মুক্তগদ্যঃ ইন্দ্রাণী ঘোষ



মুক্তগদ্য



সামার অফ ফিফটিন
ইন্দ্রাণী ঘোষ 



জ্বলছে শহর। আগুন বড় একটা রেয়াত কাউকে করছে না। বৃষ্টি লুকিয়েছে কোথায় কেউ জানে না। মাঝে মাঝে দু এক ঝলক ফিচেল হেসে সেই যে পালিয়েছে আর পাত্তা নেই। তাও সে প্রায় হপ্তা দুএক আগে। মেঘ কিন্তু খুব রাগ “এ কি দায়িত্বজ্ঞ্যানহীন কাজকর্ম বৃষ্টির ?” রাগে মাঝেমাঝেই তড়পাচ্ছে আর দাত কিড়মিড় করছে। মাঝে মাঝে আকাশের বুক চিরে হলুদ আলো ঝলকাচ্ছে। মেঘের কথা শুনছে বৃষ্টি ,মজা পাচ্ছে। আরও মেঘের বুকের গভীরে জাঁকিয়ে বসছে। ভোর থেকে মেঘ রোজ শাসন চালাচ্ছে, তা ওই মেয়ে শুনলে তো। একেবারে গুটিসুটি মেরে মেঘের বুকের ভিতর ঢুকে পড়েছে। শেষে মেঘ ঠিক করলে একটু নরম হয়েই বোঝাবে। সে বললে, “দুষ্টুমি করে না সোনা, এবার যাও, তুমি না গেলে পৃথিবীর তূলিতে রঙ লাগবে কি করে?” বৃষ্টি নাছোড় সে যাবেই না। মেঘ তখন এক গল্প ফাঁদলে, সে বললে---

‘আমার ছিল একটা একতারা, জানিস বৃষ্টি, পাঁচ টাকায় কিনেছিলাম মেলা থেকে। বাজাতে বাজাতে আঙুল কেটে রক্ত ঝরত, আর ছিল বন্ধু হাওয়া, আর এক স্তিমিত তারা। হাওয়া গেল ঝিলের পারে গল্প বলতে আর সেই তারাও খসে পড়ল। আমি জানতাম আমাদের ‘একতারার জলসা’র মেয়াদ ফুরবে, বেশি পথ হাঁটব না আমরা। তবু চলেছিলাম জানিস। আজও ফিরে দেখি, সেই একতারার জলসার রাতগুলো খুঁজি আলোর সমুদ্রের ঢেউয়ে ঢেউয়ে। পাই না খুঁজে। আমি একটা গোটা জীবন ওই একতারার সূরের নেশায় বুঁদ হয়ে কাটিয়ে দিতে পারি । ওই জলসার দিনগুলো আমার লুকনো ঝাঁপির মণিমুক্ত। গল্প বলতে বলতে মেঘের চোখ থেকে দু ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল। তারপর সে হঠাৎ দেখলে তার চোখের জল, বুকের বৃষ্টির সাথে মিলে কখন পৃথিবীতে গড়িয়ে পড়েছে, মেঘ নিজে বুঝতেই পারে নি। বৃষ্টির খবর মেঘকে দিলে এক দীঘি, দীঘির বুকে বৃষ্টি তখন আছারি বিছাড়ি কান্না জুড়েছে। 










No comments:

Post a Comment