গল্প - ময়ূরী মিত্র








বাজার বন্ধের আকাল তখনো আসেনি | অক্সিজেন নিয়ে খেলু খেলুতে অকালে মরেনি পরিপূর্ণ যুবকের দল | ভাবেইনি পৃথিবী ----সভ্যতার এই পূর্ণকুম্ভগুলো ঝাঁপ ফেলবে কিংবা কালো ঢাকনার আড়ালে চলে যাবে |

সেসব সকালে ভরা বাজার বসত | মন খুলে মানুষ আওয়াজ তুলত | কী খুশি লাগত গো | মনে হত দিন ফুটল পুষ্পগন্ধে | চারপয়সার জিনিষের জন্য কুড়ি টাকার হাঁটতাম | এই ছিল আমার দস্তুর | জিনিষ কেনা শেষ হল তো অজানা মানুষ দেখা শুরু করতাম | কতক অজানা আর কতককে নিয়মিত দেখে চেনা | দেখে এবং কখনো রব দিয়ে কখনো মনে মনেই ক্রেতা বিক্রেতার সাথে কথা বলে গল্প নাটক বানানো | মনে মনেই | যেদিনের কথা বলছি সেদিনের একটা বাজারনাট্য আজ আপনাদের জন্য ---


★ ফার্স্ট সিন :

সবজির দোকানে বৃদ্ধ , ছেলের বউ এবং আট দশ বছরের নাতনী | অতটুকু মেয়ের হাতে দুটো বিশাল ব্যাগ | কাত হয়ে যাচ্ছে কিন্তু কাঁদছে না | একটু বইছে তারপর আবার নামাচ্ছে | শ্বাস নিয়ে নিয়ে তুলছে আর নামাচ্ছে | তবু ব্যাগ ছাড়বে না | একা একা বইবেই | দাদু কত বলতে লাগলেন --দে ভাই ! একটা দে | দে ঠিক পারব |

যত দেখছিলাম অবাক হচ্ছিলাম | শুনলাম ছোট্ট নাতনীটি বলছে ----
----না না এই রোদে কষ্ট হবে তোমার | মাথা ঘুরবে বনবনিয়ে | কিছুতে দেব না |

এবার মার কুশ্রী চিৎকার ---ন্যাকামি করবি না | দে দাদুর হাতে |
--- না আ আ আ | চুল ঝাঁকাচ্ছে মেয়ে | এবার দুটো থলে একহাতে | অন্যহাতের আঙুলগুলো ঢুকিয়ে দিয়েছে একটি বুড়ো হাতের ফাঁকে | ছোট্ট শরীরটার সমস্তটুকু দিয়ে দাদুকে পাকিয়ে ধরছে আরো | দাদুকে বইবে আরো যত্নে | হঠাৎ দেখলাম বৃদ্ধকে নিয়ে ছুটতে শুরু করেছে শিশু | পাছে মা ভারী ব্যাগদুটো তার দাদুর হাতে গুঁজে দেয় এগোচ্ছে দ্রুত পায়ে | আর আমার পা ? সেতো দাঁড়িয়ে গেছে বাজারধূলায় | মনে মনে কথা শুরু হল আমার | বললাম মাকে -- ওরে তোর এমন ফুল ! তাকে ফুটতে দে ভাই | বিরাট করে | স্নিগধ গন্ধে ভরুক ঘরদুয়ার |

ভরসা রাখ শিশুর ওপর | মতি ফিরবে তোর --- নদীর শুদ্ধ স্রোত হয়ে |


★ সেকেন্ড সিন :

ডিমের দোকান | হেব্বি ভিড় | না বলতেই সরে জায়গা করে দিলেন একজন | দেখলাম যিনি জায়গা দিলেন তাঁরও প্রচুর মাল | কেনা হয়ে গেছে | টাকা দিয়ে চলে যাবেন | ইতিমধ্যে " এটা দিন সেটা দিন " করে দোকানিকে পাগল করে দিচ্ছি আমরা | দোকানি এবং আমরা সবাই ভুলে গেছি ভদ্রলোকটিকে | প্রায় কুড়ি মিনিট পরে ভিড় সরল |

ভদ্রলোক বসে পড়েছেন বেঞ্চে | ----কী আশ্চর্য ! রাগলেন না | হাসলেন | আলতো করে জাস্ট বললেন ----- দেখলেন তো সবার আগে জিনিষ কিনে টাকা দেবার জন্য এতক্ষণ বসে | কষ্ট হচ্ছিল ওঁর জন্য | কষ্ট হল বলে রাগ এল পিছু পিছু | বললাম -- টাকার হিসেব না বুঝে সবাইকে এত এগিয়ে দেয়ার কী দরকার ছিল আপনার ? বলতে বলতে আরো রেগে যাচ্ছিলাম | বোধহয় নিজের ওপর |

ফের এক পশলা হাসি |---" মাঝে মাঝে বাকিদের এগোবার জন্য নিজেকে পিছতে হয় দিদি | বাড়ি গেলে বড়জোর বউ একটা সলিড ঝাড় দেবে | এতটুকু তো ক্ষতি !" -- ---হাসতে হাসতেই চললেন বৌয়ের গাল খেতে ! আমি পেলাম আমার আদরণীয় |

সিন ড্রপ : সৌরভ | সৌরভ | আজ আমার আমোদ সলিড |

বন্ধ বাজার খুলুক |
আমার নাট্য চাই |
মানুষের |
বিবেচক তারা |

No comments:

Post a Comment