গল্প - সোমা দত্ত
Posted in গল্পওঁ জবাকুসুম সঙ্কাশং কাশ্যপেয়ং মহাদ্যুতিং...মা সূর্যমন্ত্র জপ করছেন বারান্দায় পূর্বদিক লক্ষ করে। এই যে শুরু হল মোটামুটি দেড় দুঘণ্টা স্বর্গ, মর্ত্যের সব দেব দেবীকে মা জাগ্রত করেই ছাড়বেন। ছোটবেলা থেকেই মা ভীষণরকমের পূজাআচার প্রিয় মানুষ। এখন তো আরও বেড়েছে। তবে বহুদিন পরে দেশে ফিরে মায়ের এই মন্ত্রপাঠ শুনতে বেশ লাগছে সোমালির। পুরানো সব অভ্যেসই এখন প্রিয় মনে হয়। আসলে প্রায় ছ’বছর পর দেশে ফেরার আনন্দটা একটু একটু করে চেখে দেখার মতো উপভোগ করছিল সে। চাইছিল না এক আধ দিনের মধ্যে এটা ফুরিয়ে যাক। হোম সিকনেস ওর বেশ ভালো লাগে। ঘরের মেঝেতে পড়ে থেকে দুপুর রাত কাটিয়ে দিতে অদ্ভুত একটা অলস ভালোলাগা আচ্ছন্ন করে তোলে। এতগুলো দিন বোস্টনের বাদামী মাটিতে কীভাবে যে সে টিকে ছিল কে জানে! জীবনটা যেন বহু ব্যবহৃত বাইনারি নম্বরে আটকে রেখেছিল একরকম জোর করেই। প্রজেক্ট শেষ হওয়ার অপেক্ষামাত্র। দেশে ফিরে করার মতো বহু কাজ আছে। একটা অভিজ্ঞতার দরকার ছিল এই যা। ছ’বছর পর সেই পুরোন বাড়ি, রং চটা দেওয়াল, দোতলার পড়ার ঘরের টেবিলে সকালের রোদের গন্ধ, মায়ের মরিচ ফোঁড়ন দেওয়ার গন্ধ, মন্ত্রপাঠ, গীতাপাঠের আসর জমানো, বাবার খালি গলায় শ্যামাসঙ্গীত, অতুলপ্রসাদ গাওয়া, উচ্চকণ্ঠে কবিতা আবৃত্তি করা, ঘরের দেওয়াল জোড়া দশ বছর আগের পোস্টারগুলোয় বব ডিলান, চ্যাপলিন, ধোনি সবাই জড়িয়ে ধরেছে সোমালিকে। এমনকি সকালের লুচি তরকারির হিং, ছাদের রোদে মজা আমের আচার, দুপুরে ধনেপাতা দিয়ে পাতলা মাছের ঝোল, পাড়ার বুধোদার চায়ের দোকানে জমায়েত আড্ডায় ভাঁড়ের চা সবকিছু আষ্টেপৃষ্ঠে সোমালিকে এবার চেপে ধরে প্রতিনিয়ত বলে চলেছে, যেতে নাহি দিব।
বাবার কাছে এখনো বেশ কিছু ছাত্রছাত্রী পড়তে আসে। রিটায়ার করার পর বাবা বলেছিলেন যে আর টিউশন করবেন না, মাকে দেবতার আসন থেকে নড়ানো সম্ভব নয় তাই তিনি একাই ঘুরে বেড়াবেন, বইপত্র পড়বেন ইত্যাদি। কিন্তু পড়ানো থেকে পুরোপুরি বেরতে পারেননি ছাত্র ছাত্রীদের চাপে। সোমালির মনে হয় বাবা এতেই খুশি আছেন। পুরোপুরি পড়ানো ছেড়ে দিলে বাবা হয়তো এতটা ভালো থাকতেন না। মায়ের সঙ্গে বাবার জীবনশৈলীর পার্থক্য চিরকালই ছিল। ফলে বাবার শিল্পজীবনে মায়ের ভূমিকা অনুষঙ্গের হয়ে ওঠেনি কখনো, তাঁর ছিল শুধুমাত্র যোগানের ভূমিকা। তবুও তাঁদের সংসারজীবনে কোন ছেদ পড়েনি কখনো। দিব্যি দুমুখো গতিধারার জীবনে দুজনেই নিজের নিজের পরিসরে পরিতৃপ্ত। তবে বাবার উৎপটাং স্বভাবের জন্য মাকে ভুগতে হত বরাবর। বেশি বাড়াবাড়ি দেখলে গজগজ করতে করতে মা, ঠাকুরঘরে ঢুকে খিল লাগাতেন। তখন বাবা কদিন আবার নিয়মে বাধ্য ছেলের মতো। কিন্তু এবার ফিরে এসে থেকে সোমালি মাকে আগের মতো পেল না। যেন খুব গম্ভীর। বেশিরভাগ সময় চুপচাপ নয়তো বিরক্ত। সোমালির ওদেশে থাকাকালীন ভিডিও কলে যখন কথা হতো তখন মায়ের এই পরিবর্তনটা বড় বেশি বোঝা যেত না। তবে শেষের দিকে মা বারবার বলতেন তুই ফিরলে বাঁচি। আমি একা একা আর পারছি না লড়তে। সোমালি বলত কেন বাবা রয়েছে তো। যখন ছিলাম তখন তো দুজনে মিলে গলা ধরে আমাকে শাসন করতে, দুজনে এককাট্টা হয়ে আমাকে বোস্টন পাঠিয়ে ছেড়েছ। এখন আয় আয় করছ যে বড়! মা কিছু উত্তর করতেন না, হাসতেন আর বলতেন সে তো তোর ভালোর জন্যই বলেছি। এখন আমার ভালোর জন্য তোর অপেক্ষা করছি।
মায়ের সাথে বাবার খুব বেশি ঝগড়া ঝামেলা হতে কখনো দেখেনি সোমালি। কিন্তু এবার বাড়িতে ফিরে এসে পর্যন্ত দেখছে দুজনে কেমন যেন ছাড়া ছাড়া। কিরকম একটা ঠান্ডা পাহাড় যেন বেড়ে উঠেছে দুজনার মধ্যে। বিশেষ করে মা যেন ভীষণভাবে খাপছাড়া বোধ নিয়ে দিনগত পাপক্ষয় করছেন আজীবনের সংসারে। মাকে কয়েকবার প্রশ্ন করেও বিশেষ কিছু জানা গেল না। উত্তর দিলেন না, প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে অন্য কথায় নিয়ে গেলেন। শুধু একদিন রাতে শোওয়ার আগে চুল বেঁধে দিতে দিতে বললেন ক’দিন থাক না, নিজেই টের পাবি তোর বাবার কীর্তি।
মা চিরকাল এভাবেই কথা বলেন। বাবা হয়তো বাজার করতে বেরিয়ে বেলা বারোটার সময় একরাশ কুচো চিংড়ি এনে হাজির করল, মা রেগে কাঁই হয়ে যেতেন। বলতেন, দেখ তোর বাবার কাণ্ড। বেলা বারোটার সময় রসিকতা বয়ে এনেছেন ব্যাগ ভরে। এবার যাও বাপে মেয়েতে নিজে কুটে, রান্না করে খাও। শেষের লাইনে একটা তীব্র টান দিয়ে ঝামটা মেরে চলে যেতেন। কিন্তু পরে আবার যথারীতি ওই চিংড়ি দিয়ে এঁচোড় রান্না করে পাত পেরে খেতেও দিতেন। কিন্তু এবার মায়ের মেজাজে সেই ঝামটা ছিল না বরং কেমন একটা হতাশা যেন। চেহারাও খুব শীর্ণ হয়েছে মায়ের, মুখে চোখে ক্লান্তি।
আর কয়েকদিন পরে সোমালি নিজেই টের পেল মায়ের হতাশার উৎসমুখ। কিন্তু শুরুতে ঠিক ঠাহর পেল না। বাবার সাথে যেন যায় না বিষয়টা কোনভাবেই। বাবার এক ছাত্রী, ঋষিতা, এম এ দ্বিতীয়বর্ষ তাকে নিয়েই যাবতীয় জল ঘোলা। বাকিদের সাথেই সে আসে। কিন্তু বাকিরা চলে যাওয়ার পরেও সে রয়ে যায় এবং বাবা ঘরের দরজা বন্ধ করে দেন। সপ্তাহে তিন চারদিন আসে মেয়েটি একইভাবে। মা সেসময় পুজোর ঘরে সেঁধিয়ে যান। আগে এই পুজো আচার ইত্যাদির জন্য বরাদ্দ ছিল দু-তিন ঘণ্টা। এখন সেটা আরও বেড়েছে মায়ের। কেউ কিছু না বললেও সোমালি বুঝে যায় মা নিস্তব্ধ ইঙ্গিতে কোনদিকে ওর দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু তবুও খুব কিছু বড় একটা হতাশাব্যঞ্জক ঘটনা বলে এটাকে মনে হয় না সোমালির। হয়তো কোন কারণ থাকবে। মেয়েটি খুব ভালো গান গায়। মাঝে মধ্যে ওর গান শোনা যায় ঘর থেকে। হয়ত এই গান বাজনার যোগাযোগই ছাত্র ও শিক্ষকের মধ্যে এক ব্যক্তিগত মেধার সেতু গড়ে তুলেছে। একদিন বাবা নিজেই ডেকে আলাপ করিয়ে দিলেন মেয়েটির সঙ্গে। ঝকঝকে উজ্জ্বল চেহারার ঋষিতা। খুব ধীর, শান্ত, স্বল্পবাক। কী অপূর্ব গানের গলা। সোমালি মুগ্ধ না হয়ে পারে না। কিছুক্ষণ সাধারণ কিছু কথাবার্তা হল মেয়েটির সঙ্গে। কোথায় থাকো, কী কর ইত্যাদি। মেয়েটির মা বাবা কেউ নেই। একটি অনাথ আশ্রমে বড় হয়েছে তবে এখন একটি লেডিস হোস্টেলে থাকে। মায়া হয় সোমালির। অনাথ আশ্রমে ছোটবেলা কাটানোর পর কেউ এত সুন্দর থাকে! সেদিন মেয়েটি খুব সুন্দর একটি জামদানি শাড়ি পরে এসেছিল। সোমালি বলল তোমার শাড়ির রং খুব সুন্দর, তোমাকে ভারি মানিয়েছে। মেয়েটি সামান্য হাসল। বাবা বলে উঠল দেখলে তুমি কিন্তু এই শাড়িটা নিতে চাইছিলে না, আমি জোর করলাম তাই নিলে। মেয়েটি ঈষৎ অপ্রস্তুত হয়ে বাবার দিকে তাকাল। যেন বলতে চাইল এসব কথা এখন কেন! বাবাও সেই কথা পড়ে ফেলল। বাবা খুব সাবলীলভাবে বলে উঠল আরে শাড়ি জামাকাপড় কেনার ব্যাপারে আমি আর সমু সবসময় একমতের। ওর মা কোনদিন আমাদের সাথে কেনাকাটায় যোগ দিত না। কেনাকাটা মানেই আমার আর সমুর জয়েন্ট ভেঞ্চার। সোমালি টের পেল সম্পর্কের যে নিবিড় ঘনিষ্ঠতা বাবা অস্বীকার করতে চাইছেন না, ঋষিতা কিন্তু তাতে স্বচ্ছন্দ হতে পারছে না সোমালির উপস্থিতিতে। শুধু এটুকু বাদে অন্য আর কিছুই সোমালির তেমন খারাপ লাগল না। এমনকি বাবার ঋষিতার সাথে কেনাকাটা করতে যাওয়ার বিষয়টিও না।
এরপর মা নিজেকে আর আটকে রাখতে পারলেন না সোমালির কাছে। অঝোরে ভেঙে পড়লেন কান্নায়। তোর বাবা বুড়ো বয়সের একী ভীমরতি! ইউনিভার্সিটির সব ছেলেপিলে সকলে জানে সবকিছু। সবাই হাসে। কোনো লজ্জাও নেই লোকটার। মেয়েটাকে নিয়ে সর্বত্র ঘুরে বেড়ায়। ঘরে এনে দরজা বন্ধ করে। ছি ছি ছি এত সম্মান নিয়ে সারাটা জীবন কলেজ পিটিয়ে শেষ বয়সে এসে এই নোংরামি। তুই এটা বন্ধ কর, কিছু একটা করে এসব বন্ধ কর মা। নাহলে আমি আর বাঁচব না। মাকে শান্ত করার চেষ্টা করে সোমালি, পারে না।
দেশে থাকা গেলেও বাড়ির ভাত আর বেশিদিন বরাদ্দ ছিল না সোমালির। বেঙ্গালুরুতে একটা ভাল কাজের সুযোগ পাওয়া গেছে। এখানেই কিছু ভালো বন্দোবস্ত হয়ে গেলে অন্তত দেশ ছেড়ে যেতে হবে না তাকে। সুতরাং কাজটা নিয়ে নেওয়াই যুক্তিযুক্ত। কিন্তু যাওয়ার আগে মা বাবার সমস্যাটার একটা সমাধান করে যেতে পারলে ভাল হত। বাবার সাথে ইতিমধ্যে অনেক আড্ডা হয়েছে। দু-এক সময় ঋষিতাও যোগ দিয়েছে তবে সেই আড্ডাগুলো বাড়ির বাইরে। ঘরে মা যদি দেখে সোমালিও এদের সাথে ভিড়েছে তবে সমস্যা আরও বেড়ে যাবে। ঋষিতাও এখন বেশ সহজ হয়ে উঠেছে তার সঙ্গে। সবথেকে বড় কথা বাবা ভীষণ উচ্ছ্বল থাকে ওর উপস্থিতিতে। একদিন রাতে ছাদে গল্প করতে করতে সোমালি সরাসরি প্রশ্ন করে বাবাকে ঋষিতার সাথে ওর সম্পর্কের বিষয়ে। বাবার কিন্তু কোন জড়তা নেই। স্পষ্ট করে বললেন, আমি ওকে বড় ভালবাসি রে। তুই নিশ্চই বুঝেছিস সেটা। আমারও স্বীকার করতে কোন লজ্জা নেই। দেখেছিস তো তুই ওকে। অমন মেয়েকে ভাল না বেসে থাকা যায় তুই বল! বাবার চোখে চোখ রাখে সোমালি। আর ও? ও বাসে তোমাকে? বাবা একটু হেসে বলে, মনে তো হয় বাসে, কিন্তু যদি নাও বাসত তাতে কী যায় আসে? আমি তো বাসি রে। বাবা, সামান্য গলা তুলল সোমালি। তুমি বলতে চাও একটা এম এ সেকেন্ড ইয়ারের মেয়ে একজন রিটায়ার্ড প্রফেসরকে ভালোবাসে! এই সম্পর্ক কোথায় নিয়ে যাবে ওকে? এটা হতে পারে? বাবা একটু এগিয়ে এসে সোমালির মাথায় হাত রাখেন, সোমালি হাতটা দ্রুত সরিয়ে দেয়। কথা ঘুরিও না বাবা। স্পষ্ট করে বল। তুমি জান তোমার এসব অদ্ভুত ধরনের খেয়াল মাকে কী অসম্ভব কষ্ট দেয়! তুমি সবসময় নিজের কথাটাই শুধু কেন ভাব বাবা! একইরকম শান্ত সুরে বাবা বলে, আমার ভগবান নেই বলে। তোর মায়ের তো ভগবান আছেন রে! বলে নির্বিকার হাসতে থাকে। ঠিক বিশ্বাস হয় না। বাবাকে আজীবন রোমান্টিক দেখেছে সোমালি কিন্তু প্রেম করতে দেখেনি। গলা ছেড়ে গান করেছেন, কবিতা পড়েছেন এখানে ওখানে ঘুরতে চলে গেছেন হঠাৎ দুমদাম কাউকে কিছু না বলে। আরও অনেক উদ্ভট জ্বালাতনে কাণ্ড করেছেন বাবা যা সোমালির মজা লেগেছে আর মা গজগজ করতে করতে ঠাকুর ঘরে ঢুকে পড়েছেন।
সোমালি আবার বলে, —কেন বাবা কেন? কী দরকার ছিল এসবের? বেশ তো ছিলে। এক কাজ কর, তোমরা দুজনেই আমার সাথে বেঙ্গালুরুতে শিফট করো। করবে তো? বাবা মাথা নেড়ে হ্যাঁ করেন। সোমালি আবার অবাক হয়। এত সহজে রাজি হয়ে গেল বাবা? তাহলে? সে আবার বলে আমি কিন্তু ইয়ার্কি করছি না। সত্যি সত্যি বলছি। বাবা বলে, আমিও তো ইয়ার্কি করছি না তোর সাথে। তুই চাইলে আমি যাব বেঙ্গালুরু তোর মাকে নিয়ে। কিন্তু তাতে তোর মায়ের সমস্যার সমাধান হবে? ঋষিতা তো যেখানেই যাই সেখানেই পৌঁছে যেতে পারবে যখন মনে হবে। ওরে একটা অনাথ মেয়ে, অত সুন্দর গান গায়, অত সুন্দর লেখে তাকে নিয়ে তোদের এত আপত্তি কেন? ও ভাল আছে, আমিও খুব ভাল আছি ওর সঙ্গে। কোনদিন যদি এমন কাউকে খুঁজে পাই যে ওকে আমার মতো ভালবাসতে পারবে তবে ওকে ওর মাধবের হাতে তুলে দিয়ে আমি নিশ্চিন্ত হব। ততদিন ওকে তো আগলে রাখতে হবেই রে মা। —আর যদি তেমন কাউকে খুঁজে না পাওয়া যায়? বাবা আকাশের দিকে তাকালেন, তারপর বললেন ঠিক পাব। দেখিস। —আর মা যে শুকিয়ে অর্ধেক হয়ে যাচ্ছে তার কী হবে? ও তোর মায়ের অভ্যেস আছে আমার উৎপাত সহ্য করে চলার। কতবার ও এমন শুকাল আবার ঠিক হল। -আচ্ছা একটা কথা বল ঋষিতা আসলে দরজা বন্ধ কর কেন? হো হো করে হেসে ওঠে বাবা। তারপর থামেন, —বেশ করি। দরজা বন্ধ না করলে তোর মা মাঝে মধ্যে এসে এসে উঁকি মারে! ওভাবে গান শোনা যায় না কোন আলোচনা হয়? —এটা মাকে বলেছ কখনো? —তুই বলতে পারবি? পেরেছিলিস? যখন অভিক পড়াতে আসত তোকে ক্লাস ইলেভেনে আর তোর মা দরজার গোড়ায় গিয়ে মোড়া পেতে বসে থাকত?
সোমালির আর কিছু বলার থাকে না। শুধু বাবাকে জানায় মাকে নিয়ে যাবে ওর সঙ্গে। অন্তত কিছুদিন। একটা বদল দরকার মায়ের। মাকেও জানায় সোমালি। ঋষিতার বিষয় নিয়ে মাকে বোঝানো যাবে না। বাবার দর্শন মায়ের সংস্কারকে স্যাটিসফাই করতে পারবে না কোনদিন। সুতরাং বলে লাভ নেই। বরং সে মাকে বোঝায় বাবাকে কিছুদিন একা ছেড়ে দাও। বুঝুক একটু কত ধানে কত চাল। অন্তত তোমার অবস্থানটা তো বুঝতে দাও। সেইমতোই প্যাকিং হল জিনিসপত্র। মায়ের তো শুধু দেবী দেবতার জন্যই একটা পুরো ব্যাগ। সে ব্যাগ আবার মাটিতে রাখা যাবে নাকো। এছাড়া ওষুধের প্যাঁটরা এই ওই হাজার ফিরিস্তি। সবই গোছান হল বেশ কিছুদিন ধরে। শুধু যাবার আগের দিন মহিলা বিগড়ে বসল। তিনি যাবেন না। রাধামাধব নাকি স্বপ্নে দেখা দিয়ে বলেছেন এ বাড়ি ছেড়ে না বেরোতে। বেরলে নাকি সংসারে ভাঙন অনিবার্য!
—বোঝ!