ধারাবাহিক - সুদীপ ঘোষাল





















১০

সুমনের বাঁশি বাজানো দেখে লাইনের অনেকে হিংসা করে।রূপসী বল,ভালো কাজ করলেই শত্রু বেড়ে যায়।সুমন বল,ছেড়ে দাও ওসব কথা।এসো আমরা সাধনা চালিয়ে যাই।তারপর সুমন বাঁশি বাজানো শুরু করলো। তার বাঁশির নবসুরে রূপসীর দেহ কেঁপে উঠলো।সুমন খুশি মনে স্নান সমাপন করলো।

রূপসীর হাতের রান্না খুব ভালো।সুমন খেলো।রাতে আজ কাজ নেই।মুরারী রাতে রূপসীর ঘরে এলো।সে বললো,শোনো সবাই।যাত্রাদলের এখন কোনো কদর নেই।তাই আমি আপাতত আলকাপের দল করবো।

সুমন বললো,যাত্রাদল তাহলে উঠিয়ে দেবে।

----না। বন্ধ হলো আপাতত।আবার ডাক পেলে হবে নিশ্চয়। আলকাপের নায়িকা হবে রূপসী।

----না, দাদা রূপসী নয়। ঝুলনকে করো।

---কেন? তোমার গায়ে লাগছে না কি?

সুমন বললো,রূপসী আজেবাজে ভাষা বলতে পারবে না।

মু রা রী বললো,কি বলছো রূপসী।

রূপসী বললো,আমি নাচ করবো। কিন্তু তোমার বিপরীতে অভিনয় করবে ঝুলন ভাই।

বেশ তাই হবে।কালকে আমাদের আলকাপ হবে। বায়না দিয়ে গেছে।

সুমন বলে,এখন আলকাপ শোনার লোক বেশি। আড়ালে রাতের বেলায় ভদ্রলোকেরাও চাদর মুড়ি দিয়ে শুনতে আসে আলকাপ। খিস্তিখেউড় শুনতে মজা লাগে। মেয়েদের নগ্ননাচ দেখতে ভালো লাগে দর্শকের। টাকা পয়সাও দেয় অনেক। তাহলে যাত্রার ভবিষ্যৎ কি?

রূপসী বল,ছাড়ো তো ওসব কথা। এখন চলে গেলেই হলো।

মুরারী ভালো ব্যবসাদার। সে নিশিকান্ত কে দলে নিলো।ভালো আলকাপ করে। নাম আছে। দলের নাম দিলো,নিশিকান্তর আলকাপ।

তারপর পরের দিন রাতে শুরু হলো আলকাপ। সুমনের বাঁশির তালে নিশিকান্ত আর রূপসী নাচ আরম্ভ করলো।তারপর শুরু হলো আলকাপ। নিশিকান্ত একটা রসগোল্লার হাঁড়ি দুপায়ের ফাঁকে নিয়ে শ্বশুর বাড়ি এলো। তারপর ঝুলন মেয়ে সেজে নিশিকান্তর হাঁড়ি থেকে রসগোল্লা খেলো। আহা কি মি। আরও খাবো।

নিশিকান্ত বললো,তোকো হাঁড়ি উপুড় করে রস খাওয়াবো। আয় আমার শালি।

এইভাবে আসর জমে উঠলো। প্রচুর টাকা পেলো নিশিকান্ত। তার নাম শুনেই লোকে ভিড় করে আলকাপ শুনতে আসে।

মুরারী বলে,দেখো সুমন, যাত্রার থেকে টাকা বেশি আলকাপে।মানুষ যা চায় তাই করতে হবে।তা না হলে না খেয়ে মরতে হবে।

সুমন কোনো উত্তর দেয় না। শুধু আকাশের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। সুমন আজ অনেক দিন পরে বাড়ি গেলো। ছেলেটি বড় হয়েছে।পাশে কুড়োর বাড়ি। বিধবা হওয়ার পর ও একা থাকে। একা রান্না করে খায়।একাদশী করে। প্রচুর উপোষ করতে হয়। সুমন একবার বলেছিলো, তুমি আমার ভায়ের বৌ।তুমি ভালো গান জানো ।চলো যাত্রাদলে গান করবে। এভাবে জীবনটা নষ্ট করে কি লাভ। খেনী রেগে গিয়ে বলেছিলো,বেশি বাড়াবাড়ি কোরো না। গ্রাম থেকে বাস ওঠাবে না কি? ও ওর মত থাক। সুমন চিন্তা করে দেখলো, এখনও কুসংস্কার দূর হতে অনেক সময় লাগবে। তারপর নিজের সংসারের কথা ভেবে আর ওসব নিয়ে কথা বলে নি। কুড়ো,খেনী দুইবোন। কালোকে কুড়োর কাছে রেখে শান্তি পায় দুদন্ড খেনী। নিঃসন্তান কুড়ো কালোকে পেয়ে মাতৃত্বের স্বাদ অনুভব করে।

No comments:

Post a Comment