Next
Previous
2

মুক্ত গদ্য: শমীক জয় সেনগুপ্ত

Posted in




মুক্ত গদ্য



নষ্টগদ্য - ভালবাসি
শমীক জয় সেনগুপ্ত 



১. 

তোমাকে লেখার আগে সম্বোধনটা ঝালিয়ে নিতে হত। ওরা বলতো আমি নাকি না লিখলেও কবিতার মতই ঝরঝরে ! আর তুমি হাসতে- 


আচ্ছা তোমার নাম কি ভানু না রবি- আসলে ঐ নাম ত অচল এখন। যে নামই হক আমি কিন্তু আজও পুড়ি ঘন কালো মেঘের সঙ্গে। সঙ্গোপণে যে কথা বলার ছিল তারা অনুচ্চারিত রয়েছে। তোমায় নিয়ে যা লিখেছি সে সব ত আর পদ্মপাতায় ভাসাবার নয়; পদ্মের ও ভারি অভাব। 


আমার শরীর জুড়ে রিমিঝিমি সুর। আর নূপূরের শিঞ্জিনী মুখরিত আমার মনের শিসমহলায় ঝাপটা মারছে তোমার মতই অন্য কেউ। আমি ভাসতে ভালোবাসি। পৃথিবীর গ্লাণি -অভাবে আমি বিচলিত নই, আমার মনের বিলোলতায় তুমি আস আমার সাজে, অন্য আমি হয়ে।। 


লোকে বলে প্রেমিক- কেউ গাল পেরে বলে কলঙ্কী .. কিন্তু কেউ জানে না আমি আসলে কাকে নিয়ে ভাবতে পারি। ওরা জানে না রোজই তুমি তোমার মতই কথা দিয়ে আমায় সাজাও; তাই তো ওরা তোমায় আরতি করে ভক্তিভাবে আর আমাকে দেয় শিউলির বন , কাশের ঝাড় শরতের আকাশ আর একরাশ অভিমান।
আমি যখন লিখি, ওরা রবি ঠাকুরের ছবির দিকে তাকিয়ে থাকে আর মনে বলে 'জয় করে ভয় না যাওয়া স্নব।" আমিও তখন তোমার মতই হাসি। হাসলে চোখের চিকচিকানিরা আপনি লুকিয়ে যায়। হাসলে বড় মিঠা লাগে আমায়। 


কি নাম যেন তোমার ?? রবি বা ভানু যে নয় সে ত আমি জোর গলায় বলি.. সমার্থকের ভিড়ে তোমার সামর্থ খুবই কম। তাই ত বৃষ্টি ভিজিয়ে যায় আমায়, না না আমাকে নয়- তাকে যে তোমায় ভালোবাসে। কি নাম যেন তার ?? নতুন দিনে তোমার আর আমার মধ্যে বেঁচে থাকা তোমার সেই তার এর এখন অন্য নাম। আর ভিজতে থাকা বৃষ্টির জলে অনঙ্গদেব আজও দগ্ধ হয় অন্তরদহনে ।। 



২. 

সময়টা দেখছি হারাধনের ছেলের মতই ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে চলেছে। যত কমছে ততই আর স্বার্থপরতা আর আত্মকেন্দ্রিকতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর তার সাথে সুখী পারাবতপ্রিয়ার শূণ্য অভিসারের জল শুকোনো দাগ মনে করিয়ে দিচ্ছে "বেলা যে পড়ে এল...জলকে চল"।। 


জাল ফেলে মাছ ধরা যাদের ব্যবসা তাদের আমরা জেলে বলি, কিন্তু আমার মনকে জালে বাঁধবে যে সে বীতংসের স্রষ্টা এখন নিভৃতে সুখে নিজেকে দেখছে, আর ভাবছে আবার সময়ের অপচয় করতে হবে। সত্যি আমাকে বাঁধতে পারে এমন মন আজ ফাগুনের চৈতী হাওয়ার আশ্রয় ছেড়ে উষ্ণ লু হয়েছে। আমাকে সে যতই বিঁধছে, আমি ততই সুখের আবেশে মৃত্যুকে কামনা করছি কাঙ্খিত শরীরের মত। 


আকছাড় কত কথা বিনবিনিয়ে ওঠে, কিছু চুমুর মত ঠোঁটে জাপটে থাকে আবার কিছু বুজকুরি দিয়ে হারিয়ে যায়-
সেদিন মাধুকরী করে কিছু বানী এনেছিলেম, ইচ্ছে ছিল তাকে দিয়ে আমার ভাঙা দেউলে আলপোনা দেব। তা হল না...কারন ভালবাসলে কৈফিয়ত দিতে দিতে জান জেরবার হয়।
সে জিজ্ঞেস করলে -"এত টান কিসের?"
আমি বললেম- "ভালবাসার।"
সে আবার জানতে চাইলে-" প্রেম করিস !!!"
আমি বলেছি-"শুধু ভালবাসি।"
প্রেম না করেও যে ভালবাসা যায় তা বুঝি আমার নাম না জানা সেই বঁধূয়ার মনে ধরলো না। সে আবার বলল - "কেন প্রেম করিস না।"
বলেছিলাম যে আর ওর কাছে কিছু চাইবার নেই আমার... বলে চোখ সরিয়ে নিয়েছিলাম। ও বোঝেনি,যেমন আগেও বুঝত না। 


আচ্ছা, সত্যি কি কিছুই চাই না। এই যে সময়ের থেমে আসার শব্দ শুনতে পাচ্ছি, তার মধ্যে মন কি একবারও চায়নি এই সময় আমার দপদপ করা মাথায়, জ্বরে নুঁইয়ে পড়া দেহে সে এসে একবার, শুধু একটিবারের জন্য, হাত রাখুক। এও ত' প্রতিদানে চাওয়ার মতই। তবে আমিও দ্বিচারী।



আমার এখন জানলার দিকে মুখ। আকাশে ভাসছে শঙ্খচিল। ডানায় আগুনের শিখা। প্রথম আলোয় যা ছিল নিতান্তই দুধ সফেন ভালবাসা, এখন ক্রমাগত ঘঁসা মাজায় সেও অগ্নিগর্ভ প্রেম হয়েছে। হতভাগ্য নিজেও মরবে আর ভাসার আনন্দকেও মারবে।



বিশ্বাস কর আমি তোর কাছে একঘেঁয়ে হতে চাইনে, আর এই না চাওয়াটাই আমাকে প্রেমিক হওয়া থেকে নিরত রখেছে। 
আর তাই বোধহয় সপ্তাশ্বের গনগনে আঁচেও আমি অশুদ্ধই থেকে যাই।