ধারাবাহিক - নন্দিনী সেনগুপ্ত
Posted in ধারাবাহিক৫
জার্মান সেনাবাহিনীতে প্রচুর সার্জেন্ট আছে। তাদের পুরস্কারের গয়নাগুলোর মধ্যে এতো তারার প্রাচুর্য যে পাতাললোকের গোটা আকাশ সাজিয়ে ফেলা যাবে সেই তারাগুলোকে দিয়ে। সার্জেন্টদের মধ্যে শ্নাইডার পদবিওয়ালা লোকও আছে প্রচুর, এবং তাদের মধ্যে অ্যালোইস নামের মানুষও কম নেই। তবে তাদের মধ্যে শুধুমাত্র একজন অ্যালোইস শ্নাইডার সেইসময় হাঙ্গেরিতে জোকারহেলি বলে এক প্রত্যন্ত জায়গায় পোস্টিং পেয়েছিল। জোকারহেলি সমুদ্রের ধারে আধা শহর, আধা গ্রামের মত একটা জায়গা। সময়টা গ্রীষ্মকাল।
শ্নাইডারের অফিস একটা ঘিঞ্জি ছোট ঘর। দেয়ালে হলদে রঙের কাগজ সাঁটা। দরজার বাইরে গোলাপি রঙের কার্ডবোর্ডে কালো কালি দিয়ে লেখা ‘ডিসচার্জ, সার্জেন্ট শ্নাইডার’। অফিসের টেবিলটা এমনভাবে রাখা যে শ্নাইডারকে জানালার দিকে পিঠ দিয়ে বসতে হয়। হাতে কাজ না থাকলে সে টেবিল থেকে উঠে ঘুরে দাঁড়িয়ে জানালা দিয়ে দেখতে পায় যে বাঁয়ে গ্রামের দিকে চলে গেছে সরু, ধুলোয় ঢাকা পথ আর ডান দিকে ভুট্টা ক্ষেত আর অ্যাপ্রিকট গাছগুলোর মাঝখানে ফাঁকা মাঠ।
শ্নাইডারের সেরকম কোনও কাজ ছিলনা। অতিমাত্রায় জখম মানুষেরা হাসপাতালে ভর্তি হয়ে যেত। যাদের পক্ষে আপনা থেকে চলাফেরা করা সম্ভব নয়, তাদের গাড়িতে করে অন্য কোথাও বয়ে নিয়ে যাওয়া হত। যারা নিজেরা চলাফেরা করতে পারতো, হাসপাতাল থেকে ছুটি পাওয়ার পরে তাদের পাঠানো হত সেইসব সেন্টারে, যেখান থেকে ফ্রন্টে সৈন্যদের পাঠানো হয়। কাজেই শ্নাইডারের ঘণ্টার পর ঘণ্টা জানালা দিয়ে বাইরে চেয়ে থাকবার মত অবকাশ ছিল। বাইরের আবহাওয়া বেশ আর্দ্র এবং কুয়াশা ঘেরা। এরকম জলহাওয়ার সবচেয়ে ভালো ওষুধ হল সোডাওয়াটারের সঙ্গে হলদে রঙের অ্যাপ্রিকটের ব্র্যান্ডি মিশিয়ে বানানো পানীয়। এই ব্র্যান্ডি মৃদু উষ্ণতা ছড়ায়, তাছাড়া বেশ সস্তা, খাঁটি এবং ভালো জিনিস। জানালায় বসে বসে আকাশের দিকে অথবা রাস্তার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে নেশা করো এবং একটু মাতাল হয়ে যাও। নেশাটা বেশ ধীরে ধীরে ছড়াতে থাকে। নেশাটা জমিয়ে তুলবার জন্য শ্নাইডারকে বেশ কসরত করতে হত। অনেকটা পানীয় প্রয়োজন হত তার। সকালের দিকেও এমন একটা তূরীয় অবস্থায় পৌঁছে যাওয়া প্রয়োজন যে সমস্ত মূর্খামি, সমস্ত উদ্ভট ভুলভাল ব্যাপার বেশ সহনীয় মনে হবে।
শ্নাইডারের একটা বিশেষ পদ্ধতি আছে। প্রথম গ্লাসে সে মাত্র এক ছিপি ব্র্যান্ডি নেয়। দ্বিতীয় গ্লাসে আরেকটু কড়া। তৃতীয়টা অর্ধেক ব্র্যান্ডি, অর্ধেক সোডা। চতুর্থটা একদম নিট ব্র্যান্ডি। পঞ্চমটা আবার অর্ধেক অর্ধেক। ষষ্ঠ গ্লাসটা দ্বিতীয়টার মত মাপ। সপ্তমটা আবার প্রথমটার মত হাল্কা। সে ঠিক সাত গেলাস খায়। সকাল সাড়ে দশটার মধ্যে তার এসব আহ্নিক অনুষ্ঠান শেষ হলে, তার মতে সে বেশ একটা ‘রাগান্বিত গাম্ভীর্যপূর্ণ অবস্থা’য় পৌঁছে যেতে পারে। একটা শীতল আগুন ধিকিধিকি জ্বলে তার ভেতরটা পরিপূর্ণ মনে হয়। সারাদিনের একঘেয়েমি ব্যাপারগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করবার জন্য প্রস্তুত হয় সে।
প্রথম কেস মোটামুটি এগারোটা, সোয়া এগারোটা নাগাদ আসে। ঝাড়া এক ঘণ্টা সময় সে পায় রাস্তার দিকে তাকিয়ে থাকবার জন্য। রোগাভোগা ঘোড়ায় টানা গাড়ি এক দুটো মাঝেমধ্যে রাস্তায় দেখা যায় কি যায় না; একরাশ ধুলো উড়িয়ে গ্রামের পথে চলে যায়। শ্নাইডার বসে বসে মাছি মারে কিম্বা উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সুদীর্ঘ কাল্পনিক কথোপকথন চালিয়ে যায়, কিম্বা নিজের টেবিলের কাগজপত্র, স্ট্যাম্প এসব একটু গুছিয়ে ঠিকঠাক করে রাখে।
এদিকে প্রায় সাড়ে এগারোটা নাগাদ ডঃ স্মিৎজ্ সকালে যে দুজন রুগিকে অপারেশন করেছেন, তাদের ঘরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। বাঁ দিকে লেফটেন্যান্ট মোল, মাত্র একুশ বছর বয়স, কিন্তু দেখতে লাগছে যেন এক থুত্থুরে বুড়ি; অ্যানাস্থেশিয়ার ঘোর এখনও কাটেনি, কাটাকাটা ধারালো মুখে লেগে আছে যেন একটা আলগা হাসি। মাথার রক্তমাখা ব্যান্ডেজে এবং ব্যান্ডেজ বাঁধা হাতের উপরে উড়ে বেড়াচ্ছে মাছির ঝাঁক। ডঃ স্মিৎজ্ মাছি তাড়াবার ব্যর্থ চেষ্টা করে মাথা ঝাঁকিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করলেন। তারপর সাদা চাদর দিয়ে রুগিকে ভালো করে ঢেকে দিলেন। রাউন্ডে বেরোবার জন্য নিজের সাদা পোশাক পরতে পরতে, ধীরে ধীরে বোতাম লাগাতে লাগাতে আরেকজন রুগির দিকে তাকালেন। ক্যাপ্টেন বাউয়ার- মনে হচ্ছে তিনি অ্যানাস্থেশিয়ার ঘোর থেকে একটু একটু জেগে উঠছেন। চোখ এখনও বোজা, কিন্তু তিনি নড়াচড়া করবার চেষ্টা করছেন, কিন্তু পারছেন না। কারণ, তাঁকে খাটের সঙ্গে শক্ত করে বেঁধে রাখা হয়েছে। তিনি মাথা ঝাঁকাবার চেষ্টা করছেন, পারছেন না; মাথাটাও শক্ত স্ট্র্যাপ দিয়ে বাঁধা। তার ঠোঁটদুটো নড়ে উঠলো। মনে হল বার বার চোখ পিটপিট করে চোখ খোলার চেষ্টা করছেন তিনি, কিন্তু পারছেন না। ডঃ স্মিৎজ্ তার অ্যাপ্রনের পকেটে হাত ঢুকিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলেন। ঘরের মধ্যে একটা আলোআঁধারি ছায়া। খুব তীব্র আলো নেই। হাওয়াতে হাল্কা গোবরের গন্ধ ভেসে আছে। দরজা জানালা বন্ধ রাখলেও মাছির ঝাঁক কোথা থেকে যেন উড়ে আসে। এই বাড়িটার মাটির নিচে কেলারের ঘরগুলি আগে খাটাল হিসেবে ব্যবহার করা হত।
ক্যাপ্টেনের মুখ দিয়ে হাল্কা ঘড়ঘড়ে একটা আওয়াজ বেরিয়ে আসছিল। ঠোঁট নড়ছিল; কিছু কি বলবার চেষ্টা করছেন তিনি? একটা কোনও শব্দ উচ্চারণ করবার চেষ্টা করছেন? ও আর ই- এর মাঝামাঝি একটা আওয়াজ বেরিয়ে আসছিল। ডঃ স্মিৎজ্ বুঝতে পারছিলেন না যে রুগী কী বলতে চায়। এমন সময় হঠাৎ ক্যাপ্টেন চোখ খুললেন।
‘বাউয়ার!’ ডঃ স্মিৎজ্ নাম ধরে ডাকলেন, যদিও তিনি জানেন যে ডাকার কোনও মানে হয়না। তিনি রুগীর খুব কাছে এগিয়ে গেলেন এবং ক্যাপ্টেনের চোখের সামনে জোরে জোরে নাড়তে লাগলেন তার হাত; হাত এতটাই কাছে নিয়ে গেলেন যে ক্যাপ্টেনের ভ্রু তিনি হাতের চেটোয় স্পর্শ করতে পারছিলেন। সামনে পিছনে নাড়তে লাগলেন। নাহ, কোনও সাড় নেই। প্রতিবর্ত ক্রিয়ার কোনও ইঙ্গিত নেই। শুধু ক্যাপ্টেনের গলা দিয়ে দুর্বোধ্য কিছু আওয়াজ বেরিয়ে আসছে। কেউ বুঝতে পারছে না তার কথা। মনে হল তিনি যেন কিছু ভাবছেন। হঠাৎ পরিষ্কার গলায় বলে উঠলেন ‘বেলজোগার্স’।
ডঃ স্মিৎজ্ মন দিয়ে শুনলেন শব্দটা, কিন্তু বুঝতে পারলেন না এর অর্থ। এরকম কোনও শব্দ তিনি আগে শোনেননি, কিন্তু শব্দটা তার কাছে সুন্দর এবং রহস্যময় বলে মনে হল। তিনি স্থির হয়ে দাঁড়ালেন, ক্যাপ্টেনের নিঃশ্বাসের শব্দ শুনতে লাগলেন, তার চোখের দিকে তাকিয়ে রইলেন এবং দম বন্ধ করে সেই ‘বেলজোগার্স’ শব্দটা আবার শুনবার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলেন। ডঃ স্মিৎজ্ তার বাঁ হাতে ঘড়ির দিকে চেয়ে রইলেন। মনে হচ্ছে ছোট কাঁটাটা ঘড়ির ডায়ালের উপরে বড় ধীরে ঘুরছে—পঞ্চাশ সেকেন্ডঃ ‘বেলজোগার্স’! পঞ্চাশ সেকেন্ড সময়টা অসীম অনন্তকাল সময় বলে মনে হচ্ছিল ডঃ স্মিৎজ্-এর কাছে। বাইরে আঙিনায় গাড়ির শব্দ হল। বাইরে কে যেন চিৎকার করে কী বলছে। স্মিৎজ্-এর মনে পড়লো যে তার উর্ধতন ডাক্তার তাঁকে রাউন্ড দেবার কথা বলে গিয়েছেন। আরেকটা গাড়ি ঢুকল আঙিনায়। ‘বেলজোগার্স’... বলে উঠলেন ক্যাপ্টেন। স্মিৎজ্ অপেক্ষা করতে লাগলেন আবার। দরজাটা খুলে গেলো। একজন সার্জেন্ট ঢুকলো। স্মিৎজ্ অস্থিরভাবে হাতের ইশারায় তাঁকে চুপ করতে বলে ঘড়ির ডায়ালের ছোট কাঁটাটার দিকে একদৃষ্টে চেয়ে রইলেন। কাঁটাটা তিরিশ সেকেন্ড দেখালো, স্মিৎজ্ জোরে একটা শ্বাস টানলেন, ক্যাপ্টেন বলে উঠলেন...‘বেলজোগার্স’।
‘কী হয়েছে?’ স্মিৎজ্ প্রশ্ন করলেন সার্জেন্টকে।
‘রাউন্ডে যাবার সময় হয়েছে।’ --- বলে উঠলো সার্জেন্ট।
‘আমি আসছি।’ স্মিৎজ্ বাঁ হাতের কব্জির ঘড়িটা ঢেকে দিলেন ডাক্তারের সাদা পোশাকের লম্বা হাতা দিয়ে, যখন ছোট কাঁটাটা কুড়ি সেকেন্ডের ঘর স্পর্শ করলো এবং ক্যাপ্টেনের ঠোঁট বন্ধ হল। ডাক্তার একদৃষ্টে তাকিয়ে ছিলেন রুগীর দিকে। ক্যাপ্টেনের ঠোঁটদুটো আবার নড়ে উঠল। স্মিৎজ্ জামার হাতাটা আবার গুটিয়ে ফেললেন।
-‘বেলজোগার্স’- ঠিক দশ সেকেন্ডের মাথায় বলে উঠলেন ক্যাপ্টেন।
স্মিৎজ্ ধীরে ধীরে বাইরে বেরিয়ে গেলেন রাউন্ড দেবার জন্য।
সেদিন কারো ডিসচার্জ হয়নি। শ্নাইডার সোয়া এগারোটা বেজে যাবার পরে বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে একটা সিগারেট ধরালো। জানালা দিয়ে দেখা যাচ্ছে দূরে আঙিনায় বড়সাহেবের গাড়ি পরিষ্কার করা হচ্ছে। ‘বৃহস্পতিবার’- ভাবলো শ্নাইডার। প্রতি বৃহস্পতিবার নিয়ম করে বড়সাহেবের গাড়ি ধোয়াধুয়ি এবং পরিষ্কার করা হয়ে থাকে।
হাসপাতালের বিল্ডিংগুলো একটা বর্গক্ষেত্র তৈরি করেছে। পেছন দিকে রেলরাস্তার অংশটা ফাঁকা। উত্তরের অংশে সার্জিকাল বিভাগ। মাঝামাঝি অংশে প্রধান কার্যালয় আর এক্স রে বিভাগ। দক্ষিণে রান্নাঘর, ক্যান্টিন আর কর্মচারীদের বাসস্থান। দূরে শেষপ্রান্তে ছ’টা সারিসারি ঘরে বড়সাহেবের কোয়ার্টার। সবগুলো বিল্ডিং মিলিয়ে অতীতে একটা কৃষি বিদ্যালয় ছিল এখানে। বিশাল বাগানের পেছনদিকে খোলা জায়গায় স্নানের ঘর, আস্তাবল। এছাড়া হাসপাতালের অতিরিক্ত কিছু বেড আছে এদিকে বাগানের মধ্যে একটা বিল্ডিংএ। রেললাইন অবধি খোলা জায়গায় বাগানে নানা ধরনের ফুলফলের গাছ আছে। মাঝেমধ্যে এই জায়গাটাতে বড়সাহেবের স্ত্রীকে তার বছরছয়েকের ছোট বাচ্চাকে নিয়ে একটা টাট্টু ঘোড়ার পিঠে চেপে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়। বড়সাহেবের স্ত্রী সুন্দরী তরুণী। যখনই তিনি বাচ্চাকে নিয়ে বাগানে খেলতে বেরিয়ে জঞ্জালের স্তুপের কাছে বোমার ভাঙাচোরা টুকরো টাকরা দেখতে পান, তখনই তিনি প্রধান কার্যালয়ে এসে অভিযোগ জানিয়ে যান। ওই টুকরোগুলো তার কাছে প্রাণঘাতী, বিপজ্জনক বলে মনে হয় এখনও। প্রতিবার কার্যালয় থেকে ভদ্রমহিলাকে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবার আশ্বাস দিয়ে ফেরত পাঠানো হয়। যদিও আদতে সেরকম কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়না।
শ্নাইডার জানালায় দাঁড়িয়ে দেখতে লাগলো যে বড়সাহেবের ড্রাইভার খুব মন দিয়ে গাড়িটা পরিষ্কার করছে। যদিও মোটে বছর দুয়েক হল এই ড্রাইভার বড়সাহেবের গাড়ি চালাচ্ছে, কিন্তু যথেষ্ট ভালোভাবে গাড়িটা রক্ষণাবেক্ষণ করে সে। ড্রিল স্যুট পড়ে গাড়ির কলকব্জা দেখে শুনে তেল লাগিয়ে মুছে রাখছে। তার চারিদিকে টুল বক্সের জিনিসপত্র, তেলের ক্যান এসব রাখা। বড়সাহেবের গাড়ির সিটগুলো লালচে চামড়ার, খুব সাধারণ দেখতে। ‘বৃহস্পতিবার’- ভাবলো শ্নাইডার, আবার বৃহস্পতিবার। রুটিন মোতাবেক বৃহস্পতিবার বড়সাহেবের গাড়ি ধোয়াধুয়ি, পরিষ্কার ইত্যাদি করা হয়ে থাকে। সে মাথা ঝুঁকিয়ে সোনালি চুলের একজন নার্সকে অভিবাদন জানালো। নার্সটি ক্যান্টিনের দিকে যাচ্ছিল তাড়াহুড়ো করে; বন্ধ দরজা দেখে থমকে দাঁড়ালো। আঙিনায় দুটো ট্রাক ঢুকলো। বড়সাহেবের গাড়িটার থেকে একটু দূরে দাঁড়ালো গাড়িদুটো।
শ্নাইডার দাঁড়িয়ে দেখতে লাগলো। তখনই একটা মেয়ে আঙ্গিনায় একটা ছোট ঘোড়ায় টানা গাড়ি নিয়ে ঢুকলো। ফল, শাকসবজি এসব নিয়ে সাধারণত প্রতি বুধবার কাছের একটা গ্রাম থেকে মেয়েটা আসে। ওর নাম জারকা। দাঁড়িয়ে থাকা গাড়িগুলোর ফাঁক দিয়ে গলে গলে নিজের ঘোড়ায় টানা গাড়িটা নিয়ে এসে মেয়েটা ক্যান্টিনের দরজার সামনে দাঁড়ালো। রোজই কোনও না কোনও ফলমূল- শাকসব্জি বিক্রেতা আসে এখানে। ম্যানেজারের অনেক বিক্রেতার সঙ্গে চেনাজানা আছে। তবে জারকা শুধু বুধবারে আসে। শ্নাইডার জানে, পাক্কা জানে। কারণ, অনেক বুধবারেই সাড়ে বারোটা নাগাদ কাজ থামিয়ে সে জানালায় দাঁড়ায়। গ্রামের পথের দূর প্রান্ত থেকে জারকার গাড়ির ধুলো ওড়ে। ধুলোর মেঘের ফাঁক দিয়ে, ঘোড়ার মাথার পেছনে জারকার মিষ্টি সুন্দর হাসিমুখটা যতক্ষণ অবধি না দেখা যায়, শ্নাইডার দাঁড়িয়ে থাকে জানালায়।
(চলবে)