0

গল্প - ইন্দ্রনীল মজুমদার

Posted in







ওদের দুনিয়াটা অন্যরকম। এই আমাদের মতো ঘৃণাসর্বস্ব, মিথ্যা, কৃত্রিম দুনিয়ার মতো নয়। আমাদের দুনিয়া সুখ নেই অথচ আছে সাধুবেশে অসাধু আচরণ আর অসৎ ব্যক্তির রমরমা। ওদের হয়তো টাকা নেই আর আমাদের এখানে টাকা দিয়ে লোকের ক্ষতি করার লোকের অভাব নেই। ওই যে বললাম, ওদের দুনিয়াটা অন্যরকম। ওদেরও যে লোভ, কুকর্ম বা দুষ্কর্ম করার উপদেশ বা অভিসন্ধি কেউ দেয় না তা নয়। তবে, ওরা সেইসব পাত্তা না দিয়ে এ পৃথিবীতে প্রকৃতপক্ষে সততার প্রতীক হয়ে ফুটে থাকতে চায়। কোনও ফাঁদে পা না দিয়ে ওরা সৎ মানুষের পরিচয় দিয়ে থাকে। কোনও ধর্মীয় গোঁড়ামিকে প্রশ্রয় না দিয়ে ওরা উদার, অসাম্প্রদায়িকতার পরিচয় দিয়ে থাকে। ওদের কাছে ওদের কর্মই হল ধর্ম। আর সেই কর্ম হল মানব সমাজের মঙ্গল এবং ধর্ম হল মানবতা। অনেক কথা বলা হয়ে গেল, এবার ওদের সাথে পরিচিত হবার পালা।



দৃশ্য– ১



“আম্মি, তুমি কোথায় যাচ্ছ?”


ছোট্ট সোহেলের কথা শুনে খানিকটা হেসে ওঠে আসিফা খাতুন। আর তার নতুন চাকরি জীবনের শুরু। বর অন্য রাজ্যে কাজ করে। নিয়মিত টাকা পাঠাতে পারে না। একেই অভাবের সংসার। ছেলে বড় হচ্ছে, পড়া ও থাকা খাওয়ার খরচও বাড়ছে। তাই, বরের ওপর পুরোপুরি নির্ভর না হয়ে অল্প বয়সেই স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করেছে আসিফা। সে যাত্রায় সফলও হয়েছে সে। বেশ কিছুটা হাসিমুখে ছেলেকে বলে,–


“আজ একটি নার্সিংহোমে নার্সের চাকরি পেয়েছি। তোকে স্কুলে দিয়েই অফিসে যাব। আবার স্কুল থেকে নিয়ে পড়তে দিয়ে বাড়ি ফিরব। কোনও দুষ্টুমি করবি না বাবু, মন দিয়ে পড়াশোনা করবি।”


– তার মানে তো তোমার সবাইকে সেবা করতে হবে।


– হ্যাঁ, তাই তো। মানুষের সেবা করা তো ভালো কাজ।


– কিন্তু, হুজুর যে বলেছিল– ‘ইসলাম বাদে অন্যান্য সমস্ত ধর্মের লোকেরা কাফের। তাদের সেবা না করে মেরে দেওয়া ভালো’।


ছেলের কথা শুনে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে আসিফা। সে তৎক্ষণাৎ বলে ওঠে, “বালাই ষাট। ওরকম কথা বলিসনি। তওবা তওবা ! মানুষকে ভালবাসি সবচেয়ে বড় ধর্ম। তোদের ঐ হুজুর একটা অশিক্ষিত, মূর্খ। ও নিজে কি জানে? স্বয়ং নবীজীও অমুসলিমদের সম্মান ও সেবা করেছিলেন। আর ঐ হুজুর! একটা অপদার্থ, মূর্খ ও আস্ত নরকের কীট। যাওয়ার সময় আমাদের ঘরে উঁকি-ঝুঁকি মারে। মহিলাদের দিকে বাজেভাবে তাকায়। ছিঃ! ওটা একটা লোক! রোজ রাতে নেশা করে পড়ে থাকে। ও কি শেখাবে ধর্মের কথা! আল্লাহর মেহেরবানী যে তিনি আমাকে মানুষের প্রতি সেবার কাজ দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! কে কি বলছে বা করছে জানার দরকার নেই। এটাই আমি মানি যে, মানুষের প্রতি সেবা, ভালোবাসা ও বিশ্বাস করাই সবচেয়ে বড় ধর্ম। আর খবরদার ঐ হুজুরের সভায় যাবি না। কেউ ডাকলেও না।


– খুব সুন্দর কথা বলেছ, আম্মি। ঐ হুজুরটা একটা পাজি, বদমাইশ। আর যাব না, প্রমিস।


আসিফা হাসে আর ছেলেকে আদর করে বলে, “চল। স্কুলের দেরি হয়ে যাচ্ছে। স্কুলে গিয়ে তারপর কাজে ঢুকতে হবে।”


দৃশ্য– ২


গ্রামের মন্দিরে পূজোর পর প্রসাদ দেওয়া হবে। এমন সময় একজন দৌঁড়ে পুজোর উদ্যোক্তা শ্রীরাম কুমার ভট্টাচার্যকে বলে ওঠে– “রামবাবু, ও রামবাবু, অমঙ্গল হয়ে গেছে। বড়োই অমঙ্গল।”


রামবাবু শান্ত কণ্ঠেই বলেন, “কিসের অমঙ্গল? কি হয়েছে বল?”


– দেখি না একদল নীচু জাতের লোক চলে এসেছে প্রসাদ খেতে। নীচু জাতের মেয়েছেলে এবং শিশুরাও এসেছে যে! ছিঃ ছিঃ ছিঃ!


– তাতে হলটা কি?


– ওদের ছোঁয়াছুয়িতে যে প্রসাদ অমঙ্গল হয়ে যাবে। আমরা যে হিন্দু, তায় ব্রাহ্মণ।


এবার রামবাবু গেলেন বেজায় চটে। আর ফুটে এল তাঁর রুদ্রমূর্তি, ভীষণ রেগে গিয়েই বললেন, “এক থাপ্পর লাগাবো রে হতচ্ছাড়া! ওরা যখন ময়লা পরিষ্কার করে, বাড়িতে বাড়িতে আমাদের সেবা করে পাশে থাকে আত্মীয়ের মতো তখন জাত-বর্ণভেদ থাকে না বুঝি! গোপন সূত্রে খবর পেয়েছি যে, তুই ওদের জাতের একটি মেয়েকে রাতে বাড়িতে ডেকেছিলি। সে যেতে চায়নি বলে তুই তাকে টাকার লোভ পর্যন্ত দেখিয়েছিস। তখনও মেয়েটি রাজি হয়নি বলে তুই সেই বেচারিকে মারার হুমকি পর্যন্ত দিয়েছিস। আর এ কথা ওদের পাড়ার সবাই জানে। গত সপ্তাহে তুই আবার ওকে বিরক্ত করতে গিয়ে ওর বর সহ বেশ কিছু লোকজন তোকে পেটায়। ঐ ভয়তে তুই এইসব কথা বলছিস। ভেবেছিসটা কি? আমি কিছুই কি জানিনা! সব জানি। তোর মতো কুলাঙ্গার কি না আমাকে জাতি ও বর্নভেদের মতো নোংরা বিষ শেখাতে এসেছিস! ওরা আমাদের ভাই-বোন, ওদের মধ্যেও রয়েছেন ঈশ্বর। তোর তো ব্রহ্মজ্ঞানও হয়নি, হওয়ারও অনেক দূরের কথা। তাই, তোকে ব্রাহ্মণ তো দূর, সামান্য মানুষ বলেও মানি না। দূর হো ইতর হতচ্ছাড়া! মন্দির ভগবানের জায়গা, পবিত্র জায়গা, তোদের মতোন দুশ্চরিত্রের অধিকারী, অপবিত্র, পাপীদের জায়গা নয়।”


ঐ লোকটি অবস্থা বেগতিক দেখে পালিয়ে যায়। রামবাবু এবার আরেকজনকে ডাকেন, “শ্রীপতিবাবু, সবাইকে মন্দিরে ঢুকতে দিন। প্রসাদ যেন যারা এসেছে সবাই পায়।”


শ্রীপতিবাবু খুশি হয়ে বলেন, “বেশ। ঠিক কাজ করেছেন একদম।”


এবার রামবাবু দুই হাত কপালে ঠেঁকিয়ে বলেন, “জয় মা কালী। আমাদের মা যে সবার। প্রণাম মাগো।”


দৃশ্য– ৩


সবাই কেক তৈরি করছে চার্চের পেছনের জমিতে। সামনে বড়দিন বা ক্রিসমাস। তাই বড়দিন উপলক্ষ্যে বেশ কিছু গরিব খ্রিস্টান পরিবারের বউয়েরা কেক তৈরি করে তা বিক্রি করে এই শীতের মাসটায় কিছু রোজগার করে থাকে। আবার উল বুনে সোয়েটারও তৈরি করে থাকে। বেশ স্বাবলম্বীতায় তাদের মাসটা কেটে যায়। তা কাজ কেমনভাবে চলছে তা দেখার জন্য ফাদার জোসেফ ও নান সিস্টার মারী বের হলেন দেখতে। সবকিছু দেখলেন ওঁরা দুজনে। ভদ্রমহিলারা খুব সুন্দরভাবেই কেক বানাচ্ছেন ও উল বুনছেন। তাঁদের কাজ দেখে ফাদার ও সিস্টার দুজনেই খুব খুশি হলেন। ফাদার জোসেফ সিস্টার মারীকে বললেন, “সিস্টার মারী, আমার একটা ইচ্ছে আছে। বিদেশ থেকে এবার চার্চে প্রতি বছর ডিসেম্বর মাসের মতোন ভালোই অনুদান এসেছে। এর বেশিরভাগটা দিয়ে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি পরিমাণে কেক তৈরি ও সোয়েটার বোনা হোক। অর্থ আমরা দেব।” নান মারী ফাদারের কথা কেড়ে নিয়ে বললেন, “বেশি করে আদিবাসী ও চার্চের পাশে বসা রাস্তার অবহেলিত ও দুস্থ মানুষজন এবং ঐ দূরের অনাথ আশ্রমকে দেবেন তো?”


– এক্স্যাক্টলি, সিস্টার। ফেড দ্য হাংরি ক্রাইস্ট এন্ড হেল্প দ্য নিডি ক্রাইস্ট। ওরাই তো গড, ওরাই তো প্রভু যীশু। অ্যাস লর্ড জেসাস রিসাইডস ইনসাইড দেম।

– দ্যাটস অ্যাবসলিউটলি রাইট, ফাদার। আসলে আমিও তাই ভাবছিলাম। আপনি এরকম বলবেন তা আমি বুঝতেই পেরেছি। আসলে আপনি মানুষটা তো খুব দয়ালু। তাই…


– সে তো সিস্টার তুমিও। অ্যাকচুয়ালি, উই আর ভেরি মাচ রিলিজিয়াস। এবং তুমি তো জানোই যে সত্যিকারের রিলিজিয়ন কিন্তু সব ধর্ম-বর্ণ-জাতি-লিঙ্গ ভেদ করে মানুষকে সাহায্য করতে বলে। জানি না সঠিক কি না তবে আমি শুনেছি যে বেশ কিছু চার্চে অখ্রিস্টানদের প্রসাদ দেওয়া হয় না। বাট আই হেট দিস এন্ড সো উই আর নট লাইক দ্যাট। উই লাভ পিপল।


– অ্যাবসোলিউটলি ফাদার। সমস্ত ভেদাভেদের ঊর্ধ্বে উঠে আমরা সমাজের অবহেলিত, দরিদ্র ও অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াচ্ছি– এতেই তো গড খুব খুশি হয় আমাদের আশীর্বাদ করবেন।


– ইয়েস সিস্টার, একদমই ঠিক কথা বলেছ।


দৃশ্য– ৪


– পটকা, বাইরে একটা বুড়ো লোক অনেকক্ষণ ধরে জানলা দিয়ে দেখছি কেমন যেন ভবঘুরের মতো ঘুরে বেড়াচ্ছে। একটু গিয়ে খোঁজ নে তো। পার্টি অফিসের বাইরে এরকমভাবে… যাক্ গে, পটকা যা তো একবার।


– যে আজ্ঞে দাদা, যাচ্ছি।



এই বলে পটকা বাইরে যায়। টেবিলে পার্টির সেক্রেটারি মশাই জানলা দিয়ে বিষয়টি দেখছেন। কিছুক্ষণ পর পটকা ফিরে আসে। কিরে, ওই বয়স্ক লোকটা কোথায়?


– কিরে ঐ বয়স্ক লোকটা কোথায়?


– আরে প্রবীরদা, উনি তো অন্য দলের। বলতে গেলে আমাদের বিরোধী দলের। তাই এখানে ঢোকায়নি। অফিসের বাইরে দাঁড় করিয়ে রেখেছি। বুড়োটা খুব পাজেলড হয়ে আছে। ওদের কি একটা মিটিং ছিল সেই উপলক্ষ্যে…


– পটকা, তুই ওঁকে ডাক। এখানে ডেকে আন।


– দাদা, কিন্তু…


– কোনও কিন্তু নয়, তুই ডাক ওঁকে।


এর কিছুক্ষণ পর পটকা সেই বৃদ্ধ ভদ্রলোককে নিয়ে এলো। তাঁকে বেশ বিব্রত ও অসহায় দেখাচ্ছে। প্রবীরবাবু তাঁকে আশ্বস্ত করলেন এবং তাঁর সামনে বসতে বললেন। হাসিমুখে অনেকটা প্রিয় মানুষের মতো সমস্ত সমস্যা শুনলেন। তিনি বললেন, “কোনও ভয় নেই কাকু, আপনি নিশ্চিন্তে সব বলুন। কোথা থেকে আসছেন?” আর পটকাকে বললেন, “পটকা,লস্যি বা ঠান্ডা পানীয় কিছু নিয়ে আয়।” তারপর, সেই অসহায় বৃদ্ধ ব্যক্তিকে বললেন, “বলুন, আপনার কোনও ভয় নেই। নিশ্চিন্তে থাকুন।” ঐ বৃদ্ধ ভদ্রলোক এবার সমস্ত বৃত্তান্ত বলেন। তিনি প্রবীরবাবু যে দল করেন তার বিরোধী দলের লোক। এতে স্বভাবত পটকা বিব্রত থাকলেও প্রবীরবাবু কিন্তু নির্বিকার। তিনি যেন দল-মত নির্বিশেষে ঐ বৃদ্ধ ভদ্রলোককে সাহায্য করতে প্রস্তুত। হাসিমুখে সমস্ত সমস্যা শুনছেন যেন বৃদ্ধের কত আপন অথচ তাঁরা পর। বৃদ্ধ ভদ্রলোক লস্যি পান করে যেন বেশ আশ্বস্ত হয়ে নিশ্চিন্তে যা বলে চলেছেন তা হল– “নমস্কার। আমার নাম কৃষ্ণকল দে। আমি থাকি চাঁদিপুর নামক গ্রামে যা এখান থেকে বেশ খানিকটা দূরে অবস্থিত। আমার পঁচাশির ওপর বয়স। আমি দলের অন্যান্যদের সাথে এখানে এসেছিলাম। এসেছিলাম একজনের বাইকে চড়ে যিনি দলের একজন নবাগত। আর তাঁর নামটাও ভুলে গেছি। আসলে, বয়স হয়েছে তো। তা মিটিং শেষে আর তাঁকে দেখতে পেলাম না। অন্যান্যরাও কেউ আমাকে সাহায্য করতে আর এলো না, ব্যস্ততা দেখিয়ে তাড়াতাড়ি সব চলে গেল। আমার বয়স হয়েছে। আর এই জায়গা আমার সম্পূর্ণ অজানা। বয়সের ভারে খুঁজে যে যাব তার কোনও উপায় নেই। একে ওকে তাকে কিছু জিজ্ঞাসা করেও কোনও লাভ হচ্ছিল না। এবার তাই বিনীত অনুরোধ করছি প্রবীরবাবু, আমায় একটু পৌঁছে দিলে ভালো হয়।”


প্রবীরবাবু এবার পটকাকে বললেন, “এঁকে পৌঁছে দিতে হবে এঁর গ্রামে। জানিস তো চাঁদিপুর কোথায়? বাইপাসের রুটটা ধরে নেব তাতে সুবিধা হবে। চল্ তো, আমিও যাই।”


– হ্যাঁ, দাদা।


আর ভদ্রলোককে বললেন, “উঠুন আপনার গাড়িতে, আপনাকে পৌঁছে দিই আপনার বাড়িতে।”

বৃদ্ধ ভদ্রলোক হাতে যেন চাঁদ পেলেন। খুব খুশি হয়ে বললেন, “একজন বিরোধী দলের লোককে যেভাবে সাহায্য করলেন। চির কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি আপনার কাছে। এরকম আজকাল আর ক’জনই বা করে? বলুন। সবখানেই তো শত্রুতা, মারামারি, হানাহানি আর কত কি! অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুন।”


প্রবীরবাবু কৃষ্ণকমলবাবুর হাত দুটি নিজের দু’হাতের মুঠোয় ধরে বললেন, “এরকম বলছেন কেন? আপনি বিপদে পড়েছেন। তাই একটি রাজনৈতিক দলের সেক্রেটারি হিসেবে আমার কর্তব্য আপনাকে সাহায্য করা। দূর থেকে এসেছেন এই অজানা জায়গায় আর বয়সের ভারে যেতে পারছিলেন না। আমাদের দলের কিংবা বিরোধী দলের কেউ হোন না কেন, তাতে তো কোনও ক্ষতি নেই। আরে কাকু, বিরোধী দলের কেউ হাজার হোক মানুষ তো। আর এটাই তো সৌজন্যবোধ– রাজনৈতিক সৌজন্যবোধ। তা, চলুন।”



দৃশ্য- ৫


– কি গো, রক্ত পেলে?


বেশ চিন্তায় বরকে ফোন করলেন রত্নাদেবী। তাঁদের একমাত্র ছেলে বরুণ গতকাল বাইক এক্সিডেন্ট করেছে। প্রচুর রক্ত ঝরেছে। তাই, ওকে বাঁচানোর জন্য প্রচুর রক্তের প্রয়োজন। কিন্তু, মুশকিলটা হল বরুণের রক্তের গ্রুপ হল ও-পজিটিভ। আর ও-পজিটিভ তো অন্য রক্তের গ্রুপ থেকে রক্ত নিতে পারে না একমাত্র ও-পজিটিভ গ্রুপ ছাড়া। অথচ তা সব গ্রুপকে রক্ত দিতে পারে। তা, কিছুতেই ও-পজিটিভ গ্রুপ রক্তধারী কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না। উক্ত রক্ত গ্রুপটি অন্যান্য সময়ে পাওয়া গেলেও ঠিক এই সময়েই পাওয়া যাচ্ছে না। বরুণকে নিয়ে বড়োই বিপদে পড়লেন রত্নাদেবী। বরকে হাসপাতালে পাঠিয়েছেন, নিজে একটু পরে যাবেন। এখন যেতে পারছেন না কারণ বাড়িতে অঞ্জলী কাজ করছে। অঞ্জলীর ঘর পোচা এই হয়ে যাবে তারপর না হয় তিনি যাবেন। কিন্তু, বরের সাথে যোগাযোগ করে জানতে পারলেন যে, “না গো, এখনও ও-পজিটিভের কোনও রক্ত পেলাম না। হাসপাতালগুলোর এখন এই বাজে অবস্থা!”


রত্নাদেবী হাউ হাউ করে কেঁদেই ফেললেন। আর ঠিক তখন পাশ থেকে অঞ্জলী বলে ওঠে, “দিদি, বাবুর যে গ্রুপের রক্তের কথা তুমি দাদাকে বলছিলে না, তা বোধ হয় আমারও আছে।”


– তুই কি করে জানলি?


– ছোটবেলায় কোন এক কার্ড করাতে গিয়ে জেনেছিলাম। কার্ডটা সবসময় ব্যাগে রেখে দিই।


অঞ্জলী ওইটুকু বাচ্চা মেয়ে, লেখাপড়াও বিশেষ শিখতে পারেনি। অল্প বয়সেই কাজে নেমে পড়তে হয়েছে দারিদ্রতার দরুণ। বরুণকে ছোট ভাই বা ছেলের মতোই খুব ভালোবাসে। তবে ওর উপস্থিত বুদ্ধি ও সাহায্যের হাত পেয়ে রত্নাদেবী খুব খুশি হয়ে ওঠেন। কোনও এক আইকার্ডে যা অঞ্জলী দেখায় রত্নাদেবীকে, তাতে লেখা আছে অঞ্জলীর রক্তের গ্রুপ ও-পজিটিভ। রত্নাদেবী আর কাল বিলম্ব না করে অঞ্জলীকে নিয়ে চলেন হাসপাতালে। যাক, এবার অঞ্জলীর রক্তে ছেলেটা তো অন্তত বাঁচবে। স্বয়ং ঈশ্বরই হয়তো অঞ্জলীর বেশে বরুণকে বাঁচালেন।

এভাবেই বেঁচে থাক ভালো মানুষগুলো কেননা তারাই বাঁচিয়ে রাখেছে এই পৃথিবীটাকে। ওদের দুনিয়ায় কোন নেতি ও অসাধুতা নেই যে! ওরা এই অশান্তির দুনিয়াকে আজও শান্ত করে রেখেছে। এই খারাপের দুনিয়ায় ওরাই গড়ে তুলেছে বা তোলার চেষ্টা করে চলেছে ওদের নিজেদের কাজের মাধ্যমে ওদের এক নিজস্ব দুনিয়া। যে দুনিয়ায় গেলে বা তার বাসিন্দাদের অর্থাৎ ভালো মানুষদের সংস্পর্শে আসলে উপকৃত হচ্ছে বাকিরাও। চারিদিকে এত খারাপ মানুষ ও খারাপ পরিস্থিতির মাঝে ওরাই ভরসা, বলা যায় অন্ধকারে ওরাই আশার আলো। ওদের জন্যেই বেঁচে আছে এই গোটা দুনিয়া, ভালোভাবে বাঁচতে পারছি আমরাও। তাই, মনে প্রাণে চাই যে, খুব ভালোভাবে বেঁচে থাকুক ভালো মানুষদের দুনিয়া ও তার বাসিন্দারা আর বাঁচিয়ে রাখুক আমাদেরও যারা ভালোভাবে ও সৎভাবে কাজ করে বাঁচতে চাই।

0 comments: