Next
Previous
7

সম্পাদকীয়

Posted in

সম্পাদকীয়


সবেমাত্র চলে গেলো বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজো। কত জাঁকজমক, কত আড়ম্বর। প্রসঙ্গক্রমে হঠাৎই মনে পড়ে গেলো জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়ির দুর্গাপুজোর কথা। ভাবতে অবাক লাগে, তত্ত্ববোধিনী সভা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার দশ বছর পরেও ঠাকুরবাড়িতে দুর্গাপুজো হতো। মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ এই সময়টা ইচ্ছে করেই কাটাতেন প্রবাসে। তবে দ্বারকানাথ অত্যন্ত দরাজ হস্তে প্রচুর খরচ করতেন। জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির মা দুর্গাকে খাঁটি সোনার গয়না দিয়ে সাজানো হতো এবং সালংকারা সেই প্রতিমাকেই বিসর্জন দেওয়া হতো গঙ্গায়। ক্ষিতীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিকথায় পাওয়া যায় সে কথা, ‘...ভাসানের সময়েও সে গহনা খুলিয়া লওয়া হইত না—সম্ভবত ভাসানের নৌকার দাঁড়ি মাঝি বা অন্য কর্মচারীরা তাহা খুলিয়া লইত, কিন্তু প্রতিমার গা-সাজানো গহনা আবার ঘুরিয়া ফিরিয়া বাড়িতে উঠিত না।’ আবার এই বাড়ির কনিষ্ঠ পুত্রটিই ১৯৩৫ সালের ২৯ আগস্ট একটি ব্যক্তিগত চিঠিতে রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়কে লিখলেন, ‘এখানকার বন্যাপীড়িতদের সাহায্যার্থে অর্থসংগ্রহ-চেষ্টায় ছিলুম। ব্যক্তিগতভাবে আমারও দুঃসময়। কিছু দিতে পারছিলুম না বলে মন নিতান্ত ক্ষুব্ধ ছিল। এমন সময় দেশ ও আনন্দবাজারের দুই সম্পাদক পূজার সংখ্যার দুটি কবিতার জন্যে এক শ টাকা বায়না দিয়ে যান, সেই টাকাটা বন্যার তহবিলে গিয়েছে। আগেকার মতো অনায়াসে লেখবার ক্ষমতা এখন নেই। সেইজন্যে ‘বিস্ময়’ কবিতাটি দিয়ে ওদের ঋণশোধ করব বলে স্থির করেছি। ক্লান্ত কলম নতুন লেখায় প্রবৃত্ত হতে অসম্মত।’ ... বাহ রে বাঙালি!

কথায় কথা বাড়ে। রবীন্দ্রনাথকে মনে পড়লে নোবেলের কথা আসবেই। আর নোবেলের কথা এসেই গেলে এই মুহূর্তে অভিজিতের কথা এড়িয়ে যাই কি করে? হ্যাঁ, অভিজিৎ বিনায়ক ব্যানার্জী; সাউথ পয়েন্ট, প্রেসিডেন্সি, জে এন ইউ, ভি সি ঘেরাও, ১০ দিন তিহার জেলে কাটানো, শেষে ‘চ্যানেল করে’ নোবেল বাগানো। মাঝে পরকীয়া, বিপথু সন্তানের আত্মহনন, বিবাহবিচ্ছেদ...

দাঁড়ান, দাঁড়ান... সমস্যাটা ঠিক কোথায়? নোবেল পাওয়ায়, নাকি সাফল্য অর্জন করায়?  এই নোংরামীর পিছনের আসল উৎসটা কি? উদ্দেশ্যপ্রণোদিত রাজনৈতিক অপপ্রচার, নাকি আদিম ঈর্ষা? আমরা খেয়ালই করি না, এই মারাঠি মায়ের কৃতী সন্তানটি কিন্তু মাতৃভাষায় বলতে অনুরোধ করা হলে নির্দ্বিধায়, না মারাঠি নয়, বাংলায় বলে ওঠেন! কি আশ্চর্য!

একটু বিস্তারিতই বলি। গণতান্ত্রিক(?) প্রক্রিয়ার নির্বাচন করে যে রাষ্ট্র প্রধানকে আমরা গণপ্রতিনিধি হিসাবে শাসন যন্ত্রের শীর্ষে বসাচ্ছি, একদিন সেইই  ঠিক করে দিচ্ছে আমরা কী খাবো, কী পরবো, কী পড়বো, এমনকি কী চিন্তা করবো, কোন রাস্তায় চিন্তা করবো। জাস্ট নেওয়া যাচ্ছে না আর! আর ওই আদিম ঈর্ষার কথা বলছিলাম না, ওটা মনে হয় ঠিক বলছিলাম না। কেননা, আদিম ঈর্ষার প্রেক্ষাপটে সক্রিয় ছিলো স্বচ্ছ জান্তব প্রতিদ্বন্দ্বিতা; এখনকার মতো হীনমন্যতা নয়! - আমি পাচ্ছি না, তুমি কেন পাবে!- মানবিকতার কি চরম দীনতা!

এমনিতেই হেমন্ত বিষণ্ণতার ঋতু। আরও বিষণ্ণতা ওঁৎ পাতে আনাচে কানাচে... অথচ

কথা ছিলো রক্ত-প্লাবনের পর মুক্ত হবে শস্যক্ষেত...
কথা ছিলো, কথা ছিলো আঙুর ছোঁবো না কোনোদিন...
কথা ছিলো, চিল-ডাকা নদীর কিনারে একদিন ফিরে যাবো...
একদিন সুবিনয় এসে জড়িয়ে ধ’রে বোলবে: উদ্ধার পেয়েছি...
– রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ

সুস্থ থাকুন, সৃজনে থাকুন
শুভেচ্ছা নিরন্তর