গল্প - তন্ময় মুখার্জি
Posted in গল্প-------- সিস্টার...সিস্টার...আপনি চলে যাচ্ছেন?
-------- আমার ডিউটির সময় শেষ। চলি গুড নাইট। আপনাকে ঘুমের ওষুধ দেয়া হয়েছে এইবার আপনি ঘুমোনোর চেষ্টা করুণ দেখি।
------ কিন্তু সিঃ..সিস্টার আপনি চলে গেলে আমি যে মরে যাব সিস্টার। প্লিজ প্লিজ যাবেননা। আমার...আমার ভীষণ ভয় করছে সিস্টার। আমায় একলা ফেলে রেখে....
-------- ওঃ..আপনার কিসের ভয় বলুনতো? আশেপাশে আরওতো পেসেন্ট আছেতো নাকি? তাছাড়া আমি চলে যাচ্ছি ঠিকই কিন্তু এরপরে আমার যায়গায় আরেকজন সিস্টার নাইট ডিউটিতে আসবেন। ভয় নেই আপনি ডাকলেই তাকে পাবেন। আপনার কাছাকাছিই থাকবে সে,এখন চুপ করে ঘুমিয়ে পড়ুন দেখি।
-------- কিন্তু তিনি না আসা অবধি আপনি অন্তত আমার কেবিনটায় থেকে যাননা সিস্টার। উনি এলে না হয় আপনি তখন চলে যাবেন...প্লিজ।
------- এখন রাত দশটা বাজে...এমনিতেও প্রায় দু ঘন্টা ধরে শুধু মাত্র আপনার জন্য ডিউটিতে ছিলাম। স্নিগ্ধা ম্যাডাম আজকেই দেঁড়ি করে আসবেন কে জানে? ওফ্ফ ভালো লাগেনা আর। যাইহোক আপনি ঘুমিয়ে পড়ুন আমি চলি। চিন্তা নেই।
------ সিস্টার...সিস্টার চলে যাচ্ছেন ঠিক আছে কিন্তু কেবিনের লাইটটা দয়া করে অফ করবেননা প্লিজ। ওটাকে অন্তত জ্বালিয়ে রাখুন।
-------- কিন্তু আমিতো কোনো সুইচ অফ করিনি। সম্ভবত লোর্ডসেডিং হয়ে গেছে। কিচ্ছু চিন্তা করবেননা এক্ষুনি লাইট জ্বলে উঠবে। হাস পাতালে জেনারেটারের ব্যাবস্থা আছে। ওঃ এইতো বলতে বলতে সিস্টার চলে এসেছেন। যাক বাঁচালেন।
------ কি ব্যাপার? কি হয়েছে? পেসেন্টকে ঘুমের ইঞ্জেকশন দাওনি সুরভী?
------ দিয়েছি কিন্তু কিছুতেই ঘুমচ্ছেনা...খালি উল্টো পাল্টা বকে চলেছে। আপনিই এখন সামলান, আমি চলি।
------- কখন ভর্তি হয়েছেন ইনি?
------- এইতো আজ সন্ধ্যের দিকেই। হার্ট অ্যাটাক কেস ম্যাডাম। ওনার ওয়াইফ গলায় দঁড়ি দিয়ে সুইসাইড করেছেন দেখে ওনারও হার্ট ...হাঃ।
-------হুম বুঝতে পেরেছি। এখন ওনার কি পরিস্থিতি? ডক্টর অভিষেক ভিজিটে এসেছিলেন?
-- হ্যাঁ,তিনি দেখে গেছেন। বলে গেলেন তেমন কিছুই হয়নি। আগামীকালই ওনাকে রিলিজ করে দেবেন।
----- তেমন কিছুই হয়নি যখন তখন এডমিট করলেন কেন?
----- আসলে ইমার্জেন্সি কেস বলে পুলিশ এসে ভর্তি করিয়ে দিয়ে গেছে। তাই কেউ আর রিক্স নেইনি।
---- ও আচ্ছা। তাহলে তুমি যাও আমি দেখছি।
------ ওনার স্ত্রী'র বডিটাও আমাদের হাস পাতালের মর্গেই রাখা আছে এখন। আগামীকাল পোস্ট মর্টেম হবে। আর..
------- ঠিক আছে,ঠিক আছে, পেসেন্টের সামনে এসব বলতে হবেনা। আমি বুঝতে পেরেছি তুমি এখন যাও। ওঃ কি জ্বালারে বাবা,এই ঘাটের মরা কারেন্টটার আজকে যে কি হল কে জানে? অন্ধকারে কিচ্ছু বোঝার উপায় নেই।
------- তাহলে আমি চলি সিস্টার।
------- হ্যাঁ.. গুড নাইট। সকালে তাড়াতাড়ি চলে এসো।
----- ঠিক আছে...
-------- সিস্টার..সিস্টার....?
------ কি হল কি? আপনি ঘুমন্নি এখনো?
------- বলছিলাম যে আপনি...আপনি এখন আমার ডান দিকে নাকি বা দিকে দাঁড়িয়ে আছেন সিস্টার?
------- কেন? এইতো ডান দিকেই আছি?
--------- মিথ্যে...মিথ্যে কথা বলছেন আপনি? আপনার কণ্ঠস্বরটা আমি আমার বা দিক থেকে শুনতে পারছি। ওঃ..ঐ..ঐতো আমি স্পষ্ট দেখতে পারছি,আপনি আমার বা দিকের জানলার কাছটায় দাঁড়িয়ে আছেন। আর...আর...আমার ডান দিকে দাঁড়িয়ে ওটা কে তাহলে? সিস্টার ...সিস্টার সে আবার ফিরে এসেছে সিস্টার আমাকে বাঁচান সিস্টার...ও আমাকে,ও আমাকে এক্ষুনি মেরে ফেলবে...সিস্টার প্লিজ আমাকে বাঁচান।
হঠাৎই অন্ধকারের ভিতর থেকে খিলখিল করে মেয়েলি কণ্ঠস্বরে একটা বিশ্রী হাসির শব্দ ভেসে এলো। সেই হাসির শব্দে মুহূর্তের জন্য কেঁপে উঠল সমস্ত কেবিনটা। তারপর মেয়েটি অতন্ত কর্কশ গলায় বলে উঠল ---" হিহিহিহি..তোকে বাঁচাব হিহিহিহি.. বালিশ চাপা দিয়ে নিজের বৌ'কে মেরে ফেলার সময় মনে ছিলনা তোর? হাত কাঁপেনি তখন। যখন আমার মৃতদেহটাকে গলায় দঁড়ি দিয়ে বেঁধে সিলিং এর সঙ্গে ঝোলাচ্ছিলিস কই তখনতো ভাবিস নি এরপর তোর কি হবে? তখন এতো ভয় লাগেনি যখন, তাহলে এখন এতো ভয় কিসের? বৌ মরার শোকে হার্ট অ্যাটাকের নাটক করে হাস পাতালে ভর্তি হয়ে ভেবেছিলিস কি আমার হাত থেকে তুই বেঁচে যাবি? বলে ছিলামনা আমাকে মারলে তোকেও একদিন মরতে হবে? টাকা চাই না? কেবল টাকা? নেঃ...এবার তুইও মর...মর শালা...তুই মর পাপী মর.."
হাসপাতালের কেবিনটার বেডের মধ্যে গোঙানির শব্দের সাথে সাথে বেশ কিছু সময় ধরে হাত,পা দাপাদাপি করতে করতে লোকটা মারা গেল। অনেকটা সময় কেটে যাওয়ার পরে নাইট ডিউটিতে আসা সিস্টার স্নিগ্ধা ম্যাডাম এসে কেবিনে ঢুকলেন। বিছানার উপর চোখ পড়তেই আঁতকে উঠলেন। দেখলেন বিছানায় শুয়ে থাকা পেসেন্টটা নিজের মুখের উপর বালিশ চাপা দিয়ে চিত হয়ে হাত পা ছড়িয়ে পড়ে আছে। এগিয়ে গিয়ে মুখ থেকে বালিশটাকে সড়াতেই দেখলেন পেসেন্টের মুখ সম্পূর্ণ রক্ত শূন্য ফ্যাকাসে হয়ে বেঁকে গেছে। চোখের কোটর থেকে ঠিকরে যেন বাইরে বেড়িয়ে আসছে তার মণি দুটো। অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে কেবিনের সিলিং এর দিকে। নাড়ী টিপে দেখলেন পেসেন্টটা মৃত।
0 comments: