0

অনুবাদ সাহিত্য - ঝর্ণা চট্টোপাধ্যায়

Posted in





অমৃতা প্রীতম পাঞ্জাবী সাহিত্যের স্বনামধন্য এবং জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক ও কবি। পাঞ্জাবী ভাষা ছাড়াও হিন্দি ভাষাতেও তিনি সাহিত্য রচনা করেছেন। জন্ম পাকিস্তানের অন্তর্গত পঞ্জাব প্রদেশের গুজরনওয়ালা নামক স্থানে ইংরাজী ১৯১৯ সালের ৩১শে আগষ্ট। অজস্র গল্প, কবিতা,উপন্যাস তিনি রচনা করেছেন।
‘কাগজ অউর ক্যানভাস’ নামক কবিতা সংকলনের জন্য ১৯৮০-৮১ সালের জ্ঞানপীঠ পুরস্কার পান। এ ছাড়াও সাহিত্য একাডেমী,পদ্ম বিভূষণ সম্মানেও তিনি সম্মানিতা। ২০০৫ সালের ৩১শে অক্টোবর তারিখে তিনি প্রয়াত হন।
অমৃতা প্রীতমের ’ বর্জিত এক বাগ কি কথা’ মহাভারতের শকুন্তলা উপাখ্যানের মূল ভাবনাটি থেকে নেওয়া। এ কাহিনি হল সেই সময়ের যখন মেনকা বিশ্বামিত্রের পুষ্করতীর্থস্থ বনে এসে মুনির তপস্যা ভঙ্গ করতে আগ্রহী এবং ইন্দ্রের নিকট সেখানে যাবার ইচ্ছা প্রকাশ করছেন, সেই সময় ইন্দ্রের সঙ্গে মেনকার কথোপকথন ও সেই অরণ্য সম্বন্ধে কিংবদন্তী কবির নিজের মত করে কবিতায় বর্ণিত।
‘ পরিত্যক্ত এক অরণ্যের ইতিকথা’ নামক কবিতাটি অমৃতা প্রীতমের ‘বর্জিত এক বাগ কি কথা’ অবলম্বনে রচিত।
##



পরিত্যক্ত এক অরণ্যের ইতিকথা

.
স্বর্গের উপবন নয় সে
পরিত্যক্ত এক অরণ্যের ইতিকথা
আকাশে যার নেই ঠিকানা
ধরায় আসন পাতা।
আসা-যাওয়াও ‘নিষেধ’ সেথায়
মেলে না কারো দেখা
পায়ের চিহ্ন পড়েনা হোথায়
নেই কো পথের রেখা।
অরণ্যের ফুল তুলতে মানা
‘নিষেধ’ আছে সবার জানা।
উর্বশী, এক অপ্সরা যেদিন
ওই বাগিচার চাইল ফুল,
‘দেবলোকের জন্য সে নয়’
ইন্দ্র জানায়-‘কোরোনা ভুল।‘
.
মেনকা নামের অপ্সরীটি
সেদিন ছিল দেব-সভায়
বিভোর হল সে নিজ চিন্তায়----
নিশুত রাতের অন্ধকারে
শব্দ যেথা যায় না কানে
কোন মুনি রয় সেই অরণ্যে?
আসা-যাওয়া ‘নিষেধ’ যেথায়
কোন অশরীরী বাস করে তায়?’
.
পরের এক পূর্ণিমাতে
দেবরাজ আর মেনকাতে
এই কথা হল দুইজনাতে-----
‘কি কাজ মোরে দিলে, রাজন!
মুনিদের শুধু তপস্যা ভাঙ্গন?
তোমার ভয় রাজা আমি মানি
থাকে যদি কেউ তেমন মুনি
তোমার আসন টলবে জানি।
কিন্তু আমি, বারে বারে ধরায় গিয়ে
ফিরে আসি ব্যর্থ হয়ে।
ওই অরণ্যে কোন সে মুনি?
পূর্ণিমা রাতে তার গান শুনি।
অনুমতি যদি দাও হে, বিরাট
ওখানে গিয়ে করি রাজ-পাট।
কে যেন আমায় ডাক দিয়ে যায়
ওখানে যেতে বড় সাধ হয়।‘
.
ইন্দ্র --
‘সে মুনি-ঋষিদের আস্তানা প্রিয়,
মুকুট-আসন কিছু চায় না কেহ
অরণ্যময় যত ফুলের গন্ধ
নিঃশ্বাসে তাদের সেই সুগন্ধ
তাই তো সেথায় ‘আদেশ’ জারি
আসা-যাওয়া পড়ে ভারী। ‘
.
মেনকা--
‘কিছু না জানি কিছু না মানি
আমি শুধু এইটুকু জানি,
যে কর্মের পুণ্যফলে ধরার মাটি সবুজ হবে
সেই কর্মদোষেই রাজা রক্তে ধরা লাল রবে।
এও সত্য! জেনে রাখো রাজন,
সাধু-দরবেশের হয় প্রেমিক হৃদয়
যোগী-ভোগী প্রেমে রয়না তেমন।
প্রেমের ফুল যার জীবনে ফোটে
প্রেমগন্ধে মাতোয়ারা সেই তো ছোটে।
কিন্তু অবাক লাগছে হেন
অরণ্যে প্রবেশ ’নিষেধ’ কেন?’
.
ইন্দ্র--
‘প্রেম-সুগন্ধই তো ছড়িয়ে পড়ে।
যে তারে বুঝতে নারে
সৌন্দর্য সে বিনাশ করে।
সত্ত্বারও জেনো আত্মা আছে
আত্মার কোন বিনাশ নেই
তাই সেই অরণ্যেই...’
.
ভাবুক ইন্দ্র বলে চলেন--
‘আত্মা হলেন নানা বেশধারী
কখনও তিনি প্রেমপূজারী।
কখনও তিনি অস্ত্র ধরেন
কখনও ধর্মে মতি হলে তাঁর
যাগ-যজ্ঞ পূজাও করেন।‘
.
মেনকা--
‘এসব শোকগাথা জানি রাজা,
প্রেম কাকে বলে জানিনা শুধু
কখনও তার পাইনি মজা।
প্রেমের গন্ধে মাতোয়ারা হয়ে
বড় সাধ হয় জানতে তারে
দেহে-মনে প্রেমের গন্ধে
গোলাপ পাপড়ি কেমনে ঝরে!’
.
ইন্দ্র—
এক জন্ম, এক মৃত্যু দিতে পারি আমি
রক্তেভেজা মৃত্যু হবে, সইতে কি পারবে তুমি?’
বাহুডোরে বেঁধে তারে
মেনকা কয় ইন্দ্রেরে----
‘ কিছু কথা কইতে চাই...’
--আমার সৌভাগ্য! বুঝেছি কি চাও।
শুধু দেবলোকের ইতিহাস
তুমি শোননি কোথাও
কে জানত, এমন দিন আসবে হেথাও......’
.
দুনিয়াতে সবাই এই কাহিনি জানে --
.
‘মায়ের কোলে হীরের যখন জন্ম হল
জ্যোতিষীরা বলেছিলেন-
অমঙ্গলের কোন কথা নয়
ঈশ্বর যেন রক্ষা করেন।
এরা সব পরী-অপ্সরা
সেইকথাই তো বলেন তারা।
বাতাসের এক দমকা হাওয়ায়
বসন কোথায় উড়ে চলে যায়
পড়ে এসে এক ঝিলের পারে
আঙিনাময় দেবশিশু এক
দেখল সেথায় খেলা করে।‘
.
কিন্তু ইতিহাস জানে অন্যকথা---
.
দুই যুবক-যুবতী এসেছিল হেথা
মানুষ তাদের নেয়নি মেনে
বিষ দিয়েছিল তারা সজ্ঞানে
কবরে শায়িত আছে দুইজনে।‘
.
ইতিহাস আরো বলে চলে---
.
‘এসব নিয়ে কেউ কখনো
লেখেনি তো আমার পাতায়
একটি বর্ণ দাগ পড়েনি
সাদা পাতা রয়েছে খাতায়।
কখনো কেউ বলেনি তো,
ফুলসংহার হয়েছিল!
ওই বাগানের দিক থেকে
এক দমকা হাওয়া বয়ে ছিল।
কিন্তু এসে কবর স্থানে
তাদের জন্য সসম্মানে
হাওয়ার মাথা নুয়েছিল।
তারপর সে ফিরেছিল
যেখানে সেই অরণ্য ছিল‘
.
চারিদিক চেয়ে আপনকথা
বলে ইতিহাস কত না কথা---

‘কত সংস্কার এখনও বাকি
একবর্ণও কেউ লেখে না দেখি।
এই যে এখন যিনি দেবরাজ
আদতেই তিনি নন সে রাজা
এই যে এখন যিনি মেনকা
আদতে তিনিও নকলসাজা।
.
দুজনেই এখন থাকে সেইখানে
পরিত্যক্ত সেই অরণ্যে
নানা বর্ণের ফুলের গন্ধে
সারা অরণ্য ভরে সুগন্ধে।
তাই তো সেখানে যাওয়া নিষিদ্ধ
তাই তো সেখানে ‘আদেশ’ সিদ্ধ।'

0 comments: