Next
Previous
1

সম্পাদকীয় : শ্রীশুভ্র

Posted in




অতিথি  সম্পাদকের  কলমে 


আবার এসেছে ফিরে আশ্বিন বাঙালির ঘরে ঘরে, বাংলার রোদ জল মাটির সরস আঘ্রাণে। উৎসবের আন্তরিক আহ্বান নিয়ে বাপ দাদাঠাকুরের এই ভিটে মাটি প্রান্তরে। বৃষ্টিভেজা আকাশের নীল আঁচলে মেঘ রোদ্দুরের লুকোচুরি খেলায় লেগেছে শরতের রঙ! যে রঙের আবীরে বাঙালির চোখে উৎসবের রামধনু। বিশ্বকর্মা পূজো দিয়ে সেই উৎসবেরই বোধন হয়ে গেল, শরৎ পার্বণের। 

কিন্তু উৎসব তো শুধুই দৃষ্টিগ্রাহ্য সীমানায় চোখের ব্যায়াম নয়। কিংবা কোনো ধর্মীয় রীতিনীতির শাস্ত্র বিধি সম্মত সুচারু রূপে নিয়ম নিষ্ঠা পালনের আচার সর্বস্ব ক্রিয়াকর্ম নয়। মনের অন্দরমহলেই তার আন্তরিক আমন্ত্রণ। মূল অধিষ্ঠান। আর সেই অন্দরমহলের সাত মহলা অন্তরে কেমন আছে বাঙালি? কেমন আছি আমরা আশ্বিনের শরতউৎসবের আঙিনায়!

এ এক অস্থির সময়। এ এক আঁধারঘন সময়। এ এক অবিস্মরনীয় সময়। চারিদিকে ক্ষমতার দম্ভ, শক্তির অনৈতিক আস্ফালন। দূর্নীতির লাগাম ছাড়া বাড়বাড়ন্ত, প্রশাসনের সাথে অপরাধ জগতের অশুভ আঁতাত। আইন ভাঙাটাই যখন দস্তুর। বিচারের বাণীর মাথার ওপর যেখানে ঝোলে প্রহসনের খাঁড়া। প্রতিবাদ প্রতিরোধের স্তিমিত প্রদীপগুলি যেখানে বিক্ষিপ্ত পরিসরে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে মাত্র, সেখানে সেই সময়ে সাধারণ শুভবুদ্ধিসম্পন্ন নাগরিক হিসেবে আমাদের মননের অন্দরমহলে উৎসবের ছোঁয়ায় কোথাও একটা তাল কেটে যায়, যায়ই। 

সময়ের এই নিদারুণ অস্থিরতা ক্রমাগত আমাদেরকে অভ্যস্ত করে তোলে আমাদেরই পরিপার্শ্বের ঘনায়মান অন্ধকারের সাথে। আমাদের বোধের তন্ত্রীতে অভ্যাসজনিত উদাসীনতার জাল বিস্তার করতে থাকে। যে কোনো দেশের জনজনীবনের পক্ষে এ এক দুঃসময়। হারিয়ে যেতে থাকে আমাদের নিজেদের স্বতন্ত্র কন্ঠস্বরগুলি। অসাড় হয়ে পড়ে নৈতিক আদর্শের সজীব কোষগুলি। বন্ধ হয়ে যেতে থাকে বিবেক বুদ্ধির খোলামেলা দরজা জানলাগুলি। আমরা তখনই পক্ষ নিয়ে ফেলি কোনো না কোনো পক্ষের। কারণ আত্মপক্ষ প্রতিষ্ঠার মতো কোনো আত্মনির্ভর প্রত্যয়ের উপর কোনো রকম ভরসা রাখা সম্ভব হয় না তখন আর।

উৎসবের উজ্জ্বল আলোতেও তখন ম্লান দেখাতে শুরু করে নিজস্ব প্রতিবিম্বগুলি। আর সেইখান থেকেই কেউ যদি ঘুরে দাঁড়াতে চাই, কেউ যদি আত্মপ্রত্যয়ের খুঁটিতে বাঁধতে চাই আপনাপন আদর্শের বিবেকী বিশ্বাসগুলিকে। বোধের অসাড় তন্ত্রীগুলিকে আবার সজীব এবং প্রাণবন্ত করে তুলতে চাই, নিজস্ব কন্ঠস্বরগুলিকে ফিরে পেতে, তবে আমাদেরকে ক্রমাগতই সংলগ্ন হতে হবে আমাদেরই মতো সহনাগরিকদের সাথে। খুঁজে নিতে হবে সহযাত্রী সহপথিককে। শুরু করতে হবে ভাবনা চিন্তা আদান প্রদানের সংবেদী চলাচলের সজীব প্রক্রিয়া। 

সদ্য আত্মপ্রকাশ করা অনলাইন মাসিকপত্র ঋতবাক সেই প্রক্রিয়ারই নবতম সংযোজন। নামের মতই ঋতবাক সত্যের প্রতি দায়বদ্ধ। পরিপার্শ্বের এই যন্ত্রণাবিদ্ধ অন্ধকারে সুচেতনার সুপবন বইয়ে দেওয়া ও সত্য দর্শনের অনুপম আলোর প্রজ্বলনকে বাস্তব করে তোলার স্বপ্নে যে দৃঢ়চেতা ও প্রত্যয়ী। আর সেই প্রত্যয়ের হাত ধরেই আমাদের সাতমহলা অন্দরে উৎসবের সজীব অম্লান আলোকে সত্য করে তুলতে পারি আমরা। না শুধুই শারদীয়া উৎসবের নিরর্ঘন্টে নয়, সম্বচ্ছর সজীব জীবনের প্রাণবন্ত উচ্ছ্বাসেই! 

                                                                      -শ্রীশুভ্র