গল্প - মনোজ কর



 





অষ্টম পর্ব 

ক্লাইভের চন্দননগর দখল  

কলকাতা থেকে বেশ কয়েক কিলোমিটার উত্তরে হুগলি নদীর পশ্চিমপাড়ে ঘাঁটি গেড়ে যখন ব্রিটিশবাহিনী চন্দননগর আক্রমণের জন্য প্রস্তুত তখন গত্যন্তর না দেখে ফরাসিরা সিরাজকে একের পর এক চিঠি পাঠাতে শুরু করল। সিরাজ তখন মুর্শিদাবাদ থেকে প্রায় ষাট কিলোমিটার দূরে। ফরাসিদের বক্তব্য পরিস্কার। সিরাজ যেমন নিজের নিজের নিরাপত্তার ব্যাপারে সজাগ তেমনি ফরাসিদের নিরাপত্তার জন্য তার পদক্ষেপ নেওয়াও ততটাই জরুরি। খবর কানে আসা মাত্রই সিরাজ ব্রিটিশদের জানিয়ে দিল বলা ভাল একরকম আদেশ দিল যে এই অভিযান যেন এই মুহূর্তে বন্ধ করা হয়। 

এদিকে ওয়াট ততক্ষণে সিরাজের অনুরোধ রক্ষার ভান করে কুড়িজন সৈন্য নিয়ে মুর্শিদাবাদের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে। সিরাজ একদিকে যেমন ফরাসিদের প্রতি সহানুভূতি দেখাতে উদগ্রীব অন্যদিকে ব্রিটিশদেরও দেখাতে চায় যে সে তাদের সঙ্গে আছে। ওয়াটসের সঙ্গে চলেছে ব্রিটিশ অনুগত ব্যবসায়ী এবং সিরাজের খুব কাছের লোক উমাচাঁদ। সিরাজের সঙ্গে ব্রিটিশদের যে কোনও রকম আলোচনায় উমাচাঁদের উপস্থিতি প্রায় আবশ্যিকতার পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে। ওয়াটস এখন রাজকীয় কায়দায়তেই চলাফেরা করতে শুরু করছে। ৪০০ টাকা দিয়ে রুপোর কাজ করা হাতলের পালকি তৈরি করা হয়েছে তার জন্য। উমাচাঁদ ওয়াটসের কাছে আগেই পৌঁছেছিল সিরাজের দ্বিচারিতার খবর নিয়ে। অবশ্য ব্রিটিশদের কাছে এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু ছিল না কারণ সাম্প্রতিককালে তারা নিজেরাও প্রয়োজনে দ্বিচারিতার আশ্রয় নিয়েছে বেশ কয়েকবার। উমাচাঁদ খবর নিয়ে এল যে একজন ফরাসি দূত গোপনে হুগলির গভর্নর নন্দকুমারের কাছে প্রায় একলক্ষ টাকার উপহারসামগ্রী নিয়ে দেখা করেছে। উমাচাঁদ এ খবরও দিল যে সিরাজ ইতিমধ্যেই নন্দকুমারকে নির্দেশ দিয়েছে যদি ব্রিটিশরা চন্দননগর আক্রমণ করে সে ক্ষেত্রে ফরাসিদের  সহযোগিতা করা জন্য। এই নন্দকুমার পরবর্তীকালে ব্রিটিশদের কাছ থেকে মহারাজা উপাধিতে ভূষিত হয় এবং ওয়ারেন হেস্টিংসকে সরিয়ে ব্রিটিশ সরকার তাকে বর্ধমান, হুগলি এবং নদীয়ার দেওয়ান পদে অভিষিক্ত করে। 

ব্রিটিশরা আক্রমণের পরিকল্পনা স্থগিত রেখে উমাচাঁদকে পাঠাল নন্দকুমারের কাছে। উমাচাঁদ নন্দকুমারকে জানাল যে কোনও ভাবেই ব্রিটিশদের রোখা তার পক্ষে সম্ভব হবে না। নন্দকুমার যদি ফরাসিদের সহযোগিতা করে তাহলে ব্রিটিশদের হাতে তার প্রাণসংশয়ের সম্ভাবনা প্রবল। অন্যদিকে নিরপেক্ষ থেকে ব্রিটিশদের সহযোগিতা করলে চন্দননগর জয়ের সঙ্গে সঙ্গে তার হাতে নগদ ১২০০০ টাকা তুলে দেবে ব্রিটিশরা।  ফৌজদার হিসাবে তার মাসিক বেতন যথেষ্ট বেশি হলেও উপরি পাওনার লোভ ছাড়তে পারল না নন্দকুমার। এখনকার মত তখনকার দিনেও উচ্চপদস্থ সরকারি আধিকারিকদের ঘুষ নেওয়ার বেশ ভালোই রেওয়াজ ছিল।   

উমাচাঁদ ব্রিটিশদের হয়ে সিরাজের কাছে উমেদারি করার জন্য নাটকের অবতারণা করল। সিরাজের কাছে যখন খবর পৌঁছল যে ব্রিটিশরা চন্দননগর আক্রমণের পরিকল্পনা করছে সে তখন উমাচাঁদকে তার শিবিরে ডেকে পাঠাল। সিরাজ তখনও মুর্শিদাবাদ পৌঁছয় নি। সিরাজ জানতে চাইল ব্রিটিশরা কি গঙ্গাবক্ষে নিরপেক্ষতা বজায় রাখার যে সিদ্ধান্ত হয়েছিল তা ভাঙতে চাইছে কি না। উমাচাঁদ শশব্যস্ত হয়ে সিরাজকে আশ্বাস দিতে শুরু করল এই বলে যে এই সব গুজব সর্বৈব মিথ্যা। ব্রিটিশরা জাতিগতভাবে বিশ্বাসী এবং পরস্পরের প্রতি বিশ্বাসই তাদের উন্নতির কারণ। ব্রিটিশ সমাজে যে কথার খেলাপ করে বা মিথ্যার আশ্রয় নেয় সে সমাজ থেকে বিতাড়িত হয়ে একাকী জীবন যাপন করে।আত্মীয়-পরিজন এবং বন্ধু-বান্ধবেরা তাকে পরিত্যাগ করে। এক স্থানীয় ব্রাহ্মণকে ডেকে তার চরণস্পর্শ করে উমাচাঁদ বলল যে কোনও অবস্থাতেই ব্রিটিশরা চুক্তিভঙ্গ করবে না।উমাচাঁদের নাটক বিশ্বাস করল সিরাজ। সিরাজ জানাল যে ফরাসীদের সাহায্য করার জন্য অর্ধেক সৈন্যবাহিনী নিয়ে চন্দননগর অভিযানের যে আদেশ সে মিরজাফরকে দিয়েছে তা প্রত্যাহার করে নেওয়া হচ্ছে এবং এও জানাল যে ক্লাইভ যেন মনে না করে যে ব্রিটিশ সৈন্যদের তার কাছে পাঠানো হয়েছে তাদের ফরাসীদের সাহায্য করার জন্য ব্যবহার করা হবে। পরের দিন ক্লাইভের চিঠি এসে পৌঁছল সিরাজের কাছে যাতে লেখা আছে সিরাজের সম্মতি ব্যতীত কোনও ভাবেই চন্দননগর আক্রমণ করা হবে না। নিশ্চিন্ত হয়ে সিরাজ মুর্শিদাবাদের উদ্দেশ্যে রওনা দিল।   

  এদিকে ওয়াটস এবং উমাচাঁদ চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকলো। দু’জনে মিলে ব্রিটিশ আদালতে আবেদন জানাল যেন চন্দননগর আক্রমণের পক্ষে সম্মতি দেওয়া হয়। ওদিকে ক্লাইভ সিরাজের অনুমতি ছাড়া চন্দননগর আক্রমণ না করার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আদালত কার্যতঃ কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারলো না। ফরাসি প্রতিনিধি ল’ সহজে ছেড়ে দেবার লোক নয়। মানিকচাঁদ এবং খোয়াজা ওয়াজিদ ফরাসিদের পক্ষে তদ্বির শুরু করল। ওয়াজিদ ফরাসিদের সঙ্গে ভালোই ব্যবসা করে। ব্রিটিশরা চন্দননগর দখল করলে সে পথে বসবে। মানিকচাঁদ সিরাজের কলকাতা আক্রমণের সময় যে পরিমাণ টাকা হাতিয়েছে তা ব্রিটিশদের নজরের বাইরে রাখার জন্য ফরাসিদের কাছে আশ্রয় নিয়েছে। জগৎশেঠের  কাছে ফরাসিদের ধারের পরিমাণ ১৫ লক্ষ টাকা। সুতরাং ফরাসিদের সমর্থন করা ছাড়া জগৎশেঠের আর কোনও উপায় নেই। এই ত্রিশঙ্কু অবস্থার জন্য সকলে সিরাজের দু’দিক  থেকেই অর্থ আহরণের উদ্দেশ্যে ব্রিটিশ এবং ফরাসিদের মধ্যে ভারসাম্য রাখার প্রচেষ্টাকেই দায়ি করল।  এই প্রচেষ্টার পিছনে যে গভীর অভিসন্ধি আছে সে কথা বুঝতে কারও বাকি রইল না। এই অবস্থা চলতে থাকলো প্রায় ফেব্রুয়ারির শেষ অবধি।

এদিকে দিল্লিতে তখন পালাবদল শুরু হয়েছে। পাঞ্জাব সুবেদার মির মান্নুর স্ত্রী মুঘলানি বেগমের আমন্ত্রণে নাদির শাহের উত্তরাধিকারি আফগান রাজা আহমেদ শাহ দুরানি আর তার ছেলে তিমুর শাহ দুরানি তখন লাহোর, দিল্লি, মথুরা, বৃন্দাবন দখল করে মহম্মদ শাহ এবং আলমগীরের কন্যাদের নিজেদের হারেমে নিয়ে গিয়ে তুলেছে। নিজেরই রক্ষীদের হাতে খুন হয়ে ১৭৪৭ সালের জুন মাসে নাদির শাহের রাজত্বকাল হঠাৎই শেষ হয়ে যায়। দুরানির কাছে খবর আসে নিজের স্ত্রীর হাতে নিহত হয়েছে নাদির শাহ। নাদির শাহের একান্ত অনুগত এবং বিশ্বাসী আবদালি বাহিনীর সেনাপ্রধান দুরানি জীবন বাজি রেখে সৈন্যবাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছোয়। দুরানি জানত যে বিশ্বাসঘাতক রক্ষীরা তার ওপর আক্রমণ করতে পারে তবুও জীবনের মায়া তুচ্ছ করে ঘটনাস্থলে পৌঁছে নাদির শাহের মুন্ড এবং মুন্ডহীন দেহ দেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে দুরানি। তারপর নাদির শাহের অনামিকা থেকে শিলমোহর এবং বামবাহু থেকে কোহিনূর খুলে নিয়ে ৪০০০ সৈন্য সহযোগে কান্দাহারে ফিরে এসে নিজেকে রাজা হিসাবে ঘোষণা করে। মুঘল সৈন্যবাহিনী ছেড়ে রোহিল্লা পাঠান সেনাপতি নাজিবুদৌল্লা তখন যোগ দিয়েছে আহমেদ শাহ দুরানির সঙ্গে। সিরাজের কানে এল আহমেদ শাহ দুরানি আর নাজিবুদৌল্লা পূর্ব ভারত আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। ভীত সন্ত্রস্ত সিরাজ ক্লাইভের কাছে সাহায্যের অনুরোধ জানিয়ে বলল যে সে ব্রিটিশ সৈন্যবাহিনীর খরচ বাবদ মাসে একলক্ষ টাকা দিতে প্রস্তুত আছে। 

ইতিমধ্যে ব্রিটিশ যুদ্ধজাহাজ কাম্বারল্যান্ড মাদ্রাজ থেকে বালাসোর এসে পৌঁছেছে। বোম্বে থেকে অতিরিক্ত সৈন্য নিয়ে জাহাজও এসে পৌঁছে গেছে। ক্লাইভের আত্মবিশ্বাস এখন তুঙ্গে। ক্লাইভ সিদ্ধান্ত নিল যে এখনই চন্দননগর আক্রমণের প্রকৃত সময়। ফরাসিদের সঙ্গে গঙ্গাবক্ষে নিরপেক্ষতা রক্ষা করার চুক্তি অর্থহীন। যে সমস্ত ফরাসি আধিকারিকেরা চুক্তি স্বাক্ষর করার জন্য অপেক্ষা করছিল ক্লাইভ তাদের ফেরত পাঠিয়ে সিরাজকে জানাল যে যে মুহূর্তে পাঠানদের এগিয়ে আসার খবর পাওয়া যাবে ব্রিটিশ সৈন্য সিরাজের কাছে পৌঁছে যাবে। ক্লাইভ এও জানাল যে ইতিমধ্যে সে সৈন্যবাহিনী নিয়ে চন্দননগরের উদ্দেশ্যে রওনা দিচ্ছে। ক্লাইভের কাছ থেকে সম্ভাব্য পাঠান আক্রমণের মোকাবিলার প্রতিশ্রুতি পেয়ে সিরাজের তখন চুপ করে থাকা ছাড়া আর কিই বা উপায় ছিল? ব্রিটিশ অনুগত নন্দকুমার সিরাজকে আশ্বাস দিল যে ব্রিটিশদের কোনও অসদুদ্দেশ্য নেই। এদিকে চন্দননগর আক্রমণের ব্যাপারে দ্বিধাগ্রস্ত ওয়াটসন সিরাজকে বার্তা পাঠাল যে ফরাসিরা সম্ভাব্য আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য গঙ্গাবক্ষে নিরপেক্ষতা বজায় রক্ষার জন্য সিরাজের নাম ব্যবহার করছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে তারা সিরাজের মতামত শুনতে চায়। ওয়াটসনের দীর্ঘসূত্রতায় বিরক্ত ক্লাইভ ৪ঠা মার্চ, ১৭৫৭ কাউন্সিলের কাছে অনুরোধ জানাল যে তারা যেন অনতিবিলম্বে অ্যাডমিরাল ওয়াটসনকে জলপথে চন্দননগর আক্রমণের নির্দেশ দেয়। ক্লাইভ এও জানালো যে সে নিজে স্থলবাহিনী নিয়ে প্রস্তুত এবং ওয়াটসনের এই বিলম্ব যদি কোনও দুর্ভাগ্যের কারণ হয় তবে তার জন্য সে দায়ি থাকবে না। তার আবেদন এই যে সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন যা গঙ্গাবক্ষে নিরপেক্ষতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে কি না। যদি হয় তাহলে সে নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় সৈন্যদের রেখে বাকি বাহিনী নিয়ে মাদ্রাজ ফিরে যাবে। সেক্ষেত্রে কাউন্সিল যেন সৈন্য পরিবহণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়।। ঠিক সেই সময়  সিরাজের চিঠি এসে পৌঁছোল। সরাসরি নিজের মতামত না জানালেও সিরাজ লিখল যে শত্রু যদি তোমার কাছে আন্তরিকতার সঙ্গে ক্ষমাভিক্ষা করে তবে তাকে ক্ষমা করাই উচিৎ। কিন্তু শত্রু যদি ছলচাতুরির আশ্রয় নেয় বা তার আচরণে ও কথায় আন্তরিকতা এবং আসল উদ্দেশ্য সম্বন্ধে সংশয়ের উদ্রেক হয় তবে সময় এবং পরিস্থিতির বিচারে সঠিক পন্থা অবলম্বন করাই বুদ্ধিমানের কাজ। 

সিরাজের এই উত্তরকে চন্দননগর আক্রমণের ছাড়পত্র হিসাবে ধরে নিয়ে যুদ্ধজাহাজ চন্দননগরের পথে এগিয়ে যাওয়ার আদেশ দিল। স্থলপথে ক্লাইভের বাহিনী আর জলপথে ওয়াটসনের যুদ্ধজাহাজ কেন্ট, টাইগার এবং সালিসবেরির মিলিত আক্রমণে কেঁপে উঠলো চন্দননগর। সেদিনটা ছিল ১৪ই মার্চ, ১৯৫৭। কিন্তু কলকাতা পুনর্দখলের মত চন্দননগর বিজয় অত সহজ ছিল না। ফরাসিরা প্রতিরোধ গড়ে তুলল।বেশ কিছুদিন যুদ্ধ চলার পর বিশ্বাসঘাতকতার শিকার হল ফরাসিরা। জনৈক বিশ্বাসঘাতক সেনা অফিসারের সহযোগিতায় ক্লাইভের বাহিনী দখল করে নিল চন্দননগর ফোর্ট। ব্রিটিশ যুদ্ধজাহাজ প্রাথমিকভাবে বাধাপ্রাপ্ত হলেও কয়েকদিনের মধ্যেই সমস্ত ফরাসি জাহাজকে হুগলিবক্ষে ডুবিয়ে বীরদর্পে চন্দননগর এসে পৌঁছে গেল। ব্রিটিশ স্থলবাহিনীর ৪০ জন সৈন্য নিহত এবং ৭০ জন আহত হল। যুদ্ধজাহাজ কেন্ট এবং টাইগার মিলিয়ে মৃতের সংখ্যা ৩২ এবং আহতের সংখ্যা ৯৯। মৃতদের মধ্যে ছিল টাইগারের ভারপ্রাপ্ত ফার্স্ট লেফটেনান্ট স্যামুয়েল পেরু এবং আহতদের মধ্যে ছিল অ্যাডমিরাল পোকক। ফোর্ট দখল করার পর ওয়াটসন, পোকক, ক্লাইভ এবং ক্লিপট্রিক সিলেক্ট কমিটির কাছে চন্দননগর ফোর্ট সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করার অনুমতি চেয়ে পাঠায়। তাদের যুক্তি ছিল যে কোনও সময়ে সুযোগসন্ধানী এবং সুবিধাবাদী  সিরাজ তার অবস্থান পরিবর্তন করে ব্রিটিশদের বিরোধিতা করে ফরাসিদের  দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে পারে। ফোর্ট ধ্বংস করে চন্দননগরকে ফরাসিমুক্ত করতে পারলে সেই সম্ভাবনা সমূলে বিনষ্ট হবে। শুধু তাই নয় চন্দননগরের মত বর্ধিষ্ণু উপনিবেশ ধ্বংস হলে ফরাসিদের কারখানা ও ব্যবসার ওপরে চরম আঘাত নেমে আসবে। ফলস্বরূপ হুগলিবক্ষে এবং বাংলায় ব্রিটিশরা একচ্ছত্র ব্যবসা চালাতে পারবে। ১৬ই এপ্রিল ১৭৫৭ ব্রিটিশদের হাতে ধ্বংস হয়ে গেল চন্দননগর ফোর্ট। আরও একবার প্রমাণিত হল রাজনীতি এবং যুদ্ধের অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য সম্পদবৃদ্ধি ব্যতীত আর কিছু নয়। শিষ্টাচারস্বরূপ 

যুদ্ধশেষে ইউরোপের দুই রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দী এবং ভারতের দুই ব্যবাসয়িক প্রতিদ্বন্দ্বী ব্রিটিশ এবং ফরাসিদের মধ্যে স্থির হল ফরাসি কাউন্সিল এবং ফ্যাক্টরির প্রধানেরা কলকাতায় কড়া নজরদারিতে রাজকীয় মর্যাদায় গৃহবন্দি থাকবে এবং বন্দি থাকাকালীন তাদের প্রভূত পরিমাণে আর্থিক ভাতা দেওয়া হবে।

ব্রিটিশদের পরবর্তী পরিকল্পনা কি ইতিমধ্যে স্থির হয়ে গেছে? তলে তলে কি শুরু হয়ে গেছে পলাশিযুদ্ধের প্রস্তুতি? 


No comments:

Post a Comment