঞানের সমুদ্রে তলিয়ে গণিতের মুক্তগুলো সামনে নিয়ে আসতে। পুরুষের মতো গণিতের জগতে তাঁদেরও অবাধ যাতায়াত। আর তাঁর প্রতি রাগ ও প্রতিশোধের জন্য বা নারীজাতিকে পিছিয় দিয়ে সমাজকে অন্ধকার করে রাখার জন্যেই ধর্মীয় গোঁড়া কিছু অমানুষ হত্যা করে হাইপেশিয়াকে। তবুও হাইপেশিয়াই জিতেছেন, জিতেছে শুভবুদ্ধি, নারীরা পুরুষদের সাথেই এগিয়ে চলেছেন জ্ঞান-বিজ্ঞানের জগতে আর আবিষ্কার করে চলেছে অজানা সত্যকে — এটাই হয়তো প্রকৃতির গাণিতিক নিয়ম।
প্রাচীন মিশরের রাস্তায় ভিড়ের মাঝেই গণিতের কথা শোনাতেন হাইপেশিয়া। তাঁকে ঘিরে সাধ্রণ মানুষের ভিড়। তারা শুনছে মহীয়সী এই গণিতজ্ঞ ভদ্রমহিলার কাছ থেকে গণিতের নানা কথা। অনেকেই হয়তো অবাক হচ্ছেন এটা ভেবে যে, যে যুগে অর্থাৎ প্রাচীন মিশরে যেখানে মহিলাদের চিন্তাভাবনা ও কাজকর্মের পূর্ণ স্বাধীনতা ছিল না, বেশিরভাগ মহিলারাই গণিত ও বিজ্ঞান পড়তেন না বা বলা ভালো আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও তাঁদের পড়তে দেওয়া হত না এমনকি রাজনৈতিক প্রাঙ্গণেও তাঁদের প্রবেশ নিষেধ ছিল, সে যুগের রাস্তায় দাঁড়িয়ে একজন নারী তাঁর গাণিতিক সুন্দর ও সবলীল বক্তৃতার মাধ্যমে প্রচুর মানুষকে অনায়াসে আকৃষ্ট করে চলেছেন। এ যে রীতিমতো বিস্ময়ের ব্যাপার! কিন্তু, এই বিস্ময়কর ঘটনা ঘটল কিভাবে? কিভাবে সম্ভব হল একা একজন নারীর পক্ষে সমাজের গোঁড়ামি ও অসম্ভবকে বুড়ো আঙুল দেখানো?
এইসব সম্ভব হয়েছিল একজনের জন্য। তিনি হলেন হাইপেশিয়ার বাবা থেওন। যেমন একজন সফল পুরুষের পেছনে একজন নারী থাকেন ঠিক তেমনি একজন সফল নারীর পেছনেও একজন পুরুষ থাকেন। হাইপেশিয়ার পেছনে যেমনটি ছিলেন তাঁর বাবা থেওন। থেওন নিজেও একজন জ্যোতির্বিজ্ঞানী এবং গণিতবিদ ছিলেন এবং ছিলেন আলেকজান্দ্রিয়ার মিউজিয়ামের প্রধান। হাইপেশিয়াও তাঁর বাবার মৃত্যুর পরে মিউজিয়ামের প্রধান হন। যাইহোক, হাইপেশিয়া যাতে এক মুক্তমনা নারী হয়ে উঠতে পারেন সেইজন্য গতানুতিক সমাজের বিপরীত শ্রোতে গিয়ে থেওন তাঁর মেয়ে হাইপেশিয়াকে প্রচুর স্বাধীনতা দিয়েছিলেন যা সেই যুগের অন্যান্য মেয়েদের কাছে ছিল বিরল। হাইপেশিয়া তাই হয়ে উঠেছিলেন নারীদের মধ্যে অন্যতম প্রথম গণিতজ্ঞ, জ্যোতির্বিদ এবং দার্শনিক। মিশর (অপর নাম ইজিপ্ট)-এর আলেকজান্দ্রিয়া নগরীতে ৩৫০ খ্রীষ্টাব্দে এই মহান বিদূষী নারী জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
হাইপেশিয়ার জীবনে তাঁর পিতা থেওনের বিরাট প্রভাব ছিল। থেওন তাঁর মেয়েকে চেয়েছিলেন একজন ‘আদর্শ মানুষ’ হিসেবে গড়ে তুলতে। তিনি সর্বদা চাইতেন তাঁর মেয়ে সর্বদা শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ ও সবল থাকুক কেননা তা থাকলে তবেই তো একজন আদর্শ মানুষ হতে পারা যাবে। মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য গণিতচর্চা অন্যতম অপরিহার্য। তাই, তিনি গণিত ও জ্যোতির্বিদ্যা সম্পর্কে তাঁর জানা যাবতীয় জ্ঞান মেয়েকে শেখালেন। আর এর পাশাপাশি তৈরি করলেন সুবক্তা বা প্রভাবশালী বক্তা হিসেবে। আর সেই শিক্ষার রেশ থেকেই হাইপেশিয়া হয়ে উঠেছিলেন একজন প্রভাবশালী গাণিতিক সুবক্তা ও সুলেখক। তার পাশাপাশি হয়ে উঠেছিলেন বাবার সুযোগ্যা সহকারিণী। হাইপেশিয়া তাঁর বাবার সাথে পুরনো গণিতের পাঠ্যপুস্তকগুলো জ্যামিতি, বীজগণিত ও জ্যোতির্বিদ্যার নতুন নতুন তথ্য দিয়ে আধুনিক বা আপডেট করে তুলেছিলেন। খুব জটিল ও দুরূহ গাণিতিক বিষয়কে খুব সহজ-সরলভাবে বোঝানোর ক্ষমতা ছিল হাইপেশিয়ার। খুব কঠিন ও বৃহৎ বিষয়কে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভাগে ভেঙে নিতেন যাতে খুব সহজে বিষয়টি বোঝা যায়। এইসব গুণাবলীর জন্যে, হাইপেশিয়া ও তাঁর পিতার কৃত গাণিতিক কাজগুলি বহু যুগ ধরেই বহু গণিতজ্ঞ ও জ্যোতির্বিদকে প্রভাবিত ও উৎসাহিত করেছিল। গোটা শহর থেকে প্রচুর শিক্ষার্থী আসত হাইপেশিয়ার কাছে গণিত ও জ্যোতির্বিদ্যা শিখতে। হাইপেশিয়া দিগন্ত ও কোনও নক্ষত্র বা গ্রহের মধ্যে কোণ মাপার জন্যে বহনীয় যন্ত্র ‘অ্যাস্ট্রোলেবেল’ ব্যবহারের শিক্ষা দিতেন। জানা যায় যে, এই অসাধারণ যন্ত্রটি নাবিকরা দুশো বছর ধরে মহাসমুদ্রে থাকাকালীন ব্যবহার করতেন সময় ও অবস্থান জানার জন্যে। হাইপেশিয়ার বক্তৃতায় প্রচুর জনসমাগম হত। আর এভাবেই তিনি তথাকতিত নীরস গণিতকে জনসাধারণের মাঝে জনপ্রিয় ও রসালো করে তুলতেন। তৎকালীন সমাজে হাইপেশিয়া একজন প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠেছিলেন। যিনি একজন শিক্ষিতা মুক্তমনা নারী হিসেবে নারীদের শিক্ষা এবং অধিকারের জন্য লড়াই চালিয়ে গিয়েছিলেন।
দর্শনে গণিতকে প্রয়োগ করেছিলেন হাইপেশিয়া। তিনি নব্য-প্লেটোবাদ চিন্তাধারার ওপর ভিত্তি করে এমন একটি চিন্তাভাবনা সৃষ্টি করেন যা খুবই কার্যকারী। সেই চিন্তাভাবনা এটাই বিশ্বাসটা করে যে, মানুষ তার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে ধারণা তৈরি করে। এই যেমন, আমরা ১ + ১ = ২ যে হয় তা শিখতে পারি, এক জোড়া পেন, মোজা বা যেকোনও একজোড়া বস্তু একসাথে রেখে।
কিন্তু এত কিছু অবদানের শেষে হাইপেশিয়া শিকার হলেন ধর্মান্ধতার এক চরম নির্মম পরিস্থিতির। তাঁর দেওয়া শিক্ষাগুলো ছিল তৎকালীন আলেকজান্দ্রিয়ার প্রধান ধর্ম খ্রিস্টধর্মের থেকে আলাদা। ৪১২ খ্রিস্টাব্দে সিরিল নামক একজন নতুন খ্রিস্টান বিশপ হিসেবে ক্ষমতায় আসেন। আর এর সাথে আলেকজান্দ্রিয়ার মানুষ দুটি গোষ্ঠীতে বিভক্ত হয়ে যায়। সিরিলের প্রধান প্রতিপক্ষ ছিলেন আলেকজান্দ্রিয়ার গভর্নর অরেস্টেস। এই অরেস্টেস ছিলেন হাইপেশিয়ার বন্ধু। সিরিল ও তাঁর কট্টর খ্রিস্টান অনুগামীদের বিশ্বাস ছিল যে, আলেকজান্দ্রিয়া শহরটাকে অরেস্টেস চালাচ্ছেন হাইপেশিয়ার দর্শন দ্বারা প্রভাবিত হয়ে। তাই, সেই অনুগামীরা হাইপেশিয়াকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেয়। সেইমতো, ৪১৫ খ্রিস্টাব্দে মার্চ মাসের এক সকালে এক জনসভায় যখন হাইপেশিয়া বক্তৃতা দিচ্ছিলেন তখন সিরিলের একদল অনুগামী তাঁকে হত্যা করে। এইভাবে দ্বন্দ্বের মাঝে চিরকালের মতো নিভে যায় এক মহান দার্শনিক, গণিতবিদ ও জ্যোতির্বিদের জীবনের প্রদীপ। আলেকজান্দ্রিয়ার খ্রিস্টান বিশপ সিরিলের অনুসারীরা তথা সন্ত্রাসীরা তাঁকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যায় চার্চ সিজারিয়ামে। হাইপেশিয়া হয়তো ভাবতেও পারেননি মানুষ তাঁকে এত নির্মমভাবে হত্যা করবে। সেই সন্ত্রাসীরা সেখানে তাঁকে নগ্ন করিয়ে ঝিনুকের খোল দিয়ে তাঁর দেহের চামড়া চেঁছে ফেলে। হাইপেশিয়ার দেহ টুকরো টুকরো করে কেটে বিভক্ত করা হয়েছিল। শুধু তাই নয়, সেই সন্ত্রাসীরা এরপর তাঁর টুকরো টুকরো হয়ে যাওয়া মৃতদেহটি পুড়িয়ে ছাই করে উড়িয়ে ছিল। এই বর্বর অমানুষগুলো হাইপেশিয়াকে এতটাই ভয় পেয়েছিল যে এভাবে অমানুষের মতো নির্মমভাবে হত্যা করে ক্ষান্ত থাকেনি। হাইপেশিয়াকে হত্যা করার কয়েক দিন পরেই ওরা আলেকজান্দ্রিয়ার লাইব্রেরি সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে ফেলেছিল আর তার সাথে হাইপেশিয়ার সব কাজও নষ্ট করে দিয়েছিল। যাতে পরবর্তী প্রজন্ম হাইপেশিয়া ও তাঁর কাজকে আর জানতে না পারে। কিন্তু ধ্রুব সত্যকে কি আর আটকানো যায়? হাইপেশিয়ার মৃত্যুর পরে তাঁর ছাত্ররা তাঁর কাজটি চালিয়ে বা এগিয়ে নিয়ে যায়। বলাবাহুল্য, হাইপেশিয়ার গবেষণা ও লেখাগুলো আজও গণিত, জ্যোতির্বিজ্ঞান এবং দর্শনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।
নিঃসন্দেহে, হাইপেশিয়ার মৃত্যু ইতিহাসের পাতায় একটি বড়সড় ট্র্যাজেডি। তাঁকে কেন হত্যা করা হয়েছিল সেই ব্যাপারে দুটো প্রধান তত্ত্ব রয়েছে। প্রথম তত্ত্বটির মতে, বিশপ সিরিলের সাথে আলেকজান্দ্রিয়ার গভর্নর অরেস্টেসের রাজনৈতিকভাবে প্রবল মতবিরোধে ছিলেন। এর কারণ অবশ্য হাইপেশিয়া। কেননা, সিরিল বিশ্বাস করতেন যে, হাইপেশিয়া ও তাঁর দর্শন হল গোঁড়া খ্রিস্ট ধর্মবিরোধী প্যাগান(প্রাচীন ধর্ম প্যাগানিজম-এর ধারক)তথা চার্চদ্রোহী আর অরেস্টেস ও তাঁর শাসন প্রভাবিত হচ্ছে হাইপেশিয়া ও তাঁর দর্শন দ্বারা। তাই নরকের কীট সিরিল ও তাঁর অনুগামীরা হাইপেশিয়াকে সরিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। আর এর সাথে আছে দ্বিতীয় আরেক তত্ত্ব তা হল, হাইপেশিয়া একজন শিক্ষিতা এবং স্বাধীনচতা নারী ছিলেন যিনি পুরুষদের সাথে সমান স্তরে গণিত, জ্যোতির্বিদ্যা ও দর্শন ইত্যাদি গুরুগম্ভীর বিষয়ে আলোচনা করতেন। এমনকি তিনি খ্রিস্টান ধর্মের অন্ধকার দিকগুলো তুলে ধরে তার বিরোধিতাও করেছিলেন, যা তখনকার সময়ে সমাজে বেশ প্রভাব বিস্তার করছিল। হাইপেশিয়ার এই মহান নারীত্ব ও মুক্তচেতনা গোঁড়া পিতৃতান্ত্রিক ও ধার্মিক সিরিল এবং তাঁর অনুসারীরা মেনে নিতে পারেননি। তাই, তাঁকে বর্বরভাবে হত্যা করে নারীদের অধিকার এবং শিক্ষার জন্য একটি ধাক্কা দিতে চেয়েছিলেন। আসলে, নারীজাতির শিক্ষা বন্ধ করে দিয়ে, সমাজের মুক্তচিন্তার পথ বন্ধ করে দিয়ে এভাবেই সমাজকে অনেক পেছনে এক অন্ধকারময় যুগে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যেতে চায় কিছু পাশবিক আসুরিক অমানুষের দল। তবুও, সত্যের জয় হয়। আসুরিক শক্তির পরাজয় ঘটে দেবত্ব শক্তির কাছে। অনুসন্ধিৎসু অসংখ্য নারী-পুরুষের দ্বারাই জ্ঞানের আলো প্রজ্জ্বলিত হতে থাকে গাণিতিক নিয়মেই ধর্মীয় সহ সমস্ত গোঁড়ামিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েই।
হাইপেশিয়ার জীবন ও কর্ম এটাই দেখিয়ে গেছে যে, পুরুষের মতো নারীরাও জনসমক্ষে কথা বলতে পারেন। এমনকি জটিল ও দুরূহ বৈজ্ঞানিক, রাজনৈতিক ও বৌদ্ধিক বিষয় নিয়েও তাঁরা অনায়াসে চিন্তাভাবনা ও আলোচনা করতে পারেন। গণিত ও জ্যোতির্বিজ্ঞান সম্পর্কিত হাইপেশিয়ার চিন্তাভাবনা ও কথাগুলো পরবর্তী সময়ের গণিতজ্ঞ ও জ্যোতির্বিদদের কাজে লেগেছে এবং অনুপ্রাণিত করে সাহায্য করেছে নতুন নতুন উন্নত তত্ত্ব তৈরি করার ক্ষেত্রে। বলাই যায় যে, হাইপেশিয়ার কাজ আজও আমাদের কাজে লাগে ও ভাবিয়েও তোলে। শুধু গণিত বা বিজ্ঞানের ইতিহসেই নয় গোটা মানব জাতির ইতিহাসের পাতায় হাইপেশিয়া অতি সম্মানীয় ও গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে রয়েছেন। তিনি সমগ্র নারীজাতির আদর্শ তো বটেই এমনকি মানবমুক্তির দিশারীও বটে।