ছোটগল্পঃ অপরাহ্ণ সুসমিতো
Posted in ছোটগল্প
ছোটগল্প
বাউল ও বাউলিনী
অপরাহ্ণ সুসমিতো
‘এই জীবন তো শূন্য না
ঘরের মইধ্যে ঘর বসত করে
পিরিতি বান্ধে দয়াল, এই তো সান্ত্বনা’
বাউল গান বাঁধে । পথের পাশে বট গাছ, ছায়ায় বসে চোখ বন্ধ করে রাখে । বাম হাতের তালুতে অল্প পরিমানে গাঁজা, ডান হাতের বুড়ো আঙ্গুলে ঘষে ঘষে মিহি করে । পুরিয়া বানাবে । তার এখন অনিত্যতায় পেয়েছে । একটা গান মাথায় ঘুণ পোকার মতো ঘুরঘুর করে । গানটা না বাঁধা পর্যন্ত শান্তি নাই ।
অন্য পাশে পা ছড়িয়ে বসে আছে বাউলের সঙ্গিনী । বাউলিনী । বাউলের জন্য নারকেলের আঁশ ছিঁড়ে ছিঁড়ে ছোবড়ার পুটলি বানায়,কল্কিতে গাঁজার উপর রেখে আগুন ধরাবে । পুটলি বানানো শেষ হলে একটা ছোট দড়ি পায়ের বুড়ো আঙ্গুলে বেঁধে ওর ভিতর দিয়ে কল্কিটা টেনে টেন পরিস্কার করে ।
খুব অভিজ্ঞতায় এই ছিলিম প্রস্তুতি । মিনিট দশেক এর মধ্যে কল্কি রেডি । রেডি করে বাউল কল্কিটা করজোরে বাউলিনীর কাছে মাথা নিচু করে এগিয়ে দেয় ।
: তুই হইলি পবিত্র জননীর ছবি, আমার প্রেমের আরশ । তুই শুরু কর ।
বাউলিনী হেসে কল্কিটা আবার বাউলের কাছে ফিরিয়ে দেয় ।
:গুরু আপনি ভব তরণী । পাড় করেন আমারে ..
বাউল জোর করে কল্কি আবার বাউলিনীকে দেয় । পথের ধারে বটের ছায়ায় গাঁজার ধোঁয়ায় মৌ মৌ করে ওঠে । দুপুরের আধো রোদে নেশা লাটিমের মতো ঘুরপাক খেতে থাকে । সংসারের অনিত্যতায় পেয়ে বসে দুজনকে..
গুনগুন করে উঠে ।
দুই কূল দিয়ে নদী বাঁধে ঘর
আলো বাঁধে ঘর অন্ধকারে
বাউল ডাক দেয় সঙ্গিনীকে;
: সোনা পাখি
: বলেন গুরুজি
: কাছে আয়
: আরো
: ডর করে
: কিসের ?
: ঘর
বাউলের ভিতরে খলবল কই বর্ষার গতরে ঘাঁই মারে । সঙ্গিনীকে একটানে বুকে টেনে আনে । উম গতরে মনে হয় মিশে যাবে দুইজন । হাতের বিকশিত আঙ্গুল, ঠোঁটর মোহনা পরষ্পর শিউলী ফোটায় । দুপরের রোদ ছায়া দিতে থাকে আচানক ।
বাউলিনী ফিসফিস করে বলে;
: বাচ্চা চান গুরুজী ?
: চল ঘর বাঁধি
গুরুজির ওম ওংকার মেঘ গলা ।
কী যেন পাখি উড়ে যায়, কী যেন পাতা জড়ে পড়ে ।
প্রার্থনা জানি না, মিনতি জানি, বাসনা জানি...
ও বাউল বাউলিনী
0 comments: