ধারাবাহিক - রঞ্জন রায়
Posted in ধারাবাহিকপঞ্চম পর্ব
সাতদিন পরে আমরা বিল্ডারকে করপোরেশনের দেয়া শো-কজের কপি পেলাম।
তাতে স্পষ্ট বলা হয়েছে যে কেন ওর লাইসেন্স বাতিল করে জামানতী একলক্ষটাকা বাজেয়াপ্ত করা হবে না এবং বন্ধকী ফ্ল্যাটগুলো নীলাম করে সেই টাকায় অসমাপ্ত কাজগুলো পূর্ণ করা হবে না তা ' বিল্ডার জানাক।
অ্যাট লাস্ট!!
অ্যাদ্দিনে কিছু একটা হল। হরিদাস পাল ঘরের মধ্যে কোমর দুলিয়ে একপাক নেচে নিল।
পরের দিন রেণুবালা ও রত্না রায় আবার বিলাসপুরে গেল। কারণ ফোনে সিভিল লাইনস্ থানার দারোগা জানিয়েছে যে ও কাউকে অ্যারেস্ট করার কোন আদেশ পায়নি।
--- কিন্তু এস পি সাহেব যে বলেছিলেন আজকে ওরা ধারা ৩৯৫এ অ্যারেস্ট হবে?
--- ম্যাডামজী, অ্যারেস্ট তো উনি নিজে হাতে করবেন না, এই শর্মাকেই করতে বলবেন। তা যখন বলেন নি তার মানে আপাতত: কেউ অ্যারেস্ট হচ্ছে না।
ওরা তড়িঘড়ি এস পি অফিস গেল।
রেণু রত্নাকে বল্লো-- ম্যাডাম,দাল মেঁ কুছ কালা হ্যায়। আমি একাই ভেতরে যাচ্ছি, আপনি অটোতে বসে থাকুন। যদি আমাকে অ্যারেস্ট করে ( হরিজন অত্যাচার অধিনিয়মই হোক, বা আর্মস্ অ্যাক্ট) আপনি সোজা অটো করে চম্পট দিয়ে উকিলের কাছে যাবেন ও রায়পুর পুলিস হেড কোয়ার্টারে ফোন করে ইন্টার্ভেন করতে বলবেন।
রেণুবালা রুরাল এস পি মি: ধ্রুবের অফিসে ঢুকতে গিয়ে স্ট্যাচু হয়ে গেল। ওনার সামনে দুই চেয়ারে সমাসীন দুই মহিলা---বিল্ডরের স্ত্রী শিবানী শর্মা ও গুড্ডি সেনগুপ্ত। গত ১৯ সেপ্টেম্বরের রাত্তিরে হামলার দুই প্রধান হোতা। তিনমাথা এক হয়ে গুজগুক ফুসফুস করছে।
মি: ধ্রুব বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকা রেণুবালাকে দেখতে পেয়ে ওদের কিছু একটা বল্লেন। ওরা চমকে উঠে পেছন ফিরে ওকে দেখতে পেয়ে পড়িমরি করে পালালো। কোর্ট ইয়ার্ডে নেমে একটা স্কুটি তে উঠে স্টার্ট করতে গিয়ে দেখলো পাশের দাঁড়িয়ে থাকা অটো থেকে রত্না রায় ওদের একদৃষ্টিতে দেখছে।
ওরা পালালো আর রত্না নেমে বারান্দায় উঠে মি: ধ্রুবের অফিসে গিয়ে দেখলো রেণু প্রায় ঝগড় জুড়েছে।
-- এটা কি হলো? ওই পালের গোদাদুটোকে আপনি অ্যারেস্ট করলেন না? যেতে দিলেন?
---- ম্যাডাম, পুলিশের কাজে হস্তক্ষেপ করবেন না। ওদের অ্যারেস্ট ওয়ারেন্ট ফিল আপ করা হচ্ছে, আঠেরো জনেরই। সব কটা কে একসঙ্গে ধরবো। ওই দুজনকে বলেছি-- আমরা বিকেন পাঁচটায় পরিদর্শন ও পুছতাছ করতে বৈশালী প্রাইডে আসছি। আপনারা সবাইকে খবর করে হাজির করুন।
--- আপনি সেকশন ৩৯৫ কে খারিজ করছেন নাতো?
-- না, না,আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন, যখন বড়কর্তা বলেছেন!
ওরা ভারী মনে স্টেশনে ফিরে আসে। রঞ্জনকে ফোন করে। ইন্টারসিটিতে রওনা দিচ্ছি, ভাটাপাড়ায় পাঁচটায় পৌঁছবে। তুমি আজ এই ট্রেনে আমাদের সঙ্গেই রায়পুর ফিরে চলো।
ট্রেনে রত্না জানায়--- আরে, আজ আমি স্টেশনে জলের বোতল-বিস্কিট এইসব কিনছি। দেখি, সেনগুপ্ত পরিবার অনেকগুলো সুটকেস নিয়ে। মানে অনেকদিনের জন্যে পালাচ্ছে,-- রাউরকেল্লা নয় কোলকাতা।
আমি সোজা চেঁচালাম--- অ্যাই রেণু, সেনগুইপ্তরা মাঈ-পিল্লা পালাচ্ছে রে! শিগ্গির থানেদারকে ফোন কর। ব্যাস্, ওরা পড়িমরি করে মালপত্তর টানতে টানতে স্টেশনের বাইরে ছুট লাগালো।
এবার রেণু থানেদরকে ফোন লাগালো। পাঁচটা অনেকক্ষণ বেজে গেছে, ক'জনকে অ্যারেস্ট করেছেন?
--- অভী ভী মুঝে কুচ্ করনে কা আদেশ নহী মিলা।
পরের পরের দিন বিলাসপুরের পত্রিকাগুলোতে ছবি শুদ্ধ খবর বেরুলো। জনশুণ্য বৈশালী অ্যাপার্টমেন্ট। ঘরে ঘরে তালা। তিন গাড়ি পুলিশ আঠেরো জনকে অ্যারেস্ট করতে গিয়ে শূন্য পুরী দেখে খালি হাতে ফিরে এসেছে।
রেণু মহা খাপ্পা হয়ে ডিজিকে জানায় যে আপনার বিলাসপুরের পুলিশ ওদের আগে ভাগে খবর দিয়ে পলাতে দিয়েছে, বাকিটা নাটক।
মি: ধ্রুব রেণুকে বলেন-- প্লীজ, ম্যাডাম, আমার চাকরি খাবেন না। ভুল হয়ে গেছে। ভেবেছিলাম সবকটাকে একসঙ্গে তুলবো। আমার অফিস থেকেই লোয়ার লেভেলে কেউ খবরটা লীক করেছে। আমাদের হেল্প করুন। ওদের ফোন নম্বর বা মোবাইল নম্বর জানা থাকলে দিন। অটচল্লিশ ঘন্টার মধ্যে ওদের ধরছি, ডিজির স্পেশাল আদেশ।
রেণুবালা ও রত্না মিলে অন্তত: আটজনের মোবাইল ও ল্যান্ড ফোন নাম্বার এস পি অফিসে দিল। ওঁরা জানালেন-- আমরা গতরাত্তিরেও কয়েক জায়গায় রেইড্ করেছি। শিগ্গিরই ধরা পড়বে। কদিন পালিয়ে পালিয়ে থাকবে?
এই ভাবে দিনদশেক কাটলো। কেউ অ্যারেস্ট হল না। এস পি অফিস থেকে খবর এল যে পলাতকরা অ্যান্টিসিপেটরি বেইল এর জন্যে কোর্টে পিটিশন লাগিয়েছে। কোথায়? হাইকোর্টে না সেশন কোর্টে? খোঁজখবর নিয়ে জানা গেল যে সেশন কোর্টে ডিস্ট্রিক্ট জজ ম্যাডাম অনিতা ঝা'র কোর্টে।
রুরাল এস পি বল্লেন-- চিন্তা করবেন না। তিনদিন সময় নিয়েছি বেইল অপোজ করার পেপার তৈরি করে সরকারী উকিলকে দাঁড় করাতে। সোমবার আর্গুমেন্ট।
হরিদাস পালের উৎসাহে একজন মানবাধিকার কর্মীর চেনা মহিলা উকিলকে কনট্যাক্ট করা হল। তিনি জানালেন একটি কনফারেন্সে দিন তিনের জন্যে বাইরে আছেন, ওনার ভাই তদ্দিন দেখবে।
উৎসাহ নিয়ে সদলবলে ভাইয়ের বাড়ি বিলাসপুরে গিয়ে কেস বোঝালাম। ছেলেটি সব শুনে জ্বলজ্বলে চোখে তাকিয়ে বল্লো----আঠেরো জন অভিযুক্ত, ফাইভ এইটিন জ্যা--- ৯০০০০/- টাকা লাগবে!
--- সেকি? আমরা ওদের বেইল করাচ্ছি না, খারিজ করাতে চাই। তাহলে এত টাকা কেন লাগবে? কেস তো একটাই।
---- একই কথা। কয়েনের এদিক আর ওদিক। ঠিক আছে, চেনা সোর্সে এসেছেন-- পঞ্চাশ হাজারে হয়ে যাবে।
মুখ চূণ করে বেরিয়ে আসি।
সার্দানা বলে-- আরে, এতো জেতা কেস। ধারা ৩৯৫ এ সহজে প্রথমবারে বেইল হয় নাকি? ঠিক আছে, সরকারি উকিলের পাশে আমিও দাঁড়িয়ে আর্গুমেন্ট কোরবো, কালো কোট, টাই--সবই তৈরি আছে।
সোমবার আর্গুমেন্ট শুরু হল।
পুলিশের পাঠানো পেপার দেখে সার্দানার চক্ষু চড়কগাছ।
পেপার জুড়ে খালি ভাড়াটে রেণুবালার সন্দিগ্ধ চরিত্র- রাত্তিরে নানারকম লোক আসে---তাইনিয়ে বৈশালী প্রাইডের ফ্ল্যাটের লোকজন অসন্তুষ্ট-ফ্ল্যাট খালি করতে বলছিল--- এইসব সাতকাহন করে বলা। এও বলা যে অভিযুক্তরা কেউ প্রফেশনাল ক্রিমিন্যাল নয়, সব ছাপোষা গেরস্ত।
আর কি আশ্চর্য্য,ধারা ৩৯৫ নিয়ে একটি কথাও বলা হয়নি।
এতো পরোক্ষ ভাবে বেইলের পক্ষে ওকালতি করা!
সার্দানা আর সরকারি উকিল একটাই পয়েন্ট নিয়ে লড়ে গেল। যদি রেণুবালা কে নিয়ে অভিযুক্তদের বক্তব্য তর্কের খাতিরে সত্যি ধরে নিই, তাহলেই কি ওদের অধিকার জন্মায় মারপিট করে ঘর খালি করানোর? নিজের হাতে কানুন তুলে নেয়ার অধিকার কারো আছে কি না?
সার্দানা একটু রেগে গিয়ে বল্লো-- যার সম্বন্ধে "" মেয়েটি" " করে বলা হচ্ছে তিনি আমার স্ত্রী, বছর চল্লিশের এক মহিলা, দুই সন্তানের মা। বড়জন কলেজে পড়ছে। আর ""সন্দিগ্ধ"" চরিত্র বলতে কী বলা হচ্ছে স্পষ্ট করে ডিফাইন করা হোক।
মহিলা জজ হেসে বল্লেন---আপনি রেগে যাচ্ছেন কেন? আপনার স্ত্রীকে ইয়ং বলা হচ্ছে , আপনার তো খুশি হওয়ার কথা।
বিরোধী পক্ষের বক্তব্য হল-- এই মহিলা হরিয়ানা থেকে এসে চাত্তিশগড়ের অসহায় গরীব নিরক্ষর লোকদের ঠকাচ্ছে, এর আগে একটি চিটিং কেসে ১৫ দিন বিলাসপুরের ব্জেলে ছিল, অনেকগুলো মামলা আছে এনার নামে। ধারা ৩৯৫ এর কেসটা সাজানো, রায়পুরের পুলিশের বড়কত্তাদের চাপে, ওদের কারো কারো সঙ্গে এর মধুর সম্বন্ধ রয়েষে যে!
অনীতা ঝা রায় দিতে তিনদিন সময় নিলেন।
রায় বেরুলো, সবই বেইল পেয়ে গে্ছ। জাজ বল্লেন--- পুলিশ যখন এফ আই আর এর ছমাস পরেও এদের গ্রেফতার করেনি, তাহলে আজ ওদের জামানতে ছাড়তে অসুবিধে কোথায়? স্পষ্টত:ই এরা কোন "খত্রা" নয়, চাপোষা লোকজন।
আর কি আশ্চর্য্য? এরা জামানত পেল ৩৯৫ এ নয়, ৪৫২ ও অন্যান্য ধারায়। কারণ পুলিশ কেস ডাইরি জম করার সময় ধারা বদলে দিয়েছে।
বিকেলের দিকে ফোনে এইসব খবর শুনে হরিদাস পাল কলিগদের বল্লো--- আজ আমি ইন্টরসিটি ধরে পাঁচটায় রওনা দেব। ঐ গাড়িতেই আমার স্ত্রী ও রেণুবালা রায়পুর ফিরছে। একই কোচে বসে ডিটেইলস্ শুনতে শুনতে যাবো।
কিন্তু হরিদাস পাল ওভারব্রীজ থেকে নামার সময় দেখতে পেলো -- ট্রেন প্ল্যাটফর্ম থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে। এখন একঘন্টা পরের গাড়ির অপেক্ষায় বেঞ্চিতে বসে থাক।
সময় কাটাতে এদিক- ওদিক তাকাই। আজকে কিস্যু ভাল লাগছে না। সিঁড়ির পাশে একটি চালিয়াৎ দেখতে ছেলে একটি মেয়েকে জাহাজ দেখাচ্চে। অল্পবয়েসী মেয়েটির চোখে জাহাজ দেখার মুগ্ধতা।
অন্যদিকে এক পাগল গায়ে ওভারকোট, চেঁচিয়ে হাত নেড়ে নেড়ে হিন্দি ফিল্মের গান গাইতে গাইতে এ মুড়ো থেকে ও মুড়ো মার্চ করে বেড়াচ্ছে। এই শোনা যাচ্ছে--ইয়ে যো মুহব্বত হ্যায়, পরক্ষণেই---জীনা ইঁহা, মরনা ইঁহা।
লিপ্স্টিক আর জরির আঁচল দুলিয়ে হাসিমুখে ঘুরে বেড়াচ্ছে ভাটাপাড়ার বাসিন্দে দুই বৃহন্নলা--- অন্নু আর রাজা। অন্নু'র আবার হরিদাস পালের ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট আছে।
অন্যদিন সে মুগ্ধচোখে দেখে সব যাত্রীদের চোখমুখ। কিন্নর দের দেখে মহিলারা হাসি চাপতে পারেন না। ওদের উদগ্র বুক, খোলা পিঠ, আঁচল উড়িয়ে চপল কটাক্ষ এনাদের কাতুকুতু দেয়। আবার একই মনজির পুরুষদের চোখেমুখে ফুটিয়ে তোলে গোপন লালসার ছবি।
আজ এসব কিছুই ভাল লাগছে না। পরের ট্রেন এল। বাড়ি ফিরে দেখল দরজা খোলা।রেণুবালা ও রত্না বেগুনি-ফুলুরির প্লেট সামনে ধরল, আর একগ্লাস শরবত। কিন্তু সোফায় লম্বা হয়ে শুয়ে আছে প্রবীণ সার্দানা। স্টেজে কাটা সৈনিকের মত।
--- কি হল? হাল ছেড়ে দিলে নাকি? আরে একটা ব্যাটল হারলেই কি ওয়ার শেষ হয়ে যায়?
--- সব ব্যাটা পয়সা খেয়েছে। এস পি , আইজি, থানেদার, জাজ --সব। এখন বৈশলী প্রাইড আলোয় ঝলমল, ঝিনচাক্ মিউজিক বাজছে। খুব খাওয়াদাওয়া হচ্ছে। বিল্ডার স্পন্সর করেছে।
---- তো করবে না? তাতে কি হয়েছে? প্রতিপদে ওর পয়সা ও তো বেরিয়ে যাচ্ছে, সেটা লাভ নয়? আর ওরা জামানতে ছাড়াই তো পেয়েছে। অভিযুক্ত স্ট্যাটাস তো রয়েছে?
রত্না বলে-- আমিও তো তাই বলছি। এখন পুলিশের ফ্যাকড়া শেষ হল। আদালতের আওতায় এল। ভালই হল। কেস চলবে। প্রমাণ তো আমাদের পক্ষে, হতাশ হওয়ার কি আছে!
রঞ্জন কালো সোফার কাছে এগিয়ে যায়। সার্দানার দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়।
-- কি হল? হাল ছেড়ে দিয়ে হরিয়ানা ফিরে যাবে, না কি লড়বে? আমি কিন্তু ছাড়ছি না। আগে একাই লড়ছিলাম, এখনও চালিয়ে যাব।
লম্বা হয়ে শুয়ে থাকা প্রবীণ ওর হাতটা শক্ত করে ধরে।--- হাল ছাড়ছি না। একটু টায়ার্ড লাগছে। কাল থেকে আবার শুরু।
এইখানে একটা লাল স্পট পড়লে ভালো হোত।
[ বন্ধুগণ! হতাশ হবেন না। এখনো আকাশে চন্দ্র-সূজ্জি ওঠে। রবিমামা পশ্চিমেই অস্ত যায়। বুড়ো বয়সে সৌরভ দু'দুবার ম্যান অফ দা ম্যাচ হন। সানিয়া বাগদত্ত কে রিজেক্ট করে পাকিস্তানি প্লেয়ারের প্রেমে পড়ে। ডিজি রাঠোর বুড়ো বয়সেও কৃতকর্মের ফল ভূগতে শুরু করেছে। জেসিকা লালের খুনী ও নীতীশ কটারার খুনী জেলে আছে।ঝাড়খন্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী গ্রেফতার হয়েছেন, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী তিনমাস হাজতবাস করেছেন। ভগবানের রাজত্বে “দের হ্যায়, অন্ধের নহী হ্যায়”। এখনও বজ্জাত হরিদাস পাল কোন মেয়ের চোখে চোখ পড়লে মুখ নামিয়ে নেয়।]
ঠিক হোল--- দুটো কাজ করা হবে। রত্না রায় দুপুরে যাবে পুলিশ হেডকোয়ার্টার রায়্পুরে, ডিজি বিশ্বরঞ্জনের সঙ্গে দেখা করতে। ওনাকে রেণুবালার সই করা পিটিশন দেবে যাতে বলা হচ্ছে যে যেহেতু পুলিশ অপরাধীদের সঙ্গে সাঁটগাঁট করে বেইল অপোজই করেনি, উল্টে সাক্ষ্যপ্রমাণ নষ্ট করছে, এফ আই আর এর ধারা বদলে দিচ্ছে সেইহেতু উনি যেন সি আই ডি বা সিবি আইকে দিয়ে নতুন করে তদন্ত করান।
" মহামহিম! আপনার যদি এই আবেদন অযৌক্তিক মনে হয়, তাহলে যেন আপনি স্পষ্ট ভাষায় এটা রিজেক্ট করে দ্যান, লটকে না রাখেন।''
রত্না যদি ওনার সঙ্গে দেখা না করতে পারে তাহলে অন্তত: ওনার অ্যাডজুটান্ট মি: বামরার হাতে দিয়ে একটা রিসিট নিয়ে নেয়।
আর রেণুরা যাবে বিলাসপুর। আদালত ও এস পি অফিস থেকে সমস্ত অপরপক্ষের জামিন হওয়ার সব কাগজপত্র নিয়ে আসবে যাতে হাইকোর্টে জামিন খারিজ করার আবেদন লাগাতে পারে।
ফল কি হল দেখুন!
রত্না কে কিছুতেই মি: বামরা ডিজি'র সঙ্গে দেখা করতে দিলেন না। অসাধারণ ইংরেজিতে বল্লেন-- নো, নো, এনাফ, এনাফ। টূ ডেজ এগো, ডিজি গেভ ফর্টি ফাইভ মিনিটস্ টূ ইউ অল। নো মোর। হী ডিজি অব হোল ৩৬গড়। ভেরি বিজি। মেনি প্রবলেমস্, মাওবাদী অ্যান্ড আদার। কান্ট গিভ টাইম টূ ইউ এনি মোর। নাউ ম্যাটার ইজ ইন কোর্ট, গো দেয়ার। ডোন্ট কাম হিয়ার।
রত্না বল্লো-- আমি কোন ফেবার চাইছি না। ওনার পাব্লিক কমপ্লেন শোনার নির্ধারিত সময়ে দেখা করতে চাইছি। ঠিক আছে, আপনি তাহলে এই কাগজটি নিয়ে আমাকে রিসিট দিন।
-- রিসিট কেন? কাগজ তো ডিজিকে দেয়া হবেই।
-- না:, আমাদের কিছু কাগজ ওনার টেবিল থেকে গায়েব হয়েছে, তাই রিসিট দিন।
--- কে গায়েব করবে?
-- সেটা আপনি আমার চেয়ে ভাল করে জানবেন।
মি: বামরা আধ মিনিটের মত রত্নার দিকে একদৃষ্টিতে চেয়ে রইলেন। তারপর কাগজটি নিয়ে রিসিট দিলেন।
রেণুরা সিভিল লাইনস্ থানায় গিয়ে শুনলো সব ফাইল আদালতে, তাই দেয়া যাবে না।
আদালতে গিয়ে জানলো এখনো চালান পেশ হয় নি। তাই রুরাল এস পি মি: ধ্রুবের অফিসে সব কাগজ পাওয়া যাবে।
রত্না ধ্রুবের অফিসে গিয়ে কাগজ চাইল।
মি: ধ্রুব ওকে দেখে অশ্লীল হাসিতে ফেটে পড়লেন।
--হা:-হা:-হা:! আসুন, ম্যাডামজী আসুন।
হ্যাঁ, হ্যাঁ, যা যা চান সব কাগজ পেয়ে যাবেন। খালি স্পষ্ট করে কি কি চান একটা অ্যাপ্লিকেশন বানিয়ে দিন।
--- ওদের জামিন হয়ে গেল। আপনি ধারা পাল্টে দিলেন! এটা কি রকম?
--হা: হা: হা:! দেখুন ম্যাডাম, পুলিশের কী কী করা উচিৎ আর কেমন করে করা উচিৎ সেসব শেখাতে আসবেন না। যান না, ম্যাটার কোর্টে গেছে সেখান গিয়ে দেখুন যদি সুবিধে করতে পারেন!
ধ্রুবের অশ্লীল হাসিতে রেণুর হাড়পিত্তি জ্বলে গেল।
সেই হাসির বাংলায় মানে করলে দাঁড়ায়--- ওরে মাগী! তোর সব ছেনালি রায়পুরের বড়কত্তাদের দেখাস, আমাদের বিলাসপুরে চলবে না!
রাত্তিরে আমাদের বাড়িতে বিলাসপুর ফেরৎ রেণুদের ক্লান্তিবিনোদন ও বৈঠক। জানা গেল হাইকোর্টের জন্যে ভাল ক্রিমিনাল ল'ইয়ার রাজি হয়েছেন। ওনার মতে পুরো ব্যাপারটা হয়েছে আইনকানুনের গর্ভস্রাব। ওঁর জুনিয়র কোর্ট থেকে জামানতের ঘপলাবাজি সম্পর্কিত সমস্ত ডকুমেন্ট বের করে আনবে। মোট ৩০,০০০/- নেবেন। ওরা আদ্দেক টাকা আগাম দিয়ে এসেছে।
চা আর ঘরে তৈরি গরমাগরম পকৌড়া খাওয়া হচ্ছে এমনসময় রেণুর মোবাইল বেজে উঠলো।
খানিকক্ষণ কথা বলে রেণু জল চাইলো, চেহারায় চিন্তার ছাপ।
-- কি হয়েছে?
---- বিলাসপুর থেকে পুলিস হরিয়ানায় আমাদের ক্যায়্থাল শহরে গেছে। সেখানে সরাফা বাজারে খোঁজ করতে করতে আমার লুট হওয়া হীরের গয়নার রসিদের দোকানে হাজির হয়েছে।
--- তাতে তোমার ভয় পাবার কি আছে?
--- ব্যাপারটা হল ছোট দোকানদার। পুলিশ ভয় দেখিয়েছে যে এই রসিদ এক ডাকাতির মামলার সাক্ষ্যের সঙ্গে জড়িত। এবং এতে বিলাসপুরের আইজি ইন্টারেস্টেড। দোকনদার ভালয় ভালয় লিখে দিক যে এই গয়না এই দোকানের থেকে বিক্কিরি হয় নি।
---- নইলে?
--- নইলে দোকানদারকে এতবার ছত্তিসগড়ের বিলাসপুরে কোর্টে দৌড় করানো হবে যে--।
--তা তোমরা যে বলতে হামারা হরিয়ানা মে তো এইসা হোতা, ঐসা হোতা।ছত্তিশগড় কে লোক ফালতু। ওহাঁ তো রাতকো পোলিস আয়ে তো কৈ ঘরমেঁ ঘুসনে ন দেঁ। দশঠো লাঠি নিকল আতী হ্যায়। তবে?
-- সবসময় ফোড়ন কাটবেন না তো!
আমি মরছি নিজের জ্বালায়। শুনুন, ইদানীং সরাফা বাজারে রেইড্ হয়ে ছিল। ওরা কিছু চোরাই সোনা, বিস্কিট এইসব কিনেছিল। ধরা পড়ায় পুলিশের প্রতাপ একটু বেড়েছে, ব্যাপারীরা একটু সহমে আছে।
-- ধ্যাৎ তেরি! এসব আগড়ম-বাগড়ম ছাড়! তুমি গয়না কিনেছিলে। রসীদ একলাখ ষাট হাজার টাকা। তোমার ঘরে মারপিটের সময় গয়নার বাক্স কে তুলে নিয়েছে তুমি দেখে রিপোর্ট করেছো। পাকা রসীদ দিয়েছ। এখন পুলিশ জবরদস্তি কিছু লেখালেই হল? ওদের রসীদ বই থেকেই তো ব্যাপারটা চেক করা যাবে।
--- ঠিক তা নয়। আমি ওই দোকান থেকে গয়না কিনিনি। কিনেছি আমার মাসতুতো ভাই অনুরাগের দোকান থেকে। ওর খুব বড় দোকান, পাকা রসীদ দিলে আমাকে ১৬% ট্যাক্স দিতে হবে। তাই ও ওর কর্মচারীর দোকান থেকে বিনা ট্যাক্স পেইড রসীদ পাইয়ে দিয়েছে। আর যে দিয়েছিল সে বড়ভাই, আজ গুরগাঁও গেছে। দোকানে ছিল ছোটভাই, ও কিচ্ছু জানতো না। আমাকে শিগ্গিরই হরিয়ানা যেতে হবে। পুলিশ চেষ্টা করছে আমাকে ফ্রড সিদ্ধ করে মামলার ধারা বদলাতে আর আমাকে বুক করতে।
হরিদাস পাল ও রত্নার হাঁ-মুখ বন্দ্ধ হয় না।
ইতিমধ্যে জানা গেল ডিজি বিশ্বরন্জন যাঁকে পুলিশ হেডকোয়ার্টারে আমাদের কেসের জন্যে দায়িত্ব দিয়ে রেখেছেন সেই মি: বামরা ( একবছরের একস্টেন্শনে থাকা ডি এস পি)ই হলেন ভিলেন। বিল্ডর অমিত শর্মার থেকে ভাল পয়সা নিয়েছেন
আর পি এইচ কিউ এ আমরা কবে গেছি, কি কথা হচ্ছে--- সব তৎক্ষণাৎ মোবইলে বিলাসপুরে বিল্ডারকে জানিয়ে দিচ্ছেন। আমাদের কিছু ডকুমেন্ট হাপিশও করে দিচ্ছেন।
এই না হলে পুলিশ!
হরিদাস পালের মুখ দিয়ে বেরুল ছোটবেলার স্কুলে শেখা অমৃতবাণী--- বামরা, হনুমানের পোঁদ কামড়া!
রত্না রায় কড়া চোখে তাকায়।-- চিপ্ স্টান্ট ছেড়ে কিছু কাজের কথা ভাব।
ঠিক হল-- কাল সব দস্তাবেজ নিয়ে স্পীকারের সঙ্গে দেখা করতে হবে। উনি বিলাসপুরের লোক। আর দেখা করতে হবে বিরোধী দল নেতা কংগ্রেসের হুইপ রবীন্দ্র চৌবেজীর পি এ র সঙ্গে।
কিন্তু স্পীকার ওদের পাত্তাই দিলেন না। কাগজগুলো দেখলেন ও না। বল্লেন-- মামলা এখন আদালতে, যা হবার কোর্টে হবে, আমার কিইবা করার আছে?
কিন্তু বিরোধীনেতার পি এ বল্লেন পনের দিন পরে বিধানসভার অধিবেশন। আমরা দেখব রিটায়ার্ড পুলিস অফিসারটি যেন আর একস্টেনশন না পায়। আর বিলাসপুরের এস পি প্রমোশন পাচ্ছে, কিন্তু যাতে ভাল পোস্টিং না পায়।
হরিয়ানা পরিবার গেল হরিয়ানায়। রত্না রায় তার সম্বল "রাইট টু ইন্ফর্মেশন' বা RTI এর দরখাস্ত বানিয়ে গেল বিলাসপুরের কর্পোরেশনের কমিশনার আর ইলেকট্রিসিটি বিভাগের ইঞ্জিনিয়ারের কাছে।
-- স্যার, ঐ বেনিয়মের বিল্ডার আপনাদের শো'কজ নোটিসের কোন ইজ্জত দেয় নি। একটাও জিনিস শোধরায় নি। আপনারা কবে ওর লাইসেন্স ক্যানসেল করছেন?
--- আমরা আবার শো'কজ দিয়ে ওকে শেষ সুযোগ দিচ্ছি।
--- আর কবার শেষ সুযোগ দিতে থাকবেন?
--- ম্যাডাম, ওর লাইসেন্স ক্যানসেল হলে আপনার কি লাভ?
--- বলছেন কি? ব্যাংকের লোন মিলিয়ে ২০ লাখ টাকা দিয়ে ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রি করার পরও ওর বদমাইসির জন্যে আজ রায়পুর শহরে ভাড়ার ফ্ল্যাটে আছি। আমাদের মিটার জ্বালিয়ে দিয়েছে। আপনাদের কাছে বন্ধকী ফ্ল্যাট বিনা অনুমতি না জানিয়ে খদ্দের দের বেচেছে। ওদের কোন শাস্তি হওয়া উচিৎ নয়? ওদের বদমাইশি দিন কে দিন বেড়েই চলবে? আপনারা চুপচাপ দেখবেন? একটা কথা বলুন তো, এমন একটা বিল্ডারের অপকীর্তির দিকে চোখ বুঁজে থেকে আপনাদের কি লাভ?
রত্না এবার যায় বিজলীবিভাগের অফিসে। বলে-- আপনারা হুকিং নিয়ে আর টি আই এর যে আবেদন দিয়েছিলাম তার কোন উত্তর দেন নি, মাস খানেক হতে চললো। আর সেইযে গত বছর ১৯শে সেপ্টেম্বর আমাদের মেরে তাড়ানো হল সেইদিন সন্ধ্যেয় বিল্ডারের ইলেক্ট্রিশিয়নকে হুকিং করতে আমরা হাতেনাতে ধরি। আপনাদের ফোন করি। আপনারা এসে কমন মিটার সীল করেদিয়ে বলেন দুদিন পর মঙ্গলে খোলা হবে, লোড টেস্ট করা হবে। তদ্দিন লিফট, ক্যাম্পাসের আলো সব বন্ধ থাকবে। তখন দেখা গেল তিনটে ফ্ল্যাটের লাইট বন্ধ। ওরা নীচে বাইরে বসে ছিল। তারপর রাত্তিরের হামলায় ওই তিনটে পরিবার সামিল ছিল।
এবার জানতে চাই এক, ওই সীল কারা ভাঙ্ল? দুই, কার নির্দেশে? আর তিন, ওই বিজলীচুরির ব্যাপারটায় আপনারা কি অ্যাকশন নিলেন?
ইঞ্জিনিয়র ভদ্রলোক এক মহিলাকে দেখিয়ে বলেন-- ওই ডেস্কে যান। সব উত্তর পাবেন।
নতুন মহিলাটি খ্যারখেরে গলায় বলে ওঠেন-- আচ্ছা, আপনিই সেই পরের পেছনে কাঠি করে বেড়ানো মহিলা? কেন বিল্ডারের পেছনে হাত ধুয়ে পড়েছেন বলুন তো? ঘরের কাজকম্ম ছেড়ে এইসব করে অশান্তি বাড়িয়ে কি পান? আপনার স্বামী কিছু বলেন না?
রত্না রাগতে গিয়েও হেসে ফেলে।
বলে-- ম্যাডামজী, আমার ঘরের ভাবনা আমাকেই ভাবতে দিন। আমি নিয়মমাফিক ১০ টাকার নন- জুডিসিয়াল স্ট্যাম্প লাগিয়ে আবেদন দিয়েছি। উত্তর পাচ্ছিনা কেন? হুকিং এর প্রশ্ন আপনারা এড়িয়ে যাচ্ছেন কেন?
এবার ইঞ্জিনিয়ার ভদ্রলোক মি: মূর্তি এগিয়ে এলেন।
--- কোন হুকিং তো হচ্ছে না, ম্যাডাম। আমি নিজে গিয়ে দেখে এসেছি।
-- তাই নাকি? দেখুন, আপনি সার্টিফিকেট দিয়েছেন যে গত ১ অক্টোবর থেকে আমাদের মিটার ডিসকনেক্ট করা আছে। তাহলে নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি অব্দই আমাদের বিল আসছে কি করে? এটা হুকিং নয়?
-- আপনাদের পে করতে হবে না। ওতো আপনার সিকিউরিটি ডিপোজিট থেকে অ্যাডজাস্ট করে নিয়েছি। ওটা ভুলে হয়েছে।
--- ভুলে চরমাস ধরে বিলিং হয় কি করে? আর যদি ভুলই হয় তবে আমাদের ডিপোজিট থেকে কাটছেন কি করে? আর রিডিং আসছে কেন?
সব উত্তর পেয়ে যাবেন। এখন আমি ফিল্ডে যাচ্ছি।
মূর্তি জীপে চড়ে উধাও। মহিলাটি রত্নাকে বলে আগামী সোমবার আসতে।
রাত্তিরে রায়পুরে বাড়ি ফিরে রঞ্জনকে জানালে ও দাঁত বের করে।
-- শোনো, মূলোক্ষেতে এক চোর ঢুকেছে। মালিক তাকে ধরে ফেলে । সে বলে আমি চোর নই।
- তাহলে বাগানে বেড়া টপকে ঢুকেছ কেন?
-- ঢুকিনি তো, ঝড়ে আমাকে উড়িয়ে এনে ফেলেছে।
-- তাহলে মূলো তুলেছ কেন?
--- তুলিনি তো, ঝড়ে আবার আমাকে উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছিল, বাঁচার জন্যে আমি মূলো আঁকড়ে ধরি। তাতে কিছু মূলো উঠে এসেছে।
--- বেশ, তাহলে আঁটি বেঁধেছ কেন?
-- হ্যাঁ, এবার আপনি বলতে পারেন। এই হক আর টি আই অ্যাক্টের মাহাত্ম্য।
রত্না ও রেণুবালার পিটিশন মঞ্জুর হয়ে ডিজি পুরো ব্যাপারটা আবার তদন্তের ভার এক সি আই ডি বিভাগের ডিএসপি র্যাংকের অফিস্যারকে দিয়েছেন।
উনি রত্না- রেণু-প্রবীণের ভার্সন শুনে বল্লেন -- বুঝতে পারছি আপনারা নির্দোষ। কিন্তু রাজনৈতিক চাপ আছে, বিলাসপুরের মন্ত্রীর চাপ আছে। এই আর্মস্ অ্যাক্টের ও হরিজন অত্যাচারের এফ আই আর একটু ভোগাবে, আপনাদের একটু কঠিন সময় যাবে।
উনি বিলাসপুরে ওই বৈশালী প্রাইড অ্যাপার্টমেন্টে গিয়ে সবার সঙ্গে দেখা করলেন। ওদের মুখে রত্না রায়ের উপস্থিতিতে হরিয়ানা পরিবার ও সাংবাদিক অমিতাভের গুলি চালানোর গল্পটি শুনে বল্লেন--- দ্বিতীয় গুলিটি কোথথেকে ছোঁড়া হয়েছে?
-- তিনতলায় প্রবীণ সারদানার জানলা থেকে।
--- আপনারা তখন কোথায় ছিলেন?
--- মন্দিরের বারান্দায় বসে গুলতানি করছিলাম।
-- চলুন, ওপরে গিয়ে দেখি। একি , ওপরে ওদের ফ্ল্যাটে এদিকে তো কোন জানলা নেই? তাহলে?
-- না না, আসলে ব্যালকনি থেকে।
-- চলুন, ব্যালকনিতে যাই। কিন্তু ব্যালকনি থেকে তো মন্দির দেখা যাচ্ছে না! বরংএখান থেকে গুলি চললে আপনাদের সীমানার বাইরে সাকেত অ্যাপার্টমেন্ট বা বিচারপতি প্যাটেলের বাড়ির দিকে যাবে। সেখান থেকে তো কোন কমপ্লেন আসেনি!
আচ্ছা, পান্ডে! এফ আই আর তো তুমি লিখেছ।
-- হ্যাঁ হুজুর!
--- এই যে লিখেছ যে----"" অ্যাপার্টমেন্ট হইতে বাহির হইবার একটি মাত্র গেট। সেইটিকে কভার করিয়া হরিয়ানার সার্দানা পরিবার দাঁড়াইয়া থাকে ও গুলি চালায়। নিরুপায় হইয়া প্রাণ বাঁচাইবার তাগিদে সমস্ত ফ্ল্যাটবাসী এককাট্টা হয়, এবং দূরভাষ মারফৎ অন্য কলোনীবাসীদের একত্র করিয়া তিনতলায় নিজেদের ফ্ল্যাটে লুক্কায়িত আক্রমণকারীদের উপর সমবেত ভাবে ঝাঁপাইয়া পড়িয়া বন্দুক কাড়িয়া লয়।''
বেশ, এখন কি দেখছ? বেরুনোর জন্যে ক'টা গেট আছে?
-- দু দিকে দুটো স্যার!
-- তাহলে তুমি একটা লিখলে কি করে? এই চালান যদি কোর্টে যায় তাহলে ডিফেন্সের উকিল জেরা করে তোমার জামাকাপড় খুলে নেবে, সে খেয়াল আছে?
এবার ওনার ফেরার পথে পথ আটকায় বিল্ডারের বৌ শিবানী শর্মা। প্রথমে ওর মোবাইলে অফিসারটির ফোটো তুলে নেয়। তারপর জিগ্যেস করে একবার এফ আই আর হয়ে চালান তৈরি হওয়ার পর আবার তদন্ত হচ্ছে কেন? আর আপনি আমাদের গুলি চালানো নিয়ে বক্তব্য বিশ্বাস করছেন না কেন?
--- করতাম। যদি সত্যিই দুটোর বদলে বেরোনোর গেট একটা হত। আর যদি তিনতলার ২১০ নং ফ্ল্যাটের জানলা বা ব্যালকনি থেকে আপনাদের মন্দিরের চত্বরটি দেখা যেত।
-- আপনি কত টাকা নেবেন?
অফিসারটির চোখ কৌতুকে নেচে ওঠে।
-- আপাতত: কিছুই ঠিক করিনি। করলে আপনাদের জানাব।
পরের দিন বিলাসপুরের এস পি রায়পুরের রাজ্য পুলিশ মুখ্যালয়ে ডিজি কে ফোন করে জানালেন যে রায়পুর থেকে তদন্তকারী অফিসার এসে ফ্ল্যাটের নিরীহ লোকদের ধমকাচ্ছে, তদন্তের নামে হ্যারাস করছে। জেলে পোরার ভয় দেখিয়ে পয়সা চাইছে।
--- তাই নাকি?
--- হ্যাঁ স্যার! আপনি অ্যাকশন নিন।
--- তা সবাই তো থানায় পয়সা খাচ্ছে, এবার না হয় ওই একটু খাক।
---- তাহলে আপনি কোন স্টেপ নেবেন না।
--- এখন নয়। আগে কিছু খাক-টাক, তারপরে। আপাতত: তদন্ত চলুক।
(চলবে)