গল্প - রঞ্জন ঘোষ দস্তিদার










অহনা।

পাঁচ-পাঁচ। বাঙালি হিসেবে একটু বেশি-ই হল। কাঁচা গম? না, কালো? না। ওনার দিকে তাকিয়ে কেউ গায়ের রঙের ভাবনা ভাববেই না। দারুন ফিগার। সুন্দরী বলা যাবে কি? তবে একবার চোখ পড়লে ঘুরে আর একবার তাকায় সবাই দেখেছি। ইচ্ছে করলেই পাড়ার যে কোন দুচাকা চারচাকা থামিয়ে বসে পড়তে পারেন যখন তখন। কতজন যেতে যেতে সেধে যায়। উনি হেসেই না করেন। প্রায়ই দেখা যায় উনি হেঁটে যাচ্ছেন বা আসছেন।

আমার তখন ফিয়াট ১১০০। সেই যে দরজাটা সামনে থেকে পেছনে খোলে। আমার ছোটবেলার স্বপ্ন। সামনের বাড়ির আগরওয়াল আঙ্কলের ছিল। ছোটবেলা থেকেই ভাবতাম গাড়ি কিনলে এই গাড়ি। অফিস অফিসের গাড়িতে। বেরলে আমরা দেবা দেবি।

অনিদের গাড়ি হল। পদ্মিনী। অহনা আমায় ধরল

‘আমাকে গাড়ি চালানো শিখিয়ে দেবেন?’

সে গুরু দায়িত্ব এড়াবার জন্য বললাম

‘স্কুল আছে তো’।

‘আমি ভর্তি হব। সঙ্গী চাই ‘ ইঙ্গিতটা আমার গিন্নির প্রতি।


বেশত। দুজনেই ভর্তি হল। হয়েও গেল লাইসেন্স।

আমার কাজ একটা রয়েই গেল। ছুটির দিন হলেই গ্যারেজ থেকে গাড়ি বার করে দেওয়া, আবার ঢোকানো।

’দুই বন্ধু বেরত, প্রথম প্রথম টেনশন হত। নমুনা আমার গিন্নি ই দিয়েছিলেন। আমার সাধের ১১০০ র বাঁ নাকে মস্ত টোল ফেলে। তারপর থেকে ঠিক হয়ে গেল। দেখতাম কাছে পিঠে ঘুরে চলে আসত। দুজনের মুখে দারুন একটা মুক্তির আনন্দ দেখতাম।

‘কে চালায়’?

‘অনি’।

‘তুমি চালাও না’?

‘না বাবা। আমি হেল্পার’।

‘মানে? গাড়ির বডি থাবড়ে সাইড সাইড’?

‘অনেকটা সেই রকম। আমার সাহস হয় না। অনির সাহস আছে’।


একদিন…।।

একদিন দেরি হল।

‘কি হয়েছিল? আরে আমরা ঢাকুরিয়া ব্রিজে আটকে গেছি। যাওয়ার সময় তো চলে গেছি। আজকেই আমরা গড়িয়াহাট পার করলাম প্রথম। আসার সময় অনি বলছে একবারে খোলা পেলে হয়। ঠিক, ঠিক ওঠার সময় আর একটু গেলেই আমরা পাহাড় টপকে ঢালে পড়তাম। থামতে হল।


অনি বার বার আমার দিকে তাকাচ্ছে। হ্যান্ডব্রেক টেনে ব্রেকে পা দিয়ে টানটান উত্তেজনা। অনির জুলফি দিয়ে ঘাম গড়াচ্ছে। আমারো বুকটা ধড়াস ধড়াস করছে। সামনের গাড়ি সব একে একে চলে গেল। আমাদের গাড়ি অপেক্ষা করল সামনেটা ফাঁকা হলে এগোব। সামনে ফাঁকা । গাড়ি এগচ্ছে না। হু হু করে স্টার্ট বন্ধ। চারিদিকে প্যা পোঁ।

আমি তো আন্দাজ করছি। এ দশা আমার ও গেছে।

এক ছোকরা এলো এগিয়ে। আমি পার করে দি? অনি হাঁফ ছেড়ে প্লিজ, প্লিজ । থ্যাংক ইয়ু বলতে বলতে নেমে গেল।

ছেলেটি গাড়িতে উঠে ই ইোঁচট খেল “একি” !!

বললাম “উনি চটি খুলেই চালান।“

কম বয়সি ছেলে। সে গাড়ি পাড় করে সাইড করছে। খালি পায়ে অনি দৌড়ে আসছে অনেক প্যাঁ পোঁ কাটিয়ে।

ছেলেটি গাড়ির স্টার্ট বন্ধ করে চাবি নিয়ে অপেক্ষা করছে। অনি আসছে দেখে ছেলেটি চাবি দিয়ে বলল

“এবার পারবেন তো?”

থ্যাংক ইয়ু বলে অনি ওর গাল টিপে দিল!

No comments:

Post a Comment