Next
Previous
0

গল্প - বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়

Posted in






সে বালিকা না কিশোরী সে নিজেই জানে না। অট্টালিকার প্রাচুর্য তাকে টানে না। কিন্তু এই হর্ম্যের রহস্য তাকে আকর্ষণ করে।কেন করে সে বোঝেনা।
এই যে পাখিটি বারান্দায় উড়ে এসে জুড়ে বসল তার সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছে হয়... তার গায়ে এত রঙের বাহার।সে এগিয়ে যায়।তার কৌতুহল আন্তরিক। পাখি তাকে বিশ্বাস করেনা।সে একটা বিচিত্র শব্দ করে উড়ে যায়। সকালের অপরূপ সৌন্দর্য ছড়িয়ে পড়েছে চারপাশে। উদ্যান পরিপাটি। তার চোখে মুখে মৃদু আনন্দ ও বিস্ময়।সে এখন কী করে? প্রত্যেক নারী কি এই সংশয়ে ভোগে? সদ্য বালিকার সব প্রশ্নের উত্তর হয়না।
সে নিজের দিকে তাকিয়ে বিস্মিত হয়। তৎক্ষণাৎ ছুটে গিয়ে নিজের কক্ষে দর্পণে নিজেকে খুঁটিয়ে দেখতে থাকে।তার চোখ এতো গভীর আর টানা টানা? ভুরু আর চোখের পাতা এতো সুন্দর?এতো দীর্ঘ আর কালো তার চুলের ঐশ্বর্য?সে এখনই ৫ ফুট ৫, আরও লম্বা হবে?,,,তার আঙুল, তার নখ,তার কটিদেশ, তার পায়ের গড়ন এ সব কবে হল? কীভাবে হল?সে রঙ লাগায় না। তবু তার ওষ্ঠ, তার হাত ও পায়ের নখগুলো এতো উজ্জ্বল।সদ্য অঙ্কুরোদগম হয়েছে তার। ব্যথা লাগে কোথাও তবু সে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সেই সামান্য উদ্ভাসিত মুকুলের দিকে।যেন এক মহা সমারোহে প্রকৃতির মতো সেও বেড়ে উঠছে। শুধু সেই অদৃশ্য জায়ফলটিকে সে চেনেনা।
তার একটাই অভাব যে তার কোনো অভাব নেই।
স্নানের ঘর থেকে পরিচ্ছন্ন হয়ে আসার পর সে‌ কিছুক্ষণের জন্য একাকীত্ব হারিয়ে ফেলবে। এটাই এ বাড়ির নিয়ম। প্রাতরাশ টেবিলে সাজিয়ে রাখা টাটকা ফল,ফলের রস,দুধ, ডিমের পোচ, ওটস ইত্যাদির মধ্যে সে পছন্দ মতো খাবার বেছে নিতে পারে। সেই স্বাধীনতা সে অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে দুবছর আগে।
তার মা একজন গরিষ্ঠ সমাজ কর্মী.. ব্যস্ত মানুষ।
তার বাবা এই উপনগরীর সম্মানীয় আইনজীবী।সে একমাত্র সন্তান। পৈতৃক সূত্রে অর্জিত এই সুরম্য অট্টালিকা রক্ষা করতে লোকবল ও অর্থ লাগে।যা তাদের আছে।
সে এখানকার সবচেয়ে অভিজাত বালিকা বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে।
গাড়িতে করে ইস্কুলে যাওয়া আসার ফাঁকে সে দেখতে পায় পায়ে হেঁটে, সাইকেল রিক্সায় , ভ্যানে চেপে মেয়েরা ইস্কুলে যায়। তাদের বিনুনির মধ্যে খেলা করে হালকা রোদ্দুর,পাশ থেকে উড়ে আসে পতঙ্গের মৃদু গুঞ্জন।দূর থেকে এসব দেখতে ভালোই লাগে।
এই বালিকার কোনো নাম নেই? অবশ্যই আছে। নামে কি আসে যায়?

তার ক্লাসে মহিমা নামে একটি বালিকা আছে। তথাকথিত সুন্দরী নয়। কিন্তু পড়াশোনায় তুখোড়।সে অবলীলায় প্রথম হয় পরীক্ষায়.. অবহেলায় সব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে।
মহিমার সঙ্গে তার সহজ সম্পর্ক। অথচ কোথায় একটা দূরত্ব আছে।