গল্প - মনোজ কর
Posted in গল্পতৃতীয় পর্ব
হিন্দোশিয়া থেকে ফিরে এসে পানু রায় ভাবছিলেন কী করে একটু অর্থপূর্ণ ভাবে সময় কাটানো যায়। সহজাত বুদ্ধির সদ্ব্যবহার করে যদি কিছু মানুষের উপকার করা যায় আর সঙ্গে সঙ্গে কিছু রোজগার হয় তাহলে মন্দ কী? তাছাড়া দেশে বিদেশে মানুষকে চেনা এবং বোঝার অর্জিত অভিজ্ঞতাও তো কম নয়। সুন্দরী আর জগাই এর কোনও কাজ নেই। ওরা দু’জনেই সৎ, পরিশ্রমী এবং বুদ্ধিমান। ওদেরও কাজে লাগানো যেতে পারে এই নতুন উদ্যোগে। ওনার নিজের জন্যও যেমন সুন্দরী এবং জগাই এর জন্যও তেমন শারীরিক এবং মানসিক পরিশ্রমের খুবই প্রয়োজন। আর বেশিদিন কেবল খেয়ে আর ঘুমিয়ে কাটালে শরীর এবং মাথা দু’টোই ভোঁতা হয়ে যাবে। তাই কাউকে কিছু বলার আগে একদিন সুন্দরী আর জগাইকে ডেকে নিজের পরিকল্পনার কথা জানালেন পানু রায়। জানালেন যে উনি একটি উপদেষ্টা সংস্থা চালু করতে চান। এই সংস্থার মূল কাজ হবে বিপন্ন মানুষদের সাহায্য করা বা সঠিক পরামর্শ দেওয়া এবং অবশ্যই অর্থের বিনিময়ে। মূল পরামর্শদাতার কাজ করবেন তিনি নিজে এবং তাকে সহযোগিতা করবে সুন্দরী এবং জগাই। অফিসের ভিতরের কাজ করবে সুন্দরী এবং বাইরের কাজ করবে জগাই। তবে প্রয়োজনে বা ক্ষেত্রবিশেষে এর ব্যতিক্রম হতে পারে। অর্জিত অর্থ পূর্বনির্দিষ্ট অনুপাতে তিনজনের মধ্যে ভাগ হবে। সব শুনে জগাই বলল,’ দাদু, অত হিসেব নিকেশ আমাদের বোঝবার দরকার নেই। তুমি যখন যা বলবে আমরা তখন তা করবো। আমাদের বুঝিয়ে শুনিয়ে নিও আর ভুলভ্রান্তি হলে ক্ষমা করে দিও। তবে চেষ্টার ত্রুটি হবে না সে তুমি খুব ভালোভাবেই জানো। তোমার সঙ্গে টাকার কোনও হিসেব করতে পারব না। সব তুমি রেখ। দরকার হলে চেয়ে নেব। তুমি আমাদের বাবা, মা, দাদু সবকিছু। পানু রায় বললেন,’ তোদের কথা মানছি। তোরা ছাড়া আমার আর কে আছে? তবে ব্যবসার একটা নিয়ম থাকা দরকার। সেই নিয়মেই ব্যবসা চলা উচিৎ। না হলে, ব্যবসা টিকে থাকবে না।‘জগাই আর সুন্দরী চুপ করে রইল।
পরেরদিন সকালে ব্রেকফাস্টের পর সকলকে ডেকে নিজের পরিকল্পনার কথা জানালেন পানু রায়। সবাই মহা উৎসাহে হৈ হৈ করে উঠল। পচা, কেস্ট, মাধাই সবাই বলে উঠলো,’ দাদু, আমরাও আছি তোমাদের সঙ্গে। দরকার পড়লে শুধু একবার ডেকো।‘ মাধাই বলল,’ দাদু, তোমাকে একটা জরুরি খবর দিই।‘ পানু রায় বললেন,’ কী খবর?’ সকলে উৎসুক হয়ে মাধাই এর দিকে তাকিয়ে রইল। মাধাই বলল,’ কেলো দারোগার পদন্নোতি হয়ে বারৌনিতে পুলিশ প্রধান হিসেবে যোগ দিয়েছে গত সপ্তাহে। আজই পেলাম খবরটা।‘ খবরটা শুনে চুপ করে রইল সবাই। শুধু পচা চিৎকার করে উঠলো ,’ দাদু, খেলা জমে যাবে।‘ ঘরভর্তি সবাই হেসে উঠলো হো হো করে।
দেখতে দেখতে নতুন সংস্থার কাজকর্ম শুরু হয়ে প্রায় দেড় বছর কেটে গেল। বেশ কয়েকটা ছোট ছোট সমস্যার দ্রুত সমাধান করে দিলেন পানু রায়। অবশ্যই সুন্দরী এবং জগাই এর সহযোগিতা ছাড়া যে এই কাজগুলো করা যেত না সেকথা বারবার বলেন পানু রায়। ঘটনাচক্রে বেশ কয়েকবার কেলো দারোগার মুখোমুখিও হতে হয়েছে। হেনস্তার একশেষ হয় লোকটা প্রতিবার। মুখে কিছু না বললেও পানু রায়ের ওপর বেশ চটে থাকে সবসময়। কথাবার্তায় আভাসে ইঙ্গিতে বুঝিয়েও দেয়। সুযোগ পেলে সুদে আসলে তুলে নেবার অপেক্ষায় থাকে সবসময়।
সেদিন সকালে অফিসে একটা মোটা আইনের বইয়ে ডুবে ছিলেন পানু রায়।খেয়াল করেননি অনেকক্ষণ ধরে দরজার সামনে অপেক্ষা করছে সুন্দরী। সুন্দরীও ইচ্ছে করেই পানু রায়ের মনঃসংযোগে ব্যাঘাত ঘটাতে চায়নি। বেশ কিছুক্ষণ পরে বই থেকে মুখ তুলে সামনে সুন্দরীকে দেখতে পেয়ে জিজ্ঞাসা করলেন,’ সুন্দরী, কিছু বলবে?’ সুন্দরী বলল,’ একজন অবিবাহিতা মহিলা যিনি একজন অবিবাহিত পুরুষের সঙ্গে বসবাস করেন তার আইনগত অবস্থান কী?’ পানু রায় ভুরু কুঁচকে বললেন,’ আইনগত কোনও বিশেষ অবস্থান নেই। কিন্তু হঠাৎ এ কথা জিজ্ঞাসা করছো কেন?’
-কারণ জনৈকা রেবা কৈরালা বাইরে অপেক্ষা করছেন এবং বলছেন তিনি নাকি কৃষ্ণকালীর সঙ্গে থাকেন।
-কৃষ্ণকালী চৌধুরী –মানে যাঁর সম্পত্তির আইনি সমস্যাটা আমরা কিছুদিন আগে মেটালাম? কিন্তু কৃষ্ণকালী অবিবাহিত বলছ কেন?
- আরে না না, ওনার কথা বলছি না। আমি ওনার ছেলের কথা বলছি।
-তাই বলো। আমি ভাবলাম তোমার হঠাৎ মাথার গোলমাল হল নাকি?
-না, মাথা ঠিক আছে। কিন্তু ঐ বাবা আর ছেলের নাম আমি কিছুতেই মনে রাখতে পারিনা। সবসময়ে কেমন যেন গুলিয়ে যায়।
-শোন বাবার নাম কৃষ্ণকালী আর ছেলের নাম কালীকৃষ্ণ। গুলিয়ে যাওয়াই স্বাভাবিক। কৃষ্ণকালী মানে বাবা বিবাহিত এ নিয়ে কোনও সংশয় তোমার নেই নিশ্চয়ই। ছেলে কালীকৃষ্ণ অবিবাহিত। বাবা ছেলের বিয়ের জন্য মেয়ের সন্ধান করছিলেন বলেই শুনেছি। এখন তো দেখছি গল্প অন্য। যাই হোক তোমার যদি নাম মনে রাখতে অসুবিধে হয় তাহলে বাবাকে বড়কালী আর ছেলেকে ছোটকালী বলে আপাতত চালাও।
-সেটাই সুবিধেজনক হবে। ঠিক আছে।
- সুন্দরী, আমার যতদূর মনে আছে ছোটকালী পুরনো গাড়ির ব্যবসা করে। মাধাই এর সঙ্গে যোগাযোগ আছে বলে জানি। কিন্তু রেবা কৈরালার কী সমস্যা?
-সমস্যাটা রেবা কৈরালার ব্যক্তিগত। ওনার মনে হয় ছোটকালীর সঙ্গে ওনার সম্পর্কের ব্যাপারটা বললে তুমি ওর সমস্যাটা শুনতে আগ্রহী হবে।
-বুঝলাম, কিন্তু সমস্যাটা কী?
-রেবা কৈরালার কাঠমান্ডুতে একটা ক্যাসিনো আছে। আমার মনে হয় সমস্যাটা ক্যাসিনো সংক্রান্ত।
-সুন্দরী, ছাব্বিশের ওপর এক হাজার টাকা বাজি ধর।
হিন্দোশিয়ায় ঘন্টার পর ঘন্টা ক্যাসিনোতে কাটিয়েছে ওরা সবাই। সুন্দরী অদৃশ্য সংখ্যাচাকা ঘুরিয়ে একেবারে ধারে অদৃশ্য রৌপ্যগোলক ছেড়ে দিল। পানু রায় এবং সুন্দরী দু’জনেই ঠিক যেমন সত্যিকারের খেলার সময় সবাই চাকার দিকে তাকিয়ে থাকে তেমনি তাকিয়ে রইল বেশ কিছুক্ষণ। দেখলে মনে হবে সত্যিই যেন খেলছে ওরা। স্তব্ধতা ভেঙে সুন্দরী বলে উঠল,’ দুঃখিত,দাদু। তিন এ থেমেছে চাকা।‘ পানু রায় হেসে বললেন,’ হতভাগ্য আমি পরাজিতের দলে।‘
-আর রেবা কৈরালা?
- চল, বড়কালীকে ফোন করে জানা যাক এই মহিলার আসল পরিচয়। তার আগে বল মহিলার বয়স কত?
-তেইশ-চব্বিশ হবে?
-ফর্সা না শ্যামবর্ণ?
-ফর্সা
-শঙ্খিনী না পদ্মিনী?
-শঙ্খিনী।
-কটিদেশ?
-ক্ষীণ।
-মুখমন্ডল?
-সত্যিই সুন্দরী! দাদু, তুমি পারোও বটে।
-সুন্দরী, জলে নামার আগে বড়কালীকে স্মরণ করা যাক।
-হ্যালো, কৃষ্ণকালী চৌধুরী আছেন? ওনাকে বলুন আমি সুন্দরী, পানু রায়ের অফিস থেকে বলছি। উনি আমাকে চেনেন। হ্যাঁ,সুন্দরী, পানু রায়ের অফিস থেকে।একটু তাড়াতাড়ি করবেন প্লিস। খুব জরুরি দরকার।
সুন্দরী কিছুক্ষণ ধরে রইল। ইশারায় পানু রায়কে বোঝাল ওদিকে কোনও আওয়াজ নেই। কিছুক্ষণ পরে- কী বললেন, দেশের বাইরে? কোথায় গেছেন? কোন নাম্বারে ওনাকে পাওয়া যেতে পারে?
আবার একটু থেমে- ও আচ্ছা, তাহলে আপনার সঙ্গে যোগাযোগ হলে দয়া করে বলবেন আমাকে ফোন করার জন্য। আমার নাম্বার উনি জানেন। খুব দরকার। অবশ্যই বলবেন প্লিস। অনেক ধন্যবাদ।
ফোন রেখে সুন্দরী বলল,’ এলিনা, বড়কালীর সেক্রেটারি। বড়কালী দেশের বাইরে এবং তার ফোন নাম্বার কাউকে দিতে নিষেধ করেছেন বড়কালী।‘
পানু রায় অবাক হয়ে বললেন,’ এলিনা? মনীষার কী হল? ওহো, মনীষার তো বিয়ে হয়ে গেছে।‘
সুন্দরী বলল,’ অনেকদিন আগে। বছরখানেক তো হবেই।‘
-বল কী? এক বছর হয়ে গেল?
-একটা কফি মেসিন আর একটা ইনডাকশন হিটার দেওয়া হয়েছিল। বিল বার করলেই সঠিক তারিখ পর্যন্ত জানা হয়ে যাবে।
- না না, ওসব বাদ দাও। তার মানে কৃষ্ণকালীর সঙ্গে আমরা কোনও কাজ করিনি ঐ নতুন সেক্রেটারি আসার পর অর্থাৎ এক বছর হয়ে গেল আমাদের কৃষ্ণকালীর সঙ্গে যোগাযোগ নেই।
-মনে হয় আমাদের চুক্তিরও শেষদিন পার হয়ে গেছে। বড়কালী এখন আমাদের ক্লায়েন্ট নয়।
-কী আর করা যাবে? আমার মনে হয় এবার রেবা কৈরালার সঙ্গে কথা বলা যাক। শোনা যাক ওনার কী বলার আছে। ওনাকে ভিতরে নিয়ে এস সুন্দরী।
সুন্দরী উঠে যায় এবং কিছুক্ষণ পরে রেবাকে নিয়ে ফিরে আসে। পানু রায়ের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়, ’রেবাদেবী, ইনিই পানু রায়।‘ রেবা কৈরালা, ফর্সা সুন্দরী আস্তে আস্তে পানু রায়ের দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়। পানু রায় হাত বাড়িয়ে দেন। পানু রায়ের হাত নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে বলে,’ আমার সৌভাগ্য, মিঃ রায়।‘ রেবা কৈরালার প্রতিটি পদক্ষেপ এতটাই ধীরস্থির যে সহজেই পানু রায় বুঝলেন যে এই মহিলা আপাদমস্তক পেশাদার। তবে কেন জানি পানু রায়ের মনে হল এই মহিলার পা দু’টি শরীরের তুলনায় একটু বেশি লম্বা। তবে তাতে মহিলার সৌন্দর্য বেড়েছে বই কমেনি। পানু রায় চেয়ারের দিকে হাত দেখিয়ে বসতে বললেন রেবাকে।
-আপনার কথা শোনার আগে আপনাকে জানিয়ে রাখি যে আমি প্রায় একবছর আগে কৃষ্ণকালী চৌধুরীকে আইনি পরামর্শ দেবার ব্যাপারে চুক্তিবদ্ধ ছিলাম। কৃষ্ণকালী একজন প্রখর বুদ্ধিমান ব্যবসায়ী সেইজন্য সম্ভাব্য বিপদ এড়িয়েই উনি সবসময় কাজ করতেন। আইনি পরামর্শ নেবার প্রয়োজন ওনার খুব একটা পড়তো না। যদিও এখন আমরা চুক্তিবদ্ধ নই তবুও ওনাকে সঠিক পরামর্শ দেওয়া এবং সম্ভাব্য বিপদের হাত থেকে ওনাকে রক্ষা করা আমার কর্তব্য বলে মনে করি। সর্বোপরি উনি ব্যক্তিগতভাবে আমার একজন ভালো বন্ধু।
রেবা সোজা হয়ে একটা পায়ের ওপর আর একটা পা তুলে হেলান দিয়ে বসে বলল,’ ঠিক সেই কারণেই আমি আপনার কাছে এসেছি।‘
পানু রায় বললেন,’ আর একটা কথা বলে রাখি আপনাকে যে কোনও ব্যাপারে পরামর্শ দেবার আগে আমি সমস্ত ব্যাপারটা কৃষ্ণকালীকে জানাব এবং আমার কোনও পরামর্শ বা কাজ যে তার বিরুদ্ধে যাবে না সে ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে তবেই কাজে হাত দেব। আশা করি সে ব্যাপারে আপনার কোনও আপত্তি নেই। ‘
-শুধু যে আপত্তি নেই তাই নয় আমি এখানে এসেছি যেহেতু আপনি ওনার আইনি পরামর্শদাতা এবং আমি চাই আপনি ওনার সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
-ঠিক আছে। এই কথাই রইল। এবার বলুন কী বলতে চান।
-নেপালে আমি উত্তরাধিকারসূত্রে একটি সম্পত্তির মালিকানা পেয়েছি।
-কী ধরণের সম্পত্তি?
-একটি ছোট হোটেল এবং ক্যাসিনো।
-নেপালের কয়েকটি ক্যাসিনো সত্যিই বিশাল এবং পৃথিবীবিখ্যাত।
-না না, সেরকম কিছু নয়। এটি আপাতত ছোট কিন্তু যে জায়গায় এটি অবস্থিত সেটি ভীষণ সুন্দর।প্রয়োজনে এটি বাড়াবার জন্য চারিদিকে প্রচুর জায়গা রয়েছে।
-এই সম্পত্তির কতটা অংশ আপনি উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছেন? পুরোটা?
-না। এই সম্পত্তিটি একটি ছোট কোম্পানির। আমার বাবা ঐ কোম্পানির প্রেসিডেন্ট ছিলেন। আমার ভাগে চল্লিশ শতাংশ আর বাকি ষাট শতাংশ চারজনের মধ্যে ভাগ হবে।
-আপনার বাবা কবে গত হয়েছেন?
প্রশ্নটা শুনে রেবার মুখটা কঠিন হয়ে উঠলো। রেবা ততোধিক কঠিনভাবেই উত্তর দিল,’ ছ’মাস আগে। তাঁকে হত্যা করা হয়েছে।‘
পানু রায় বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন,’ খুন?’
-হ্যাঁ, হয়ত খবরের কাগজে পড়েছেন।
-আপনার বাবা কি প্রসাদ কৈরালা?
-আপনি ঠিক বলেছেন। আমি প্রসাদ কৈরালার একমাত্র সন্তান।
-আমি যতদূর জানি এই হত্যারহস্যের আজও কোনও সমাধান হয়নি।
-মিঃ রায়, কোনও হত্যারহস্যেরই সমাধান নিজে নিজে হয়না।
-দেখুন, এটা যদি আপনার কাছে কোনও অস্বস্তিকর বিষয় হয় তাহলে এই নিয়ে আলোচনার দরকার নেই।
-না না, সেরকম কিছু নয়।জীবনে অনেক কিছুই অস্বস্তিকর ঘটে । আমি আপনার কাছে আসার আগে নিজের অনুভূতি প্রকাশ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েই এসেছি।
-ঠিক আছে। বলুন এই সম্বন্ধে আপনার কী বলার আছে।
-আমার মা মারা যায় যখন আমার বয়স চার বছর। তখনই নাকি শুরু হয় সাতবছরের দুর্ভাগ্যচক্র। অন্তত আমার বাবা তাই বিশ্বাস করত। বাবা সাঙ্ঘাতিকরকম কুসংস্কারাচ্ছন্ন ছিল। আমার মনে হয় সব জুয়াড়িরা ঐরকমই কুসংস্কারাচ্ছন্ন হয়। আস্তে আস্তে বাবা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে এবং আর্থিক অবস্থা ক্রমশ খারাপ হতে শুরু করে। বাবার হাতে তখন না ছিল কোনও টাকা আর না ছিল কোনও কাজ।বাধ্য হয়ে বাবা একটা বেআইনি শুঁড়িখানায় কাজ শুরু করে। কিছুদিন বাদে ঐ শুঁড়িখানার মালিক মারা যায়। বাবা তখন নিজেই শুঁড়িখানাটা চালাতে থাকে। মালিকটার কোনও ছেলে মেয়ে ছিলনা বা থাকলেও কেউ এসে বাবার কাছ থেকে মালিকানা দাবি করেনি। তারপর অনেকদিন বাদে যখন শুঁড়িখানা আইনসিদ্ধ ব্যবসার অন্তর্গত হল তখন বাবা ওটাকে ছোটখাট সুন্দর একটা হোটেল হিসেবে গড়ে তুলল। আমি বাবার দুর্ভাগ্যের গল্প বলে আপনাদের সময়ের অপচয় করছি না তো?
-একেবারেই নয়। আপনি বলুন।
-বাবা পরবর্তীকালে প্রভূত অর্থের অধিকারী হয়। বাবার জুয়ার নেশা ছিল। সৌভাগ্যক্রমে জুয়া থেকেও বাবা অনেক টাকা রোজগার করে। বাবা যে কেবল বেআইনি ব্যবসার ব্যাপারেই উৎসাহী ছিল তা কিন্তু নয়। তবুও শুঁড়িখানার ব্যবসাটা বাবা চালাতেই থাকল। জুয়া আর টাকা ওড়াবার নেশা ছিল বাবার রক্তে। আর সকলের মত জুয়াড়িদের মধ্যে অনেক ভাল গুণও থাকে।জুয়াড়িরা হেরে গিয়েও নিজেদের আবেগ সংবরণ করতে জানে। সর্বস্বান্ত হয়েও তারা নিজেদের আচরণে কথায় তা প্রকাশিত হতে দেয়না। কিন্তু জুয়াড়িরা তাদের পরিবার পুত্র-কন্যাদের সময় দিতে পারে না কারণ জুয়া খেলা হয় রাত্রে। সুতরাং আমিও আমার বাবাকে খুব একটা কাছে পাইনি। বাবা আমাকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বড় বড় বোর্ডিং স্কুলে ভর্তি করে দিত। জুয়াড়ির মেয়ের পক্ষে বোর্ডিং স্কুলে ঢোকা সহজসাধ্য ছিল না। তাই বাবা শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারী হিসাবে পরিচয় দিত। শেয়ারবাজারের জুয়া খেলা সমাজের চোখে অন্যায় নয় কিন্তু জুয়ার টেবিলে মাঝরাতে জুয়াখেলা সমাজের কাছে একেবারেই গ্রহনযোগ্য নয়। বাবা কোনওদিন আমাকে ছোট বা মাঝারি মাপের বোর্ডিং স্কুলে ভর্তি করতে চাইত না। আর আমার পক্ষেও ঐসব বড়লোকদের নাকউঁচু ছেলে মেয়েদের সঙ্গে ওঠাবসা বেশ কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ত। তারপর বছর ঘুরতে না ঘুরতেই কী ভাবে কে জানে বাবার আসল পরিচয় জানাজানি হয়ে যেত আর আমাকে স্কুল ছাড়তে হত। আমিও বাবার কিছু গুণ রপ্ত করেছিলাম। আমার মুখচোখে আমার অনুভূতির কোনও প্রকাশ হতনা। বন্ধুত্বের কোনওরকম তোয়াক্কা করতাম না আমি কারণ আমি বড়লোক হবার ভাণ করতে পারতাম না। এমনি করে স্কুলের পড়া শেষ করে আমি নিজে রোজগারের পথ খুঁজতে আরম্ভ করলাম। পেশাদারি মডেলিং এর কাজ করে বেশ কিছু পয়সা উপার্জন হল আমার। ইতিমধ্যে বাবা কাঠমান্ডুতে চলে গিয়ে কয়েকজন মিলে একটা কোম্পানি বানিয়ে একটা সম্পত্তি কিনে সেখানে একটা মাঝারি মাপের হোটেল বানিয়ে আমাকে কাঠমান্ডুতে চলে আসতে বলল। কিন্তু আমি যা ভেবেছিলাম তা হলো না। বাবা সারারাত বাইরে থাকতো। সকালে ফিরে ঘুমিয়ে পড়ত। দুপুর তিনটের সময় ঘুম থেকে উঠতো। আবার সন্ধ্যে হতে না হতেই বেরিয়ে যেত। ইতিমধ্যে সম্পত্তির দাম বাড়তে থাকল। দেখলাম আমাদের হোটেলের পাশের বড় জমিটা কিনল একদল লোক। তারা আমাদের হোটেলটা কিনতে চাইল। শুনলাম ঐ জমিদু’টো একত্র করে ওরা নাকি সুইমিং পুল, নাইট ক্লাব সমেত বিশাল পাঁচতারা হোটেল বানাবে। বাবা বিক্রি করতে রাজি ছিল কিন্তু দামে পোষাচ্ছিল না। খবর পাওয়া গেল যারা জমিটা কিনতে চাইছে তারা প্রভাবশালী সমাজবিরোধী। বাবা তাদের কাছে অনেক দাম চেয়ে বসল। ওরা ক্ষেপে গেল। নানারকম ভাবে বাবাকে ভয় দেখাতে শুরু করল।বাবা ওদের পাত্তা না দিয়ে একটা বিশাল অঙ্কের টাকা চেয়ে চেপে বসে রইল। ওটাই ছিল বাবার দিক থেকে মারাত্মক রকমের ভুল।
পানু রায় জিজ্ঞাসা করলেন’ ওরাই কি আপনার বাবাকে খুন করেছিল?’
রেবা বলল,’ আমি জানিনা।কেউ জানে না। বাবা খুন হয়েছিল এবং তাতে অন্য বিনিয়োগকারী যারা ছিল মানে বাবার পার্টনারেরা ভয় পেয়ে গেল। তারা যে কোনও দামে তাদের অংশ বিক্রী করে দিতে রাজি ছিল। কিন্তু বাবার মৃত্যুতে ঐ লোকগুলোর কোনও লাভ হল না।
-তারপর কী হল?
-আমি উত্তরাধিকারসূত্রে চল্লিশ শতাংশ পেলাম।বাকি ষাট শতাংশ রইল অন্য চারজন পার্টনারের কাছে, প্রত্যেকের পনের শতাংশ। আমার কাছে যখন বাবার মৃত্যুসংবাদ এসে পৌঁছলো আমি একেবারে ভেঙে পড়লাম। প্রথম ধাক্কা সামলে ওঠার আগেই একজন লোক মালিকানা অর্জন করার পদ্ধতি শুরু করে দিল।বাকি চারজনের মধ্যে তিনজন ঐ লোকগুলো যা দাম দেবার প্রস্তাব দিয়েছিল তাতেই রাজি হয়ে গেল। বাবার মৃত্যুর আগে থেকেই আমার কালীকৃষ্ণের সঙ্গে আলাপ ছিল এবং মাঝেমাঝেই আমাদের যোগাযোগ হত।
সুন্দরী জিজ্ঞাসা করল,’ ছোটকালী?’ রেবা বুঝতে না পেরে জিজ্ঞাসা করল,’ কিছু বললেন?’ পানু রায় বললেন,’না, না। কিছু নয়। আপনি বলুন।
রেবা বলতে থাকল,’ আমি কালীকৃষ্ণের বাবার মধ্যে বিশেষ কিছু দেখতাম। উনি ঠিক আর পাঁচজনের মত নয়। বাবার মৃত্যুর অব্যবহিত পরেই উনি আমার সঙ্গে দেখা করে জানতে চাইলেন এই ব্যাপারে আমি কী জানি। আমি যা জানি বললাম। কালীকৃষ্ণের বাবা আমার আগেই আন্দাজ করেছিলেন যে অন্য পার্টনারেরা যা দাম পাবে তাতেই তাদের অংশ বিক্রী করে দেবে। তিনি ঐ অদৃশ্য বিনিয়োগকারীকে হারিয়ে দেবার জন্য বেশি দাম দিতে চাইলেন কিন্তু ততক্ষণে তিনজন অংশীদার তাদের অংশ বিক্রী করে দিয়েছে। কালীকৃষ্ণের বাবা চতুর্থজনের কাছ থেকে পনের শতাংশ কিনে নিলেন। এখন পরিস্থিতি এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে। কালীকৃষ্ণের বাবা অর্থাৎ কৃষ্ণকালীবাবুর কাছে পনের শতাংশ এবং আমার কাছে চল্লিশ শতাংশ। এখন নতুন একদল লোক পুরো একশ শতাংশ কেনার চেষ্টা করছে।
পানু রায় জিজ্ঞাসা করলেন,’ আপনি কী করতে চান?’
রেবা বলল,’ আমি বিক্রী করতে চাই। কিন্তু আমি চাইনা এরা বাবাকে খুন করে সস্তায় আমার অংশ কিনে নিক।বাবার জীবন গেছে। আমি চাইনা এই লোকগুলো বাবার মৃত্যুর কোনও সুযোগ নিক এবং লাভবান হোক।‘
পানু রায় জিজ্ঞাসা করলেন,’ আর কিছু বলবেন?’
রেবা বলল,’ হ্যাঁ, আরও একটা বিষয় বলার আছে।‘
-বলুন
-একজন লোক যাকে আমি পাখিবাবু বলে উল্লেখ করব সে এই শহরে আছে। বলা বাহুল্য পাখিবাবু ওনার আসল নাম নয়। আমি জানিনা পাখিবাবু ঐ নতুন দলটার প্রতিনিধি কি না কিন্তু আমি পাখিবাবুকে ব্যক্তিগতভাবে চিনি। যখন আমি কাঠমান্ডুতে মডেলিং করতাম তখন থেকেই চিনি। আমি এটুকু জানতাম যে বাবার মৃত্যুর পরে পরেই যখন অন্য তিনজন পার্টনার চরম আতঙ্কিত অবস্থায় ছিল তখন একজন লোক নগদ টাকার বিনিময়ে তাদের অংশ লিখিয়ে নিয়ে চলে যায়। তাকে তারপর আর কেউ দেখেনি। আমি কয়েকদিন আগে পর্যন্ত এটাই জানতাম। এখন জানলাম পাখিবাবু ঐ অংশগুলো নিজের নামে সরকারি খাতায় নথিবদ্ধ করতে চায় এবং দু’দিন আগে আমাকে ফোন করে বলে যে সে আমার এবং কৃষ্ণকালীবাবুর অংশ কিনে নিতে আগ্রহী এবং আমাকে কাল রাত্রি ৮-৩০এ তার সঙ্গে দেখা করার অনুরোধ জানিয়েছে।
-আপনি কী করতে চান?
-আমি কৃষ্ণকালীবাবুর সঙ্গে দেখা করে জানতে চাই তিনি রাজি আছেন কি না। আমি চাই উনি এবং আমি একসঙ্গে বিক্রী করি তা না হলে আমার অংশ আগে কিনে নিলে নিয়ন্ত্রণ পাখিবাবুর হাতে চলে যাবে এবং সে ক্ষেত্রে কৃষ্ণকালীবাবুর অনেক লোকসান হয়ে যাবে। আমি কৃষ্ণকালীবাবুর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু উনি দেশের বাইরে।ওনার সেক্রেটারি আমাকে সহ্য করতে পারে না এবং আমাকে কোনওরকম ভাবেই সহযোগিতা করছে না।
-ওনার ছেলে কালীকৃষ্ণ কী বলছে? সে কি জানে তার বাবা কোথায়?
-কালীকৃষ্ণ শহরে নেই। ফোন পাওয়া যাচ্ছে না।
-আমার মনে হয় কৃষ্ণকালী ঐ লোকটার সঙ্গে আপনার দেখা করার ব্যাপারটা পছন্দ করবেন না। উনি সম্ভবত চাইবেন আমি পাখিবাবুর সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করি।
-আমি বুঝতে পারছি। কিন্তু আমার কাছে এটা আমরা বাবার সম্মানের ব্যাপার। আমি সেইখানে শুরু করতে চাই যেখানে আমার বাবা শেষ করে গেছে।
-আপনি চান আপনার বাবার খুনী ধরা পরুক?
-অবশ্যই, এবং সেটাই আপনার কাছে আসার অন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ।
- বলুন সে ব্যাপারে যা যা বলতে চান।
-আপনি আমার চেয়ে ভাল জানেন যে এই ধরণের জমিজমাসংক্রান্ত খুনখারাপির ব্যাপারে পুলিশ অনেক বড় বড় কথা বলে। সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে এই শহরের শান্তিরক্ষাকারীরা যে এইসব গন্ডগোল একদম সহ্য করবে না সে কথা সকলকে জানায় এবং প্রতিশ্রুতি দেয় যে কয়েকদিনের মধ্যেই খুনের তদন্তের নিষ্পত্তি হবে এবং খুনী উপযুক্ত শাস্তি পাবে। কিন্তু আজ অবধি আমি একটাও খুনের তদন্ত শেষ হতে দেখিনি । একবার শুধু হয়েছিল যেখানে একটা ভুল লোককে খুনী বলে ধরে আনা হয়েছিল।
- তাহলে আপনি আমার কাছ থেকে কী চান?
-আমার অংশীদারত্ব বিক্রীর কাজটা শেষ হলে আমি চাই আপনি আমার বাবার খুনে ব্যাপারটা দেখুন। আমি চাই আপনি কিছু সূত্র বের করে সেটা পুলিশের হাতে দিন যাতে বাকি কাজটা তারা করতে পারে। সূত্রের সন্ধান এবং ব্যাখ্যা করার কাজটা পুলিশের দ্বারা হবে না। ওটা যদি দয়া করে আপনি করেন।
-গোয়েন্দা এবং পুলিশের মধ্যে সমন্বয়সাধনের জন্য একজন আইনি পরামর্শদাতার কোনও প্রয়োজন নেই। পুলিশ যাতে খুনের তদন্তের নিষ্পত্তি করতে পারে সেটা নিশ্চিত করার জন্য আমাকে নিয়োগ করার কোনও প্রয়োজন নেই।
-কিন্তু পুলিশ নিজে নিজে আজ অবধি কী করতে পেরেছে?
-আমি জানি না।
-কেউ জানে না।
-আপনি কি মনে করেন যে আপনার পরিচিত এই পাখিবাবু আপনার বাবার খুনের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে?
-থাকতেই পারে এবং তার সম্ভাবনা প্রবল।
-সেক্ষেত্রে আমার মনে হয় আপনি নিজে কথা না বলে কৃষ্ণকালীকে এ ব্যাপারে কথা বলতে দিন।
-আপনি হয়ত জানেন না যখন কৃষ্ণকালীবাবু ওনার পনের শতাংশ কেনেন তখন ভেবেছিলেন আমি ওনার পুত্রবধূ হব এবং আমাদের বিবাহের উপহার হিসাবে এই পনের শতাংশ উনি আমাকে দেবেন। কিন্তু এখন পরিস্থিতি সম্পূর্ণ পালটে গেছে।
-আপনার সঙ্গে আমি কী করে যোগাযোগ করতে পারব?
-আপনি আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন না। আমি আপনার সঙ্গে কাল সকাল দশটায় যোগাযোগ করতে পারি?
পানু রায় একবার সুন্দরীর দিকে তাকালেন। বললেন,’ ঠিক আছে। কাল সকাল দশটায়।‘
রেবা সুন্দরীকে জিজ্ঞাসা করল,’আমি কি পিছনে বেরোবার দরজা দিয়ে বেরুবো?’
পানু রায় বললেন, ‘হ্যাঁ’। রেবা দরজা খুলে ঘাড় ঘুরিয়ে পানু রায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,’ কাল কথা হবে। এরমধ্যে দয়া করে যদি কৃষ্ণকালীবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন তাহলে ভীষণ উপকার হয়।‘রেবা কৈরালা বেরিয়ে গেল।দরজা বন্ধ হয়ে গেল।
পানু রায় বললেন,’ সুন্দরী, আমার মনে হয় না এই মহিলার সঙ্গে জুয়া খেলা ঠিক হবে।‘
সুন্দরী মুচকি হেসে বলল,’দাদু, এতক্ষণ কী খেলছিলে তাহলে?’
পানু রায় বললেন,’ জানি না। আমার মনে হয় এখন আমার বড়কালীর নতুন সেক্রেটারির কাছে যাওয়া উচিৎ। দেখি কোনও নতুন খবর পাওয়া যায় কি না?
সুন্দরী বলল,’ দাদু, রেবা যদি নিজের অংশ বিক্রী করে দেয় এবং তাতে যদি বড়কালী রাজি হয়ে যায় তাহলে কি তুমি ঐ খুনের ব্যাপারটায় মধ্যস্থতা করতে রাজি হবে?
-আমি জানি না, সুন্দরী। সবটাই নির্ভর করবে পরিস্থিতির ওপর। তবে আমার মনে হয়না সে ব্যাপারে আমাকে ওর খুব একটা দরকার লাগবে।
-দাদু, আমার কিন্তু ব্যাপারটা সুবিধের মনে হচ্ছে না। আমার কেমন যেন বারবার মনে হচ্ছে এই ব্যাপারটায় তোমার না জড়ানোই ভাল।
পানু রায় হেসে বললেন,’ এখনই এত দুশ্চিন্তা করার কিছু নেই। আপাতত এলিনা রাইএর সঙ্গে দেখা করে নতুন কিছু জানতে পারি কি না দেখি। তারপর অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা।‘
0 comments: