সম্পাদকীয়








এই সম্পাদকীয় লেখার সময়ে চারপাশটা ভারী হয়ে আছে। একটা থমথমে পরিবেশ। মৃতের সংখ্যা শতাধিক  ইতিমধ্যেই। অসমর্থিত সূত্র অনুযায়ী যা আরও বেশি। আহত অসংখ্য। যার সূত্রপাত ঘটেছিল একটি শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ হিসাবে, এখন তা রক্তাক্ত সংগ্রামের আকার ধারণ করেছে। প্রায় গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্রটিতে। কেন এমন হলো?

যে বিষয়টি নিয়ে এই সংঘাতের শুরু, সেটি হল সরকারী চাকরির ক্ষেত্রে কোটা-পদ্ধতি। যার ফলে দেখা যাচ্ছে ন্যূনতম ষাট শতাংশ, বিশেষ ক্ষেত্রে নব্বই শতাংশ পর্যন্ত পদ সংরক্ষিত। আর মেধার জন্য সংরক্ষণ? তার কী হবে? নাকি চাকরির ক্ষেত্রে সেই বিষম বস্তুটির প্রয়োজনীয়তা খুবই সীমাবদ্ধ? তাহলে পড়াশোনার পাট তো তুলে দিলেই হয়! আসলে এটি এক নোংরা রাজনীতি। যার আগুনে পুড়েছি আমরাও। বারবার। তবু এদেশে এখনও ঘাসের মধ্যে বিরাজমান এই বিষধর সাপটি। এমন কোনও আন্দোলন এখানে এখনও পর্যন্ত দানা বেঁধে ওঠেনি, যার ফলে লেখা হতে পারতো অন্য ইতিহাস।

আমাদের দেশের ছাত্রসমাজও সময়ে সময়ে উত্তাল হয়েছে কিন্তু তা এমন আকার ধারণ করেনি কখনও। তার কারণ বহুবিধ। কিন্তু ছাত্ররাই তো আসলে পারে, তারাই তো তারুণ্যদীপ্ত পথ দেখাবে অন্যদের।

সভ্যতার ইতিহাসে যত গণ অভ্যুত্থান ঘটেছে, তার স্ফুলিঙ্গ তো পড়ুয়াদের বিবেক আর তাদের টানটান মেরুদন্ড। তিয়েনআনমেন স্কোয়ারে সাঁজোয়া গাড়ি বা ট্যাংকের প্রবেশ দমাতে পারেনি ছাত্র-আন্দোলন। প্রাণ দিয়েছিলেন অনেকে। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয়, এক রক্তক্ষয়ী, দীর্ঘ লড়াইয়ের পর স্বাধিকার অর্জনের সেনানী ছিলেন যাঁরা, তাঁদের জন্য কোটা বজায় রাখতে বদ্ধপরিকর সরকারকে বলপ্রয়োগ করতে হচ্ছে আজকের সেনানীদের ওপর। ভবিষ্যত দেশ গড়ার কারিগর যারা। আরও অবাক হওয়ার বিষয়, সরকারের দিক থেকে সংলাপের পরিসরটি উন্মুক্ত করে দিলে সহজেই এড়ানো যেত যে সংকট, তার মোকাবিলায় নিয়োগ করা হলো বিরোধী ছাত্রদলকে। এভাবে কি এক স্বতস্ফূর্ত বিপ্লবকে গলা টিপে হত্যা করা যায়?

বন্দুকের নলের সামনে ভয়ডরহীন ছাত্রটির ছবি এখন ছোঁয়াচে অসুখের মতো ফারহান, রোশেনারা, শমীকদের মজ্জায় মজ্জায়। শুনতে পাওয়া যাচ্ছে যেন সেই কবিকণ্ঠ 'ডাক ওরে ডাক, মৃত্যুকে ডাক জীবনপানে'।

সুস্থ থাকুন। সৃজনে থাকুন।

শুভেচ্ছা নিরন্তর।

No comments:

Post a Comment