প্রচ্ছদ নিবন্ধ - অলকরঞ্জন বসুচোধুরী
Posted in প্রচ্ছদ নিবন্ধ
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
ভাষা-সাহিত্য-স্বাধীনতাঃ প্রেক্ষিত বাংলা ও বাঙ্গালি
অলকরঞ্জন বসুচোধুরী
অন্তিম পর্ব
প্রতিষ্ঠানের আধিপত্য ও স্রষ্টার স্বাধীনতা
একটি সভ্য ও সংস্কৃতি সম্পন্ন সমাজে সাহিত্য রচনা বা মতপ্রকাশের যে স্বাধীনতা একটি মৌলিক শর্ত, তার অনুশীলনের পক্ষে বা বিপক্ষে কোন্ শক্তিগুলো কাজ করে, সে কথা ভেবে দেখতে গেলে আমরা দেখতে পাবো নানাধরনের প্রতিষ্ঠানকে অবলম্বন করেই স্বাধীনতার এই মৌলিক প্রবৃত্তিটি যেমন অভিব্যক্তি লাভ করে, তেমনই আবার পুঞ্জীভূক্ত ক্ষমতা ও আধিপত্যের পীঠস্থানে পরিণত কিছু প্রতিষ্ঠান বা গোষ্ঠী সৃজনশীল মানুষের সেই স্বাধীনতাকে হরণ করার কিংবা ক্ষুন্ন ও খর্ব করার চেষ্টাও করে থাকে। এই প্রতিষ্ঠানগুলির হতে পারে বিশেষ কোনো মতবাদে বিশ্বাসী দল বা গোষ্ঠী হতে পারে নির্বাচিত বা স্বৈরতন্ত্রী কোনো সরকার, হতে পারে পত্র-পত্রিকা বা সাহিত্য গোষ্ঠী। বিশেষ কোনো মতবাদ বলতে প্রধানত দু-ধরণের মতবাদ এখানে বুঝতে হবে- রাজনৈতিক ও ধর্মীয়।
রাজনৈতিক মতবাদ কীভাবে সাহিত্যের স্বাধীনতার কণ্ঠরোধ করতে পারে বা একজন সাহিত্য স্রষ্টার রচনার উৎকর্ষের অবনমন ঘটাতে পারে তার উদাহরণ হিসেবে মুক্ত দুনিয়ার বুদ্ধিজীবীরা অনেক সময় কম্যুনিজমের দিকে আঙুল তুলে থাকেন। বিস্তারিত বির্তকে না গিয়ে তাঁদের যুক্তির নমুনা হিসেবে আমরা পশ্চিমবঙ্গের কিছু প্রতিষ্ঠিত সাহিত্যিকের বক্তব্য এখানে সংক্ষেপে উল্লেখ করতে পারি ১৯৬২ সালে ভারত চীন সীমান্ত সংঘর্ষের পর 'দেশ' পত্রিকার উদ্যোগে 'শিল্পীর স্বাধীনতা' শিরোনামে পশ্চিমবঙ্গের নামী সাহিত্যিকদের দিয়ে একটি প্রবন্ধমালা লেখানো হয়েছিল। আমরা জানি চীনের সামারিক অভিযানের ধাক্কায় সে সময় সহসা কিভাবে বাঙালি তথা ভারতীয়দের দেশপ্রেম জেগে উঠেছিল ও প্রত্যাশিতভাবেই শিবরাম চক্রবর্তী ও নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের মত মুষ্টিমেয় দু'একজন ছাড়া প্রায় সবাই কম্যুনিজমের বিরুদ্ধে তাঁদের নিঃসংশয় বিরুপতা প্রকাশ করেছিলেন। শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়ের অভিমত ছিল, 'কম্যুনিস্ট সমাজতন্ত্রে স্বতন্ত্র মানুষের বিশিষ্ট কোনও ভূমিকা নেই। তারা শুধু মানুষ। বৃহৎ একটি যন্ত্রের অঙ্গ বিশেষ।... [শিল্পীর স্বাধীনতা' দেশ। পৃঃ৯৯২]
সঞ্জয় ভট্টাচার্য ঐ প্রবন্ধমালায় বলেছিলেন, "সৃষ্টিশীল সাহিত্যিকদের মননে বাধানিষেধের পাহারায় রাখলে সৃষ্টি পঙ্গু হতে বাধ্য। কম্যুনিস্ট আদর্শ সৃষ্টিশীল মনক পঙ্গু করে। তাই মায়াকভস্কির আত্মহত্যা। ...কম্যুনিস্ট আদর্শ মানবতার ওপরে আঘাত দেয়। এ আঘাত আর যেই সহ্য করুক, সাহিত্যিক সহ্য করতে পারে না।" [শিল্পীর স্বাধীনতা' দেশ। পৃঃ৭৯৪] তাঁর আরও অভিযোগ ছিল যে, অকম্যুনিস্ট রাশিয়াতে যে উচ্চশ্রেণীর সাহিত্য সৃষ্টি হয়েছিল, কম্যুনিস্ট জমানায় তা হয়নি। কম্যুনিজমে বিশ্বাসী হয়ে যে শক্তিমান লেখকের সাহিত্যিক উৎকর্ষের অধঃপতন হয়, এর দৃষ্টান্ত হিসেবে তিনি এরেনবুর্গ ও মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উল্লেখ করেছিলেন। [শিল্পীর স্বাধীনতা' দেশ। পৃঃ৭৯৩] আবার বুদ্ধদেব বসুর মত ছিল- 'কম্যুনিজমের ঘোষিত উদ্দেশ্য হলো স্বাধীনতার হত্যা ও এক নায়কতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা। [ঐ, ১০ ফাল্গুন, ১৩৬৯, পৃঃ৩১০) এই বিতর্ক চলার সময়েই স্বাধীন সাহিত্য সমাজ নামে এক সংস্থা প্রতিষ্ঠা করে কম্যুনিজম সম্পর্কে কয়েকজন লেখক ঘোষণা করেছিলেন, "এই ব্যক্তি বিনাশী ব্যবস্থাকে সকলের চেয়ে ভয় ও ঘৃণার চোখে দেখেন শিল্পী সাহিত্যিক ও জ্ঞানব্রতীরা না দেখে পারেন না। কারণ ব্যক্তি স্বাধীনতার প্রয়োজন সকলের চেয়ে বেশি তাঁদেরই। তাঁদের ব্যক্তিত্ব বিকাশের পূর্ণতা পূর্বনির্দিষ্ট পথে- প্রথা শাস্ত্র বা ঐতিহ্যের পথে সম্ভব নয়।" এই ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেছিলেন আবু সঈদ আইয়ুব, তারাশংকর বন্দোপাধ্যায়, প্রেমেন্দ্র মিত্র, বুদ্ধদেব বসু ও সুবোধ ঘোষ। [স্বাধীন সাহিত্য সমাজ, দেশ, ৫ মাঘ, ১৩৬৯, পৃঃ১০৭৯] বলাবাহুল্য রাজনৈতিক মতাদর্শ হিসেবে কম্যুনিজমের গুণাগুণ বিচার সম্পূর্ণ ভিন্ন বিতর্ক, আমরা শুধু সাহিত্যের স্বাধীনতার অনুশীলনে রাষ্ট্রনৈতিক মতবাদ কিভাবে বাধক ভূমিকা নিতে পারে তার একটিমাত্র উদাহরণ হিসেবে কম্যুনিজমের উল্লেখ করেছি, আমাদের দেশে এর চরম দৃষ্টান্ত না থাকলেও সোভিয়েত দেশের ক্ষেত্রে নোবেলজয়ী পাস্তের নাক বা সলঝেনিতসিনের কথা আমাদের জানা আছে।
ক্ষেত্র বিশেষে এই স্বাধীনতার বিরোধী প্রতিষ্ঠানের বা মতবাদের উদাহরণ হতে পারে কম্যুনিজমের স্থানে নাতসিবাদ, ফ্যাসিবাদ, এমন কি ধর্মীয় নানারকম মৌলবাদ।
আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশের ক্ষেত্রে ব্রিটিশ শাসনের অবসানের সঙ্গে ঐ অভিব্যক্তির স্বাধীনতার গলা টিপে ধরার ক্ষেত্রে অনন্ত রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান বা মতবাদের সেই দাপুটে ভূমিকা আর নেই একথা স্বীকার করতেই হবে। সেকালের তুলনায় একালে বরঞ্চ এই অঞ্চলে দাপট বেড়েছে ধর্মীয় মৌলবাদের, সেটা আমরা ভাল করেই জানি। সেকালে বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের প্রবর্তন করে কাজি আবদুল ওদুদ প্রভূত প্রতিবন্ধকের সম্মুখীন হয়েছিলেন ধর্মধবজীদের কাচ্ছ থেকে আজ তাঁরই উত্তরসূরী তসলিমা নসরিনকে ধর্মীয় মৌলবাদীদের দাপটেই নিজের স্বদেশ স্বজন ছেড়ে ঘুরে বেড়াতে হয় দেশে বিদেশে, ভারতে এমন কি, পশ্চিমবঙ্গে এসেও তিনি তাদের আক্রমণ থেকে রেহাই পান না, হুমায়ুন আজাদের ওপরে নেবে আসে বাংলাদেশী ধর্মধবজী ছুরি, সেদেশে একের পর এক খুন হয়ে যান মুক্তমনা ব্লগ লেখক ও স্বাধীন চিন্তকেরা।
প্রতিষ্ঠানশাসিত সাহিত্য বনাম স্বাধীন সাহিত্য
কোনো প্রতিষ্ঠান, তা সে রাজনৈতিক বা ধর্মীয় বা সাহিত্যকেন্দ্রিক যে ধরণেরই হোক না কেন, যখন দীর্ঘস্থায়ী হয়, তখন সেটি হয়ে ওঠে ক্ষমতা, দাপট ও আধিপত্যদের কেন্দ্রস্বরূপ। মানুষের সামনে নিজের ক্ষমতা, মতবাদ ও অভিপ্রায়কে সুপ্রতিষ্ঠিত করার নেশায় ক্রমশ এইসব প্রতিষ্ঠান আরও শক্তি, আরও আধিপত্য সঞ্চয়ের উদগ্র বাসনায় প্রায়ই সাহিত্যের ও মানুষের অভিব্যক্তির স্বাধীনতার সীমানা লঙ্ঘন করতে চায়। এই প্রতিষ্ঠানগুলি নানা বিষয়ে নানা বিধান বা ফতোয়া জারি করেই ক্ষান্ত হয় না, তারা চায় স্বাধীন মানুষ তাদের কাজে, বক্তব্যে ও রচনায় এইসব শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনগুলির মতবাদ ও বিধিবিধানকেই প্রচার করবে, বা সেগুলির বিরোধিতা থেকে বিরত থাকবে। এই উদগ্র বাসনা চরিতার্থ করতে এই প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠানগুলি চেষ্টা করে অন্যান্য ক্ষুদ্রতর সংগঠন বা গণমাধ্যগুলিকে কুক্ষীগত করতে। একমাত্র ফ্যাসিবাদী রাস্ট্রব্যবস্থা ছাড়া অন্যান্য সমাজে এই প্রক্রিয়াটি সাধারণত সোজাসুজি পথের বদলে ঘুরিয়ে অন্যান্য নানা সাহিত্যিক প্রকরণ ব্যবহার করে সাহিত্যের লেখক ও পাঠকদের প্রভাবিত করে, করবার চেষ্টা করা হয়। আমাদের এই অভিজ্ঞতা আছে যে, সাহিত্য সংশ্লিষ্ট জগতে এমন কিছু লোকজন সর্বদাই থাকেন; যারা না বুঝে অথবা বুঝেসুঝেই নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য এই ফাঁদে ধরা পড়েন বা ধরা দেন। এদের পৃষ্ঠপোষণায় সাহিত্য হয়ে উঠতে পারে প্রতিষ্ঠানশাসিত।
স্বাধীন সাহিত্য কীভাবে প্রতিষ্ঠানশাসিত হয়ে উঠতে পারে, তা বোঝার জন্য প্রতিষ্ঠানের প্রভাব ও প্রতিপত্তি অর্জনের ও বিস্তারের সহায়ক সাহিত্য সংশ্লিষ্ট উপকরণ বা প্রকরণগুলির উল্লেখ করা যেতে পারে। সাহিত্য সম্মেলন, সাহিত্য পত্রিকা, সাহিত্য পুরস্কার, বিশেষ উদ্দেশ্য ও কর্মসূচী নিয়ে গঠিত সংস্থা বা আন্দোলন, ভাষা ও সাহিত্যের সংস্কার কর্মসূচী ইত্যাদি হচ্ছে সাহিত্য সমাজে প্রচলিত সেইসব উপকরণ, যেগুলিকে ব্যবহার করে একটি প্রতিষ্ঠান সমাজে তার প্রভাব প্রতিপত্তি ও একাধিপত্য কায়েম করার চেষ্টা করে থাকে। এই প্রকরণ বা উপকরণগুলি বাঙলা সাহিত্যের ক্ষেত্রে অতীতে ও বর্তমানে কিভাবে ব্যবহৃত হয়েছে ও সাহিত্যের স্বাধীনতার ওপর তার কিরকম প্রভাব পড়েছে, আমরা এবার সংক্ষেপে তার একটি হিসেব নেবো। বর্তমানে বাংলা সাহিত্য সৃষ্টির তিনটি মূল কেন্দ্র, অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা ও বাংলাদেশের মধ্যে শেষোক্ত দুটি কেন্দ্র সম্পর্কে আমাদের জানাশোনা ও ধ্যানধারণা নিতান্তই সীমাবদ্ধ বলে আমাদের এই আলোচনার নানা দৃষ্টান্ত ও ঘটনাবলীর উপস্থাপনা হবে প্রধানত পশ্চিমবঙ্গ বা আরও সুনির্দিষ্টভাবে কলকাতা কেন্দ্রিক সাহিত্যের নিরিখে।
সাহিত্য পত্রিকা- অতীতে অর্থাৎ স্বাধীনতার পূর্ব পর্বে উনিশ শতককে বলা যায় বাংলা পত্রিকার স্বর্ণযুগ। বিখ্যাত সাহিত্য সেবীদের সম্পাদনায় যেমন নানা পত্রিকা প্রকাশিত হয়েছে, তেমন আবার মূলত সাহিত্যিক না হয়ে শুধু সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনার সুত্রেই খ্যাত কীর্তি হয়েছেন রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় ও জলধর সেনের মতো সম্পাদকেরা। বঙ্গদর্শনের সময় থেকেই এই পত্রিকাগুলোকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠতো সাহিত্য সেবীদের নানা গোষ্ঠী বা আড্ডা। একটি গোষ্ঠী বা পত্রিকার বিরোধিতা করে আর একটি প্রতিদ্বন্দ্বী গোষ্ঠী বা পত্রিকার উদ্ভভও বিরল ছিল না। এদের মধ্যে সুস্থ প্রতিযোগীতা, বির্তক, বিরোধিতা এমন কি পারস্পরিক আক্রমণ বা রেষারেষি থাকলেও সাধারণভাবে সাহিত্য সৃষ্টির স্বাধীনতায় কোনো হস্তক্ষেপ ছিল না। 'ভারতী' বনাম 'সাহিত্য', 'সবুজপত্র' বনাম 'নারায়ণ', কল্লোল-কালিকলম-প্রগতি বনাম 'শনিবারের চিঠি' - এরকম অনেক প্রতিযোগী পত্রিকা কেন্দ্রিক মঞ্চ ছিল, এর বাইরে ছিল সাধনা, হিতবাদী, বিচিত্রা, পরিচয় ইত্যাদি নানা বিশিষ্ট পত্রিকা সাহিত্য ছাড়াও রাজনীতি ও শিল্প সংস্কৃতির নানা প্রগতিশীল ধারার পৃষ্ঠপোষকতায় অগ্রগণ্য ছিল প্রবাসী পত্রিকা। এটির মধ্যেই প্রথম দেখা যায় একটি স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠানের বিশালতা স্বাধীনতা পরবর্তী যুগে সাহিত্য পত্রিকার ক্ষেত্রে অবশ্যই উল্লেখযোগ্যভাবে গণনীয় ওঠে আনন্দবাজার পত্রিকা গোষ্ঠীর 'দেশ' পত্রিকা। এ-সময় অতীত যুগের সাহিত্য পত্রিকাগুলির বেশিরভাগই বিলুপ্ত হবার বা তাদের বিক্রি কমে যাবার ফলে বিভিন্ন সংবাদপত্রভিত্তিক সাহিত্য পত্রিকাগুলোই প্রভাবশালী হয়ে ওঠে। খবরকাগজ প্রধানত বাণিজ্যমূলক বলে এইসব গোষ্ঠীর সাহিত্য পত্রিকাগুলোর অর্থনৈতিক ভিত্তিও ছিল বিশুদ্ধ সাহিত্য পত্রিকাগুলোর তুলনায় মজবুত। তাই গত শতকের ষাট সত্তর দশক পর্যন্তও সাপ্তাহিক ও মাসিক বসুমতি ও যুগান্তর গোষ্ঠীর সাহিত্য পত্রিকা 'অমৃত', 'দেশ' পত্রিকার সমান্তরাল সাহিত্য মঞ্চ হিসেবে টিকেছিল। এ-ছাড়া শিশু সাহিত্য কেন্দ্রিক কয়েকটি পত্রিকাও ছিল, যার প্রচার ছিল বেশ ভালো। এ জাতীয় পত্রিকাগুলো ও যাকে লিটল ম্যাগাজিন বলা হয়; সেই উৎকন্ঠের বিচারে উচ্চমানের ও আয়ুর বিচারে ক্ষীণজীবী পত্রিকাগুলিকে আমরা এখানে ধরছি না।
দেশ ও তার প্রতিযোগী 'অমৃত' পত্রিকার মাধ্যমে একটা সুস্থ প্রতিযোগিতার হাওয়া কলকাতাভিত্তিক বাংলা সাহিত্যের বাজারে কিছুদিন বজায় ছিল। সংবাদপত্রের সঙ্গে যুক্ত বলে এই পত্রিকাগুলির অনেক লেখকই ছিলেন ঐ সব সংবাদপত্রের কর্মচারী বা সাংবাদিক ও সে কারণে তারা একটি বিশেষ গোষ্ঠীর লেখক হিসেবে চিহ্নিত হয়ে যান। সম্ভবত ষাটের দশকের শেষের দিকে এই সুস্থ হাওয়াটি নষ্ট হয়ে যায় 'দেশ' তথা আনন্দবাজার গোষ্ঠীর একটি ফতোয়ার ফলে। এই গোষ্ঠীর শারদীয়া সংখ্যাগুলিতে [অর্থাৎ শারদ সংখ্যা আনন্দবাজার পত্রিকা ও দেশ] উপন্যাস লিখবেন, তারা অন্য গোষ্ঠীর শারদ সংখ্যায় উপন্যাস লিখতে পারবেন না। এই গোষ্ঠীতে অনেক গণনীয় উপন্যাস লেখক থাকলেও তাদের স্বাধীনতার বাধক এই ফরমান তাঁরা মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিলেন জীবিকার দায়ে, কারণ আর্থিক কৌলীন্যে আনন্দবাজারের সমকক্ষ তখন কেউ ছিল না। আজকেও সংবাদপত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত কিছু কাগজ থাকলেও সাহিত্য পত্রিকা হিসেবে তেমন উল্লেখযোগ্য কোনো সাহিত্য পত্রিকা এদের নেই। আশি ও নব্বই দশকে 'প্রতিক্ষণ' পত্রিকাটির বিলুপ্তির পর পশ্চিমবাংলার বাণিজ্যিক সাহিত্য পত্রের জগতে কার্যত এক মেরু ব্যবস্থার প্রবর্তন হয়েছে। যা সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর বিশ্ব রাজনীতির অবস্থার সঙ্গে তূলনীয়। এই একাধিপত্য কায়েম করেও অবশ্য দেশ পত্রিকা শেষ রক্ষা করতে পারেনি, পত্রিকাটির বর্তমান উৎকর্ষের অবক্ষয় তার প্রমাণ- বিক্রি কমে যাবার ফলে এটিকে দ্বিসাপ্তাহিকে পরিণত করে এর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হয়েছে। কিন্তু এই গোষ্ঠীর আধিপত্য প্রতিষ্ঠার বিরাম অবশ্য হয়নি।
সাহিত্য পুরস্কার - গত শতাব্দিতে শুধুমাত্র বাংলা সাহিত্যের জন্য প্রদেয় পুরস্কার হিসেবে প্রথম যুগে খ্যাত ছিল কলকাতা বিশ্ব বিদ্যালয়ের জগত্তারিণী পদকও একটি তেল প্রস্তুতকারক সংস্থার 'কুন্তলীন' পুরস্কার ইত্যাদি হাতে গোনা কয়েকটি সম্মাননা। তখন খ্যাতকীর্তি সাহিত্য স্রষ্ট্রা প্রচুর ছিলেন, যারা এইসব পুরস্কার পাননি, তাতে কিন্তু তাঁদের খ্যাতি বা সমাদরে কোনো ঘাটতি পড়েনি। অবস্থার পরিবর্তন হয়, স্বাধীনতার পর থেকে। পশ্চিমবঙ্গ-ত্রিপুরা-বাংলাদেশ- সর্বত্রই বর্তমানে প্রধান সাহিত্য পুরস্কারগুলোর উদ্যোক্তা স্বাভাবিকভাবেই জাতীয় বা প্রাদেশিক সরকার, কিংবা বাংলা আকাডেমির মতো কৌলীন্য বর্জন করেছে, সেই তালিকায় বাংলাদেশের ক্ষেত্রে দেখতে পাই সাহিত্য পত্রিকা ছাড়াও নানা বাণিজ্য গোষ্ঠী ও ব্যাঙ্ক এগিয়ে রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে একদা এ ব্যাপারে সমান্তরাল স্থানে ছিল আনন্দবাজার ও যুগান্তর গোষ্ঠীর প্রবর্তিত সাহিত্য পুরস্কারগুলি। এছাড়াও বহু গোষ্ঠীর আয়োজিত নানা সম্মাননা ও পুরস্কার পশ্চিমবঙ্গে থাকলেও যুগান্তর গোষ্ঠীর বিলোপের পর আনন্দবাজার গোষ্ঠীর আনন্দ পুরস্কারের সম-গুরুত্বের ও কৌলীন্যের বেসরকারি পুরস্কার যে আর একটিও নেই। একথা অস্বীকার করার নয়। এই এক মেরু দুনিয়াতে একচেটিয়া প্রভুত্ব বিস্তার তাই এই সংস্থার কাছে আজ আরও সহজসাধ্য পুরস্কার, প্রচার ও গ্রন্থ প্রকাশন ব্যবস্থা-লেখক তৈরির সব কটি বাহ্য প্রকরণই আজ তাদের করায়ত্ত।
সাহিত্য-সম্মেলন - বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে পুরানো সাহিত্য-সম্মেলন প্রবাসী বঙ্গ সাহিত্য-সম্মেলনের সূচনা হয়েছিল ১৯২২ সালে, সভাপতি ছিলেন রবীন্দ্রনাথ। তারপর থেকে নানা গুণী ও সুধী সাহিত্য সেবীর অংশগ্রহণে কালক্রমে এটি হয়ে উঠেছিল বাংলা সাহিত্য আলোচনার একটি অগ্রগণ্য প্রতিষ্ঠান, স্বাধীনতার পরে যার নাম হয় নিখিলভারত বঙ্গসাহিত্য সম্মেলন। এরপরে বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে নানা সময়ে অবিভক্ত বাংলাদেশে বিভিন্ন সাহিত্য সংগঠন গড়ে উঠেছে। তিরিশের দশকে ঢাকায় গড়ে উঠেছিল কাজি আবদুল ওদুদের নেতৃত্বে মুসলিম সাহিত্য সমাজ - বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন ছিল তাঁর বিশেষ অম্বিষ্ট। মুসলিম সমাজে মুক্ত বুদ্ধি ও শাস্ত্রবিরোধিতার এই আন্দোলন অবশ্য বেশিদিন চলতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুসলিম হলে এই সংস্থার অধিবেশন বসত, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরূপতায় তা তিন বছরের বেশি চলতে পারে নি- ধর্মান্ধ রক্ষণশীলদের বিরোধিতায় এক্ষেত্রে ক্ষুণ্ণ হয়েছিল সাহিত্যের স্বাধীনতা।
বাংলাদেশের মার্কসবাদী ভাবধারায় বিশ্বাসী বুদ্ধিজীবীদের উদ্যোগে ১৯৩৬ সালে গঠিত হয়েছিল বঙ্গীয় প্রগতি লেখক সংঘ, ১৯৪২ সালে এটিই পরিবর্তিত হয় ফ্যাসিবিরোধী লেখক ও শিল্পী সংঘে। এগুলিতে অবশ্য বামপন্থী বা মার্কসীয় ভাবধারায় বিশ্বাসী নোন, এমন বুদ্ধিজীবীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল না, নানাভাবে রবীন্দ্রনাথ থেকে শুরু করে আনন্দবাজার পত্রিকার সম্পাদক সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদার পর্যন্ত অনেকেই এই গোষ্ঠীতে যুক্ত হয়েছেন। এই সংগঠনগুলিতে মতভেদ ও গোষ্ঠীত্যাগের মতো ঘটনা থাকলেও কারও সৃষ্টির স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের মতো অবাঞ্ছিত ফ্যাসিবাদী ঘটনার তেমন কোনো নজির নেই।
১৯৫৩ সাল থেকে 'নিখিলভারত বঙ্গসাহিত্য সম্মেলন' নামে পরিচিত বাংলা সাহিত্যের একমাত্র সর্বভারতীয় সংগঠনটির পরিচালনার উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের সূচনা হয় যখন এর সভাপতিত্বের আসনে সাহিত্যসেবী বা লেখকদের পরিবর্তে রাজনীতির নেতা ও সংবাদপত্র গোষ্ঠীর কর্ণধারদের বসানো শুরু হয়। মনে আছে, একসময় অমৃতবাজার যুগান্তর গোষ্ঠীর প্রভাবশালী ব্যক্তিরা এই সংস্থায় যুক্ত ছিলেন, সেসময় এই গোষ্ঠীর প্রধান সম্পাদক তুষারকান্তি ঘোষ এই সম্মেলনের সভাপতি পদে বেশ কয়েকবছর আসীন ছিলেন। সে সময়টায় আনন্দবাজার পত্রিকা এই গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক অধিবেশনগুলির কোনো সংবাদই তাদের কাগজে ছাপতো না। হতে পারে যুগান্তর গোষ্ঠী ছিল এদের প্রতিযোগী বা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠান, কিন্তু একটি গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্য-সম্মেলনের সংবাদ প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণে এভাবে পাঠকের কাছে নিষ্প্রদীপ করে দেওয়া আসলে এদের আধিপত্যবাদী নীতি ও অন্য একটি সংস্থাকে কুক্ষীগত করার ফ্যাসিবাদী প্রচেষ্টারই একটি নিদর্শন এবং এরকম পরিস্থিতিতে সাহিত্যের স্বাধীনতা অক্ষুণ্ণ থাকতে পারে না বলাই বাহুল্য। আজ অবশ্য ঐ সর্বভারতীয় সম্মেলনটি টিকে থাকলেও সাহিত্য জগতে আগের মতো মর্যাদা ও গুরুত্ব যে তার নেই, তার প্রমাণ শুধু আনন্দবাজার নয়, প্রায় কোনো বাংলা কাগজেই এর কোনো খবর পাওয়া যায় না। কিন্তু তা অন্য প্রসঙ্গ।
বাংলা বানান সংস্কার- সাহিত্যের বাহন বা উপকরণ হচ্ছে ভাষা, তাই সাহিত্যের সাধারণ স্বাস্থ্য স্বাচ্ছন্দ্য ও অগ্রগামিতাকে বহমান রাখার জন্য ভাষা সংস্কার বা বানান সংস্কার একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। বাংলা ভাষার ক্ষেত্রে এই প্রয়োজনের কথা প্রথম ভেবেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। এই বানান সংস্কারের দায়িত্ব কারা অতীতে নিয়েছিলেন, তার একটি সংক্ষিপ্ত পরিক্রমা এখানে আমরা তুলে ধরছি, এর বৈশিষ্ট্যগুলো বোঝার জন্য।
১৯২৫ - রবীন্দ্রনাথের উদ্যোগে বিশ্বভারতীর বানান সংস্কার দায়িত্বে সুনীতকুমার চট্টোপাধ্যায় ও হরপ্রসাদ শাস্ত্রী।
১৯৩৬- রবীন্দ্রনাথের অনুরোধে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচেষ্টা - দায়িত্বে রাজশেখর বসু ও চারুচন্দ্র ভট্টাচার্য।
১৯৪৯- পূর্ব পাকিস্তান অর্থাৎ পূর্ব বাংলায় বানান সংস্কারের সরকারি প্রচেষ্টা শুরু।
১৯৬৩- ঢাকা বাংলা আকাদেমির বানান সংস্কার কমিটির দায়িত্বে সৈয়দ আলি আহসান
১৯৬৭- ডঃ মুহম্মদ শহিদুল্লার নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বানান সরলায়ন কমিটি-এর বিরোধিতা করেন আবুল হাই, এনামুল হক, ডঃ মুনীর চৌধুরী প্রমুখ।
১৯৮১-কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে বানান সংস্কার সম্পর্কে প্রায় ২০০ জন বিশেষজ্ঞের অভিমত সংগ্রহ করা হয়, কিন্তু কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি।
১৯৯১- আনন্দবাজার পত্রিকার ব্যবহারের জন্য নিজস্ব বানান বিধি 'কী লিখবো কেন লিখবো' বই আকারে প্রকাশিত, লেখক নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী।
১৯৯২- ঢাকা বাংলা আকাদেমির প্রমিত বাংলা নিয়মাবলী প্রকাশ।
২০০৬- বাংলাদেশে 'প্রথম আলো' পত্রিকার নিজস্ব বানানরীতি প্রণয়ণ।
এই পরিক্রমা থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না যে মোটামুটি ভাষা সংস্কারের একশো বইয়ের ইতিহাস আনন্দবাজার পত্রিকার এই ঢুকে পড়াটা ছিল ব্যতিক্রমী উচ্চাভিলাষী ও আলোড়ক। এ জাতীয় দায়িত্ব সাধারণত সর্বজনমান্য প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে উপযুক্ত বিদগ্ধ ব্যক্তিদের ত্তত্ববধানে ও বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে বা প্রকাশ্য বিতর্কের সুযোগ দিয়েই করা হয়ে থাকে ও বাংলা ভাষার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। আনন্দবাজার গোষ্ঠীই সর্বপ্রথম [ও পরে এদের দৃষ্টান্তে উৎসাহিত হয়ে ঢাকার 'প্রথম আলোর মতো দু'একটি পত্রিকা] নিজেদের উদ্যোগে কোনো জনমতের রায় বা বুদ্ধজীবীদের তোয়াক্কা না করে নিজের সংস্থায় কর্মরত এক সাংবাদিককে দিয়ে বানানবিধি প্রণয়ণ করাবার সাহস দেখায়। সাধারণভাবে নিজেদের পত্রিকায় ব্যবহারের জন্য বানানবিধি তৈরি করায় দোষের কিছু না থাকলেও সেটি বই আকারে ছাপিয়ে সাধারণ পাঠকের ওপর চাপিয়ে দেওয়া ও মতগুলির সপক্ষে কোনো যুক্তি বা বির্তকের প্রয়োজনকে উপেক্ষা করাটা এই গোষ্ঠীর আধিপত্যবাদী উচ্চাভিলাষেরই দৃষ্টান্ত। কবি বা সাংবাদিক/লেখক হিসেবে নীরেন চক্রবর্তী মহাশয় যতই কৃতী হন ভাষা সংস্কারে শেষ কথা বলার মতো পাণ্ডিত্য বা বৈদগ্ধ্য তাঁর কতটা ছিল, তা পূর্ববতী উদ্যোগগুলির সঙ্গে জড়িত দিকপাল মানুষগুলির নাম স্মরণ করলেই বুঝতে অসুবিধা হবে না। একটি সংবাদপত্র শুধু প্রাতিষ্ঠানিক সচ্ছলতার জোরে সাহিত্য জগতে মর্যাদা ও সমীহ আদায়ের জন্য এভাবে মরিয়া হয়ে ওঠার পরেও আমাদের পশ্চিমবঙ্গীয় বুদ্ধিজীবীরা এনিয়ে তেমন ভাবে সরব যে হতে পারেননি তা হাল আমলের সাহিত্যের ক্রমশ স্বাধীনতা খুইয়ে প্রতিষ্ঠান শাসিত হয়ে ওঠারই ইঙ্গিত দেয়।
সাহিত্য-দুনিয়ায় প্রভাব ও প্রতিপত্তি বিস্তারের জন্য নানা উপকরণের ব্যবহার বা অপব্যবহারের যেসব দৃষ্টান্ত আমরা উল্লেখ করলাম, তা থেকে বোঝা যায়, বর্তমান সময়ে পশ্চিমবাংলায় সাহিত্যের স্বাধীনতা যে খুব সুরক্ষিত তেমনটা বলা যাচ্ছে না। এখানে এখন সরকারের সমান্তরালে ক্ষমতাশালী ও প্রভুত্বাকাংক্ষী একটিই মাত্র প্রতিষ্ঠান বিরাজ করছে, তার নাম হচ্ছে আনন্দবাজার পত্রিকা। সাহিত্যের গতি-প্রকৃতি নিয়ন্ত্রণ করার, এমন কি লেখকদের নিয়ন্তা হয়ে ওঠার সব ক'টি প্রকরণ, প্রকাশনী, পত্র-পত্রিকা, পুরস্কার, টিভিচ্যানেল-এর হস্তগত। অপর উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠান অবশ্যই পশ্চিমবঙ্গ সরকার। তবে সাহিত্য সম্পর্কে পরিস্কার ধ্যানধারণা বা পরিকল্পনা না থাকলে সাহিত্য সৃষ্টির স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপও তেমন পরিকল্পিতভাবে করা যায় না একথাও সত্যি। তবু পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে সরকার ও আনন্দবাজার গোষ্ঠী এই দুই প্রতিষ্ঠানের নানা নীতি যে স্বাধীন সাহিত্য সমাজের স্বাস্থ্যের পক্ষে খুব একটা শুভ হয়নি, তা সাম্প্রতিক অতীতের কয়েকটি ঘটনা থেকে বোঝা যায়।
১৯৯১ সালে রবীন্দ্রনাথের গ্রন্থস্বত্বের মেয়াদ শেষ হবার সময় নিজের ব্যবসায়িক স্বার্থে বিশ্বভারতী যেভাবে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মাধ্যমে কেন্দ্রের সরকারকে প্রভাবিত করে আরও দশ বছর গ্রন্থস্বত্বের মেয়াদ বাড়িয়ে নিতে সফল হয়েছিল, তা আমাদের মনে আছে। এ ক্ষেত্রে বিশ্বভারতী নামক প্রতিষ্ঠান পশ্চিমবঙ্গ ও ভারত সরকার- এই দুই প্রতিষ্ঠানকে প্রভাবিত করে নিজের স্বার্থে সাহিত্য প্রকাশনার স্বাধীনতাকে খর্ব করতে পেরেছিল, যদিও এই সময় তা আমাদের মনে আছে। এ ক্ষেত্রে বিশ্বভারতী নামক প্রতিষ্ঠান পশ্চিমবাংলার তাবৎ বুদ্ধিজীবীসমাজ সহ আনন্দবাজার পত্রিকা এই প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে ছিল।
এরকম আর একটি স্বাধীনতা হরণের ন্যক্কারজনক ঘটনা হচ্ছে বাংলাদেশের লেখিকা তসলিমা নসরিন ধর্মীয় মৌলবাদের দাপটে দেশ ছাড়তে বাধ্য হলেও দুই বাংলার বুদ্ধিজীবীরা কেউই এর প্রতিবাদে তেমনভাবে সোচ্চার হননি। তাঁকে দু-দুবার আনন্দ পুরস্কারে ভূষিত করে ও আনন্দবাজার গোষ্ঠী এই ফ্যাসিবাদী স্বাধীনতা হরণের বিরুদ্ধে কোনো আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করেনি।