প্রবন্ধ - সমীক্ষণ সেনগুপ্ত
Posted in প্রবন্ধউপক্রমণিকা
শুষ্ক মরুভূমির মধ্যে দিয়ে চলতে চলতে যদি আচমকা অপ্রত্যাশিত ভাবে মরূদ্যানের সন্ধান পাওয়া যায়, তাহলে পথিকের মনের অবস্থাটা যেরকম হয়, একরাশ "রবীন্দ্রনাথ..., ড্রাকুলা, একেন, ভিঞ্চি দা" ইত্যাদি দেখার পর যখন "মন্দার" দেখলাম তখন আমার মনের অবস্থাটা ঠিক সেরকম হয়েছিল।
এরকম নয় যে বাংলায় একেবারেই আলোচনার অযোগ্য ভালো সিনেমা হয় না, নিশ্চয়ই হয়, কিন্তু তার ব্যাপ্তি এতোটাই কম যে বেশিরভাগ মানুষ তাদের কথা জানতেই পারে না। তাদের বিষয় বৈচিত্রও খুব বেশি নয়, আর সবচেয়ে বড় কথা - সেই এক কুশীলবদের চরিত্রে না মানালেও বারংবার মঞ্চে অবতরনা, সেই এক অভিনেতা-অভিনেত্রীর দল (বা ঢল)।
বাংলা সিনেমায় পরিচালকরা যেন চরিত্রের চাহিদায় একদম নতুন মুখকে সুযোগ দিতে পরাঙ্মুখ, নতুন বিষয়ে ছবি করতে যে ঝুঁকি নেওয়া প্রয়োজন, সেটিও তাঁরা নিতে চান না। চটকদার চমকদার থ্রিলার, যেখানে প্রচুর গা-গুলানো ভায়লেন্স থাকবে (এবং যেটায় কখনই Scorcese বা Tarrantinoর মতো শৈল্পিক গুণ থাকবে না) বা সাধারণ মানের ফ্যামিলি ড্রামা বা ত্রিকোণ (বা চতুষ্কোণ) প্রেম যেখানে থাকবে সেক্সের বাড়বাড়ন্ত। এর বাইরে সিনেমার বিষয় কিছু উদ্ভট কিছু গল্পের প্লট আর নাহলে সত্যজিৎ রায়- কাকাবাবু- কিরীটী- ব্যোমকেশ। সোজা কথায় বলতে গেলে নতুন কিছু যেমন নেই বললেই চলে, তেমনি সহজ ভাষায় একটি নিটোল গল্পের উপস্থাপনাও আজকাল চোখে পড়ে না, "মাল্টি-লেয়ারড" ছবির কথা তো বাদই দিলাম।
এরকম অবস্থায় "মন্দার"-এর আবির্ভাব একেবারে "বিনা মেঘে বজ্রপাত" !
এই স্বল্পপরিসরে আমরা এখানে শুধু সিনেমার গল্পটি নিয়েই আলোচনা করবো। কারণ অভিনয়, পরিচালনা বা সিনেমাটিক কোয়ালিটি বাদ দিয়েও বহু কিছু
"মন্দার"-এর পোস্টারেই লেখা রয়েছে "Based on Macbeth", কিন্তু কেউ যদি ম্যাকবেথ নাও পড়ে থাকেন, মন্দার একটি "স্বাধীন" গল্প হিসাবেই নিজের জায়গা বানিয়ে নিতে সক্ষম।
আকাশ যখন ডাকে…
জোড়াভেড়ির মালিক ডাবলু ভাইয়ের একনম্বর হেঞ্চম্যান মন্দার। গল্পের শুরুতেই তাকে দিয়ে মন্দারেরই ছেলেবেলার বন্ধু মকাইকে খুন করান ডাবলু ভাই। মকাই ডাবলু ভাইয়ের স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে জনমত গঠন করছিল ঠিকই, কিন্তু তাকে "ডায়লগ" (অর্থাৎ ওয়ার্নিং) না দিয়ে সরাসরি "অ্যাকশন" নেওয়ার কারণ মকাইয়ের তাঁর ফোন না ধরে কেটে দেওয়া। এই সামান্য কারণে খুনের থেকে বোঝা যায় মানুষটা কতটা egoist এবং নির্দয়।
মন্দারের চরিত্র সেখানে বেশ অদ্ভুত।
সে যেন ডাবলু ভাইয়ের হাতের পুতুল। সেও নির্দয়, কিন্তু সেটা যেন শুধুমাত্র ডাবলু ভাইয়েরই নির্দেশে, তাই একেবারে ছোটবেলার বন্ধুকেও খুন করতে সে দ্বিধা বোধ করল না। তার কোন উচ্চাকাঙ্খ্যা নেই, তার আশেপাশের সবাই মনে করে সে চাইলেই গেইলপুরের মালিক হতে পারে, কিন্তু সে এসব নিয়ে ভাবেই না। শুধু ডাবলু ভাইয়ের নির্দেশে খুন করে আর বাংলা মদ খেয়ে তার দিন কাটে। আর হ্যাঁ, সে হল "ধ্বজ", অর্থাৎ নপুংসক। মন্দার তার বউ লায়লিকে অবশ্যই ভালোবাসে, কিন্তু কামুক ডাবলু ভাই যখন লায়লির অঙ্কশায়নি হতে চান, তখন মন্দার নির্দ্বিধায় সে পথ ছেড়ে দাঁড়ায়। এমনকি ডাবলু ভাই তার কাছেই লায়লির খবর নিলেও তাকে রাগতে দেখা যায় না।
তথাকথিত পুরুষতান্ত্রিক সমাজে আমরা যারা অভ্যস্ত, অবাক হয়ে যাই এই চরিত্রটিকে দেখে।
সিনেমায় মন্দারের আশেপাশের লোকে একে চূড়ান্ত বোকামি, নপুংসতা বা দালালী হিসাবে দাগিয়ে দিলেও মন্দারের হিসাব এখানে সহজ - সে নিজে যেহেতু তার বউকে আনন্দ দিতে পারে না এবং যেহেতু তার বউয়ের সেটা প্রাপ্য, তাই ডাবলু ভাই যদি সেটা দিয়ে থাকে, তাহলে তার আপত্তি নেই।
এখন এই নপুংসতার জন্যই তার উচ্চাকাঙ্ক্ষা-হীনতা, নাকি উচ্চাকাঙ্ক্ষা-হীনতার কারণেই তার নপুংসতা - সেটা মনস্তত্ববিদেরাই বলতে পারবেন। এমনও হতে পারে মন্দারের নপুংসতা একটি মানসিক অবস্থান মাত্র, একটি অচলায়তন, যেটি থেকে কোনভাবে বেরিয়ে আসতে পারলেই বাঁধভাঙ্গা জলোচ্ছ্বাসের মতো এসে যেতে পারে মালিক হওয়ার উচ্চাশা, রাগ, এবং ক্ষমতার প্রতি লোভ।
আমাদের গল্পে ঠিক সেটারই শুরুয়াত হল একটি স্বাভাবিক কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা দিয়ে - লায়লির সন্তানাকাঙ্খা।
কালের কোলে কপাল ফেরে…
অনেকের মনে হতে পারে মন্দারের মাথায় "রাজা" হওয়ার স্বপ্ন ঢুকেছিল ডাইনিদের ভবিষ্যৎবাণী শুনে। এখানেও কার্যকারণ সম্পর্কটি দেখবার মতো। ভবিষ্যৎবাণীর সঙ্গে মিলিয়েই মন্দার রাজা হোল, নাকি ভবিষ্যৎবাণী হোল বলেই মন্দারের সুপ্ত উচ্চাকাঙ্ক্ষা উস্কানি পেল সেটাও বলা মুশকিল।
যাইহোক, আমরা এখানে দর্শকের দৃষ্টি আকর্ষণ করবো ভবিষ্যৎবাণী এবং মকাইকে খুনের আগের ঘটনাবলির দিকে। লায়লি সন্তান চায়, তার নপুংসক স্বামী মন্দারের সন্তান। সে তাকে বারে বারে বলে চিকিৎসা করানোর জন্য, কিন্তু তার স্বামী অপারগ কিংবা গুরুত্ব দেয় না। ডাইনিদের ভবিষ্যৎবাণীর প্রথমটি মিলে যেতে মন্দার আশ্চর্য হয়ে যায়, কিন্তু একটু তলিয়ে দেখলেই দর্শক বুঝতে পারবেন এই মিলে যাওয়া এমন কিছু বড় "মিরাকেল"নয়। মকাইকে খুন করার জন্য ডাবলু ভাই যে মন্দার আর বঙ্কাইকে সমান সমান টাকা ভাগ দেবেন, তাতে আর আশ্চর্য কি? আর তিনি টাকা দিয়ে বলতেই পারেন "তোর পঞ্চাশ, ওর পঞ্চাশ..." এটা কি সত্যিই বিশাল কিছু আশ্চর্যের ব্যাপার?
কিন্তু না, এই ভবিষ্যৎবাণী মিলে যেতেই মন্দার আর বঙ্কাই যেন নড়েচড়ে বসল। "রাজা" মন্দারের মনের গভীরে উচ্চাশার এক ঘুমন্ত সাপ যেন একটা চোখ খুলে চাইল, আর "রাজার বাপ" বঙ্কাইয়ের মনে জন্মাল ভয়। এর পরে যখন ডাবলু ভাই মন্দারের বদলে বঙ্কাইয়ের ছেলে ফন্টুসকেই জোড়াভেড়ির দায়িত্ব দিলেন, তখন সেই লোভ আর ভয় ধীরে ধীরে কব্জা করে নিল মন্দার আর বঙ্কাইকে।
“অ্যান্ড আই অ্যাম এ ক্যাট !”
মন্দার গল্পটি একান্ত ভাবেই একটি masculinityর গল্প।
এর একদিকে আছে শক্তিশালী, দামাল কিন্তু "ধ্বজ" মন্দার, যার মধ্যে পুরুষত্ব চেগে ওঠে বাবা হওয়ার আকাঙ্ক্ষায়, ডাবলু ভাইকে সরিয়ে ভেড়ির "রাজা" হওয়ার আকাঙ্ক্ষায়, তেমনি অন্যদিকে আছে পেলব, শান্ত, পরিশীলিত কিন্তু অত্যন্ত কামুক এবং অসৎ পুলিশ অফিসার মুকাদ্দার। ম্যাকবেথের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নাম দুটোর মিলও দেখার মতো। মন্দার- মুকাদ্দার যেন মুদ্রার দুই পিঠ। দুজনেরই "সিগনেচার" বাহন মোটরসাইকেল, মুকাদ্দারের সারথি তার কনস্টেবল। স্বভাবগত দিক থেকেও মন্দার- মুকাদ্দার সম্পূর্ণ উলটো। মন্দার ডাকাবুকো কিন্তু বোকা, মুকাদ্দার শান্ত, জন্তু জানোয়ারের প্রতি তার প্রায় ফেমিনিন একটা স্নেহ বেশ লক্ষণীয়, কিন্তু সে গভীর জলের মাছ। গানের পছন্দ- অপছন্দ, বেশভূষা - সব দিক থেকেই তারা বিপরীত।
এখানে মুকাদ্দারের সম্বন্ধে একটি কথা না বলে থাকতে পারছি না।
ম্যাকবেথে যেমন আমরা দেখি তিনটি ডাইনিকে, মন্দারে আপাতদৃষ্টিতে আছে কিন্তু দুজন ডাইনি - মজনু আর পেদো। প্রশ্ন হচ্ছে তিন নম্বর ডাইনিটি কে? এর উত্তর রয়েছে সিনেমার শুরুতেই মজনুর প্রথম ছড়াটির মধ্যেই।
আকাশ যখন ডাকে, চাতক তাকায় থাকে,
সাগরের ছানা বাছা, বদ্ধি ঠেকে রাজা।
রাক্ষস লিছে বাপ, তাও থামেনি পাপ।
এই সাগরের রাক্ষস, বরণ করবো কাকে,
গেইলপুরের রূপমারানী বাসছে ভালো যাকে।
মানুষ ভালো মন্দ, রাক্ষস পায় গন্ধ,
সাগরের জল নোনা, তলপেটে কামনা।
পিত্তি দিয়ে গাঁথবো মালা, পচা রজনীগন্ধার,
মিলবো যেদিন চারজনেতে,
আমি পেদো কালা মন্দার...
"কালা" অর্থাৎ কালো বেড়ালটি হচ্ছে তিন নম্বর ডাইনি।
সে কিছু কথা বলে না, কিন্তু প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনায় তার উপস্থিতি অবশ্যম্ভাবী। লায়লির মনে ডাবলু ভাইকে মারার পরিকল্পনা, এমনকি শেষ দৃশ্যে নৌকায় মন্দার যেখানে বর্শা গাঁথা অবস্থায় মারা গেছে, সেখানে। বস্তুত,"কালা"ই মন্দার আর বঙ্কাইকে মজনুর ডেরায় প্রথমবার নিয়ে আসে, সেখান থেকেই সমস্ত কাহিনীর সূত্রপাত।
মুকাদ্দারের প্রথম দৃশ্যেই কালার সাথে দৃষ্টিবিনিময় একটি গভীর ইঙ্গিতবাহি।
দর্শকের এখানে যেন মনে হবে - কালা তার নিজের সত্ত্বা যেন মুকাদ্দারের মধ্যে চালান করে দিল এই দৃষ্টিবিনিময়ের মাধ্যমে। এর পরেই মুকাদ্দার নিজেকে "cat" হিসাবে পরিচয় দিতে শুরু করে, এবং বলে "he likes fishes". বস্তুত ভেড়ি অঞ্চলের পটভূমির এই কাহিনীতে প্রতিটা চরিত্রকেই যেন মাছের রূপক দেওয়া হয়েছে।
এপিসোড গুলির নাম লক্ষ্য করে দেখুন - "গভীর জলের মাছ", "বঁড়শি গাঁথা মাছ", "ভেড়ির মাছ সমুদ্রে"...এছাড়া বড় ভেটকি মাছটিকে সামনে রেখে মজনুর ভবিষৎবাণী, পেদোর নাচ, এবং সবশেষে জ্যান্ত মাছটিকে এক টিপে বঁড়শি দিয়ে গেঁথে দেওয়া, যেন মন্দারই হচ্ছে ভেড়ির অনেক ছোট মাছগুলির মধ্যে বড় মাছটি এবং সেই-ই ডাইনিদের লক্ষ্যবস্তু। সে এতদিন ছাড়া মাছ ছিল, উচ্চাকাঙ্খ্যা-হীন কিন্তু জীবিত। তারা তার মধ্যে "লোভ"-রূপী বড়শি ঢুকিয়ে তাকে গেঁথে ফেলেছে।
এছাড়া বলা যায় নৌকার ভেতরে মুকাদ্দারের সাথে যে গণিকা ছিল, তার গায়েও মাছের গন্ধ, ডাবলুদা আর মকাইয়ের দেহ পাওয়া গেল ঠিক একই ভাবে সমুদ্রের ঢেউয়ের মাঝে, মরা মাছের মতো। সব মিলিয়ে যদি গেইলপুরের মানুষ মাছ হয়ে থাকে, মুকাদ্দার সেখানে কিন্তু বেড়াল, অর্থাৎ তারা যথাক্রমে "hunted" এবং "hunter"।
এই শিকার কিন্তু তথাকথিত অত্যাচারীর অত্যাচারিতদের উপরে পাশবিক ক্রিয়া নয়। এটি আরও সূক্ষ্ম ক্ষমতার। এটি হচ্ছে সবার সম্বন্ধে গোপন খবর জেনে নিয়ে তাদেরকে হাতে রাখা, প্রয়োজন অনুযায়ী কাজ করিয়ে নেওয়া এবং, হ্যাঁ, নিজের কাম-লালসা চরিতার্থ করতে মাঝে মাঝে কিছু "ভেট" নেওয়া।
ভেবে দেখুন, গোটা সিনেমায় একমাত্র এক জায়গায় মন্দারের মধ্যে যেন সামান্য মনুষ্যত্ববোধ দেখতে পাই, তার চোখে জল এসে যায়, যখন সে বুঝতে পারে মুকাদ্দারের লায়েলির সাথে শুতে চাওয়ার প্রস্তাব সে ফিরিয়ে দিতে পারবে না। সে ক্ষমতা তার নেই। সে ডাবলু ভাইকে মেরে গেইলপুরের রাজা হতে পারে, সবাই তার ভয়ে কাঁপতে পারে, কিন্তু ঠিক এখানে দাঁড়িয়ে সে মুকাদ্দারের সামনে সম্পূর্ণ ক্ষমতাহীন "ধ্বজ"। তার একটাই বড় কারণ - সবার মতো মুকাদ্দারও তার দুষ্কর্মের কথা জানে, এবং সে তাকে বিপদে ফেলতে পারে, তার উচ্চাশন থেকে সোজা নামিয়ে আনতে পারে মাটিতে।
এতদিন ডাবলু ভাইয়ের কাছে তার বউকে পাঠাতে তার কোন বিবেক দংশন হয়নি, কিন্তু আজকে হোল। কারণ এতদিন সে ছিল বাঁজা, আজকে সে হয়েছে রাজা। এই যে একান্ত ভাবে "ফেমিনিন" হয়েও মুকাদ্দারের মন্দারের উপর ছড়ি ঘোরানো - এটাও যেন গল্পের "alpha-male"-এর দ্বৈরথকে অন্য মাত্রা এনে দিয়েছে।
লাল চশমা, লাল জগত…
গল্পের ঠিক এই জায়গা থেকেই হয় মন্দার-লায়েলির বিবাদের সূত্রপাত, যার শেষ হয় লায়েলির পাগলামিতে এবং সব শেষে আত্মহত্যায়।
যে নৌকায় শৃঙ্গারকালে রচিত হয়েছিল তাদের সন্তান-স্বপ্ন, সেখানেই শেষ হোল লায়েলির জীবন। আসলে ক্ষমতার লোভ এমনই একটা জিনিস, মানুষকে নেশার মতো পেয়ে বসে। নেশায় মত্ত হয়ে যখন সে তার অভীষ্ট লক্ষে পৌঁছে যায়, তখন আবিস্কার করে তার ইমারত আসলে সম্পূর্ণ ফাঁপা।
মন্দারেরও ঠিক তাই-ই হোল। সে অকস্মাৎ বুঝতে পারল লোকজন তাকে "রাজা" হিসাবে একটুও মানে না, শুধু ভয়ে চুপ করে আছে। এবং এই ভয়টা বজায় রাখার দায় তার। লায়েলি, যে তার মনে লোভের প্রথম অগ্নিস্ফুলিঙ্গটি জ্বালিয়ে দিয়েছিল, সেও তাকে অত্যন্ত নিচু নজরে দেখে, বউয়ের দালাল ছাড়া কিছু মনে করেনা সে তাকে।
এরকম অবস্থায় ঘটতে থাকে তার একটার পর একটা ভুল। যেন নোঙরহীন ভাবে মন্দার একটার পর একটা খুন-ধর্ষণ করতে থাকে, কোন কারণ ছাড়াই। নিজেই সে হয়ে ওঠে তার প্রতিদ্বন্ধী - সাগরের "রাক্ষস"।
পচা রজনীগন্ধার মালা
সিনেমার একদম শেষে ক্ষমতার হাতবদলের পর্বটিও দেখার মতো।
মৃত মন্দারের ঘাড়ের উপর উঠে আসে কালা, যে কিনা লায়েলির প্রথম পরিকল্পনার সময়েও আত্মপ্রকাশ করেছিল।
শুরু এবং শেষ - দুটোরই যেন সে সাক্ষী থাকল।ডাবলু ভাইয়ের মৃত্যু হয়েছিল "গেইলপুরের রূপমারানী" লায়েলির সামনে, তেমনি মন্দারের মৃত্যু হোল লাখমনির সামনে, যে কিনা ফন্টুসের স্ত্রী এবং ফন্টুসকে একই ভাবে "রাজা" হওয়ার স্বপ্ন দেখায়।
লায়েলি এবং লাখমনির টিভিতে চলা গানের মিলটাও চোখে পড়ার মতো। এছাড়া মঞ্চা আর ফন্টুসের লাখমনিকে টানাপড়েন যেন ডাবলু ভাইয়ের আর মন্দারের লায়েলিকে নিয়ে টানাপড়েন কে মনে পড়িয়ে দেয়। যেন সম্পূর্ণ একই নাটক (যাদের কুশীলব হয়তো আলাদা) ভবিষ্যতে আবার মঞ্চস্থ হওয়ার পটভূমি তৈরি হয়ে গেল ছবির শেষে।
শুধু তাই-ই নয়, এ গল্পে যেন সব কিছুই বার বার করে ফিরে আসে। ডাবলু ভাই এবং ডাবলু ভাইয়ের বাবার একভাবে সমুদ্রের কোলে মৃত্যু, ডাবলু ভাইয়ের এবং মন্দারের প্রতি তাদের স্ত্রীদের চাপা ঘৃণা, এমনকি মজনুর ভবিষ্যৎবাণীর রাতে এবং ডাবলু ভাইয়ের খুনের রাতে একই রকম বৃষ্টি - ছবিতে এরকম বহু element আছে যেগুলি আলোচনার অপেক্ষা রাখে।
যাদের কাল নেই…
বস্তুত আমরা যদি মজনুর প্রথম ছড়াটি ভালো করে বোঝার চেষ্টা করি (যেটি রচনার শুরুর দিকে আছে),তার মধ্যেই যেন গোটা গল্পটি সাঁটে বলা আছে।
হয়তো আদি-অনন্তকাল ধরে একই গল্প চলে আসছে গেইল্পুরে, মজনু-পেদো-কালা বা তাদেরই মতো কেউ, যাদের কাল নেই, নির্নিমেষ নেত্রে এসব ঘটনাপ্রবাহ দেখে চলেছে এবং জায়গা মতো অল্পস্বল্প "catalyst" এর কাজ করছে।
কে জানে, কে বলতে পারে?
0 comments: