সম্পাদকীয়
Posted in সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়
ইদানিং গ্লোবাল ওয়ার্মিং বা বিশ্বায়িত উষ্ণায়নের কল্যানে শীতকালের সঙ্গে শীতের আর খুব একটা সম্পর্ক নেই, বরং শীতকাল মানে আপাতত শুধুই সাড়ে পাঁচটায় সকুয়াশা সন্ধ্যে, শীতকাল মানে মাফলার-সোয়েটারের নিচে ঘামনদীর কুলকুল, শীতকাল মানে হোয়াটস্আপে মেরি ক্রিসমাস আর হ্যাপি নিউইয়ার – কেক আর মদ, শীতকাল মানে পিঠে-পাটিসাপটা, শীতকাল মানে রুটি আর নলেন গুড়, শীতকাল মানে বইমেলায় সেলফি, শীতকাল মানে হাঁউমাঁউ উৎসব, শীতকাল মানে সরস্বতীপুজো আর টোপাকুল, ধুতিপাঞ্জাবি আর বাসন্তিরঙের শাড়ি, শীতকাল মানে ভ্যালেন্টাইন উৎসব – হিহি হাহা ধ্যাৎ কী অসভ্য - এতো সব পেরিয়ে ভাষাদিবসে এসে কোমরে হাত, জিভ বের করে হ্যাহ্ হ্যাহ্ - টার্মিনাস। হ্যাপি ভাষা দিবস!
আর ভাষাদিবস মানে?
‘লিসন্ বেবি, ডোন্ট ফর্গেট আজ ভাষা ডে, উই মাস্ট টক্ ইন বেঙ্গলি টুডে’
এই ভণ্ডামিসর্বস্ব আপাতজীবনেই আমরা এখন আত্মমগ্ন সুখী – চারপাশের ঘটনাবহুল সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতাকে সন্তর্পনে ল্যাপটপ বা স্মার্টফোনের জানলার বাইরেই রাখি, ভারি পর্দা টপকে ঘরে ঢুকতে দিইনা – বধূহত্যা ধর্ষণ খুন আত্মহত্যা – দৈনিক এ সব খবরে আমরা অভ্যস্ত হয়ে গেছি – গরুর মাংস ফ্রিজে রাখার জন্য পিটিয়ে হত্যা – আমরা হাই তুলে পাশ ফিরে শুয়েছি – গৌরী লঙ্কেশ হত্যা – তো? আমার কি? আমি তো মুখপুস্তকে চোখের জল ফেলেছি – সম্প্রতি সিরিয়ায় নির্মম গণহত্যা – আমরা শ্রীদেবী নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম, স্যরি, কী স্যাড্!
মাঝখানে কিছু মোমবাতি মিছিল দেখতাম রাজপথে মাঝে মাঝে, বিভিন্ন সামাজিক ইস্যুতে অহিংস ও নরম প্রতিবাদ হিসেবে – এখন আবার সবাইকে জড়ো করো রে, দাদাদিদিদের অনুমতি নাও রে, মোমবাতি কেনো রে, রাস্তায় হাঁটো রে – ধ্যুস্, অতো পোষায় না গুরু।
‘আকাশে তবু রয়েছে রঙ ছড়ানো,
এখনও তার খানিক দিয়ে
হৃদয় যায় ভরানো।
এখনও ক্ষয়ক্ষতির খাতা
ওঠেনি ভরে, ভরিও না তা,
হাওয়ার হাতে এখনও পাতা
ঝরানো
হয়নি শুরু, হৃদয়ে রঙ
এখনও যায় ছড়ানো।
(নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী – ‘রঙছুট’)
হাতে হাতে রঙ নিয়ে ঋতবাক নেমেছে রাস্তায় – আজ বসন্ত।
শুভেচ্ছা নিরন্তর...