Next
Previous
Showing posts with label পথে প্রবাসে. Show all posts
0

পথে প্রবাসে - শিবাংশু দে

Posted in

টোটো কোম্পানি
শিবাংশু দে



আমার ভারতবর্ষ- ১০

রত্নগিরি

---------



দেশে বিদেশে ঘুরে বেড়াই বৌদ্ধ ঐতিহ্যের পদচিহ্ন খুঁজে খুঁজে। ব্যক্তিগত পঠনপাঠন বেড়ে ওঠে, গৃহস্থের লাইব্রেরি উপচে পড়ে। দেশের উত্তর-দক্ষিণ-পূর্ব-পশ্চিম সব প্রান্তে তো বটেই, বিদেশেও সে খোঁজ ফুরোয় না। গত আড়াই হাজার বছরের আমাদের যে ইতিহাস ওতোপ্রোত বুদ্ধের নামে, সেখান থেকে কী করে তাঁর নাম একেবারে লোপ পেয়ে গেলো চার-পাঁচশো বছর আগে। আবার তিনি ফিরে এলেন ইংরেজের হাত ধরে। ভারতবর্ষ আবার খুঁজে পেলো তার সর্বকালের শ্রেষ্ঠতম সন্তানকে নতুন করে।

গুপ্তযুগের মধ্যপথে, অর্থাৎ ষষ্ঠ শতকের শুরুতে রাজা নরসিংহ বালাদিত্যের সময় ব্রাহ্মণী আর বিরূপা নদীর ব-দ্বীপে গড়ে ওঠে এক অতি উন্নত বৌদ্ধ মেধার প্রতিষ্ঠান। আজকের যাজপুর, কেন্দ্রাপাড়া,জগৎসিংপুর জুড়ে গড়ে ওঠা পুষ্পগিরি মহাবিহার। যার অংশ ললিতগিরি, উদয়গিরি, রত্নগিরি, পুষ্পগিরি। যার বিপুলত্ব ও মহিমা চ্যালেঞ্জ করতো নালন্দা মহাবিহারকে। মহাযানী বৌদ্ধদর্শন ও তন্ত্রচর্চার প্রধানতম কেন্দ্র হয়ে, বিস্তৃত ভূগোল জুড়ে গড়ে ওঠা এই সব সারস্বত সংস্থান, আমাকে গর্বিত করে ভারতীয় হিসেবে।



আবিষ্কার হয়েছে এই সেদিন, ষাটের দশকে উৎখনন হবার পর। ষষ্ঠ শতকের শুরু থেকে দ্বাদশ শতকের শেষ পর্যন্ত চলেছিলো তার জয়যাত্রা। ঐতিহাসিক, পণ্ডিত দেবলা মিত্র'র গবেষণা থেকে পাওয়া তথ্য আমাদের অবাক করে দেয়। খননে পাওয়া সিলমোহর থেকে জানা যায় জায়গাটার নাম ছিলো ' শ্রী রত্নগিরি মহাবিহারায় আর্য ভিক্ষু সঙ্ঘস' । ৬৩৯ সালে হিউ এন সাং এসে অবাক হয়ে গিয়েছিলেন রত্নগিরির আকার, আয়তন, গরিমা দেখে। বারবার লিখে গেছেন পঞ্চমুখ হয়ে। আমরা খোঁজ পেলুম এই অর্ধশতক আগে।
একটি মহাস্তূপ। তার সামনে দু'টি মহাবিহার, আর ছোটোবড়ো অসংখ্য স্তূপ, চৈত্য, নানারকম নির্মাণ। চমকে দেয়। এর বহুবিচিত্র স্থাপত্য, তার সূক্ষ্মতা, বিশালত্ব, সৌন্দর্য, দেশে-বিদেশে অনেক দেখার পরেও আমি দাবি করতে পারি অপরূপ, অনন্য। অসংখ্য বৌদ্ধ দেবদেবী, অবলোকিতেশ্বর, বজ্রপাণি বা পদ্মপাণি, তারা, লোকেশ্বর, অপরাজিতা, হারীতি, হেরুকা, সম্ভর অথবা গজলক্ষ্মী ছড়িয়ে আছে চারদিকে, নানা রকম শাক্যমুনির
মূর্তির সঙ্গে সঙ্গে। বুদ্ধের এই সব মূর্তির সঙ্গে পণ্ডিতেরা সাদৃশ্য খুঁজে পেয়েছেন বরোবুদুর আর অনুরাধাপুরার ভাস্কর্যের নমুনাগুলির। সত্যি কথা বলতে কি, এই ভাবে শব্দ দিয়ে তাদের ঠিক বর্ণনা করা যায় না। চোখে দেখতে হয়। যাঁরা নিজে পৌঁছোতে পারবেন না বা পারলে এই মূহুর্তে হয়তো সম্ভব নয়, তাঁদের জন্য কিছু ছবি রেখে দিই আমার স্বপ্নের ভারতবর্ষের ইতিহাস থেকে কয়েকটি প্রতিবিম্ব। 


0

পথে প্রবাসে - শিবাংশু দে

Posted in




টোটো-কোম্পানি

আমার ভারতবর্ষ-৯

আকবর বাদশা ও একজন বাঙালি কেরানি

যমুনা নদীর পাশে জায়গাটা আকবর নিজের সমাধির জন্য আগেই বেছে রেখেছিলেন। গ্রামটার নাম সুলতান সিকন্দর লোদির নামে ছিল, সিকন্দরা। কিন্তু কাজে হাত দেবার আগেই তাঁর ইন্তেকাল হয়ে গেলো। শাহজাদা সলিম আদেশ করলেন তাঁর ওয়ালিদের সম্মানের সঙ্গে মানানসই একটা স্মৃতি সৌধ নির্মাণ করার জন্য। তিন বছর কেটে যাবার পরেও ১৬০৮ সালে সলিম (তখন জহাঙ্গির) গিয়ে দেখেন কাজ অসমাপ্ত। তার উপর যতটুকু নির্মাণ হয়ে ছিল তা তাঁর পছন্দ হলো না। পুরো ভেঙে দিয়ে আবার
কাজ শুরু হলো। ঠিক কতদিন আরও লেগেছিল লেখা নেই। সম্ভবত ১৬১৩-১৪ সাল নাগাদ কাজ শেষ হয়। খরচ হয়েছিল পনেরো লাখ টাকা। লাল কোটা পাথর আর শাদা মার্বেল পাথরে তৈরি এই সৌধটির ক্যালিগ্র্যাফির দায়িত্বে ছিলেন ইরানের শিরাজ থেকে আসা শিল্পী আবদুল হকশিরাজি। এই স্থাপত্যটির বৈশিষ্ট্য এর অতিসূক্ষ্ম কারুকাজ আর সংহত বিশালত্ব। আকবর বাদশার আসল সমাধিটি রয়েছে প্রথামতো সৌধটির মেঝের নীচে।
দিল্লিতে হুমায়ুঁর সমাধিটির স্থাপত্য আর আকবরের সমাধি সৌধের নক্শা একেবারে আলাদা। হুমায়ুঁর সমাধিসৌধের পরিকল্পনা মধ্য এশিয়ার ধরনে করা হয়েছিল। যা কেতিমুরিদ স্থাপত্য বলা হয়। কিন্তু আকবর বাদশার সমাধি সৌধটি ভারতীয় ও ইসলামি স্থাপত্যের বিশ্রুত সমন্বয়ে তৈরি হয়েছিল। সত্যি কথা বলতে কী, তাজমহলের প্রকৃত পূর্বসূরি হিসেবে এই নির্মাণটির কথাই মনে পড়ে।

অওরঙ্গজেবের সময় ভরতপুরের বিদ্রোহী জাঠ সর্দার রাজারাম জাঠ আকবরের সমাধি লুণ্ঠন করে বহু কিছু ধ্বংস করে দেন। এমন কী আকবরের সমাধি খুঁড়ে তাঁর দেহাবশেষকেও অসম্মানিত করেন। যদিও পরে অওরঙ্গজেব রাজারামকে পরাজিত করে নৃশংসভাবে হত্যা করেন, কিন্তু আকবরের সমাধির বড়ো ক্ষতি হয়ে যায়। ইংরেজরা আসার পর প্রথমে লর্ড নর্থব্রুক ও পরে লর্ড কার্জনের পৃষ্ঠপোষকতায় সমাধিটির পূর্ণ সংস্কার করা হয়।



যাঁরা মন দিয়ে এই নির্মাণটি দেখেছেন, তাঁদের কিছু বলার নেই। কিন্তু যাঁরা দেখেননি তাঁরা প্রথম সুযোগেই যেন দেখে নেন। আমাদের ঐতিহ্যে এই সমাধি সৌধটির জুড়ি নেই।



0

পথে প্রবাসে - শিবাংশু দে

Posted in



টোটো-কোম্পানি
আমার ভারতবর্ষ- ৮
দক্ষিণকাশীর দানসাগর


কী রকম লাগে? যখন হঠাৎ আপনি নিজেকে আবিষ্কার করছেন পুরাণযুগের একটা নিখুঁত আবহে? দেড় হাজার বছর পিছিয়ে গেছেন অদৃশ্য টাইমমেশিনে? দুর্ভেদ্য প্রাচীরঘেরা একটা দেবতার গ্রাম। ছায়াঘেরা আবহে স্বপ্নের মতো চারদিকে শুধু মন্দির আর মন্দির। শিবপুরাণের পরম্পরা মেনে তৈরি হয়েছে তারা। বয়সহীন বৃক্ষরাজির সজল শুশ্রূষা। পাথর দিয়ে গড়ে তোলা একটা মন্দিরময় প্যানোরামা। নিজেকে মনে হবে শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের গল্পের পাতা থেকে বেরিয়ে আসা একটা চরিত্র। এতো প্রামাণ্য তার পরিবেশ। ভাবতেই পারছিনা, আমি একুশ শতকের একজন পোকামাকড় টাইপ, শহুরে মানুষ। কিন্তু হয়। সেই রোমাঞ্চ হয়, সেই অনুভূতি, জেগে থাকা স্মৃতিময় মেদুরতা।
পঞ্জিকায় তখন ৫৯৫ খ্রিস্টাব্দ। সদ্য উজ্জৈনের রাজপাট থেকে স্কন্দগুপ্তের পতন হয়েছে। মধ্য এশিয়া থেকে আসা শ্বেতাঙ্গ অশ্বারোহী হুন জাতির যোদ্ধারা দখল করে নিয়েছে উত্তরাপথ। এদেশে এসেই তারা গ্রহণ করেছে আর্যধর্ম। তারা আর ম্লেচ্ছ নেই। তাদের রাজ্য থেকে বহুদূরে দাক্ষিণাত্যে জেগে উঠছে আদি চালুক্যদের রাজপাট। তাদের রাজধানী আজকের বাদামি, জেলা বাগলকোট, উত্তর কর্ণাটক। তাদের রাজা ইতিহাস বইয়ে পড়া বিখ্যাত সম্রাট পুলকেশিন। রানি দুর্লভা তাঁর সম্রাজ্ঞী। দেবতা মহাকূটেশ্বরের মন্দির নির্মাণের জন্য সম্রাজ্ঞী দান করলেন দশটি গ্রাম। তাঁর পুত্র মঙ্গলেশ শুরু করলেন মহাকূটেশ্বর আর অন্য মন্দির স্থাপনের কাজ। ধারাটি চলেছে প্রায় একশো বছর। সপ্তম শতকের শেষে রাজা বিজয়াদিত্যের উপপত্নী বীণাপোটী মহাকূটেশ্বরকে দান করলেন অনেক রত্নসামগ্রী। শিলাপটে এটুকুই পাওয়া যায়। এটি ছিলো পুরাণযুগের শীর্ষকাল। সারাদেশে নানা বিদ্বান শিবপুরাণ রচনা করছেন। মন্দির ভাস্কর্যে তাকে গড়ে তুলছেন স্থপতি আর শিল্পীরা।মহাকূটেশ্বর শিবতীর্থটি শেষ পর্যন্ত প্রসিদ্ধ হলো দক্ষিণকাশী নামে।

সবই মন্দিরই বিভিন্নরূপে শিবকে নিবেদিত। মহাকূটেশ্বর, সঙ্গমেশ্বর, মল্লিকার্জুনেশ্বর, বিরূপাক্ষেশ্বর আরও অনেক। একটি বিষ্ণুমন্দির।মন্দির জলাশয়টির নাম পাপনাশন। সঙ্গে নান্দী, অর্ধনারীশ্বর, বরাহ, দ্বারপাল, বেতাল, বীরভদ্র, কালিকা, হরগৌরী ইত্যাদি শৈবতন্ত্রের সঙ্গে ওতপ্রোত অসংখ্য মূর্তিস্থাপত্য। পাথরের শরীরে স্তব্ধ হয়ে রয়েছে। দক্ষিণের দ্রাবিড় আর উত্তরের নাগর শৈলী, সব মন্দির হয়ে মিলেমিশে পাশাপাশি। নাহ, বিশাল, বিপুল কোনও আয়োজন নেই মহাকূটেশ্বরের। কিন্তু কী দরকার তার? রোমাঞ্চিত বিস্ময় কি শুধু প্রাচুর্যের মধ্যে থাকে? একেবারে নয়। ইতিহাস আর বর্তমানের সীমারেখা কখন ধুয়েমুছে যায়, ঠাহরই হয় না।

আমার ভারতবর্ষ...
0

পথে প্রবাসে - শিবাংশু দে

Posted in




টোটো-কোম্পানি
আমার ভারতবর্ষ- ৭

লখনউ: ইয়েহ শহর লালদার হ্যাঁয়

আবদুল হালিম শরর প্রণীত ''মশরিকী তমদ্দুন কা আখরি নমুনা ইয়া গুজিস্তা লখনউ' পড়ে বাঙালিরা নবাবি লখনউ'কে অনেক বেশি জানতে পেরেছে। যদিও অওয়ধের নবাবি উত্তরাধিকার ওয়জিদ আলি শাহের সঙ্গে শেষ হয়েছিলো মোকাম কলকাতার মাটিতে। কিন্তু এখানকার লোকেদের জন্য মেটেবুরুজের নবাব অচেনাই থেকে গিয়েছিলেন। অচেনা থেকে গিয়েছিলো লখনউভি তহজিবের কায়দাকানুন।

ছোটোবেলায় যখন প্রথম লখনউ গিয়েছিলুম যে ব্যাপারটা সব চেয়ে বেশি করে মনে থেকে গিয়েছিলো সেটা হলো লখনউভি তহজিব। সেখানে দেখা সাধারণ রিকশা চালকদের বোলি, অর্থাৎ মুখের ভাষা এবং তহজিব বা শিষ্টাচার আমরা দেশের এই প্রান্তে তথাকথিত 'শিক্ষিত, ভদ্রলোক' দের মধ্যেও কমই দেখেছি। সমাজের নিম্নতম বর্গের মানুষের স্বভাবেও এই পর্যায়ের মার্জিত রুচির কৃষি সুলভ দেখা যেতো। এই ব্যাপারটা আমাকে প্রথম লখনউ সংস্কৃতির প্রতি আগ্রহী করে।


যদিও পরবর্তীকালে দেখেছি ধীরে ধীরে সেই সূক্ষ্ম পরিমার্জনা অদৃশ্য হয়ে গেছে। কুমার প্রসাদ মুখোপাধ্যায় বলেছিলেন বাহরাইচ আর এটাওয়া জেলা থেকে আগত রুক্ষ কৃষি শ্রমিকদের প্লাবন লখনউ শহরের বাস্তবিকতা বদলে দিয়েছে। নিকট অতীতে দেখেছি অবস্থা অনেক বেশি শোচনীয় হয়েছে। গোরখপুরি 'লঠ-মার' কলচর অর্থাৎ জঙ্গলরাজের বোলবালা থেকে নবাবি লখনউয়ের তহজিব বহু যোজন দূরে।

আকবর বাদশাহ তাঁর রাজত্বকে বারোটি সুবাহতে ভাগ করেছিলেন ষোলো শতকের শেষদিকে। অওরঙ্গজেব পর্যন্ত আসতে আসতে তার সংখ্যা হয়ে যায় বাইশ। তার মধ্যে চারটি আছে সমকালীন পাকিস্তানের ঠিকানায় । বাকি আঠেরোটির মধ্যে নানা কারণে তিনটি সুবাহ ছিলো একটু আলাদা। এই সুবাহগুলোর নবাবদের মধ্যে কয়েকটি সমতা চোখে পড়ে। ইতিহাস খুঁজলে দেখা যাবে তাঁদের শিকড় ছিলো ইরানি সভ্যতায়। দেবগিরির ব্রাহ্মণ সন্তান সূর্যনারায়ণ মিশ্রকে দশ বছর বয়সে দাস হিসেবে কিনে নিয়েছিলেন
ইরানি রাজপুরুষ হাজি শফি। ধর্ম পরিবর্তনের পর তাঁর নাম হয় মহম্মদ হাদী। হাজি শফি বাদশাহ অওরঙ্গজেবের চাকরি ছেড়ে ইরানে ফিরে যান। সঙ্গে নিয়ে যান মহম্মদ হাদীকে। হাজি শফির মৃত্যুর পর হাদী আবার হিন্দুস্তানে ফিরে আসেন। শিক্ষানবীশ ছিলেন বিদর্ভ সুবাহের দেওয়ান আবদুল্লাহ খুরাসানির অধীনে। পরবর্তীকালে তাঁকে আমরা চিনবো মুর্শিদকুলি জাফর খান হিসেবে। সুবাহ বঙ্গালের দুর্ধর্ষ নবাব।


কুলি কুতব বেঘ ছিলেন ইরানের হামাদান থেকে আসা একজন ভাগ্যান্বেষী যোদ্ধা। সময়ের ফেরে তাঁকে আমরা দেখতে পাই সুলতান কুলি কুতব শাহ নামে গোলকোণ্ডা সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা হয়ে ফিরে আসতে। বাদশা অওরেঙ্গজেব পর্যন্ত তাঁরা স্বাধীন সুলতান ছিলেন। ১৬৮৭ সালে মুঘলরা গোলকোন্ডা দখল করে নেয়। তার পর নিজামের রাজত্ব।

তৃতীয়জন ছিলেন মীর মহম্মদ আমীন। ইরানের নিশাপুর থেকে হিন্দুস্তানে ভাগ্যান্বেষণে আসা একজন তরুণ যোদ্ধা। পরবর্তীকালে তাঁর পরিচয় হয়ে উঠেছিলো নওয়াব সাদত খান। লখনউয়ে অওধ শাহীর প্রতিষ্ঠাতা ।

সুবাহ বঙ্গাল, সুবাহ গোলকোন্ডা এবং সুবাহ অওধের রাজবংশ ছিলো ইরানি সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের অঙ্গ। মুঘল হিন্দুস্তানের অতি প্রতাপশালী সুন্নি তুর্কি রাজশক্তির থেকে আলাদা শিয়া গোষ্ঠীর
মানুষ। ভারত ইতিহাস এবং সংস্কৃতির একজন ইতর সন্ধানী হিসেবে আমি এই তিন সুবাহের প্রতি চিরকালই অধিক আগ্রহী। ব্যক্তিগত অনুসন্ধিৎসা বেশ প্রবল। যদিও মধ্যযুগ মানেই রক্তাক্ত অন্ধযুগের কাহিনী। তবু সুমার্জিত পারস্য সভ্যতার প্রতিফলন দেখা গিয়েছিলো এই সব রাজাদের শাসন ব্যবস্থায়। নিজে বাঙালি হিসেবে হয়তো সুবাহ বঙ্গালের ব্যাপারস্যাপার জানার সুযোগ বেশি ঘটেছে। আবার দীর্ঘকাল গোলকোন্ডা সংস্কৃতির দেশে বসবাসের সূত্রে তাঁদের ঐতিহ্যের
ভিত্তিগুলিও কিছুটা জানা হয়ে গেছে। যদিও সে অর্থে সুবাহ অওধে আমি বাস করিনি কখনও, কিন্তু দীর্ঘ চর্চা ও আসাযাওয়া থেকে তাঁদের সাংস্কৃতিক মানচিত্রটি খুব একটা অচেনাও থেকে যায়নি।

লখনউ বেড়াতে গিয়ে লোকে কী দেখবে? দেখবে বড়া আর ছোটা ইমামবাড়া, তার চত্বরে ছড়িয়ে থাকা ঘড়িমিনার, রুমি দরওয়াজা, সাতখন্ডা। দেখবে ছত্তর মঞ্জিল, রেসিডেন্সি, শাহ নজফ ইমামবাড়া,
সাদত আলি খান সমাধি, জামা মসজিদ, লা মার্টিনিয়ার, এক রাশ নতুন বাগ-বাগিচা। দেখবে লখনউয়ের বিখ্যাত বাজারগুলো, হজরতগঞ্জ, আমিনাবাদ, চওক।
লখনউ সম্বন্ধে বলতে গেলে বলতে হবে, 'নাল্পে সুখমস্তি, ভূমৈব সুখম'। এতো সংক্ষেপে শুধু ইশারাই চলে। তবে কথায় আছে না, 'সমঝদার কে লিয়ে ইশারা হি কাফি', সেটাই ভরসা। শেষে লখনউকে নিয়ে কবির দুই ছত্র মুগ্ধতাও থাক,

'... ইয়েহ শহর লালদার হ্যাঁয়, য়ঁহা দিলোঁ মেঁ প্যার হ্যাঁয়
জিধর নজর উঠাইয়ে, বহার হি বহার হ্যাঁয়
কলি কলি হ্যাঁয় নাজনীঁ, ইয়েহ লখনউ কি সর-জঁমী...'
(শকীল বদায়ুনি)