0

ধারাবাহিক - সুদীপ ঘোষাল

Posted in







এগারো

(রবিবাবুর বিবাহ ও তার জীবনের কথা।)



রবিবাবু স্কুলের কাছে বিবেকানন্দ আশ্রমে যেতেন মাঝে মাঝে।সেখানে শুনতেন মহারাজের কথা।তিনি বলতেন,রামকৃষ্ণ দেব বলেছিলেন "তোদের চৈতন্য হোক" । আবার শ্রীচৈতন্য দেব ভক্ত দের নাম সংকীর্তনের মাধ্যমে নিজের ভক্তির অর্ঘ্য শ্রীহরির চরণে নিবেদন করতে বলেছেন । সহজ পথ তাঁরা দেখিয়ে দিয়েছেন । তাঁদের দেখানো পথে যেতে পারলেই মন নিয়ন্ত্রিত হয়ে মৃত্যু ভয় দূর হয় ।জয় শ্রী গৌরাঙ্গ বলে ঝাঁপিয়ে পর মন , বাড়ির কাছেই পাবে শ্রী বৃন্দাবন । তবু বিষয় বিষে জর্জরিত মানুষ পার্থিব সুখ কে আঁকড়ে বাঁচতে চায় ।

মানুষের মন ও মৃত্যুচেতনা বিষয়ে অনেক বিচিত্র ধারণা প্রাচীন কাল থেকে মায়ার চাদরে আচ্ছাদিত ।আইনস্টাইন থ্রি ডাইমেনশন থেকে ফোর ডাইমেনশনে সময় যোগ করেছিলেন ।আমার মতো অর্বাচীন মন নিয়ে আপনাদের কতটুকু ধারণা দিতে পারি বন্ধু । তবু আমার মনে হয় ফাইভ ডাইমেনশনে মন যুক্ত হবে ।শিশুর সারল্যে মন যখন কোনো কিছু ভালোবাসে সেই ভালোবাসা স্থায়ী হয়ে মনের মণিকোঠায় আজীবন আনন্দের দামামা বাজিয়ে চলে । সাধক মানুষ সিদ্ধিলাভের পরে জীবনের পার্থিব চাওয়া পাওয়ার উর্ধ্বে থাকে । কবিতা গান নাটক উপন্যাস সবকিছু এই বিচিত্র মনের সৃষ্টি ।বন পুড়লে দাবানল সৃষ্টি করে আর মন পুড়ে সৃষ্টি করে গান কবিতা ছবি । একটা কবিতা বা গান সুর তোলে মনের মণিকোঠায় । সকল দুঃখ বেদনা সারিয়ে তুলে সামনে এগিয়ে যাওয়ার সাহস জোগায় ।মন আজীবন মানুষের অভিভাবক হয়ে নির্দেশ দেয় সু পথে চলার ।

মন বলবেই মৃত্যু কে সহজেই স্বীকার করার কথা । মৃত্যু কে রোধ করার চেষ্টা করলে জীবনের গতিপথ যে বন্ধ হয়ে যাবে ।মৃত্যু ই তো জীবনের স্বাদ অমৃতময় করে তোলে ।অতএব সুখ দুঃখ আলো অন্ধকার সমানভাবে গ্রহণযোগ্য হোক ।

মহাজ্ঞানী বুদ্ধদেব সন্তান হারা মাতাকে মৃত্যু প্রবেশ করেনি এমন বাড়ি থেকে একমুঠো সরিষা আনতে বলেছিলেন ।তিনি কি আনতে পেরেছিলেন । তাই বন্ধুদের কবি অসীম সরকারের একটা গানের লাইন শোনাই, " ও মন সওদাগর বিদেশে বাণিজ্যে এসে কেন বাঁধলি বসতঘর ;দেশের মানুষ দেশেই ফিরে চল"...আপন দেশ শ্রীহরির পাদপদ্মে সমর্পিত হোক আমাদের জীবন । শ্রীহরি আমার অন্তরে চৈতন্যের জাগরণ করে দাও, আমার অহংকার কেড়ে নাও ,আমাকে তোমার চরণে ঠাঁই দাও, এই হোক আমাদের প্রার্থনা ।

রবিবাবু মন দিয়ে কথাগুলো শোনেন।তার খুব ভাল লাগে শ্রীরামকৃষ্ণের কথা শুনতে। সন্ধে হলে তিনি বাড়ি ফিরলেন,দেখলেন কয়েকজন অপরিচিত লোক এসেছেন।রবিবাবুর বাবা বললেন,তাহলে আমরা আগামীকাল মেয়ে দেখে আসব।ফাইনাল কথা কালকেই বলব।

রবিবাবুও সম্মত হলেন।মেয়ে পছন্দ হলে তিনমাস পরে বিয়ে হয়ে গেল।এখন রবিবাবু বিবাহিত।

আশ্রমে যাওয়া এখন কমে গেছে।এখন শুধু বাজার,বাড়ি আর স্কুল।তারপর দশবছরের মধ্যে রবিবাবুর বাবা,মা পরলোকে চলে গেলেন।তার দুই পুত্রসন্তান স্কুলে ভর্তি হল।সময় থেমে থাকে না।

অভয়বাবুর সংসার ও মশালে জগদ্ধাত্রী পুজো।

0 comments: