ত্রয়োদশ পর্ব
ছোটকালীর অফিসের গেট পেরিয়ে একটু এগিয়ে পানু রায় দেখলেন যে সবকটা সেলসম্যানই খদ্দের সামলাতে ব্যস্ত। অফিসের সামনে গাড়ি রেখে প্রায় ছোটকালীর অফিসের দরজার কাছে পৌঁছোবার সঙ্গে সঙ্গেই একটা ছেলে এসে সামনে দাঁড়ালো। বললো,’ স্যার গাড়িটা পাল্টাবেন?’ পানু রায় বললেন,‘না, আমি কালীকৃষ্ণের সঙ্গে দেখা করতে চাই।‘ কিন্তু ছেলেটা ছাড়বার পাত্র নয়। বললো,’ আপনার গাড়িটা ভালো কন্ডিশনেই আছে। যদি ফার্স্ট- হ্যান্ড হয় তাহলে …’ পানু রায় ছেলেটার কথায় কান না দিয়ে এগিয়ে গিয়ে ছোটকালীর সেক্রেটারির দিকে না তাকিয়ে একেবারে দরজা ঠেলে ছোটকালীর ঘরে ঢুকে গেলেন। ছোটকালী মুখ তুলে পানু রায়কে দেখে অবাক হয়ে গেল। পানু রায় বললেন,’ হঠাৎ এভাবে ঢুকে পড়ার জন্য দুঃখিত,কালীকৃষ্ণ । কিন্তু ব্যাপারটা অত্যন্ত জরুরি। আমি তোমার সঙ্গে একান্তে কিছু জরুরি কথা বলতে চাই। এখানে আসি অবধি একটা ছেলে আমার মাথা খারপ করে দিচ্ছে। আমি কী করে এই ছেলেটার হাত থেকে রেহাই পাব?’ ছোটকালী বলল,’ একটাই রাস্তা আছে নিস্কৃতি পাবার। একটা গাড়ি কিনে নিন।‘ পানু রায় ছেলেটির দিকে তাকিয়ে বললেন,’ আমি ব্যক্তিগত দরকারে এখানে এসেছি। গাড়ি কেনা বা বিক্রীর জন্য নয়।‘ ছোটকালী বলল,’ আপনি নিজের গাড়িতে এসেছেন না ট্যাক্সিতে? ‘ পানু রায় বললেন,’নিজের গাড়িতে।‘ ছোটকালী ছেলেটিকে কাছে ডেকে বলল,’ গাড়িটাকে নিয়ে একটু চালিয়ে দেখ কী অবস্থায় আছে। সেইবুঝে মিঃ রায়কে একটা অফার দাও। মনে রেখ ওনার জন্য আমাদের তরফ থেকে যতটা বেশি সম্ভব ডিসকাউন্ট দেওয়া যায় ততটাই দিও।‘ পানু রায় বললেন,’ ঠিক আছে তাতে যদি কেউ উত্তেজনা কমে তাহলে তাই করো। কিন্তু আমাদের এক্ষুনি অনেকগুলো জায়গায় যেতে হবে। যদি গাড়িটা নিয়ে ওরা বেরোয় তাহলে তোমার ড্রাইভারকে বলো গাড়ি রেডি করতে।‘ ছেলেটি বেরিয়ে গেল। ছোটকালী বলল,’ঠিক আছে, বলুন কী ব্যাপার।‘
-তোমার কাছে বন্দুক আছে?
-কী ব্যাপার বলুন তো?
-আমি জানতে চাই তোমার কাছে বন্দুক আছে কি না। তুমি এখানে বড় অ্যামাউন্টের ক্যাশ রাখ এবং…
-হ্যাঁ, আছে।
-লাইসেন্স আছে?
-অবশ্যই। আপনি ভাববেন না আমি এখানে বেআইনি ব্যবসা চালাই আর কোনও লোক আচমকা ঢুকে পড়লে তাকে বন্দুক দেখিয়ে বের করে দিই।
-বন্দুকটা একবার আমাকে দেখাও।
ছোটকালী খানিকক্ষণ পানু রায়ের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। বোঝার চেষ্টা করল ব্যাপারটা কী ঘটতে চলেছে।কিছু আন্দাজ করতে না পেরে ডানদিকের ড্রয়ারের ওপরের তাক থেকে বন্দুকটা বের করে পানু রায়ের দিকে এগিয়ে দিল। পানু রায় বন্দুকটা হাতের তালুতে নিয়ে বারদুয়েক ওপর- নিচ করে বললেন,’ বেশ ভালো বন্দুক। এটা কি তোমার বাবার কাছে যেটা আছে অবিকল সেটার মতই?’ ছোটকালী বলল,’ আমি সেরা জিনিস ছাড়া ব্যবহার করি না। এটা বাবাই আমাকে দিয়েছে। একেবারে অবিকল…’ কথা শেষ হবার আগেই পানু রায় ট্রিগার টেনে দিলেন। প্রচন্ড শব্দ করে একটা বুলেট মেহিগিনির টেবিলের কোনে ধাক্কা খেয়ে পাশের দেয়ালের মধ্যে আধখানা ঢুকে আটকে গেল। ছোটকালী চিৎকার করে উঠলো,’ আরে আপনার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে ? আচ্ছা লোকতো আপনি। ওটা রাখুন।‘ পানু রায় স্তম্ভিত হয়ে বোকার মত বন্দুকটার দিকে তাকিয়ে রইলেন। ততক্ষণে দরজা খুলে ছোটকালীর সেক্রেটারি আর তিন চারটে ছেলে ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়েছে। ওদের চোখে মুখে ভয় এবং উৎকণ্ঠা। একটা ষণ্ডামত ছেলে এগিয়ে এসে পানু রায়কে বলল,’ ওটা এক্ষুনি নিচে ফেলুন। এক্ষুনি ফেলুন না হলে এক ঘুষিতে আপনার চোয়াল ভেঙে দেব!’ পানু রায় অবাক হয়ে বললেন,’ হে ঈশ্বর! আমি জানতাম না ওতে গুলি ভরা আছে।‘ ছোটকালী ছেলেটিকে বলল,’ ঠিক আছে। ইনি মিঃ পানু রায়। আমাদের পারিবারিক বন্ধু এবং বাবার আইনি পরামর্শদাতা।‘ ছেলেটি জিজ্ঞাসা করল,’ ডাকাতি করতে আসেনি?’ ছোটকালী বলল,’না’। পানু রায় টেবিলের দিকে খানিকক্ষণ তাকিয়ে রইলেন তারপর বললেন,’ আমি ট্রিগারটা একটু পরীক্ষা করছিলাম। কিন্তু এটা এত মসৃণ যে আমি প্রায় চাপ দেবার আগেই ব্যাপারটা ঘটে গেল।‘
-সেই জন্যই আমি এটাকে এখানে রেখেছি। এটা রোজ তেল দিয়ে পরিষ্কার করা হয়। অত্যন্ত দামি এবং মসৃণ এটা। যেহেতু এটা আত্মরক্ষার জন্য ব্যবহৃত হয় সেজন্য এটাতে গুলি ভরা থাকে। কোনও বুদ্ধিমান লোক ডাকাত ঘরে ঢুকলে খালি বন্দুকের ট্রিগার টেপে না।‘
পানু রায় বন্দুকটা ছোটকালীকে ফিরিয়ে দিয়ে বললেন,’ আমার এটা নিয়ে নাড়াচাড়া করা ঠিক হয়নি।‘ ছোটকালী হেসে বললেন,’ আপনার মাথা এবং কথাই যথেষ্ঠ। আপনার বন্দুকের কোনও দরকার নেই।‘ পানু রায় ছোটকালীর সেক্রেটারি এবং লোকটার দিকে তাকিয়ে বললেন,’ আমি অত্যন্ত দুঃখিত যে আমার জন্য আপনাদের অনেক অসুবিধে হল। একটা মেহগিনির টেবিল আপনাদের পাওনা রইল।‘ ছোটকালী সেক্রটারি এবং ছেলেটিকে বলল,’ যাওয়ার সময় দরজাটা টেনে দিও।‘ ষণ্ডামত ছেলেটা অনিচ্ছাসত্ত্বেও বেরিয়ে গেল। সেক্রেটারি মেয়েটি পিছনে পিছনে বেরিয়ে গিয়ে বাইরে থেকে দরজাটা টেনে দিল। ছোটকালী বলল,’ এবার কী? আপনি যদি পানু রায় না হতেন তাহলে এই ঘটনাটা অনিচ্ছাকৃত বলে বিশ্বাস করতে পারতাম।‘ পানু রায় হাসি চাপতে পারলেন না। বললেন,’ বন্দুকটা পকেটে ঢোকাও এবং আমার সঙ্গে চল।‘
-বন্দুক নিয়ে?
-হ্যাঁ, বন্দুক নিয়ে। দরকার হতে পারে।
-ঠিক আছে। তাহলে আর একটা গুলি ভরে নিই?
-না,না। দরকার নেই। যেরকম আছে ওরকমই থাক।
-ঠিক আছে। কোথায় যাব?
-বেশি দূরে নয়।
-দাঁড়ান, একটা ফোন করে নিই।
ছোটকালী ফোনটা কানে নিয়ে বলল,’ পরেশ, আমি একটু বেরোচ্ছি। কালকে আমরা যে এক্স ৬০ কাজটা নিয়েছি ওটা এক্ষুনি বাইরে বের কর। এক্ষুনি মানে এক্ষুনি।‘ ছোটকালী টেবিলটার দিকে তাকিয়ে বলল,’ টেবিলের ওপরের পালিশটা মোটা মনে হত। এখন দেখছি পালিশটা খুব পাতলা। কিন্তু আসল উদ্দেশ্যটা কী ছিল? মিঃ রায়।‘ পানু রায় বললেন,’ সাধারণ উদ্দেশ্য হল ঐ এক্স ৬০ কাজটা কী আমার একটু বোঝা দরকার।‘
-আপনার দারুণ লাগবে। ভালো না বেসে পারবেন না। এটা স্পোর্টস সংক্রান্ত কাজ। আসলে গাড়ির সাইজের তুলনায় অনেক বেশি পাওয়ারের ইঞ্জিন লাগানো হয় বনেটের নিচে। সাধারণভাবে অত পাওয়ার কাজে লাগে না। কিন্তু যখন আপনি হাইওয়েতে উঠবেন এবং আপনি কাউকে অতিক্রম করতে চাইবেন আপনি মুহূর্তের মধ্যে তাকে অতিক্রম করে আবার নিজের লাইনে ফিরে আসতে পারবেন। এত দ্রুত আপনি ফিরে আসতে পারবেন যে কোনও গাড়ি কোনও বাঁক থেকে সহসা আবির্ভূত হয়ে আপনাকে ধাক্কা মারতে পারবে না।
-আমি সামনে কোনও বাঁক থাকলে ওভারটেক করি না।
-আপনার ওরকম মনে হচ্ছে বা আপনি হয়ত চেষ্টাও করতে পারেন কিন্তু যখন আপনি কোনও অচেনা রাস্তা দিয়ে যাচ্ছেন আপনার মনে হবে সামনের রাস্তা মসৃণ কিন্তু আসলে তা নয়…’
-পরে তোমার ভাষণ শুনবো। আপাতত দেখি জিনিসটা কী ।
সামনেই দাঁড়িয়ে থাকা একটা গাড়ির দরজাটা খুলে ছোটকালী বলল,’ আসুন, মিঃ রায়। স্টিয়ারিং এর সামনে বসুন। আগে চালিয়েছেন এই ধরণের স্পোর্টস কার?’ পানু রায় বললেন, না!’ ছোটকালী বলল,’ তাহলে চালান। ভুলে যান আপনার বয়স একশো বছরের বেশি। ভুলে যান আপনি কোনওদিন এরকম গাড়ি চালান নি।সামান্যই ব্যাপার। এমন গাড়ি আপনি কোনওদিন দেখেন নি এবং চাপেন নি সেকথা বাজি রেখে বলতে পারি। এরকম গাড়িই আপনার দরকার।‘
পানু রায় বললেন,’ কিন্তু সমস্যা একটাই। যেহেতু এটা সবার চেয়ে আলাদা লোকের চোখে এটা পড়বেই। এই ছোট্ট শহরে কিছুদিনের মধ্যেই সকলে জেনে যাবে যে এটা পানু রায়ের গাড়ি। যেখানেই যাই গাড়ি দেখলেই সবাই জানতে পারবে পানু রায় এসেছে।‘
-সেটা দারুণ ব্যাপার হবে না?
-আমার জন্য এর চেয়ে খারাপ আর কী হতে পারে?
-পেশাগত দিক থেকে গোপনীয়তা রক্ষা করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।বিশেষ করে আপনার ক্ষেত্রে। আপনাকে সামলাতে পুলিশ হিমসিম খেয়ে যায়। কিন্তু পানু রায় এই শহরের সবচেয়ে আলোচিত মানুষ সে কথাও তো ঠিক। এই গাড়ি পানু রায়কেই মানায়। আপনি গাড়ি স্টার্ট করুন। আপনি আমাকে যা বলেছেন তাই করেছি।একটা দামি মেহগিনি টেবিলও হারিয়েছি। এবার আমি যা বলছি করুন।যতক্ষণ আপনি না সন্তুষ্ট হচ্ছেন আপনাকে এক পয়সাও দিতে হবেনা। আপনি আগে যতদিন খুশি চালান তারপর যা সিদ্ধান্ত নেবেন তাই মেনে নেব। ইচ্ছে হলে কিনবেন না হলে ফেরৎ দিয়ে দেবেন।
পানু রায় গাড়িতে উঠে স্টার্ট দিলেন। গাড়িটা সামান্য কেঁপে একেবারে শান্ত হয়ে গেল। কোনও আওয়াজ নেই। শুধু ঘড়ির মত একটা টিক-টিক আওয়াজ হতে থাকলো। ছোটকালী বলল,’ গিয়ার দিন। আস্তে চাপুন।‘ পানু রায় চাপ দেবার সঙ্গে সঙ্গে তীব্র গতিতে গাড়িটা এগিয়ে গেল। ছোটকালী বলল,’ আস্তে, খুব আস্তে। শুধু ছুঁলেই হবে, চাপ দেওয়ার দরকার নেই।‘ পানু রায় হাইওয়েতে উঠলেন। ছোটকালী বলল,’ আপনি এখন ঘোড়ায় চেপেছেন। লাগামের সামান্য টানেই কাজ হয়ে যাবে। এই গাড়ি আপনার পছন্দ হতে বাধ্য।‘
-যদি আমি ততদিন বেঁচে থাকি।
-আমরা কোথায় যাচ্ছি? মি রায়।
-গাড়িটা চালিয়ে দেখতে।
-খুব ভালো। একটা দু’টো শার্প টার্ন নিন। স্টিয়ারিং টা ভালো করে বুঝুন। শুধু একটাই সাবধানবাণী শক্তি ব্যবহার করবেন না। স্পর্শেই কাজ হবে। একটু বেশিই সংবেদনশীল এই গাড়িটা।
-কিন্তু এই গাড়িটা আমার চেয়ে অন্তত চল্লিশ-পঞ্চাশ বছরের ছোটদের জন্যই ভালো।
-একেবারে উলটো। এই গাড়ি একমাত্র তাদেরই জন্য যাদের অভিজ্ঞতা আপনার মতোই দীর্ঘ।
-তোমার কী স্পোর্টস কার সম্বন্ধে এটাই ধারণা এবং বিশ্বাস?
-না, না। এসব নিছকই সেলসম্যানশিপ। কিন্তু আমরা যাচ্ছি কোথায়?
-কোথাও না।
-তাহলে গাড়িটাকে একটা ছোট রাস্তায় নিয়ে চলুন। অ্যাক্সিলারেটরটা পরীক্ষা করে দেখে নিন।
-না আমি ঠিক রাস্তাতেই আছি। আমি পরীক্ষা করছি।
-কী পরীক্ষা করছেন? গাড়ি?
-না, সেলসম্যানশিপ!
ছোটকালী হেসে উঠলো। পানু রায় আর একটু এগিয়ে বাঁ দিকে ঘুরে একটা ছোট রাস্তায় ঢুকে পড়লেন। ছোটকালী বলে উঠল,’ আরে আরে, কী করছেন মিঃ রায়?’ পানু রায় গাড়িটা ম্যান্ডেভিলা অ্যাপার্টমেন্টের সামনে দাঁড় করালেন। বললেন,’ আমাদের একটা কাজ আছে।‘
-আমি জানিনা আপনার মাথায় কী খেলছে, আমার উত্তর কিন্তু ‘না!’।
-চলে এসো। সময় কম।
-আমি বিবাহিত, মিঃ রায়।
-সেটা কীরকম অনুভূতি?
-এখনও ঠিক জানিনা।এখনও পর্যন্ত বেশ সুখকর। তবে বুঝতে পারছি সুবিধে এবং অসুবধে দুইই আছে। দেখুন এক অসাধারণ সুন্দরী মহিলার সঙ্গে আমার বিয়ে হয়েছে এবং কোনওভাবেই আমি এই সম্পর্কে চিড় ধরতে দেবনা।
-আমিও চাইনা তোমাদের সম্পর্কের কোনও ক্ষতি হোক। আমার সঙ্গে এসো।
-আপনি কী চাইছেন? আমাকে কী কোনও স্টেটমেন্ট দিতে হবে?
-না, আমি চাই তুমি একটাও কথা বলবে না। যদি মনে হয় মাথা নাড়তে পার।
-যদি না মনে হয়?
-তাহলে স্ট্যাচুর নাত দাঁড়িয়ে যা হচ্ছে শুনবে এবং দেখবে।
-আপনি নিশ্চয়ই জানেন আপনি কী বলছেন।
-আশা করি জানি। চল, এবার শুরু করা যাক। সময় নেই হাতে।
পানু রায় এবং ছোটকালী রেবার ফ্ল্যাটের সামনে এসে দরজায় টোকা দিলেন। রেবা কৈরালা ‘কে?’ বলে দরজা খুলে পানু রায়কে সামনে দেখে বলল,’ ও, মিঃ রায়, আসুন।‘ পরক্ষণেই রেবার চোখ পড়ল পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা ছোটকালীর দিকে।ভ্রু কুঁচকে অবাক হয়ে ছোটকালীর দিকে তাকিয়ে রইল রেবা। মুখে রাগ এবং বিরক্তির ছাপ স্পষ্ট দেখতে পেল ছোটকালী। বলল,’ শোন, রেবা। এসব কিন্তু মিঃ রায়ের প্ল্যান। আমি এই ব্যাপারে কিছু জানিনা।‘ পানু রায় ধমকে উঠলেন,’ চুপ কর। একটাও কথা বলবে না।‘ রেবা ভেতরে ঢুকে গেল। পানু রায় হাত ধরে ছোটকালীকে ভেতরে টেনে নিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলেন। রেবা ভেতর থেকে এসে বলল,’ অভিনন্দন, কালীকৃষ্ণ।‘ পানু রায় আবার ধমকে উঠলেন,’ একদম চুপ, দু’জনেই! আমাদের ঝগড়া করার সময় নেই। রেবা, কালীকৃষ্ণ আপনার নিরাপত্তার ব্যাপারে চিন্তিত। যদিও আপনাদের বিবাহ হয়নি এবং কালীকৃষ্ণ অন্যত্র বিবাহ করেছে তবুও সে আপনাকে বন্ধু বলেই মনে করে। যেহেতু কালীকৃষ্ণ আপনার বাবার ব্যাপারটা জানে এবং আমার কাছে ঐ লোকগুলোর সঙ্গে আপনার দরকষাকষির ব্যাপারটা শুনেছে ওর মনে হয়েছে আপনার নিরাপত্তার জন্য আপনার কাছে কোনও অস্ত্র থাকা দরকার।‘
-রেবার নিরাপত্তার জন্য আমি কোথা থেকে অস্ত্র পাব?
-চুপ করো। বন্দুকটা ওনাকে দাও।
ছোটকালী পকেট থেকে বন্দুকটা বের করে। পানু রায় বললেন’ রেবা, আপনি বন্দুকটা রাখুন।‘ রেবা জিজ্ঞাসা করলো,’ আমি কী করব এটা নিয়ে?’ পানু রায় বললেন,’ বালিশের তলায় রাখবেন।‘ ছোটকালী মাঝখান থেকে বলে উঠলো,’এটাতে একটা গুলি ইতিমধ্যে ব্যবহার করা হয়েছে।‘ পানু রায় রেগে গিয়ে বললেন,’আচ্ছা মুসকিল তো! তুমি বললে তুমি কোনও কথা বলবে না। এখন তো দেখছি সব কথা তুমিই বলছো। এবার দয়া করে চুপ করো এবং আমায় বলতে দাও।‘
-রেবা, ছোটকালী আপনার নিরাপত্তার ব্যাপারে যারপরনাই উদ্বিগ্ন।ও চায় যে আপনি আত্মরক্ষার জন্য আপনার কাছে এই বন্দুকটা রাখুন।এ ব্যাপারে কোনও গোপনীয়তা রক্ষা করার দরকার নেই। কেউ যদি আপনাকে জিজ্ঞাসা করে যে এই বন্দুক আপনি কোথায় পেলেন আপনি স্বচ্ছন্দে বলতে পারেন যে কৃষ্ণকালী আপনাকে এটা দিয়েছে বা কেউ যদি আপনাকে বলে যে কৃষ্ণকালী আপনাকে যে বন্দুকটা দিয়েছে সেটা কোথায় তাহলে আপনি তাকে এই বন্দুকটা দেখাতে পারেন। মনে রাখবেন এই বন্দুকটার একটা গুলি ইতিমধ্যেই ব্যবহার করা হয়েছে এবং এইভাবেই বন্দুকটা আপনাকে দেওয়া হয়েছে।আপনি জানেন না এই গুলিটা কে কোথায় ব্যবহার করেছে।কেউ জিজ্ঞাসা করলে বলবেন যে কালীকৃষ্ণ আপনাকে এভাবেই বন্দুকটা দিয়েছে এবং আপনাকে না করে প্রশ্নটা কালীকৃষ্ণকে করতে। আপনার শিষ্টতার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ এবং আপনার নিরাপত্তার কালীকৃষ্ণর এই উদ্যোগ সত্যি প্রশংসাজনক। আমরা তাহলে আসি। এসো কালীকৃষ্ণ।‘ পানু রায় দরজা খুললেন। রেবা পানু রায়ের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো। বন্দুকটা ঘরের মাঝখানে টেবিলটার ওপর পড়ে রইলো। কালীকৃষ্ণ হঠাৎ রেবার উদ্দেশ্যে বলে উঠলো,’ রেবা, কাগজে পড়ার আগেই আমি তোমাকে জানিয়েছিলাম।
-তোমাকে অত ব্যাখ্যা করে বলতে হবে না। তুমি আমাকে যতটা ভাব আমি তার থেকে একটু বেশিই বুঝতে পারি। আমি তোমার অস্থির আচরণ এবং পরিস্থিতি সামলানোর আপ্রাণ চেষ্টা দেখতে ও বুঝতে পারছি। যাই হোক আমাদের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক আমরা মেনে চলতেই পারি।‘
কালীকৃষ্ণ পানু রায়কে সরিয়ে একটু এগিয়ে গিয়ে রেবার হাতটা নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলো। পানু রায় বললেন,’ তুমি যদি এখানে থাকতে চাও থাকতে পারো। আমি একটা ট্যাক্সি নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছি।‘ কালীকৃষ্ণ রেবাকে বললো,’আসি তাহলে। এই নিষ্ঠুর লোকটাকে আমি একটা গাড়ি বিক্রীর চেষ্টা করছি।‘
-বেশ। তাতে তোমার ক্ষমতা আরও বাড়বে। তোমার দরকারও আছে।
দু’জনে নিচে নেমে বাইরে যাবার দরজার দিকে একটু এগিয়েই হঠাৎ পানু রায় এক ঝটকায় ছোটকালীর হাতটা টেনে নিয়ে বললেন,’ চুপচাপ উল্টোদিকে চলো।‘ উল্টোদিকে খানিকটা এগিয়ে একটা সোফা দেখতে পেয়ে পানু রায় বসলেন এবং ছোটকালীকে পাশে বসিয়ে হাতে একটা বই ধরিয়ে দিলেন। ফিসফিস করে বললেন,’ একাগ্রমনে বইটা পড়তে থাকে ভান করো।‘ নিজে মুখের সামনে একটা খবরের কাগজ ধরে ফাঁক দিয়ে দেখলেন কেলো দারোগা বড় দরজাটা দিয়ে ঢুকে লিফটের দিকে এগোচ্ছে। সঙ্গে আর একজন অফিসার আর সেই ট্যাক্সি ড্রাইভারটা যাকে নিয়ে সেদিন বেরিয়েছিলেন। ওরা লিফটে ঢুকে যেতেই পানু রায় বললেন,’ চলো। আমরা যাই। আশা করি ওরা বাইরে দাঁড়ানো স্পোর্টস কারটা ওরা দেখেনি।‘
-কি যে বলেন মিঃ রায়। আপনি বলতে চান একজন ব্যাঙ্কার বোর্ড মিটিঙে বেসুরো কথাগুলো শুনতে পায়নি।
-শোন কৃষ্ণকালী, আমাকে যদি গাড়ি বিক্রী করতেই হয় তবে একটা পুরনো দিনের কালো সাধারণ গাড়ি জোগাড় করো।
-আমার কাছে আছে। চিন্তা করবেন না। আমি বুঝে গেছি আপনি এমন গাড়ি চাইছেন যা আলাদা করে যেন চিনতে না পারা যায়। বাইরে সাধারণ এবং শান্ত, ভিতরে অসাধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন।
পানু রায় হাসলেন।
তখন বেলা সওয়া দু’টো হবে। পানু রায়ের ফোন বেজে উঠলো।মনীষার ফোন। পানু রায় ফোন কানে দেবার সঙ্গে সঙ্গেই ওপার থেকে ভেসে এলো,’ পানু রায় বলছেন।‘
-মনীষা, বলো। কী ব্যাপার!
-ও, মিঃ রায়। আপনাকে ফোনে পেয়ে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম।দু’জন পুলিশ অফিসার আমাদের অফিসে এসেছে। বাইরে অপেক্ষা করছে। বলছে ওদের কাছে সার্চ ওয়ারান্ট আছে। ওরা নাকি রক্তমাখা জামাকাপড় বা অন্য কোনও জিনিস অফিসে লুকোনো আছে কিনা দেখবে। কে একজন শিবুলালের খুনে তল্লাশির জন্য এই খোঁজ। আমি কী করব?
-দু’টো চেয়ারের ধুলো ঝেড়ে ওদের ভেতরে ডেকে বসতে বলো। চা কফি কিছু চাইলে দাও। তারপর বলো যতক্ষণ দরকার তল্লাশি চালাতে। আর বলো যে যাবার সময় অফিস থেকে যদি কিছু নিয়ে যায় তার একটা রসিদ দিয়ে যেতে।
-ঠিক আছে। বুঝে গেছি।
মনীষা ফোন কেটে দিল। পানু রায় সুন্দরীকে জিজ্ঞাসা করলেন,’ জগাই বাড়ি আছে? তুমি ভেতরে গিয়ে ওকে একটু পাঠিয়ে দাও তো।‘ সুন্দরী বললো,’ হ্যাঁ, বাড়িতেই আছে। কোথাও যেতে হবে?’
-আমার শিবুলাল সম্বন্ধে কিছু খবর দরকার। জগাই কাঠমান্ডুতে অনেককে চেনে। দেখি কিভহু জোগাড় করতে পারা যায় কি না। না হলে একবার কাঠমান্ডু যেতে হতে পারে, অবশ্য যদি দরকার হয়।
-নিশ্চয়ই হবে। আমিও সঙ্গে যাব কিন্তু আগে থেকে বলে রাখলাম।
-ঠিক আছে, যাবে। জগাইকে পাঠিয়ে দাও।
সুন্দরী বাড়ির ভিতরে চলে গেল। কিছুক্ষণ বাদে জগাই ভেতরের দরজা ঠেলে ঘরে ঢুকে জিগ্যেস করলো,’ দাদু, আমাকে খুঁজছো? কোনও দরকার আছে?’
-হ্যাঁ , আছে তো বটেই। কিছু খবর জোগাড় করতে হবে।
-কী খবর দাদু?
-শিবুলাল রেগমির ব্যাপারে।
- শিবুলাল মানে কাল যে লোকটা খুন হয়েছে ?
-সুন্দরী সব বলেছে মনে হচ্ছে।
জগাই একটু হেসে বললো,’ ঐ আর কি! সুন্দরীর কাছে শুনে আমি একটু আধটু খোঁজ লাগিয়েছিলাম। লোকটা জুয়াড়ি ছিল।‘
- বড়সড় জুয়াড়ি?
-না, না, সেরকম বড়সড় কিছু নয়।
-দ্যাখ, আর কী খবর জোগাড় করতে পারিস। তোকে কয়েকটা কথা বলে রাখি তাতে তোর সুবিধে হবে। হয়ত সুন্দরীর কাছে শুনেছিস। তোর মনে আছে কিছুদিন আগে প্রসাদ কৈরালা বলে একজন খুন হয়েছিল।
-হ্যাঁ। বেশ মনে আছে। খুব হৈচৈ হয়েছিল। চোরাচালানকারী গুন্ডাদের হাতে খুন হয়েছিল।
-না তা নয়। মানে আমার মনে হয় তা নয় যদিও পুলিশ তাই বলেছিল এবং এ ব্যাপারে বিশেষ কিছু করেনি। যেহেতু শিবুলালের মত প্রসাদ কৈরালারও জুয়ার আড্ডায় যাতায়াত ছিল পুলিশ ওর মেয়ে রেবা কৈরালার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল।
-আমি জানি রেবা কৈরালার ব্যাপারটা তুমি দেখছো। আমি দেখছি কী কী খবর জোগাড় করা যায়। আমি বেশ কয়েকজনকে চিনি যারা এসব খবর জোগাড়ের ব্যাপারে আমাদের সাহায্য করতে পারবে।
-যা দরকার হয় কর। আমার শিবুলাল সম্বন্ধে সব খবর চাই, যা পাওয়া যায় তাড়াতাড়ি জোগাড় করে আমায় দিতে থাক। দিনে অন্তত দু’বার।
জগাই দরজা খুলে বেরিয়ে যাবার সঙ্গে সঙ্গেই সুন্দরী এসে জানালো বাইরে রেবা অপেক্ষা করছে। পানু রায় বললেন,’ আসতে বলো।‘ সুন্দরী রেবাকে নিয়ে এলো। পানু রায় জিজ্ঞাসা করলেন,’ নতুন কোনও সমস্যা?’
-আপনারা বেরিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশের লোকেরা এসেছিল।বন্দুকটা তখন টেবিলের ওপরেই ছিল। ওটা বালিশের তলায় রাখতে আমি ভুলে গিয়েছিলাম। পুলিশের লোকেরা আসতে আমি ওটার ওপর একটা স্কার্ফ ছুঁড়ে দিই।
-তারপর কী হলো?
-ওরা বন্দুকটা হাতে নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখলো। নাকের কাছে নিয়ে গিয়ে গন্ধ শুঁকলো। ওটাকে খুলে ফেললো। তারপর জিজ্ঞাসা করলো আমি ওটা কোথা থেকে পেলাম।
-আপনি কী বললেন?
-আমি বললাম মিঃ কে কে চৌধুরী আমাকে ওটা দিয়েছেন এই ভেবে যে যে আমার জীবন বিপন্ন এবং হয়তো ওটা আমার কাজে আসতে পারে।
- আপনি কি বলেছেন কোন কে কে চৌধুরী আপনাকে ওটা দিয়েছে? ছোট না বড়?
-কেন আমার বলা উচিৎ ছিল?
-জানিনা।
-দেখুন যে ভাবে পুরো ঘটনাটা ঘটে গেল তাতে আমি সেই মুহুর্তে এর থেকে বেশি কিছু ওদের বলতে পারিনি। আমাকে প্রায় থামিয়ে ওরা জিজ্ঞাসা করলো যে আমি মিঃ কে কে চৌধুরীকে শেষবার কখন দেখেছি?
-আপনি কী বললেন?
-আমি বললাম সেদিন সকালে। এটা শুনে ওনারা উত্তেজিত হয়ে কাকে ফোন করতে শুরু করলেন এবং কিছু না বলে তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে গেলেন।
-ওনারা আর কিছু জিজ্ঞাসা করেনি?
-না, আর কিছু জিজ্ঞাসা করেনি।
-ওরা কিন্তু আবার আপনাকে প্রশ্ন করতে আসবে বা আপনাকে ডেকে পাঠাবে। আপনাকে তখন একটা কাজ করতে হবে।
-কী কাজ?
-আপনি বলবেন আপনি কোনও প্রশ্নের উত্তর দেবেন না যতক্ষণ না আমি সেখানে পৌঁছচ্ছি।
-তার মানে কী এই নয় যে আমি ওনারা যা বলছেন তা মেনে নিচ্ছি।
-ওরা মনে করতে পারে যে আপনি মেনে নিচ্ছেন। তাতে কিছু আসে যায় না এবং কিছু প্রমাণ হয় না। আপনি মুখ খুলবেন না। এমনকি কোনও সাধারণ প্রশ্ন যেমন আপনার জন্ম কোথায়, কোন স্কুলে পড়েছেন ইত্যাদি প্রশ্নেরও নয়। পারবেন?
-আপনি যদি আমায় বলেন তাহলে…
-আমি বলছি। কারণ কৃষ্ণকালী আমাকে বলেছে আপনার নিরাপত্তা নিশ্চিন্ত করতে।
-মিঃ রায়, গতকাল মিঃ চৌধুরী কাল রাত্রে আবার এসেছিলেন।
-ছোট না বড়?
-বাবা এসেছিলেন।
-এসে কী বললেন?
-বললেন উনি ঘুমোতে পারছেন না। উনি আমার সঙ্গে কথা বলতে চাইলেন। তারপর অনেকক্ষণ ধরে আমার সঙ্গে কথা বললেন।
-উনি কখন ফিরলেন?
-সেটাই তো। উনি যখন ফিরলেন তখন প্রায় মধ্যরাত্রি।
-ঠিক আছে আপনি কোনও প্রশ্নের উত্তর দেবেন না। নিজেকে একটু দূরে দূরে রাখুন।
-তার মানে?
-সুন্দরী, রেবা যে পোশাকটা পরে আছেন ওটা তোমার ঠিক লাগছে?
সুন্দরী বললো,’ খুব সুন্দর ওটা। আমি তো ওনাকে বলতেই যাচ্ছিলাম।‘
পানু রায় বললেন,’ আমার লাগছে না।আমার মনে হচ্ছে এই পোশাকটা পরে ছবি তুললে ভালো আসবে না। একটা সাদা-কালো পোশাক যেটায় ভালো ছবি ওঠে কিনতে কী রকম সময় লাগবে? সামনেটা ভি কাট, সাদা স্ট্রাইপ যাতে ফিগারটা বোঝা যায়? ‘ সুন্দরী বললো,’খুব একটা সময় লাগার কথা নয়।‘ তারপর পানু রায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে বললো,’ তবে একটু সময় লাগতে পারে যদি একেবারে তুমি যেমন চাইছো তেমন পেতে হয়।‘ পানু রায় রেবাকে বললেন,’ আপনি এখন শপিংএ যাবেন। আপনার কাছে টাকা আছে?’ রেবা বললো,’হ্যাঁ, আছে। এখনই যেতে হবে?’
-হ্যাঁ, এখুনি। যখন শপিং করবেন তখন ভীষণ খুঁতখুঁতে ক্রেতার মত আচরণ করবেন। প্রচুর জিনিস নামাবেন। একটাও পছন্দ করবেন না। এত জ্বালাতন করবেন যে সেলসগার্ল যেন আপনাকে মনে রাখে। প্রচুর সময় নেবেন। দোকান বন্ধ হওয়ার আগে দোকান থেকে বেরোবেন না।
-তারপর?
-আমার সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ রাখবেন। আমাকে না পেলে সুন্দরীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখবেন। সুন্দরীর ফোন নম্বর আপনার কাছে না থাকলে নিয়ে নিন।
-আমি তাহলে পুলিশের সঙ্গে কথা বলবো না।
-না পুলিশের সঙ্গে নয়, কোনও রিপোর্টারের সঙ্গে নয় ,কারোর সঙ্গে নয়। আমার অনুপস্থিতিতে কাউকে কোনও প্রশ্নের উত্তর দেবেন না।
-ঠিক আছে, মিঃ রায়।
-আর একটা বন্দুক কোথায়?
-ওটা আমি লুকিয়ে রেখেছি। এমন জায়গায় লুকোনো আছে কেউ খুঁজে পাবে না।
-ঠিক আছে।আপনি শপিংএ ব্যস্ত হয়ে যান। এত ব্যস্ত হয়ে যান যে দোকান বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত আপনার কোনও সময় হবে না।
রেবা কৈরালা বেরিয়ে গেল। সুন্দরী জিজ্ঞাসা করলো,’ সাক্ষ্যপ্রমাণ গোপন করা অপরাধ নয়?’
-অবশ্যই অপরাধ। কিন্তু ক্লায়েন্টকে কথা না বলতে বলা কোনও অপরাধ নয়। জানো সুন্দরী, সবচেয়ে বড় অপরাধ হচ্ছে ক্লায়েন্টের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারা।
সুন্দরী পানু রায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে হাসিতে ফেটে পড়লো।

No comments:
Post a Comment