Next
Previous
0

সম্পাদকীয়

Posted in






ভাষার সৃষ্টি কেন এবং কীভাবে? মার্কিনী ভাষাতাত্ত্বিক ড্যানিয়েল এভারেট তাঁর চাঞ্চল্যসৃষ্টিকারী গ্রন্থ 'হাউ ল্যাঙ্গুয়েজ বিগ্যান' (How language began)- এর প্রারম্ভে বর্ণনা করছেন একটি ঘটনা। তাঁর প্রপিতামহ সপরিবারে তুলোর ক্ষেতের মধ্য দিয়ে চার্চ থেকে ফিরছেন। টেক্সাসে সেসময় ওই অঞ্চলে সাপের খুব উপদ্রব। বিশেষত রাটলস্নেক। অকস্মাৎ মাটিতে পড়ে গেলেন তিনি। যে বিপদ সম্পর্কে সবাইকে সাবধান করছিলেন, তাঁকে আঘাত হেনেছে সেই অজানা আশঙ্কা। কিন্তু এমনই অদ্ভুত এই প্রাণী যে দংশনের আগে ঘোষণা করে তার উপস্থিতি। তবুও সেই সংকেত আক্রান্তের কাছে পৌঁছয়নি সময়মতো।

অথচ প্রায় ছত্রিশ হাজার বছর আগে আলতামিরার গুহামানব চারকোলের ছোঁয়ায় যখন সেই আশ্চর্য সুন্দর বাইসন অঙ্কনে মগ্ন, কথ্য ভাষার অনুপস্থিতি সত্ত্বেও সংযোগ স্থাপনের নির্দিষ্ট ইঙ্গিত ইথারে ভর করে রওনা দিয়েছিল সুদূর ভবিষ্যতের দিকে। সেদিন সেই শিল্পীর মধ্যে ভবিষ্যত প্রজন্মের সঙ্গে কোনও যোগাযোগের স্পৃহা কাজ করছিল কি? আমরা জানি না। কিন্তু ভাষার প্রয়োজনীয়তার সূত্রপাত কি এইভাবে নয়? বইটির শিরোনাম এমনও দাবী করে, ভাষাই হলো মানবসভ্যতার মহত্তম আবিষ্কার।

নিঃসন্দেহে। সভ্যতার বিবর্তনের ইতিহাস কি ভাষার ক্রমিক উত্তরণের দিনলিপি নয়? অবশ্যই। কারণ ভাষার এই সরণি জন্ম দেয় সার্বভৌমত্বের অধিকারের। ভাষার বুনিয়াদি জমিতে রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর আত্মপ্রকাশ করে স্বাধীন এক রাষ্ট্র। তবু ভাষা কেন সন্ত্রাসের উপকরণ?

বিবিধের মাঝে মিলনের মন্ত্র অনুসন্ধানকারী এক দেশ যখন সদ্য স্বাধীনতার বর্ষপূর্তি উদযাপন করে, প্রশ্নগুলি চ্যালেঞ্জসঞ্চারী হয়ে দাঁড়ায় আমজনতার অজান্তেই। কারণ অনেক পথ পেরিয়ে ভাষা এখন আর শুধু যোগাযোগের মাধ্যম নেই, তা পীড়নের হাতিয়ারও। বর্বরতম অত্যাচারের চিহ্ন শরীরে নিয়ে একটি স্বপ্ন যখন অকালে ঝরে যায়, আমরা জানতে পারি সেই নৃশংসতার শুরু ভাষার হাত ধরেই। অধঃপতিত বিবর্তনের এই উত্তরাধিকার আমাদেরই।

সুস্থ থাকুন। সৃজনে থাকুন।

শুভেচ্ছা নিরন্তর!