পথে প্রবাসে - অসীম দেব
Posted in পথে প্রবাসেঅমৃতসরের চিঠি ৩
তানিয়া,
হরমন্দির সাহিব আর জালিয়ানওয়ালাবাগ নিয়ে কিছু লিখলাম। সেই সিরিয়াস ব্যাপারে পঞ্জাবের লস্যি আর পরোটা আনতে চাই নি। কিন্তু বুঝতেই পারছিস, এই লস্যি আর পরোটা ছাড়া পঞ্জাবের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। রাত বললে ভুল হবে, ভোর হয়ে আসছে, হরমন্দির সাহিব থেকে বাইরে মেন রাস্তায় এসে দেখি লাইন দিয়ে কয়েকটি দোকান। সঙ্গের স্ত্রী, কন্যা, শ্যালিকা তো হাঁ হাঁ করে উঠলো, এখন এই অসময়ে এসব খেতে হবে না। আর আমি তো খাবোই, ভোর সাড়ে চারটের সময় এক স্টাফড আলু পরোটা, আর মালাই লস্যি নামিয়ে দিলাম। কি বলবো রে তানিয়া, এই জিনিষ তুই কলকাতায় পাবি না।
দুপুরের খাওয়ার পর আত্তারি বর্ডারের জন্য গাড়িতে রওয়ানা দিলাম। এই আত্তারি মানে ভারত পাকিস্তানের বর্ডার। আত্তারির ওপারেই পাকিস্তানের ওয়াগা। এটা দুই দেশের মধ্যে সাধারনের জন্য স্থলপথের যোগাযোগ ((গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোড)। এখানেই রোজ বিকেলে দুই দেশের মিলিটারি ড্রিল হয়। আত্তারি ড্রিল এখন অমৃতসরের ট্যুরিস্টদের must see তালিকায় চলে এসেছে। সুতরাং অমৃতসরে, এমনকি আশেপাশের অঞ্চল থেকে দেশী বিদেশী যারাই ভ্রমণে আসেন, এই আত্তারি মিলিটারি ড্রিল তাঁদের জন্য এখন একটি আকর্ষণীয় ইভেন্ট।
আমাদের হোটেল থেকে রওয়ানা দিয়ে দিল্লী অমৃতসর হাইওয়েতে উঠে আত্তারি বর্ডার আরও প্রায় ৩৫ কিলোমিটার, সব মিলিয়ে হোটেল থেকে প্রায় ৪৫ কিলোমিটার। গাড়িতে যাওয়াই সবথেকে ভালো। প্রায় এক ঘণ্টা সময় লাগলো। শেয়ার তিন চাকার অটোও পাওয়া যায়, তবে অনেক বেশি সময় লাগে।
আত্তারি বর্ডার এক নির্জন জায়গা। যেহেতু পাকিস্তান বর্ডার, জায়গাটি সংবেদনশীল (sensitive) তাই এখানে বিএসএফ ছাড়া সাধারণ জনতার কোন বসতি নেই। সন্ধ্যার পর স্থানটি জনশুন্য হয়ে যায়। সেইসময় বিএসএফ ছাড়া অন্যান্য লোকজন এখানের রাস্তায় দেখা যায় না। বাস টেম্পো ট্যাক্সি তো অনেক দূরের কথা।
তানিয়া, কি দেখলাম সেটা লেখার আগে এই ড্রিল সম্বন্ধে তোকে দু’চার কথা জানাই। প্রথমত এটা শুধু ভারতের অনুষ্ঠান নয়। ১৯৫৯ সালে ভারত পাকিস্তান দুই দেশের যৌথ উদ্যোগে এই ড্রিল চালু হয়। আমাদের থাকে বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (বিএসএফ) জওয়ান, আর পাকিস্তানের থাকে পাকিস্তান রেঞ্জারস। ১৯৫৯ সালের কথা ধরলে, কালের নিয়মে এই ড্রিলের, ইংরেজিতে সহজ কথায় the way it is presented and style তার অনেক পরিবর্তন হয়েছে। তবে এককথায় ইংরেজিতে একে বলা যায় the drill is characterized by elaborate and dance-like manoeuvres in a rapid speed and raising legs as high as possible. এর সাথে ফৌজি দৃষ্টিভঙ্গি থেকে যোগ করা যায় displaying the two countries’ rivalry আর দুই দেশের সরকারি কূটনৈতিক বিবৃতিতে বলা হয় a display of brotherhood and cooperation between the two nations. তবে শত্রুর সাথে কিভাবে মোকাবিলা করা উচিৎ, সেটাই বড় করে চোখে পড়ে। এর সাথে যোগ হয় জাতীয়তাবোধের চেতনা। সব মিলিয়ে এক আকর্ষণীয় ও উত্তেজক অনুষ্ঠান, যা লোকে বহুকাল মনে রাখতে পারে।
এই ড্রিল দেখার জন্য আমাদের কোন টিকেট লাগে না, সকলের জন্যই ফ্রি। ওখানে বিশাল পার্কিং জোন। পার্কিং লটে আমাদের গাড়ি রেখে লম্বা লাইন দিয়ে স্টেডিয়ামে পৌছালাম। স্টেডিয়াম মানে ইংরেজি ইউ স্টাইলের একটা স্ট্রাকচার। মাঝখানে দিয়ে ফুট ত্রিশেক চওড়া রাস্তা, দু’পাশে পাঁচ-ছ’ ফুট চওড়া ফুটপাথ। এই রাস্তার উপরেই বর্ডারে, মানে বর্ডারের সীমানাতেই এই অনুষ্ঠান হবে। এই ইংরেজি ইউ-এর খোলা দিকটার রাস্তার ওপারেই পাকিস্তানের বর্ডার। সেখানেও আমাদের মতন একটা গ্যালারি। গ্যালারি বললাম কারন পাকিস্তানের ওখানে মাত্র হাজার খানেক লোক বসতে পারে। আর আমাদেরটা অনেক বড়, ২৫ হাজার লোক বসতে পারে। শুনলাম, এমনি দিনেই আট দশ হাজার মতন লোক হয়, আর ট্যুরিস্ট সীজনে শনি রবি বা ছুটির দিনে পনেরো বিশ হাজার লোক হয়ে যায়।
আমরা যখন ওখানে গিয়ে পৌঁছেছি, তখন বেলা সাড়ে তিনটে হবে, এত আগে গিয়েও যে সীটটা পেলাম ঠিক মনের মতন হলো না। মানে বর্ডার প্রায় ৫০ মিটার দূরে, ভালোমতনই দেখা যাচ্ছে, তবে অনেকটাই কোনাকুনি পড়ে গেলো।
চারটা নাগাদ হাতে মাইক্রোফোন নিয়ে একজন কম্যান্ডিং ফৌজি অফিসার এলেন। প্রাথমিক জয় হিন্দ, ভারতমাতা কি জয়, বন্দে মাতরম ইত্যাদি বলে আসরটাকে একটু নয়, অনেকটাই চাঙ্গা করে দিলেন। সারা স্টেডিয়াম জুড়ে সাউন্ড সিস্টেম, তার সাথে আমাদের স্লোগানের আওয়াজে চারিদিক গমগম করছে। আর উনি লম্বা স্টেডিয়ামের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত দৌড়ে বেড়াচ্ছেন। হাতের, বডি ল্যাঙ্গুয়েজের কায়দায় বারবার বোঝাচ্ছেন যে আওয়াজ আরও জোরে চাই। হাতের ইশারায় বারবার বোঝাচ্ছেন, আমাদের এই আওয়াজ বর্ডারের ওপারেও পৌঁছানো চাই।
চারটা দশ নাগাদ অনেক ছেলেমেয়ের একটা দল এলো, প্রায় তিরিশ চল্লিশ জনের। এরা সবাই দর্শনার্থী। অনুষ্ঠান দেখতে এসেছে। বিএসেফের ফৌজিরা এঁদের ধরে এক একবারে চারজন করে স্টেডিয়ামের মাঝখানের রাস্তায় আমাদের জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করালো। সারা স্টেডিয়াম তখন ওঁদের তালি দিয়ে উৎসাহ দিচ্ছে। তালি বা আওয়াজ কম হলেই সেই ফৌজি কম্যান্ডার বলছেন, আওয়াজে আরও জোর চাই। এর মিনিট দশেক বাদে, মানে চারটা কুড়ি নাগাদ ফৌজি কম্যান্ডার মাইক্রোফোনে ঘোষনা করলেন, মেয়েদের মধ্যে যারা নাচতে চায়, তাঁরা নীচে নেমে আসতে পারে। এটা শুধুমাত্র মেয়েদের জন্যই। জনতা এমনিতেই চাঙ্গা ছিলো। এই ঘোষনা শোনামাত্রই সারা স্টেডিয়ামের কোনা কোনা থেকে মেয়েদের দল সব দৌড়ে দৌড়ে নেমে এলো।
এবার শুরু হলো নাচ। পাকিস্তান বর্ডারের সামান্য দূরত্বে পাকিস্তানকে সামনে রেখে সারা স্টেডিয়াম জুড়ে গান চলছে হামসে যো টকরায়গা, আর সেই গানের সাথে নাচছে প্রায় শ’দুয়েক খানেক ভারতীয় মেয়ে। আর সামান্য দূরে বর্ডারের ওপার থেকে পাকিস্তানের লোকজন দেখছে, মাইকে শুনছে। কয়েকজন উৎসাহের আতিশয্যে বর্ডারের প্রায় কাছে চলে যায়। তাল মিলিয়ে সাপোর্ট দিচ্ছে পুরো স্টেডিয়াম। মেয়েরা, কেউ একজন অন্য আরেকজনকে চেনে না, তবু হাতে হাত ধরে দলবেঁধে হিউম্যান চেইন বানিয়ে স্বতঃফুর্ত হয়ে নেচে চলেছে।
পরে জানলাম, যে আমাদের ফৈজিরা ইচ্ছে করেই চার পাঁচজনকে হাতে জাতীয় তেরঙ্গা নিয়ে ছেড়ে দেয়, তবে বর্ডারের একদম কাছে যেতে দেয় না।
আর ফৌজি কম্যান্ডারের ভূমিকা তো আছেই। এই নাচ চললো প্রায় মিনিট চল্লিশেক। এর ফাঁকে ফাঁকেই ফৌজি কম্যান্ডারের সাথে তাল মিলিয়ে সারা স্টেডিয়াম কাঁপিয়ে বারংবার আওয়াজ উঠছে
- হিন্দুস্তান
- জিন্দাবাদ
- ভারতমাতা কীইইইইইই
- ঝয়য়য়য়য়য় (কেন জানিনা, জয় বলতে গিয়ে আমার বারবার ঝয় বেরিয়ে আসছিলো)
- বন্দে
- মাআআআআতরম
সকলের এই সন্মিলিত আওয়াজে অদ্ভুত জাতীয়তাবোধের চেতনা আপনাআপনি এসে যায় রে, তানিয়া।
এরপর প্যারেড করে এলো আমাদের বিএসএফ এর জওয়ানরা। বর্ডার থেকে আন্দাজ ৭০ মিটার দূরে আমাদের সীমানায় এসে দাঁড়ালো। একদম প্রথম সারিতে দু’জন বিএসএফ মেয়ে। ড্রিলের শুরুতে এই দুটি মেয়ে হাতে তরোয়াল উঁচিয়ে ধেয়ে গেলো বর্ডারের দিকে। এই ড্রিলকে সঠিক বর্ণনায় কি বলবো জানিনা। যেভাবে, মানে যে স্পীডে মেয়ে দুটি এগিয়ে গেলো সেটা একেবারেই স্বাভাবিক হেঁটে প্যারেড করে যাওয়া নয়, এটাকে প্রায় দৌড়ে ধেয়ে যাওয়াই বলা চলে। মানে আমরা যদি কাউকে তাড়া করি, বা আক্রমণ করার জন্য ধেয়ে যাই, অনেকটাই সেইরকম। শরীরী ভাষায় ‘আজ তোকে শেষ করে ফেলবো’, সেইরকম। তারপর বর্ডারের গেটের সামনে গিয়ে কাঁধের উপর পা তুলে এক এয়ারকিক। পাকিস্তানের তরফেও একই রকম ড্রিল চলে। এই ড্রিল উভয় দেশের মধ্যে সিনক্রোনাইজড। এরপর একে একে ভারতীয় বিএসএফ জওয়ান ড্রিল করে চলেছে। একটু আগেই যা বললাম, যাকে বলে ধেয়ে যাওয়া, অনেকটাই যেন “আজ তোকে শেষ করে দেবো”, এই শারীরিক ভাষায়। ছবিটা দেখে নিজেই বল, এইরকম প্যারেড আগে দেখেছিস?
তারপর বর্ডারে গিয়ে এয়ারকিক, যা কাঁধ ছাড়িয়ে যায়। তারপর বুকের ছাতি দেখানো, সবই নিঃশব্দ শারীরিক ভাষায় শত্রুকে নিজের শৌর্যের প্রকাশ, অবশ্যই ফৌজি কায়দায়। ইংরেজিতে both sides intimidate each other by throwing high kicks and by staring. সাথে প্রবল ভারতীয় সমর্থন। লিখে পুরো বোঝানো যাবে না। ছবি দিলাম, তাহলেই বুঝতে পারবি।
অনুষ্ঠানের শুরুতে দুই দেশের বর্ডারের গেট খুলে দেওয়া হয়। আমাদের বর্ডার গেট তেরঙ্গা রঙের। সবার শেষে Beating Retreat. সূর্যাস্তের ঠিক আগে দুই দেশের জাতীয় পতাকা একই সাথে নামিয়ে আনা হয়।
তারপর দুই দেশের জওয়ানরা হাত মেলায়। এই বিশেষ শারিরীক ও মুখচোখের ভাষার হাত মেলানোকে ইংরেজি ভাষায় বলবো brusque handshake। এর মানে জানিস? এটা হলো quick and direct in manner or speech, and often not polite. If you describe a person or their behaviour as brusque, you mean that they deal with things, or say things, quickly and shortly, so that they seem to be rude. দুটো ছবি দিলাম, ফৌজির চোখ দুটো লক্ষ্য কর, যেন আগুনের ফুলকি।
এই brusque হাত মেলানোর পর দুই দেশের বর্ডারের দরজা আবার বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর সেখানেই এই যৌথ অনুষ্ঠানের সমাপ্তি।
তানিয়া,
একটু আগেই যা বললাম, এই প্যারেড এককথায় ফৌজি ভাষায় displaying the two countries’ rivalry আবার দুই দেশের কূটনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সরকারিভাবে বলতেই হয় an effort to display of brotherhood and cooperation between the two nations. কিন্তু যেটা পাওনা, সেটা আমাদের মতন সাধারণ দর্শনার্থীদের একটা জাতীয়তাবোধের চেতনা। এই ড্রিল দেখতে দেখতে নিজের অজান্তেই সেই জাতীয়তাবোধ বারংবার মনে চলে আসে। তাইতো একসাথে আওয়াজ তুলি
- হিন্দুস্তান
- জিন্দাবাদ
- ভারতমাতা কীইইইইইই
- ঝয়য়য়য়য়য়
- বন্দেএএএএ
- মাআআআতরমমমম
আমি ২৬ জানুয়ারি দিল্লির রাজপথে বা কলকাতার রেড রোডে প্রজাতন্ত্র দিবসের প্যারেড দেখেছি। কিন্তু এ এক অন্য মাত্রার। আমি তোকে বলবো, একবার শুধু অমৃতসরে এসে এই ড্রিল দেখে যা। এটা Show of the Lifetime. একটিবার এখানে এসে আমার কথাটা মিলিয়ে নিস।
অক্টোবর, ২০১০ সালে পাকিস্তান রেঞ্জারসের মেজর জেনারেল ইয়াকুব আলি খান প্রস্তাব দিয়েছিলেন এই aggressive আচরণ কমানোর জন্য। জবাবে ৯ নভেম্বর ভারতের তরফেও একই প্রস্তাব আসে। কিন্তু এটা সম্ভব হয় নি। মেজর জেনারেল ইয়াকুব আলি খান রেঞ্জারস জওয়ানদের জন্য বিশেষ কায়দার দাড়ি ও গোঁফেরও প্রস্তাব দিয়েছিলেন। এরজন্য তাঁদের বিশেষ ভাতাও চালু হয়েছিলো।
২ নভেম্বর ২০১৪ সালে এই বর্ডারেই অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার সময় পাকিস্তান সীমানাতেই পাকিস্তানী উগ্রপন্থী হানায় ৬০ জন নিহত হন, আর ১১০ জন আহত হন। তখন কিছুদিন প্রবল উত্তেজনা ছিলো।
২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬ সালের মিলিটারি সংঘাতের পর ৮ অক্টোবর পর্যন্ত এই যৌথ অনুষ্ঠান চালু ছিলো, কিন্ত সাধারণ দর্শনার্থীদের জন্য খোলা ছিলো না। প্রসঙ্গত বলি, দীপাবলী ও বকরি-ইদ উপলক্ষে, এবং স্বাধীনতা দিবসে উভয়পক্ষ নিজেদের মধ্যে উপহারের আদানপ্রদান করে। কিন্তু পাকিস্তান সেবার দীপাবলী উপলক্ষে ভারতকে প্রথাগত উপহারও দেয় নি।
তানিয়া,
এবার আসি আমার লেখার শেষ পর্যায়ে। অমৃতসর এলে কেশর ধাবায় যেতেই হবে, আর কাঁসার গেলাসে মালাই দেওয়া লস্যিও খেতেই হবে।
পুরনো কলকাতার যেমন অনেক বনেদী সন্দেশ, মোগলাই, বিরিয়ানী, কচুড়ির দোকান আছে, সেরকমই অমৃতসরের পুরনো গলিতে একটি ধাবা আছে, কেশর দা ধাবা। পুরনো শহরের পাসসিন চকের ছোট সরু রাজপুরা গলিতে। বাইরের গাড়ি ঢোকে না, মানে এখানের লোকজন ঢুকতে দেয় না, কারন গলি জ্যাম হয়ে যায়। তাই বেশ খানিকটা হেঁটে আসতে হয়।
১৯১৬ সালে লালা কেশর মল ও তাঁর স্ত্রী পার্বতী দেবী এর স্থাপন করেন। আমরা অমৃতসর আসার আগেই কয়েকজনের মুখে এর কথা শুনেছিলাম। হোটেলে গিয়ে ভালো ধাবায় খাবো বলা মাত্রই এক কথায় ওরা এই কেশর দা ধাবার কথা বললো। ট্যাক্সিতে উঠেও এর নাম বলতেই ট্যাক্সিওয়ালাও বললো অমৃতসরে ট্যুরিস্ট এলে এই ধাবাতেই আসে। লোকমুখে শুনলাম BBC, Discovery, Travel, Star টিভিতেও নাকি এর কভারেজ হয়েছে।
আমরা গিয়ে দেখি ছোট্ট গলির মাঝে এই ধাবার বাইরে লোকজন দাঁড়িয়ে আছে, মানে ওয়েটিং লিস্টে। আমাদের নম্বর ১৭, তখন ৬ নম্বর সবে ঢুকেছে। নম্বর এলে ভেতরে ঢুকলাম। লম্বা পাথরের টেবিলের দু’পাশে চারটে করে কাঠের স্টুল, চেনা অচেনার বালাই নেই। এভাবেই পাশাপাশি বা সামনাসামনি বসতে হবে। লিমিটেড নিরামিষ মেনু। যেসব খাবারগুলো খেতে লোকজন এখানে আসে, যেমন পরোঠা, তন্দুরি, কুলচা, চানা মশালা, ছোলে, এগুলো সবই আছে। এই লিমিটেড চয়েসের মধ্যেই মেনু ঠিক করতে হবে। কুইক সার্ভিস। সব মিলিয়ে ভালোই খাওয়া হলো, দামেও পকেটে চাপ পড়ে না।
আমি থালি নিয়ে পরোটা, চানা মসালা, ছোলে খেয়ে হোটেলে ফিরে এলাম। এবার আমার স্ত্রী, কন্যা, শ্যালিকা শপিং করতে যাবেন। একেবারেই আমার বিষয় নয়। আমি গেলে উপদ্রবের আশংকা আছে। তাই, শান্তিপূর্বক সিদ্ধান্ত; আমি হোটেলেই থাকবো।
লস্যির কথা বললে, এই শহরের বিভিন্ন জায়গায় লস্যি স্পেসাল দোকান আছে, তাঁরা শুধুই লস্যি বিক্রি করে। পঞ্জাবের দুধ ভারতবিখ্যাত। এখানের লস্যি ভালো হবে না, তো কোথায় হবে?
তাহলে, তানিয়া,
এই হলো আমার অমৃতসরের ডায়েরি।
ভালো লাগলো?
কি জানি, তুই বিদেশে থাকিস, তোদের ব্যাপার স্যাপারই আলাদা।
আর হ্যাঁ, একবার ফোন করবি তো? অনেকদিন হয়ে গেলো; তুই কিন্তু ফোন করিসনি।
0 comments: