Next
Previous
0

অনুবাদ সাহিত্য - ঝর্ণা চট্টোপাধ্যায়

Posted in

 

লুইস গ্লুকের কবিতা

অনুবাদ ও আলোচনা


২০২০ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন একজন কবি তাঁর ‘Triumph of Achillies’ কাব্যগ্রন্থের জন্য। ইনি হলেন কবি লুইস গ্লুক। লুইস গ্লুক আমেরিকান কবি, জন্ম ১৯৪৩ সালের ২২শে এপ্রিল। পেশায় অধ্যাপক, প্রাবন্ধিক ও কবি।
গ্লুকের কবিতা সম্বন্ধে ‘New York Times’ পত্রিকার লেখক ও সমালোচক জানাচ্ছেন— গ্লুকের লেখা হলো ‘clearer’, ‘sharper’, purer’ and ‘straightforward’. কবিতাগুলি পড়লে আমরা বুঝতে পারি তাঁর লেখা কোনওরকম দ্বিধার মধ্যে থাকে না, তাঁর মত তিনি জানান সোচ্চার হয়ে।
এখানে তাঁর ‘Love-poem’, ‘Blue Iris’ ও ‘Mock Orange’ কবিতা তিনটির অনুবাদ ও কবিতা সম্বন্ধে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো।

প্রথম কবিতা— Love-Poem
গ্লুকের কবিতা খুব স্পষ্ট, কোনওরকম আড়াল নেই। যা বলার উনি বলেছেন সোজাসুজি। কিন্তু কবিতায় আছে দুঃখ, মৃত্যু, ভয় ইত্যাদি।
যেমন এই কবিতাটি। একজন সৈনিকের স্ত্রী তাঁর ছেলেকে চেষ্টা করেন বাস্তব জীবনের কঠিন শৈত্য থেকে বাঁচিয়ে উষ্ণতায় মুড়ে রাখতে। বড়দিনে বুনে দেন তার জন্য উলের চাদর, নানারকমের লাল রঙের উল দিয়ে। যে লাল রঙ যুদ্ধ, রক্ত, ভয়াবহতার প্রতীক, যিনি বছরের পর বছর অপেক্ষা করে থাকেন কবে ফিরবেন তাঁর মৃত স্বামী।
ছেলেটির দিন এভাবেই কাটে রক্তাক্ত মৃত্যুভয় আর মা, যিনি সৈনিক-রমণী, তাঁর বোনা লাল উলের পাঁচিলের আড়ালে।


প্রেম কাব্য

সমস্ত প্রেমই যেন দুঃখ দিয়ে গড়া।

এই যে তোমার মা উল বুনছেন
একরাশ লাল রঙের বিভিন্ন আভাযুক্ত উলের চাদর
যা তোমার বড়দিনের উপহার,
যা তোমার সঙ্গে থেকে সধবা এই রমণী
উষ্ণতায় মুড়ে রাখেন তোমাকে।

অথচ, তা কি করে হয়!
বছরে পর বছর তাঁর রিক্ত হৃদয় নিয়ে তিনি অপেক্ষা
করে আছেন
একদিন তাঁর মৃত মানুষটি ফিরে আসবে বলে।

এভাবেই তোমার দিনযাপন
রক্তাক্ত, মৃতের ভয়ে ভীত রমণী, তোমার মা
একের পর এক দেয়াল তুলে চলেছেন তোমার চারপাশে...

দ্বিতীয় কবিতা— Blue Iris
অনুবাদ সবসময়েই স্বকীয় মহিমায় একটি কবিতা হয়ে উঠুক, এমনটাই চেষ্টা করি। এখানে বুনো বা জংলী অর্থে Wild শব্দটি ব্যবহার করিনি। গভীর, ঘন, অন্তরস্থ...সেই অর্থেই ‘নীল’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। চেতনায় মৃত্যু ও মুক্তি দুইই যেন স্বমহিমায় প্রকাশিত।



নীল আইরিশ

আমার অশেষ কষ্ট পেরিয়ে এলেই একটা
খোলা দরজা
বেরিয়ে এসোঃ মৃত্যু হাতছানি দেয়
আমি জানি, আমি বুঝতে পারি

কিছু অস্ফুট গুঞ্জন, পাইনের শিরশিরানি
তারপর শূন্যতা... হালকা রোদের আলো
শক্ত জমির উপরে ঠিকরে ঠিকরে পড়ে

অসম্ভব এই বেঁচে থাকা
আমার সমস্ত চেতনা এখন
অন্ধকার তলানিতে

তারপর সব শেষঃ যা ভেবেছি,
মুখে আর কোনও কথা নেই, হঠাৎ যবনিকা
শুধু ঝোপঝাড়ে পাখিদের কিচিরমিচির

তোমার কিচ্ছুটি এখন মনে নেই
তুমি যেন অন্য জগতের লোক...

কিন্তু আমি বলছি, আমি পারবো...আমি কথা বলতে পারবো...

কোন বিস্মৃতির অতল হতে উঠে আসা
কন্ঠস্বর

জীবনের কেন্দ্রবিন্দু থেকে সে উঠে আসে
যেন সাগরের নীল জলে অফুরান ঝর্ণার প্রতিচ্ছবি...!


তৃতীয় কবিতা— Mock Orange

বস্তুতঃ গ্লুকের ‘Mock Orange’ কবিতাটি সম্বন্ধেই ‘New York Times’ পত্রিকার লেখক ও সমালোচক লিখেছেন তাঁর লেখার ধরন সম্বন্ধে যেখানে বলা হয়েছে গ্লুকের লেখা হলো ‘clearer’, ‘sharper’, purer’ and ‘straightforward’.
কবিতাটি পড়লে আমরা বুঝতে পারি তাঁর লেখা কোনওরকম দ্বিধার মধ্যে থাকে না, তাঁর মত তিনি জানান সোচ্চার হয়ে। কবিতাটি পড়া যাক—


মিথ্যে কমলার গন্ধ

এ চাঁদের আলো নয়’ বিশ্বাস করো, আমি বলছি তোমাকে
ফুলগুলির জন্য বাগানটি আলোকিত হয়ে আছে।

আমি ঘৃণা করি,
এই মিথ্যেকে আমি ঘৃণা করি।
যেমন ঘৃণা করি যৌনতা
যখন পুরুষ তার ঠোঁট দুটি দিয়ে আমার মুখ বন্ধ করে দেয়
পুরুষের সেই কামুক নিথর দেহ...

দুজনের এই মিথ্যে যৌন মিলন
চাপা কান্না, উপহাস, বিদ্রুপের মতো মনে হয়

এখন এই রাত্রে আমার মনে হচ্ছে
আমি যেন সেই প্রশ্ন ও উত্তর শুনতে পাচ্ছি
যা মনের মধ্যে উত্তাল হয়ে টুকরো টুকরো করে ছড়িয়ে পড়ছে
অনেক মনের ভিতরে
সেই পুরনো দ্বন্দ্ব, পুরনো যুদ্ধ

তুমি কি শুনতে পাচ্ছো?
আমাদের ঠকানো হয়েছে
আমাদের বোকা বানানো হয়েছে
একটা মিথ্যে মিষ্টি কমলালেবুর গন্ধ যেন জানালা দিয়ে
ছুঁড়ে দেওয়া হয়েছে


কী করে শান্ত হবো?
কী করে সুখে থাকবো, বলো?
এখন সেই গন্ধটা ছড়িয়ে পড়েছে সমস্ত পৃথিবীতেই