ধারাবাহিক - রঞ্জন রায়





















১৪

প্রতি বছর কার্তিক পূর্ণিমার সময় শিবপালগঞ্জের পাঁচ মাইল দূরে একটি মেলা শুরু
হয়। ওখানে একটু জঙ্গল, একটা টিলা মতন, আর তার উপরে একটি দেবী মন্দির।
আর তার চারপাশে কোন পুরনো ভাঙা বাড়ির কিছু ইঁট ছড়িয়ে আছে। জঙ্গলে করমচা,
মক্কা আর কুলের ঝোপঝাড়। চারপাশের জমি এবড়োখেবড়ো।—খরগোশ থেকে নেকড়ে
বাঘ, ভুট্টাচোর থেকে ডাকাত-- সবাই ওই জঙ্গলে লুকিয়ে থাকতে পারে।
আশপাশের গাঁয়ে যে মহান প্রেমের মানে দুই আত্মার মিলন, এই জঙ্গলের মধ্যে তার
রূপ দুই দেহের মিলনে সার্থক হয়। শহর থেকে কখনও কোন জোড়া ওখানে পিকনিক
করতে যায় এবং পরস্পর শারীরিক ক্রিয়া সম্পর্কিত জ্ঞানের পরিচয় দেবার পর
কখনও কখনও মন্দিরে দেবী দর্শন করে সংকুচিত দেহ এবং প্রফুল্ল মন নিয়ে
শহরে ফিরে আসে।

এ’অঞ্চলের লোকজনের ওই টিলা নিয়ে বড় গর্ব, বড় অহংকার। কেননা, ওই হল
এদের অজন্তা, ইলোরা, মহাবলীপুরম। ওদের বিশ্বাস মন্দিরটি দেবাসুর সংগ্রামের
পর দেবীর নিবাসের জন্য দেবতারা আপন হাতে বানিয়েছেন। আর টিলার নীচে
কুবেরের কোষাগার লুকোনো আছে। এইভাবে ধর্ম, অর্থ এবং ইতিহাসের দিক থেকে
দেখলে টিলার মহত্ব কম নয়।
রঙ্গনাথের প্রিয় বিষয় ইতিহাস ও পুরাতত্ত্ব। ভাবছিল, একবার ওই টিলার সার্ভে
করলে কেমন হয়! ওকে বলা হয়েছে যে ওই মন্দিরের মূর্তিগুলি গুপ্তযুগের এবং
মাটির ঢেলাগুলো হল মৌর্যযুগের টেরাকোটা।

এক অবধী লোককবি স্বর্গীয় পড়ীস লিখে গেছেনঃ

মেলে-ঠেলে মেঁ তো মুঁহ খোল কে সিন্নী বাঁটী,
সসুর কো দেখ কে ঘুঁঘট খীঁচা মীটর-ভর।

মেলায় হেলায় সিন্নি খাওয়ালে স্মিত মুখে,
শ্বশুরকে দেখে ঘোমটা দিয়েছ তিন গজী।

ওরা সব মেলা দেখতে যাচ্ছে। এই সময় ভারতীয় নারীত্ব তার ঢাকাঢুকির খোল থেকে
ফনফনিয়ে বেরিয়ে এসেছে। ওরা চলেছে চপল চরণে, না মাথায় ঘোমটা, না মুখে কোন
লাগাম। ওরা চেঁচাচ্ছে ফুসফুস, গলা এবং জিভ চিরে বের করছে এমন এক তীক্ষ্ণ
আওয়াজ যেটাকে শহুরে পণ্ডিত এবং আকাশবাণীর চাকুরের দল পল্লীগীতি বলে
থাকেন।
এইভাবেই ঘর থেকে বেরিয়ে মেলার পথে চলছে দলের পর দল। রূপ্পনবাবু, রঙ্গনাথ,
শনিচর ও যোগনাথ মেলা যাবার সিধে রাস্তা ছেড়ে এক সরু পাকদণ্ডী বেয়ে চলতে
লাগল।মেয়েদের বেশ ক’টি দল দেখতে দেখতে এগিয়ে গেল। তখন ছোটে পালোয়ান
বলল—“ সবাই এমন চেঁচাচ্ছে যেন ওদের বল্লম ফুঁড়ে দেওয়া হয়েছে”।

শনীচরের বক্তব্য—মেলায় যাচ্ছে তো।
মেয়ের দলের সামনে পেছনে বাচ্চা এবং মরদের দল। সবাই ধুলোর ঝড় উড়িয়ে
হড়বড়িয়ে এগিয়ে যাচ্ছে যেন নিজেদের মধ্যে কোন প্রতিযোগিতায় মেতেছে। বলদের
গাড়িগুলোও নিজেদের মধ্যে এগিয়ে যাওয়ার যুদ্ধে মত্ত। আর এরই মধ্যে পথচারীর
দল ওদের সঙ্গে ধাক্কা না লাগিয়ে নিজেদের বাঁচিয়ে চলেছে। এর থেকে প্রমাণ হয় যে
শহরের চৌরাস্তার মোড়ে মোটরকারগুলো মুখোমুখি সংঘর্ষে টুকরো টুকরো না
হওয়ার কৃতিত্ব ট্রাফিক পুলিশের নয়, বরং মানুষের আত্মরক্ষার সহজাত
প্রবৃত্তি।

অর্থাৎ, যে প্রকৃতি পুলিশের সাহায্য ছাড়াই জঙ্গলে হিংস্র জানোয়ারের হামলা
থেকে খরগোসকে রক্ষা করে, বা শহরের রাস্তায় পথচারীদের ট্রাক-ড্রাইভারের
থেকে বাঁচিয়ে রাখে –সেই এখন মেলার যাত্রীদের বলদের গাড়ি চাপা পড়ার থেকে
রক্ষা করছে।

মেলার উত্তেজনা এখন চরমে। যদি অল ইণ্ডিয়া রেডিও এখান থেকে রানিং কমেন্ট্রি
করতো তাহলে নিশ্চয় প্রমাণ করে ছাড়ত যে পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সাফল্যে
লোকজন ভাল আছে, আর নেচে গেয়ে একে অন্যের সঙ্গে আনন্দ এবং ভালবাসা
ভাগাভাগি করতে করতে মেলার পথে চলেছে।

কিন্তু রঙ্গনাথ গ্রামে থাকছে প্রায় দেড় মাস ধরে। ও বুঝতে পেরেছে যে গেঞ্জি
আন্ডারওয়ার পরা শনিচর ওর হাসিমুখের জন্য বিড়লা বা ডালমিয়ার চেয়ে বড় হতে
পারে না। হাসতে পারা এমন কোন বিরল গুণ নয়। যার খাবার হজম হচ্ছে সেই হাসতে
পারে। এই তর্ক গান গাওয়ার ব্যাপারেও প্রযোজ্য।

রঙ্গনাথ মন দিয়ে মেলা এবং তার লোকজনকে দেখছিল। ওর চোখের সামনে এত
আনন্দ উত্তেজনার ভেতরের চেহারাটা বেরিয়ে এল। শীতকাল এসে গেছে, কিন্তু
কারও পরনে উলের গরম কাপড় নেই। কোন কোন বাচ্চার গায়ে দু’একটা ফাটা
সোয়েটার রয়েছে বটে, কিন্তু মহিলাদের রঙিন শস্তা সিল্কের শাড়ি আর বেশিরভাগের
খালি পা। পুরুষদের অবস্থা কী আর বলব? কথায় আছে—হিন্দুস্থানী ছেয়লা, আধা
উজলা আধা ময়লা।
হিন্দুস্থানী ফোতোবাবু যেন এক সঙ,
আধা পোশাক চকচকে, আধা ময়লা রঙ।

রঙ্গনাথ নিজেকে ভেঙচি কাটল—এসব দেখা আর এর মর্ম বোঝার চেয়ে পুরাতত্ত্ব
অধ্যয়ন অনেক সোজা। তারপর রূপ্পনবাবুর দিকে নজর ঘোরালো। রুপ্পন তো হৈচৈ
করে তিনজন সাইকেল আরোহীকে নীচে নামতে বাধ্য করলেন। ওরা ভীড় বাঁচিয়ে
গলিপথের এক কিনারে সাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়ে রইল।

ওদের মধ্যে যাকে দলের সর্দার মনে হচ্ছে সে মাথার ময়লা হ্যাট নামিয়ে সেটা নেড়ে
নেড়ে হাওয়া খেতে লাগল। শীত রয়েছে, কিন্তু লোকটির মাথায় ঘামের ফোঁটা। ওর
পরনে হাফপ্যান্ট, জামা আর বুকখোলা কোট। হাফপ্যান্টটা ভুঁড়ির নীচে নেমে না যায়
তার জন্য বেল্ট কষে বাঁধা হয়েছে। ফলে পেটের ক্ষেত্রফল সমান দু’ভাগে বিভক্ত
হয়ে গেছে। সর্দারের দুই সাথী ধুতি-কুর্তা-টুপিওলা অভদ্র চেহারার লোক, কিন্তু
সর্দারের সঙ্গে খুব সৌজন্য দেখিয়ে কেতাদুরস্ত ব্যবহার করছে।
“আজকে তো মেলায় চারদিকে খুব টাকা উড়ছে সাহেব”! –রূপ্পন সর্দারের সঙ্গে হেসে
হেসে আলাপ জমাতে চাইলেন। লোকটি চোখ বুঁজে মাথা নেড়ে বেশ বিজ্ঞের মত
বলল—“ বোধহয়, কিন্তু রূপ্পনবাবু, আজকাল টাকার কি কোন ভ্যালু আছে”?
রূপ্পনবাবু ওর সঙ্গে আরও কিছু কথাবার্তা চালিয়ে গেলেন যার মূল বিষয় মেলার
মিষ্টি, বিশেষ করে ক্ষীরের মিঠাই। হঠাৎ লোকটি বাধা দিয়ে বলে উঠল—দাঁড়ান
রূপ্পনবাবু!

তারপর সে একজন সাথীকে তার হ্যাট, অন্যজনকে সাইকেল ধরতে বলে মোটা মোটা
ঠ্যাঙে এলোমেলো পায়ে দ্রুত পাশের অড়হরের ক্ষেতে নেমে গেল। ও খেয়াল করেনি
যে অড়হরের চারাগুলো তেমন ঘন নয় এবং কয়েকজন অড়হরের ওই ক্ষেতের মধ্য
দিয়ে পাগদণ্ডী পথে মেলায় যাচ্ছে। ও এসব পাত্তা না দিয়ে দৌড়ুতে গিয়ে আটকে
পড়ল এবং অতি কষ্টে কোট আর জামার বোতাম খুলে ভেতর থেকে পৈতে নিয়ে
টানাটানি শুরু করল। যখন পৈতেটা খুব একটা বাইরে এল না তখন একদিকে ঘাড় কাত
করে কোনরকমে খানিকটা এককানে পেঁচিয়ে নিল। তারপর হাফপ্যান্টের সঙ্গে খানিক
টানাটানি সেরে উবু হয়ে বসে অড়হরের ক্ষেতে জলসিঞ্চন করতে লাগল।
রঙ্গনাথ ততক্ষণে জেনে নিয়েছে যে হ্যাটওয়ালা ব্যক্তিটির নাম সিংহ সাহেব। উনি
এই এলাকার স্যানিটারি ইন্সপেক্টর। এটাও জানা গেল যে ওনার সাইকেল ধরে
দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তি জেলা বোর্ডের মেম্বার আর হ্যাট যিনি ধরে আছেন তিনি ঐ
বোর্ডেরই ট্যাক্স- কালেক্টর।

ইন্সপেক্টর সাহেব ফিরে এলে আবার অনেকক্ষণ ধরে দু’জনের কথাবার্তা চলতে
থাকল। কিন্তু এবার আর মিঠাই নয়, আলোচনার বিষয় ঘুরে গেল—জেলাবোর্ডের
চেয়ারম্যান, ইন্সপেক্টর সাহেবের রিটায়ার্মেন্ট, আর “ দিনকাল যে কত খারাপ
হয়েছে” গোছের কথায়। ওই তিনমূর্তি চলে গেলে রূপ্পনবাবু রঙ্গনাথকে ইন্সপেক্টর
সাহেবের সম্বন্ধে যা যা বললেন তার সারাংশ নীচে দেওয়া গেলঃ

বলতে গেলে লোকটি তো অনেককিছু, তার গুণ ক্রমশঃ প্রকাশ্য, কিন্তু বর্তমান
অবতারে উনি জিলাবোর্ডের স্যানিটারি ইন্সপেক্টর বটেন। চাইলে উনিও অনেক কিছু
হতে পারতেন, কিন্তু স্যানিটারি ইন্সপেক্টর হওয়ার পর, হয়তো সবদিক ভেবেই,
সন্তুষ্ট হওয়াই শ্রেয় মনে করলেন। ওঁর যে অঞ্চলে পোস্টিং সেখানে শিবপালগঞ্জ
হল সবচেয়ে প্রগতিশীল, অন্য সব পিছিয়ে থাকা অনগ্রসরএলাকা। এরা জানে যদি
ওদের থেকে ওই পশ্চাদপদতা বা অনগ্রসরতা কেড়ে নেওয়া যায় তাহলে ওদের
থাকবেটা কী? এদের অধিকাংশ লোক কারও সঙ্গে দেখা হলে বেশ গর্বের সঙ্গে
বলে—সাহেব , আমি তো পিছিয়ে থাকা অঞ্চলের লোক। এই জন্যেই ওরা
ইন্সপেক্টর সাহেবকে নিয়েও গর্বিত। উনিও এই এলাকায় চল্লিশ বছর ধরে পদস্থ;
আর ওনার এই এলাকায় থাকা আজও অতটাই দরকার যতটা চল্লিশ বছর আগে ছিল।
স্যানিটারি ইন্সপেক্টরকে নানান রকমের কাজ সামলাতে হয়। ইনিও পকেটে
‘ল্যাক্টোমিটার’ নিয়ে ঘোরেন এবং রাজহংসের মত নীর-ক্ষীর, মানে জল আর দুধ,
আলাদা করে চিনতে দক্ষ। তাই ইনি যে গোয়ালে জল আর দুধে কোন ভেদাভেদ করা
হয়না, সেখানে ঠোঁট ডুবিয়ে মুক্তো তুলে আনেন। ছোঁয়াচে রোগ এবং রোগের
সংক্রমণের বিষয়ে উনি এমন বিশেষজ্ঞ যে কোথাও মৃত্যুর খবর প্রকাশিত হলে
উনি কাগজ শুঁকেই বলতে পারেন যে সেটা কলেরায় হয়েছে নাকি
‘গ্যাস্ট্রোএন্ট্রাইটিস’ থেকে! আসলে সবসময়ই ওঁর উত্তর একরকম হয়। এদেশে
যেমন কেউ অনাহারে মরে না, তেমনি ছোঁয়াচে রোগেও নয়। লোক কপালে লেখা আছে
বলে মরে আর খামোকা অসুখকে দোষ দেয়! ওনার উত্তরও খানিকটা এই জাতের।
বেশ্যা, সাধু আর চাকুরিজীবিদের বয়সের আন্দাজ পাওয়া মুশকিল। কিন্তু
ইন্সপেক্টর সাহেব নিঃসংকোচে নিজের বয়সের কথা বলে বেড়ান। ওনার সঠিক বয়স
হল বাষট্টি, কাগজে লেখা উনষাট আর ওনাকে দেখলে মনে হয় পঞ্চাশের মত। উনি
সাদাসিধে পরোপকারী গোছের ঘরোয়া মানুষ। নমস্কার করে কোন প্রসংগ ছাড়াই বলে
ফেলেন—জানেন তো, আমার ভাইপোই এখন বোর্ডের চেয়ারম্যান। তারপর শুরু হয়
ওনার কোন গল্প যার মুখড়া হল “ভাইপো যখন বোর্ডের চেয়ারম্যান হল তখন আমি
বললাম ---“।

এই গল্পটি পুরো এলাকায় জল- মেশানো- দুধের মত ছড়িয়ে পড়েছিল। যে কোন
মহল্লায় গেলে শোনা যেত “ভাইপো যখন বোর্ডের চেয়ারম্যান হল তখন আমি
বললাম- বেটা, আমি অনেকদিন হুকুম চালিয়েছি , এবার আমায় রিটায়ার করার দিন।
তোমার অধীনে চাকরি করতে চাইনে। কিন্তু আজকাল পুরনো লোকদের কথা কে
শোনে! সমস্ত মেম্বার চেঁচিয়ে উঠল—এটা কোন কথা হল? ভাইপো বড়মানুষ হয়েছেন
তো চাচা কেন সাজা পাবে? দেখি তো, আপনাকে কে রিটায়ার করায়! ব্যস্‌ দুপক্ষেই
নিজের দাবিতে অনড়। গত তিনবছর ধরে আমি রিটায়ার হওয়ার দরখাস্ত করে যাচ্ছি,
কিন্তু প্রত্যেক বছর মেম্বারেরা খারিজ করে দিচ্ছে। এই কিসসা এখনও চলছে”।
এর সঙ্গে এনাকে আরেকটা নেশায় পেয়েছে। রোজ স্টেশনে গিয়ে শহর থেকে আসা
গাড়িগুলোকে মন দেখতে থাকেন। গাড়ি আসার আগে এবং গাড়ি চলে যাওয়ার পর উনি
প্ল্যাটফর্মে হাঁটাহাঁটি করতে থাকেন। এতে স্বাস্থ্য ভাল থাকে আর নিজেকে জাহির
করাও হয়।

ধরুন, স্টেশন মাস্টার ডিউটি করছে আর উনি চলতে চলতে ওনার কাছে গিয়ে চায়ের
খুরির মত দেখতে নিজের হ্যাটটি মাথায় লাগিয়ে চেয়ারে বসে পরোবেন। তারপর প্রশ্ন
করবেন, ‘বাবুজী, প্যাসেঞ্জার ট্রেন কখন আসবে”?

স্টেশন মাস্টার ওনাকে অনেকবার দেখেছে, ওর দেখতে আর কিছু বাকি নেই।

তাই রেজিস্টার থেকে চোখ না তুলে নিত্যিকর্মের মত জবাব দেয়—আধঘন্টা লেট
চলছে।

ইন্সপেক্টর খানিকক্ষণ চুপ। ফের প্রশ্ন—ছেলেমেয়েদের কী খবর?

--জী, ঈশ্বরের কৃপা!

ইনি এবার সরলভাবে প্রশ্ন করেন—আচ্ছা, আপনার ভাইপো তো আপনার সঙ্গেই
থাকত,তাই না?

--জী , ঠাকুরের কৃপায় ভাল চাকরি পেয়েছে। টিকিট কলেক্টর হয়েছে।

উনি এবার সুযোগ পেলেন। “আমার ভাইপোটাও ভাল চাকরি পেয়েছে। আগে যখন
ভলান্টিয়ার ছিল, লোকে ওকে নিয়ে কী না বলেছে! এমনটাও বলেছে যে লোফারগিরি
করে ঘুরে বেড়ায়’।

একটু পরে ইন্সপেক্টর হেসে ওঠেন। বলেন, “এখন তো আমিই ওর নীচে চাকরি
করছি। রিটায়ার হতে চাই, দিচ্ছে না”।

স্টেশন মাস্টার মন দিয়ে রেজিস্টার দেখছেন। কিন্তু উনি ছাড়বার পাত্র নন।

--তিন বছর ধরে কোনরকমে চালিয়ে যাচ্ছি। আমি চাই চাকরি ছাড়তে, ও বলে এখন

অভিজ্ঞ লোক পাওয়া মুশকিল। আপনি তো দারুণ কাজ করেছেন”।

স্টেশনমাস্টার উবাচ—বড় বড় নেতাদেরও একই দশা। ওঁরা বারবার রিটায়ার হতে
চান, কিন্তু সঙ্গের লোকজন ছাড়তেই চায় না।

উনি ফের হেসে ওঠেন। বলেন, “একদম তাই। তবে আমাকে যে আটকে রেখেছে সে
পদমর্যাদায় আমার চেয়ে অনেক উঁচু। কিন্তু নেতাদের আটকায় অনেক নীচের
লোকজন। দুটো কেসে তফাৎ এইটুকুই”। ওনার হাসি চলতেই থাকে, স্টেশনমাস্টার
রেজিস্টারের পাতা উলটে চলে।

কিছুদিন পরে ইন্সপেক্টরের মনে হল স্টেশনমাস্টার যেন নিজের কাজে বেশি
মনোযোগী হয়ে উঠেছে। উনি গিয়ে চেয়ারে বসলে পরে ও ভুরু কুঁচকে খুব মন দিয়ে
রেজিস্টারের পাতায় ডুবে যায়। কখনও কখনও একটা বড় কাগজে পেনসিল নিয়ে যোগ-
বিয়োগ-গুণ-ভাগে মত্ত থাকে।

রেজিস্টারে তো আগেও মন দিত, কিন্তু ভুরুর কুঞ্চন এবং পেন্সিল নিয়ে আঁকিবুঁকি
থেকে বোঝা যাচ্ছে যে স্টেশনমাস্টার নিজের কাজে বাজে ভাবে ফেঁসে গেছে। তারপর
প্রশ্ন-উত্তর এইভাবে চলতে থাকে—

-- আজকাল বোধহয় কাজের চাপ বেড়ে গেছে?

--হ্যাঁ।

--আর কী খবর?

--সব ভাল।

--গাড়ি কখন আসবে?

--রাইট টাইম।

-- আপনার ভাইপো তো এখন লখনৌয়ে?

--আজ্ঞে।

--আমার ভাইপো তো আজকাল—

--হুঁ।

--রিটায়ার হতে দিচ্ছে না।

--হুঁ।

--চেয়ারম্যান হয়েছে।

--হুঁ।

স্টেশনমাস্টারের ব্যবহারের অধঃপতন ইন্সপেক্টর সাহেব ভাল করে খেয়াল
করছিলেন। ব্যবহার দিন প্রতিদিন খারাপ হচ্ছিল। যেই উনি মাথায় চায়ের ভাঁড়
মার্কা হ্যাট চাপিয়ে চেয়ার টেনে বসেন অমনই ব্যাটার চোখজোড়া যেন লাফিয়ে উঠে
রেজিস্টারের পাতায় আটকে যায়। কখনও কখনও ইন্সপেক্টর প্রশ্ন করলে না
শোনার ভান করে এড়িয়ে যায়। উনি ভাবেন—সরকারি চাকরি করেও যদি এত কাজ
করতে হয় তাহলে কী লাভ!

একদিন হঠাৎ ওঁর স্টেশনে গিয়ে রেলগাড়ি দেখার নেশা উপে গেল।

সেদিনও উনি রোজের মত স্টেশনে গিয়ে স্টেশনমাস্টারের সামনে চেয়ার টেনে বসে
পড়লেন। আজ ভদ্রলোক রেজিস্টারে পেন্সিল নয়, কলম দিয়ে কিছু লিখছিল। চাউনি
দেখে মনে হচ্ছিল যে আজ কাজের সঙ্গে সঙ্গে নিজেও শেষ হবার মুখে।

ইন্সপেক্টর সাহেব শুরু করলেনঃ

--আজ আপনার অনেক কাজ।

--‘হ্যাঁ তো’? হঠাৎ খুব জোরে বলে উঠেছে।

উনি থতমত খেয়ে একটু থেমে গেলেন, তারপর বলতে শুরু করলেন, “প্যাসেঞ্জার

গাড়ি---“

স্টেশনমাস্টারের কলম থেমে গেল। তারপর ও ইন্সপেক্টরের দিকে কড়া চোখে বলল-

“প্যাসেঞ্জার ট্রেন পৌনে ঘণ্টা লেট, আপনার ভাইপো বোর্ডের চেয়ারম্যান। বলুন,
এরপর আর কিছু বলার আছে”?

ইন্সপেক্টর খানিকক্ষণ টেবিলের দিকে তাকিয়ে রইলেন। তারপর উঠে ধীরপায়ে
বেরিয়ে গেলেন।

একজন পয়েন্টম্যান ওনাকে দেখে বলল—কী হয়েছে সাহেব?

--“ কিছু না, কিছু না। সাহেবের কাছে অনেক কাজ পড়ে আছে। আমার ভাইপোরও

ইদানীং বড় তিরিক্ষি মেজাজ। খুব কাজ, অনেক কাজ”।

আজ জোগনাথ একটি বিশেষ মতলবে রূপ্পনবাবুর সঙ্গে মেলায় এসেছে। ওর ভয়,
ওকে একা পেয়ে পুলিশ ফের জ্বালাতন না করে! আর ভালবাসা বেশি হলে ওকে
একেবারে জাপটে না ধরে!

ওরা সব মেলার সাজে সেজে বেরিয়েছে। রূপ্পনবাবু জামার কলারের নীচে একদম
নতুন কেনা রেশমি রুমাল গুঁজেছেন। সৌন্দর্য বৃদ্ধি হবে ভেবে চোখ ঢেকেছেন কালো
চশমায়। শনিচর পরেছে আন্ডারওয়ার আর হাতে বোনা সুতোর জালিদার গেঞ্জি। তবে
গেঞ্জি আর আন্ডারওয়ার অব্দি পৌঁছুতে পারেনি, দেড় ইঞ্চি আগেই থেমে গেছে।
ছোটে পালোয়ানের ল্যাংগোটের পট্টি আজ সামনের দিকে হাতির শুঁড়ের মত দুলছে না।
বরং ওটাকে পেছনের দিকে এমন কষে বেঁধেছে যে পট্টির অন্য মাথা ল্যাঙ্গট ফেঁসে
যাওয়ার মত হলেও পেছনে ছোট ল্যাজের মত লেগে রয়েছে। শুধু এই নয়, আজ ও
ভেতরে গেঞ্জি না পরে এক স্বচ্ছ কাপড়ের কুর্তা পরেছে এবং ওইরকম স্বচ্ছ এক
মার্কিনের গামছাকে লুঙ্গির মত করে পরেছে।

জোগনাথ রূপ্পনবাবুর গায়ে গায়ে লেগে চলছিল। ও হল এক রোগাপ্যাঙলা নবযুবক।
ওকে দেখলেই শিবপালগঞ্জের পুরনো লোকজন বলাবলি করত—আহা রে, একে
দেখলেই অযুধ্যা মহারাজের কথা মনে পড়ে যায়। অযোধ্যা মহারাজ ছিলেন তাঁর
সময়ের সবচেয়ে নামজাদা ঠগ। দূর-দূরান্তর থেকে লোকজন তাঁর কাছে ফন্দি-ফিকির
শিখতে আসতো। জোগনাথকে নিয়ে এখানকার লোকজনের অনেক আশা ছিল যে আবার
ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হবে।

যে দিন গাঁয়ে চোর এল, সেদিন থেকে লোকে জোগনাথকে একটু অন্য দৃষ্টিতে দেখতে
লাগল। গয়াদীনের ঘরে চুরি হবার পর জোগনাথের মনে হল ওকে যেন আগের চেয়ে
বেশি সম্মানের চোখে দেখা হচ্ছে। আমাবাগানে, যেখানে রাখালেরা কড়ি নিয়ে জুয়ো
খেলে, জোগনাথকে দেখলেই সবাই আগে গোপনে নিজেদের ট্যাঁক সামলায় , তারপর
তাকে বসতে দেয়। বাবু রামাধীনের ভাঙ খাওয়ার আসরে না জানি কত হাত বেচারা
জোগনাথের পিঠে স্নেহভরে হাত বুলিয়েছে!

ফ্ল্যাশ খেলতে গোটা শিবপালগঞ্জে জোগনাথের জুড়ি নেই।একবার তো সেরেফ
একটি ‘পেয়ারের’ জোরে ও খান্না মাস্টারের ‘ট্রেল’কে ফেলে দিতে বাধ্য করল। সেই
দিন থেকে জোগনাথের এমন রেলা হল যে ভাল ভাল খেলুড়েরা ওর হাতে তিনটে তাস
দেখলেই নিজেদের তাস দেখা ভুলে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকত। যেই প্রথম তাস
ফেলত, অমনি আদ্দেকের বেশি খেলুড়ে ঘাবড়ে গিয়ে হাতের তাস ফেলে দিত।
শোনা যায় , রাণা প্রতাপের ঘোড়া চেতক মোগল সেনার যে দিকে পৌঁছে যেত, ভীড় সরে
গিয়ে ওর রাস্তা করে দিত। মোগলের সৈন্যের পদাতিক চারহাত পায়ে দৌড়ে পলায়ন
করত। জোগনাথের তাসের চাল অনেকটা সেইরকম। যেই ওর চাল ময়দানে হাজির,
চারদিকে যোদ্ধাদের পলায়ন শুরু।

কিন্তু গয়াদীনের ঘরে চুরি হওয়ার পর হাওয়া পালটে গেল। জোগনাথকে দেখলেই
লোকে ফ্ল্যাশ খেলা কত খারাপ –সেসব বলতে শুরু করল। যে জুয়াড়ির দল আগে ওকে
দেখলেই এক হীরোর মত অভ্যর্থনা করত, আর খানাপিনা ভুলে ওর সঙ্গে খেলতে
বসে যেত, ওদের এখন ওকে দেখলে হঠাৎ জরুরি কাজের কথা মনে পড়ে, যেমন
বাজারে যাওয়া, ঘাস কাটা অথবা মোষ দোয়ানো ইত্যাদি।
এসবই জোগনাথকে মুশকিলে ফেলেছে। সেদিন দারোগাজী ওকে থানায় ডেকেছিলেন। ও
গেল বটে, তবে রূপ্পনবাবুকে সঙ্গে নিয়ে। দারোগাজী বললেন,”রূপ্পনবাবু , জনগণের
সহযোগিতা না পেলে কিছুই করা যাবে না।

তারপর উনি ভাল করে বোঝাতে লাগলেন।“ দেখুন, গয়াদীনের বাড়িতে চুরি হল, অথচ
কিছুই টের পাচ্ছি না। আপনারা সাহায্য না করলে আমি কী করতে পারি, --?”

রূপ্পনবাবু উবাচ, “আমরা পুরো সাহায্য করব। বিশ্বাস না হলে কলেজের কোন
ছোঁড়াকে গ্রেফতার করে দেখে নিন”।

দারোগা খানিকক্ষণ মৌনব্রত ধারণ করে পায়চারি করতে লাগলেন। তারপর
বললেন—এসব ব্যাপারে বিলেতের পদ্ধতি সবচেয়ে ভাল। আশি প্রতিশত অপরাধী
নিজের থেকেই অপরাধ কবুল করে নেয়। আমাদের এখানে তো---“ এই বলে উনি থেমে
গেলেন এবং জোগনাথকে এক দৃষ্টিতে দেখতে লাগলেন। জোগনাথও কম যায় না।
তিনপাত্তির খেলায় ব্লাফ কল করার অভ্যস্ত চোখে দারোগাজীর দিকে তাকিয়ে
রইল।

জবাব দিলেন রূপ্পনবাবু। “বিলাইতী কায়দা এখানে নাই চালালেন। আশি প্রতিশত
লোক যদি নিজের মুখে অপরাধ কবুল করে নেয়, তাহলে আপনার থানার দশজন
সেপাইয়ের মধ্যে মেরেকেটে মাত্র দু’জন ডিউটি করবে। বাকি সব হাজতে থাকবে”।
এইসব কথাবার্তা, হাসি-ঠাট্টায় সময় গড়িয়ে গেল। জোগনাথকে কেন থানায় ডাকা
হল সেটা স্পষ্ট হল না। সেই কথাটা মনে করিয়ে দিয়ে রূপ্পন জোগনাথকে বললেন,’
অ্যাই জোগনাথ, মরা চামচিকের মত বিচ্ছিরি মুখ করে মেলায় গেলে কী হবে? ফুর্তি
কর। দারোগা কি হায়না নাকি যে তোকে কামড়ে খাবে?”

কিন্তু ছোটে পালোয়ানের বিরক্তিভরা চেহারা। বলল,” আমার তো পাকা হিসেব—কাঠ
খেলে কয়লা হাগবে। জোগনাথ কি বৈদ্যজীকে জিজ্ঞেস করে গয়াদীনের ঘরে
ঢুকেছিল? তাহলে এখন কেন ওনাকে আঁকড়ে ধরেছে”?

জোগনাথ এর জবাবে কিছু বলতে যাচ্ছিল, তখনই একটা বলদে টানা গাড়ি ঘরঘরিয়ে
ওর পেছন থেকে গা-ঘেঁষে চলে গেল। রঙ্গনাথ গায়ের থেকে ধূলো ঝাড়তে লাগল। ছোটে
পালোয়ানের চোখের পলক পড়ল না। অর্জুন গীতার বাণী শুনে যে ভাব থেকে আঠারো
দিন কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধক্ষেত্রে ধূলো খেয়েছিলেন ছোটে পালোয়ানও প্রায় সেই ভাবে
বলদ গাড়ির ধূলো গিলে নিল। তারপর একলষেঁড়ের মত বলল—“খাঁটি বাত এবং গাধার
লাথ হজম করার লোক কমই হয়। জোগনাথকে নিয়ে গোটা গাঁয়ে যে খুসুর পুসুর চলছে
সেটা আমি এখন ভড়ভড়িয়ে বলে দিলাম, ব্যস্‌। এটা নিয়ে আর বলার কী আছে?”
শনিচর মধ্যস্থতা করতে চাইল। গ্রামসভার প্রধান নির্বাচিত হওয়ার আশায় ও
এখন থেকেই বৈদ্যজীর কায়দায় ‘শাশ্বত সত্য’ বলার অভ্যাস শুরু করেছে। --

“নিজেদের মধ্যে কুকুরের মত খেয়োখেয়ি ঠিক নয়। দুনিয়াশুদ্ধ লোক জোগনাথকে যাই
বলুক, আমরা ওকে একবার ’ভাল’ বলে দিয়েছি তো তাই সই। মরদের বাত এক, নাকি
দুই?”

ছোটে পালোয়ান নাক কুঁচকে ঘেন্নার ভঙ্গিতে বলল-“তুমি তাহলে মরদ”?

মেলার পথে দেখা হল ল্যাঙড়া বা লঙ্গড়ের সঙ্গে। রঙ্গনাথ বলল, “আরে, ও এখানেও
এসে গেছে”? ল্যাঙড়া বেচারা একটা ভুট্টা গাছের নীচে গামছা বিছিয়ে বসে একটু
আরাম করছিল আর নিজের মনে বিড়বিড় করছিল।। শনিচর বলল—লঙ্গড়ের আর কি!
যেখানে মর্জি হল, গামছা বিছিয়ে বসে পড়ল। আনন্দে মজে থাকে”।

ছোটে পালোয়ান ওর বিখ্যাত খবরের কাগজ মার্কা পোজে দাঁড়িয়ে ছিল। মানে, কাগজে
ওর এখনকার ফটো বেরলে পাঠকেরা ওর আসল চেহারাটা দেখতে পেত। যেন অসীম
সুখে মগন হয়ে আছে এইভাবে নীচের ঠোঁট ফাঁক করে দাঁতে দাঁত চেপে চোখ কুঁচকে
ওর উরূর মূল অংশ চুলকোচ্ছিল, মনে হয় লঙ্গড়ের প্রশংসায় তাতে বাধা পড়ল। তাই
ও দাঁত খিঁচিয়ে উঠল—“আনন্দে থাকে! শালা শূলের উপর চড়ে বসেছে! পরশুদিনই
তহসীলদারের সঙ্গে তুই-তোকারি করে ঝগড়া বাঁধিয়ে এসেছে। মজা কোত্থেকে পাবে?”
ওর পাশ দিয়ে এগিয়ে যাবার সময় রূপ্পন বলল—“কী গো লঙ্গড় মাস্টার! কী খবর?
তহসীলদারের অফিস থেকে দলিলের নকল পেলে”?

লঙ্গড়ের বিড়বিড়ানি বন্ধ হল। চোখের উপর হাত রেখে রোদ বাঁচিয়ে তাকাল।

রূপ্পনবাবুকে চিনতে পারল। বলল, “ কোথায় আর পেলাম বাবু? এদিকে এক পথে

নকলের দরখাস্ত সদর দফতরে পাঠিয়েছিলাম। ওদিকে ওখান থেকে মূল কাগজ
এখানে ফিরে এসেছে। ফের পনের দিনের ধাক্কা!”

শনিচর বলল,” শুনেছি তহসীলদারের সঙ্গে তুই-তোকারি করে ঝগড়া বাঁধিয়েছ?”

--“কিসের ঝগড়া বাবু? মামলাটা যখন আইন নিয়ে, সেখানে তুই-তোকারি করে কী
লাভ”? ওর ঠোঁট ফের বিড়বিড়ানির মুদ্রায় নড়তে শুরু করল।

ছোটে পালোয়ান ওর দিকে ঘেন্নার চোখে তাকাল। তারপর ঝোপ-ঝাড়ের সঙ্গে যেন
আলাপ করছে এমনি ভাবে বলল—“কথার ফুলঝুরি জ্বালিয়ে হবেটা কী? শালা,
অফিসে গিয়ে নকলনবীশকে পাঁচটা টাকা দিতে কী হয়”?

--“তুমি এসব বুঝবে না ছোটে। এটা নীতির লড়াই”। রঙ্গনাথ টিপ্পনি কাটল।

ছোটে পালোয়ান একবার নিজের বিশাল কাঁধের দিকে অনাবশ্যক দৃষ্টিপাত সেরে
বলল, “ তাই যদি হয় তো বেশ। ঘুরতে থাকো গোলকধাঁধায়”। এই বলে অন্য অনেক
যাত্রীর মত ঝোপঝাড়ের কাছে জলসত্র অভিপ্রায়ে গিয়ে দেখল আরেকটা লোক
খোলা জায়গায় অন্য কিছু করছে। পালোয়ান ওকে কষে একটা গালি দিয়ে অন্যদিকে
জায়গা খুঁজতে লাগল।

(চলবে)

No comments:

Post a Comment