2

গল্প - মুগ্ধ মজুমদার

Posted in






















‌১.

‌যবনিকা পতন রাতেই ঘটেছিলো। এখন মৃত দেহের চারপাশ ভিড় করে রয়েছে নগরের লোকজন, গণ্যমান্য। মৃতের পাশে হাপিত্যেশ করে বিশ্রী একটা ভাঙা সুরে কাঁদছে মৃতের মা। একটা সাদা চাদরে মৃত দেহখানি আবৃত। মুখটুকু সামান্য খোলা। বিষের বেদনায় নীলচে হয়ে গিয়েছে মৃতের ঠোঁট, চোখের পাতা। মৃতের বাবা চুপ করে দাঁড়িয়ে। কিন্তু বেণেদের ভিড় বাড়ছে। সকলেই মৃতের বাবাকে একবার দেখতে চায়। কেউ উঁকি দিতে চাইছে ভিড়ের ফাঁক দিয়ে। এক পড়শি বণিক সর্দপী চাঁদ বণিকের ফ্যাকাশে মুখ দেখে আগামী দিনের ব্যবসার ছক কষছিলো। চাঁদের অহং বনাম শব দর্শন এই নিয়ে টানাপোড়েন।

‌২.

ভোরের কাঁচা সূর্য গড়িয়ে যাচ্ছে ডাহিনে। নিশ্চিদ্র বাসর ঘরের মেঝেতে হাঁটু গেড়ে বসে রয়েছে মৃতের স্ত্রী। বাসরের যুথি গন্ধ তখনও তার গা থেকে মুছে যায়নি। চোখে কাজলের দাগ এখনও সবটা মুছে যায়নি। জাফরান রঙের শাড়ির আঁচল লুটিয়ে পড়েছে মাটিতে। দরজার কাছে দাঁড়িয়ে নগরের স্ত্রী মেয়েরা। একটা ফিস ফিস শব্দ ভেসে আসছে। কেউ মৃতের স্ত্রীর গায়ের গয়না গুনছিলও। কয়েকজন মহিলা কানাকানি করছিলো পরিবারের অলক্ষ্মীপণা বলতে ঠিক কি বোঝায়! এদের মাথার আলোছায়া ঘুলঘুলির ফাঁক দিয়ে রোদের কিরণ এসে পড়ছে বেহুলার সিঁথিতে। আর পড়ছিলো বাসর ঘরের বিষ রঙা নীলাভ চিত্রিত দেওয়ালের গায়ে৷ ঘরের এক কোণে জটলা করে দাঁড়িয়ে তার ছয়জন বিধবা জা। ছোটো করে চুল কাটা তাদের। বয়স অল্প। তবু তোবড়ানো কঠিন চোয়াল দেখলে বোঝার উপায় নেই। অনেকটা আখের ছিবড়ের মতো। সাদা রঙের থানের মধ্যে কাউকে আর আলাদা করা যায় না। তাদের কেউ কেউ বাঁকা হাসি ভাজছিলো। কারও মুখ পাথরের মতো আড়ষ্ট।

৩.

বাইরে কান্নার রোল ক্রমাগত। মৃতের চারপাশে ভিড় আরও বাড়ছে। কলা গাছের সালংকৃত ভেলাটি প্রায় বাঁধা হয়ে গিয়েছে। বেহুলা বাসর ঘর থেকে বেরিয়ে আসছে বাইরে মৃতের দিকে। আলতা ছোপানো পা দুটো কেউ যেন কামড়ে ধরছে তলা থেকে। কিন্তু মৃতের দিকে এগোনোর আগেই ছোবল খায়। একটা নয় অনেক। সাপের নয়, মানুষের দৃষ্টির। তীব্র ঘৃণা আর শ্লেষ মেশানো সে দৃষ্টি। বিয়ের রাতে যে স্ত্রী স্বামীকে খেয়ে নেয় সে কি কালনাগের চেয়ে কম বিষাক্ত?

৪.

এই অচেনা নগরে প্রায় সকলেই অজানা বেহুলার।

তবু এই নবাগত আসামীকে শাস্তি দিতে যেন তৈরি নগরবাসী। কী শাস্তি পাবে বেহুলা?


কলার মান্দাস প্রায় প্রস্তুত।

কাছেই গাঙুরের স্রোত। দূরে বয়ে চলেছে সে। কোথায় তার গন্তব্য তা কারও জানা নেই...

2 comments:

  1. চেনা গল্প তবু ভাল লাগল

    ReplyDelete