Next
Previous
1

গল্প - সুস্মিতা হালদার

Posted in

 

গরমের ছুটির এক সন্ধ্যা। একনাগাড়ে বৃষ্টির পর চারপাশটা এখন বেশ থমথমে হয়ে আছে। একটানা ডেকেই চলেছে ঝিঁঝিঁপোকাগুলো। সত্যি, ওদের কোনও ক্লান্তি নেই! বাড়ির কার্নিশ থেকে ফোঁটা ফোঁটা জল পড়ে চলেছে কোনো ভাঙা টিনের ওপর। আমি বসে বসে এগুলোই দেখে যাচ্ছিলাম এতক্ষণ। সাহিত্য-টাহিত্য আমার আসে না। লিখতে গেলে ভাষার বাঁধন খুঁজে পাই না। তবু এমন বৃষ্টিভেজা সন্ধ্যেবেলা সাহিত্যের রস আপনা হতেই কেমন যেন হাতছানি দেয়। তাই স্মৃতির ‘লকআপে’ বন্দী করে রাখি এমন মুহূর্তগুলো। আর সময় পেলেই দু’কলম লিখে ফেলি। তা অবশ্য নিছক ডায়েরি লেখার অভ্যাসেই থেকে যায়। ছাপানো-টাপানোর কথা ভাবি না। আজকের এই কাহিনীর সাথে সাহিত্যের সংযোগটা খুবই গভীর— প্রগাঢ়। সাহিত্য-আলোচনার এক সান্ধ্য-আসর। আয়োজকরা কেউই সাহিত্যের লোক নন। বরং সাহিত্যের বিপরীতে হাঁটেন এঁরা, অন্তত লোকে তাই মনে করে। এঁরা সকলেই আইন-আদালত এসবের সাথে যুক্ত। স্থানীয় কোর্টের বার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য কয়েকজন অ্যাডভোকেট মিলে একবার ঠিক করলেন গরমের ছুটির সদব্যবহার করার। এটা-ওটা ভাবতে ভাবতে এক সাহিত্যপ্রেমী অ্যাডভোকেট প্রস্তাব দিলেন সাহিত্যালোচনার জন্য আসর বসানোর। সাদরে গৃহীত হলো সেই প্রস্তাব। তবে বলা বাহুল্য, এটা রইলো একান্ত ব্যক্তিগত-সামাজিক স্তরে। সাহিত্যপ্রেমী ঐ অ্যাডভোকেট নিজের বাড়িতে আয়োজন করলেন এই সান্ধ্য-আসরের। এ বছর দু’য়েক আগের কথা। প্রথম প্রথম পাঁচ-ছয় জন যোগ দিতেন। এখন সেটা দাঁড়িয়েছে দশজনে। তবে আজের আসরটা একটু অন্যমাত্রার। আজ যোগ দিয়েছেন এখানকার এক নামী উকিল— অ্যাডভোকেট অভিজিৎ বোস। কোর্টে ‘বাসুদা’ বা ‘বাসুস্যার’ নামে পরিচিত। ওঁর খাতিরে নিমন্ত্রিত ছিলেন দু’একজন জুনিয়র ম্যাজিস্ট্রেটও। আমি অবশ্য ‘কাবাব মে হাড্ডি।’ মানে, আমি পুলিশের লোক। আমার সাহিত্য খুব ভালো লাগে তাই ডাক পাই। সব আসরে যোগ দিতে পারি না। ফাঁকা সময় পেলে আসি। তবে আমার আসা মানে ঐ গল্প শোনার জন্য। আর সাথে বোনাস— চা আর গরম গরম সিঙ্গাড়া।

আজও চারখানা সিঙ্গাড়া সাঁটিয়ে (আমার পক্ষে অবশ্য পরিমাণটা খুব কমই হল) বেশ আয়েশ করে গল্প শুনছিলাম। আজকেরটা খানিক অন্যরকম ব্যাপার। একটা বাটিতে অনেকগুলো চিরকূট রয়েছে। যাঁরা যাঁরা ইচ্ছুক তাঁরা ঐ বাটি থেকে একটা চিরকূট তুলবেন। চিরকূটে লেখা একটাইমাত্র শব্দ। সেই শব্দের ওপর কল্পনা করে নিতে হবে একটা গল্প। গল্পবাঁধার জন্য সময় দেওয়া হবে মাত্র পাঁচ মিনিট। তার মধ্যেই ভেবে ফেলতে হবে গল্পের বাঁধুনি। দেখলাম, আজ অনেকেই বেশ আগ্রহ ভরে এগিয়ে যাচ্ছেন। তবে তার মধ্যে গল্প বাঁধতে পারলেন মোটে দু’জন। আর বাকিরা তো শব্দ দেখেই ছিটকে পালিয়ে আসছেন। ... এরপর পালা বাসুদার। অ্যাডভোকেট সন্তোষদা ঘরের মাঝে এসে সেটাই ঘোষণা করে গেলেন। বাসুদা আমার পাশেই বসেছিলেন। আমার দিকে তাকিয়ে একবার বললেন, “কী অফিসার, তুমি যাবে না কি সাহস করে?”

বাসুদা আমায় বরাবরই ‘অফিসার’ বলে ডাকেন। ঐটেই ওঁর আদরের ডাক। আমারও বেশ লাগে ডাকটা।

— “না, না। মাথা খারাপ! আমার ওসব গল্প মাথায় আসেই না। গুঁতো খেয়ে ফিরে আসতে হবে। আপনি যান। আপনি তো ‘বস’ লোক দাদা।”

বাসুদা উঠে গিয়ে একটা চিরকূট তুললেন। ওঁর শব্দ ‘পাহাড়’। সন্তোষদা জিজ্ঞাসা করলেন, “কোন ফর্মে বলবেন, বাসুদা? গল্পের কোন ফর্ম নেবেন? ন্যারেটিভ, ডেসক্রিপটিভ, না...?”

— “ন্যারেটিভ।” বাসুদা উত্তর দিলেন।

এই ফর্মগুলোর নাম রোজই শুনি, কিন্তু মাথায় তাল পাকিয়ে যায়। এটুকুই শুধু এতদিনে শিখেছি, ন্যারেটিভে লেখক নিজে গল্পের একটা চরিত্র হিসেবে গল্পটা বলেন। এটাও অবশ্য বাসুদার কল্যাণেই শেখা। উনি একজন অসাধারণ ‘ন্যারেটিভ স্টোরিটেলার’। গল্পটা অভিনয়ের মাধ্যমে এমনভাবে উপস্থাপন করেন যে বোঝা যায় না এ গল্প না কী বাস্তব ঘটনা। ... বাসুদা এবার গল্প বলবেন। আমি একটু নড়ে-চড়ে বসলাম। ওঁকে আমি অনেকবছর ধরে চিনি। একসময় উনি অসাধারণ কথকতা করতেন। আর উনি গল্প বলার সময় প্রতিটা চরিত্রে এমনভাবে ঢুকে যান, মনে হয় যেন সেই পুরোন যুগের যাত্রাপালা দেখতে এসেছি।

মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই বাসুদা শুরু করলেন।

— “গল্পটি শুরু করার আগে আমি দু’চারটে কথা বলে নিতে চাই, ভূমিকাস্বরূপ। গল্পটির প্রধান চরিত্রই এখানে ন্যারেটর মানে বক্তা। এটি গল্পর চেয়ে বলা ভালো ন্যারেটিভ স্টাইলে অণুগল্প। শিরোনাম একটা ঠিক করেছি। ‘বৈরনিগ্রহ’।”

— “দারুণ, দারুণ, অসাধারণ।” সন্তোষদা ছোট্ট করে একটা হাততালি দিলেন, বাসুদার গল্পের শিরোনামের ‘অনারে’। সাথে সাথে সম্মিলিত উচ্চস্বরে ঘরে উপস্থিত সকলেই সায় দিলো।

— “শুরু করি তাহলে?” একটা নরম ভঙ্গিমায় শ্রোতামণ্ডলীর কাছে সৌজন্যসূচক অনুমতি চাইলেন বাসুদা।

— “নিশ্চয়। শুরু করুন, শুরু করুন।” এবার শুধুমাত্র সন্তোষদাই বললেন। বাকিরা শুধু ঘাড় নাড়লেন।

ছোট্ট কাশি কেশে গলা পরিষ্কার করে, নিজের স্টাইলে গল্প বলতে শুরু করলেন বাসুদা। আমিও টানটান হয়ে বসলাম।

— “পাহাড়! পাহাড় শুনলেই কী মনে হয় আপনাদের? প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য্যে ভরা একটা জায়গা। যেখানে রয়েছে অনাবিল মুক্তির স্বাদ। যেন আকাশটা এসে ছুঁতে চায় মানুষটার হাত।... না, পাহাড় আমার কাছে এসব কিস্যু না। জাস্ট নাথিং। ... শুধু ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া এক স্মৃতিমাত্র।

আমি ... আমি হলাম ছা-পোষা গেরস্ত ঘরের এক ছেলে। কাজকর্ম করে-টরে খাই। এই আমার পরিচয়। পঁচিশ বছর বয়েসে বাবা আমার বিয়ে দিয়ে দেন। ভরা যৌবনে মিষ্টি বউ পেয়ে প্রথম প্রথম বেশ রোম্যান্টিক লাগতো। কাজ-কর্মের ফাঁকে ফাঁকেও মনে পড়তো, আমার বৌয়ের লাল টুকটুকে টিপ পরা মুখখানা, সিঁথিতে জ্বলজ্বল করছে সিঁদুরের রেখা। চলছিলো বেশ ভালোই। কিন্তু বয়েস পেরোতে থাকে। আমার স্ত্রী আমায় জীবনের সবচেয়ে বড় উপহারটা দিতে ব্যর্থ হয়। অনেক চেষ্টার পরও। আমরা নিঃসন্তানই রয়ে গেলাম। দু’জনের মধ্যে বাঁধনসূত্রটাই সৃষ্টি হলো না। তাই বয়েস বাড়ার সাথে সাথে স্ত্রীর প্রতি রোম্যান্সও কমতে থাকে। যৌবনের শেষলগ্নে আমার জীবনে এলেন এক মহিলা। ট্রেনের কামরায় আলাপ তাঁর সাথে। মহিলাটি ইঞ্জিনিয়ার; স্মার্ট চেহারা। স্বাভাবিকভাবেই প্রেমে পড়লাম তার। প্রেম এতখানিই গভীর হয়ে গেলো যে ঐ মহিলাকে ছেড়ে থাকার কথা ভাবতেও পারতাম না। এদিকে বৌকে ছেড়েও থাকতে পারবো না। বৌয়ের প্রতি রোম্যান্স নেই ঠিকই, কিন্তু এতবছরের অভ্যেস, ঐ নরম হাতের ছোঁয়া সারাক্ষণই লেগে থাকে আমার অস্তিত্বে। তাই ডিভোর্সের কথা ভাবলেও বাস্তবায়িত করতে পারলাম না। স্ত্রীকে আমি অবহেলা প্রচুর করেছি। তবুও সব বুঝেও কিচ্ছুটি বলেনি কোনওদিন। নিয়মমাফিক রোজ আয়রন করে দিত আমার পোশাক, আমি কাজে বেরোনোর আগে। জানতো, সেই পোশাকে লেগে রয়েছে অন্য এক মহিলার স্পর্শ— বিবাহ-বহির্ভূত এক সম্পর্কের প্রতীক আমার জামাগুলো।

কিন্তু আমার প্রেমিকা আমার স্ত্রীকে সহ্য করতে পারতো না। সতীনকে কে-ই বা মেনে নেয়? আমায় চাপ দিতে থাকে ডিভোর্সের জন্য। নিজের তৈরি ত্রিকোণ প্রেমের জালে নিজেই আটকা পড়লাম। প্রেমিকা জানালো, আমার স্ত্রী তাকে নিত্য ফোন করে তার প্রাণ সংশয়ের হুমকি দিচ্ছে। প্রথমটায় তেমন আমল দিইনি। স্ত্রী আমার মুখচোরা মানুষ। সে ঐ হুম্বিতুম্বি করবে; আর বেশি কি করবে! কিন্তু ধৈর্য্যের বাঁধ ভাঙলো একদিন, যেদিন প্রেমিকা জানালো, ওর বাড়ি গিয়ে না কি ওকে শারীরিক নির্যাতন করে এসেছে আমার স্ত্রী। কাপড়ের আবরণ সরিয়ে দেখালো ক্ষতচিহ্ন। রাগে মাথায় রক্ত উঠে গিয়েছিলো আমার। স্থির করলাম, প্রতিহিংসা! আমার ভালোবাসার মানুষের গায়ে যে ক্ষত চিহ্ন করে দিয়েছে ও সেই ক্ষতের প্রতিশোধ নেবো। ... কিন্তু দৈনন্দিন ব্যবহারে, এই প্রতিহিংসার আঁচ এতটুকুও পেতে দিইনি আমার স্ত্রীকে।

কাজের মধ্যে সময় বের করে বেড়াতে গেলাম পাহাড়ে। ... না, প্রেমিকাকে নিয়ে নয়। স্ত্রীকে নিয়ে। সেই পাহাড়েই ফেলে এসেছি আমার প্রতিহিংসার চিহ্ন। শোধ তুলেছিলাম স্ত্রীর জীবন দিয়ে। ঘুরতে ঘুরতে, গভীর অন্তরঙ্গতার এক মুহূর্তে, আমি ওকে ঠেলে ফেলে দিই পাহাড়ের উঁচু থেকে। সোজা গিয়ে পড়ে খাদে। আর তারপর মৃত্যু!... সবাই জেনেছিলো, পা পিছলে পড়ে গিয়ে মৃত্যু হয়েছিলো। ঘটনাটা সাজিয়েও দিলাম সেভাবে।... রাস্তা এখন কন্টকমুক্ত। এরপর পালা আমার ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে ঘর-বাঁধার। কিন্তু স্ত্রীর মৃত্যুর সাথে সাথেই বিয়ে করলে সন্দেহের তীর আমার দিকেই আসবে। তাই অপেক্ষা করলাম। সেই অপেক্ষা আমার সামনে খুলে ধরলো এক নগ্নতাকে।

... আমার প্রেমিকা কোনওদিন এতটুকুও ভালোবাসেনি আমায়। ভালোবেসেছিল আমার শরীরটাকে। ওর কামের তাড়নায় ক্ষত-বিক্ষত হতে লাগলাম আমি। ক্লান্তি ছেয়ে এলো আমার শরীরে। বুঝলাম সবই; ও আরো অনেক পুরুষের সাথেই শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত। হয়তো বা গোপনে টাকা রোজকারের একটা পথ। সর্পিণীর ছোবলে ছোবলে আমি প্রায় অর্ধমৃত! আবছায়া মনে তখন শুধু ভাসতো শান্ত-স্নিগ্ধ একটা মুখ— সিঁদূরের টিপ পরা। হারিয়ে যাওয়া সেই মুখের হাসি অমলিন। বুঝলাম, আমার প্রেমিকার ছলটা। আমার স্ত্রীর সম্পর্কে যা কিছু অভিযোগ করেছিলো আমায় সব মিথ্যে— সব। প্রতিহিংসার আগুন তখন দাউদাউ করে জ্বলছে আমার মাথায়। আবারও গেলাম পাহাড়ে। এবারে আমার ছলনার শিকার হলো আমার প্রেমিকা। আমার স্ত্রীর মতো একইভাবে ঠেলে ফেলে দিলাম ওকে পাহাড়ের উঁচু থেকে নিচু খাদে। তারপর মৃত্যু!

শুধু তফাৎ একটুখানি। দু’জনের মৃত্যু দু’জায়গায়। আমার স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছিলো যে খাদে সে খাদে ওর মৃত্যু হয়নি। ... ইচ্ছে করেই করিনি। ... ও আমার স্ত্রীর যোগ্য ছিলো না কোনওদিন!”

গল্প শেষ হলো। সারা ঘর তখন হাততালিতে ফেটে পড়েছে। আমার সারা শরীর কাঁটা দিয়ে উঠেছে। এ ঘটনা সত্যি? না কি গল্প? দেখলাম, কারোর মনে এই প্রশ্ন এলো না। সবাই তখন মাতামাতি করছেন বাসুদাকে নিয়ে। আমি পারলাম না। হাতদু’টোও একসাথে জড়ো হলো না। যেন নিথর হয়ে বসে রইলাম।

বছর সাতেক আগে, পাহাড় থেকে পড়ে গিয়ে মারা যান বাসুদার স্ত্রী। শুনেছিলাম, বৌদির প্রেসারের অসুখ ছিলো। মৃত্যুর দিন সকালে ওষুধ খেতে ভুলে গিয়েছিলেন। আর তারই খেসারত দিতে অকালে প্রাণ হারাতে হয়েছিলো বৌদিকে। কিন্তু বাসুদার এই গল্প তো মিলে যাচ্ছে ওঁর জীবনের ঘটনার সাথে। তার মানে বৌদির মৃত্যু নিছক দুর্ঘটনা নয়? এটা একটা খুন? আর বাসুদাই করেছিলেন সেই খুন? এতগুলো বছর ধরে সযত্নে লুকিয়ে লালন করে গেছেন ঘটনাটা? আজকের গল্প কি তারই অভিব্যক্তি? কিন্তু প্রেমিকা? বাসুদা বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কে লিপ্ত ছিলেন? যদি তাই হয় তাহলে কে সেই মহিলা? ... আমি বাসুদার এত কাছের হয়েও কোনওদিন আঁচও পেলাম না? বৌদিও কোনওদিন কিচ্ছুটি বলেননি আমায়! ওঁরা নিঃসন্তান ছিলেন। তাই বৌদি আমায় ছেলের মতোই দেখতেন। কত কথাই তো হতো বৌদির সাথে। কোনওদিন তো এসবের আঁচও পাইনি! তবে কি এ শুধুই গল্প?

প্রশংসা, হাততালি বাঁচিয়ে বাসুদা এসে বসলেন চেয়ারে, আমার পাশেই। দেখলাম, চোখের কোণে জল, ঠোঁটে একটা ক্রূর হাসি। ঘরের সবাই তখন বাসুদার গল্পের প্রশংসায়, আলোচনায় মত্ত। বাসুদা আস্তে আস্তে মাথা নিচু করলেন। হাঁটুর ওপর রাখা কনুইয়ে শক্ত করে ভর দিয়ে দু’হাতে চেপে ধরলেন নিজের মাথাটা। একটা অস্পষ্ট স্বরে চমকে উঠলাম, “অফিসার! অ্যারেস্ট মি!”

ঠাওরাতে পারলাম না। এও কি ওঁর গল্প-অভিনয়ের অংশ? না কী হ্যালুশিনেশনের এফেক্ট? হঠাৎ কী হলো ওঁর? আমি প্রশ্ন করার ক্ষমতাটাও হারিয়ে ফেলেছি তখন। হঠাৎ এক উন্মত্ততায় পেয়ে বসলো ওঁকে। এক ঝটকায় উঠে গেলেন চেয়ার ছেড়ে। ঘরের মাঝে গিয়ে দাঁড়ালেন আবার। আমার চোখে চোখ রেখে খানিক স্থির রইলেন।

—“কী হল, অফিসার?” ঠোঁটে আবার সেই ক্রূর হাসি।

তারপর একটা চিৎকারে কেঁপে উঠলো ঘরটা।

— “অফিসার, অ্যারেস্ট মি!”

এক ঝটকায় নিস্তব্ধ হয়ে গেলো ঘরের গুঞ্জন। সকলেই প্রচণ্ড অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে, অ্যাডভোকেট অভিজিৎ বোসের দিকে। নিস্তব্ধতা ফুঁড়ে শেষবারের মতো ঘরের চার দেওয়ালে আছাড় খেতে লাগলো বাসুদার চিৎকার, “অ্যারেস্ট মি!”