ধারাবাহিক
ছুটি কথা ৫
নন্দিনী সেনগুপ্ত
কলকাতায় বেশ শীত পড়েছে কয়েকদিন হল। শীত পড়লেই মন চলে যায় ছোটবেলায় পাওয়া শীতের ছুটিগুলোয়। মন চলে যায় ক্রিসমাসের কেকে, নতুন গুড়ের গন্ধে, কমলালেবুর কোয়ায়, উলের নকশায়। কিন্তু এইগুলোর সঙ্গে আমাদের ছোটবেলায় একটা জিনিস হত শীতে, সেটা হল নতুন বছরে নতুন ক্লাসে ওঠা, নতুন খাতা, নতুন বই। ঐ যাহ্, বই বলতেই মনে পড়ল বইমেলা। হুঁ হুঁ, নতুন বছরে নতুন ক্লাসের বই পড়বার ঠিকঠাক উৎসাহ আসবে কোত্থেকে, যদি বইমেলা থেকে বেশী নয়, নিদেনপক্ষে গুটিচারেক নতুন গপ্পের বই না ঝুলিতে জমা হয়?
প্রতিবারই আমি বই পাই, বইমেলা থেকে। বাবা যায় তো, কিনে আনে। কিন্তু বাবা আমায় কোনওবার নিয়ে যায়না। যে নাটকে গান নেই, নাচ নেই, খালি কথা, কথা, আর কথা, সেরকম নাটকও বাবা আমায় দেখাতে নিয়ে যায়। সিনেমা দেখাতে নিয়ে যায়, সিনেমার ইংরেজি কথা না বুঝলে ফিসফিস করে হলের মধ্যে মানেও বলে দেয়, একটুও রাগ করে না। কিন্তু বইমেলা যাবার নাম করলেই কেমন গম্ভীর হয়ে বলে, ‘ওরে সব্বোনাশ, তুই হাঁটতে পারবিনা এত, শেষে দু পা গিয়েই বলবি, বাবি, কোলে নাও! তখন আমি বই কিনব না তোকে কোলে নেবো? আর বেজায় ধুলো যে রে! নির্ঘাত সর্দিকাশি বাঁধাবি। একদম না। একদম বায়না ধরবি না বইমেলা যাবার’। এই অবধি বলেই বাবা চশমা পড়ে ফেলে, তারপর চাইনিজ কলম দিয়ে কি যেন লিখতে শুরু করে ডায়রি খুলে। বাবা একবার লিখতে শুরু করলে আর কোনও কথা বলা মানা, দরকারি কাজ করছে, তাই আর বিরক্ত করা চলবেনা।
কিন্তু আমার খুব ইচ্ছে বইমেলা ব্যাপারটা কি, সেইটা একবার দেখতে চাই। বুবাই প্রতিবার সেই চুঁচুড়া থেকে বইমেলা দেখতে আসে সেজমেসোর সঙ্গে, কিন্তু এই কলকাতায় বসে আমার এখনও বইমেলা দেখা হল না। সামনের বছর আমি ক্লাস ফোরে উঠবো, এখনও বইমেলা দেখা হলনা আমার! নাহ, এবার একটা বিহিত করতেই হবে। ঐ চশমা পড়বার আগেই যা বলবার সেটা বলে ফেলতে হবে বাবাকে।
যেমন ভাবা, তেমনি কাজ। সাহস করে একদিন বলে ফেললাম বাবাকে, ‘বাবি, প্লিজ প্লিজ প্লিজ... এবার আমাকে বইমেলা দেখাতে নিয়ে চলো-ও-ও-ও! আমি কথা দিচ্ছি একটুও বায়না করবো না আইসক্রিম খাবার, একবারও কোলে উঠতে চাইবো না, পুরোটা হাঁটতে পারবো। আর হ্যাঁ, এখন থেকে রোজ পড়াশুনা করবো, সমান করে জুতোর ফিতে বাঁধবো আর তুমি বাড়ি না থাকলে তোমার কলম টাচ করবো না। প্লিজ আমায় নিয়ে চলো এইবারটি’। এতগুলো কথা একেবারে একদমে বলে ফেলে বাবার চোখের দিকে তাকিয়ে রইলাম। বাবা কি গোঁফের ফাঁক দিয়ে একটু মুচকি মুচকি হাসছে? বাবা কি এখন আমাকে গলা জড়িয়ে ধরে গালে গাল ঘষে বলবে, ‘আচ্ছা, আমার মা-মনি!’? —হ্যাঁ, বলেছে, বাবা বলেছে। উফফফ, কি মজা, এবার তাহলে বইমেলা যাচ্ছি। বুবাই তাহলে আর আমায় দুয়ো দিতে পারবে না, আমি একটা কাঁচকলা দেখিয়ে বলব, ‘আম্মো বইমেলা দেখেছি’।
অবশেষে এলো সেই শুভদিন। শীত একটু আছে বটে, কিন্তু ফুল সোয়েটার পড়বার মত নয়। কিন্তু মা কি শোনে? দিলো সেই ফুলহাতা লাল পুলওভারটা পরিয়ে, সঙ্গে আকাশী রঙের ফুলপ্যান্ট। টুপিটাও পরিয়ে দিতে চাইছিল, আমি চেঁচামেচি জুড়লাম, শেষে বাবা ওটা নিজের ঝোলায় ঢুকিয়ে নিয়েছে। আমি বইমেলা যাচ্ছি। মেলায় ঢুকতে গিয়ে আমার চক্ষু চড়কগাছ। কি সুন্দর তোরণ! আমাদের বাবুবাগানের দুর্গাপুজাতেও এত সুন্দর করে সাজায়না। ভেতরে ঢুকলাম ধীরে ধীরে, বেশ ভিড় হয়েছে; রবিবারের দুপুর তো, তাই। বাবা সব সময় আমার হাত ধরে আছে। দারুণ দারুণ দেখতে সব স্টল হয়েছে। বেশীরভাগ স্টলেই নিচের দিকে বাচ্চাদের বই, যাতে আমাদের বয়সী বাচ্চারা হাতে তুলে নিয়ে দেখতে পারে।
রাস্তায় আসবার সময় বাবা আমায় পইপই করে বুঝিয়ে এনেছে, বই র্যাকের যেখান থেকে তুলবো, ঠিক সেইখানেই যেন আবার রেখে দিই, ওটা আমার বাড়ি নয়, যে যেখান থেকে খুশি বই নিয়ে আরেক জায়গায় রেখে দিলে চলবে, আর বই পছন্দ হলে বাবাকে বলতে, সেইটা বাবা আমায় কিনে দেবে। কিন্তু আমি জানি পছন্দ হলেই তো আর চলবে না, কিছু কিছু বই আমার ভারি পছন্দ হচ্ছে বটে, কিন্তু সেগুলোর দাম বিচ্ছিরি রকমের বেশী; সেগুলো কিনে পড়বার চেয়ে পাড়ার, ইস্কুলের বা রামকৃষ্ণ মিশনের লাইব্রেরী থেকে ধার করে পড়া ঢের ভালো। বই পছন্দ হলেই কিনতে হবে এমন মাথার দিব্যি কেউ দেয়নি। তাও নয় নয় করে বেশ কিছু বই কেনা হয়ে গেলো।
একটা স্টল থেকে বেরবো, এমন সময় বাবা হাত ধরে টেনে আমায় ফিসফিস করে বলল, ‘ঐ দ্যাখ মামণি, ঐ যে তুই আনন্দমেলায় গোগোলের গল্প পড়তে ভালবাসিস, ঐ যে ভদ্রলোক যাচ্ছেন, ঐ উনিই ঐ গপ্পোগুলোর লেখক!’ আমি হাঁ করে তাকিয়ে দেখি, ওরেব্বাস, ঐ তো ছোট্টখাট্টো দেখতে একটা মানুষ, সাদা পাঞ্জাবি-পাজামা, তার উপরে ধূসর জহরকোট, কাঁধে একটা ঝোলা, হেঁটে যাচ্ছেন ছোট অথচ দৃঢ় পদক্ষেপে। উনি ঐ অত্তবড় গপ্পোগুলি লেখেন! শুধু গোগোল কেন উনি তো বড়দের উপন্যাসও লেখেন। ঠাম্মা আর মা হাঁ করে গেলে, আমাকে একটুও টাচ করতে দেয়না সেই বই; উপরে তাকে তুলে রাখে যাতে আমি চেয়ারে উঠেও হাত না পাই। ইনিই সেই সমরেশ বসু! আমি হাঁ করে তাকিয়ে থাকি দূর থেকে ওনার সেই ভারি উজ্জ্বল চোখদুটির দিকে। পরে বড় হয়ে আরও একদুবার ওনাকে দেখেছি সামনাসামনি, প্রণাম করেছি পায়ে হাত দিয়ে, কিন্তু প্রথম সেই দর্শন মনে দাগ কেটে রয়েছে আজও।
দেব সাহিত্য কুটিরের স্টলের কাছে এসে বাবা বলল, এই খানে বাবার বন্ধু দীপককাকু দাঁড়িয়ে থাকার কথা। বাবা আমাকে বলল, ‘একটু এইখানে দাঁড়া, যা ভিড়, দীপক মনে হয় ভিতরে গেলো, আমি ডেকে নিয়ে আসি, নড়বি না কিন্তু, এইখানে দাঁড়িয়ে থাক’। বাবা তো বলল, কিন্তু ওইরকম দাঁড়িয়ে থাকতে পারে নাকি কেউ মেলা দেখতে এসে? কি বোকা বোকা ব্যাপার! আমি ভাল করে দেখে নিলাম জায়গাটা, একটু চিনে নিলাম, যাতে একটু ঘুরে নিয়ে আবার ফিরে আসতে পারি ঐ জায়গায়।
তারপর আমি কাছের একটু ফাঁকা স্টলগুলি দেখতে লাগলাম। ওমা, রান্নার বই, সেলাইএর বই, আল্পনার বই, কতরকম বই পাওয়া যায়। আমি তো ভেবেছিলাম শুধু গপ্পের বই আর পড়ার বই পাওয়া যায় এখানে। উফফ, ভারি গরম লাগছে, লাল পুলওভারটা খুলে সেটা বেঁধে নিলাম কোমরে। নিচের সাদা জামাটা একটু পুরনো, হোক গে, গরম থেকে তো বাঁচি একটু। আরেকটা স্টলে ঢুকলাম, ওমা, এটা দেখি একদম একটা মন্দিরের মত সাজানো, ঠাকুরের ছবি, ধূপধূনা জ্বলছে, বিক্রিও হচ্ছে শুধু ঠাকুরের বই। এই দ্যাখো, বাবা তো ঠাকুরদেবতার কথা শুনলেই চটে যায়, তাই এই স্টলে আমায় নিয়ে আসেনি। কিন্তু মা বলেছে, ঠাকুর-দেবতার ছবি দেখলেই নমস্কার করতে। আমি দুহাত জোড় করে চোখ বুজে দাঁড়াই ঠাকুরের ছবির সামনে।
তারপর বেরিয়ে এসে আবার দাঁড়াই সেই দেব সাহিত্য কুটিরের সামনে। কিন্তু বাবা কোথায়? বাবাকে তো দেখতে পাচ্ছিনা! আমি আর কতক্ষণ এইখানে দাঁড়াবো? বাবি, তুমি কোথায়? আচ্ছা, আমি কি হারিয়ে গেলাম?
আমি নিজেকে জিজ্ঞাসা করি এক এক করে যে হারিয়ে গেলে কি করতে হয়। আমার পকেটে অল্প একটু পয়সা আছে। বাসের টিকিট কাটতে পারবো। বাসে ওঠবার আগে একটু জেনে নেবো সেই বাস ঢাকুরিয়া যাবে কিনা। তাহলে? খুব সোজা, হারিয়ে তুমি যাওনি নন্দিনী ! আমি নিজেকে নিজে বলি, মনে মনে সাহস দি, এগিয়ে গিয়ে খুঁজবো বের হবার গেট কোনটা, আরেকবার ভাবি, বাসস্ট্যান্ড খুঁজে না পেলে রাস্তায় কোনও পুলিশকে জিজ্ঞাসা করবো। কিন্তু বাবা কোথায় গেলো? এইটা ভেবেই আমার একটু একটু কান্না পেতে থাকে। আমি তো হারাইনি, কিন্তু বাবা কি হারিয়ে গেলো? যাই একটু নাহয় বাবাকে খুঁজি, তারপর মেলা থেকে বেরোবার গেট খুঁজবো।
আমি ঢুকে যাই আবার দেব সাহিত্য কুটিরের স্টলে। নাহ, কোথাও বাবা নেই, ভিড়টাও ততটা নেই, যে আমি বাবাকে খুঁজে পাবো না। বেরিয়ে আসি, মেলায় সানাই বন্ধ হয়ে গেছে অনেকক্ষণ; কিন্তু কে একটা হারিয়ে গেছে, তাকে ডাকছে মেলার অফিস থেকে। বলছে একটা বাচ্চা মেয়ে হারিয়ে গেছে, ক্লাস থ্রির বাচ্চা, পরনে লাল পুলওভার, আকাশী প্যান্ট, পায়ে বাটার স্নিকার, নাম নন্দিনী বন্দ্যোপাধ্যায়।
এই মেরেছে, সবকিছুই তো আমার সঙ্গে মিলে যাচ্ছে, তাহলে কি আমিই হারিয়ে গেছি? আচ্ছা, হারিয়ে গেলে কি করা উচিত? আমি এত ছোট নই যে ডাক ছেড়ে কাঁদবো। আমি পায়ে পায়ে এগিয়ে যাই একটা স্টলের সামনে দাঁড়ানো একজন মহিলার দিকে। কি সুন্দর দেখতে, কতকটা আমাদের ক্লাসটিচার বীণাদির মত। গিয়ে বলি, ‘এক্সকিউজ মি আন্টি, একটু শুনবেন?’ ভদ্রমহিলা চোখ তুলে তাকান, চশমার ফ্রেমটাও বীণাদির চশমার ফ্রেমের মত। আমি বলে উঠি, ‘ঐ যে মাইকে নাম এনাউন্স করছে না, ওটা না আমার নাম, আসলে আমি না--- আমার বাবাকে খুঁজে পাচ্ছিনা, প্লিজ আমাকে একটু হেল্প করবেন?’ ভদ্রমহিলা কিরকম যেন চমকে উঠলেন, তারপর বললেন ‘ওঃ আচ্ছা, আচ্ছা, বুঝতে পেরেছি, এই এনাউন্সমেণ্ট গিল্ডের অফিস থেকে করা হচ্ছে, সম্ভবতঃ তোমার বাবা ঐখানেই আছেন’।
ভদ্রমহিলার সঙ্গে বোধহয় ওনার স্বামী ছিলেন, তিনিও বললেন, ‘হ্যাঁ, তাই হবে, চলো, তোমাকে আমরা গিল্ডের অফিসে নিয়ে যাই’। ওরা দুজন দুদিক থেকে এসে আমার হাত ধরেন, এবার আমি একটু ঘাবড়ে যাই। আচ্ছা এরা আবার ছেলেধরা নয়তো? আমাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে না তো? আমি বহুদিন রাস্তায় বেরোলে হাত ধরিনা। আজ বাবা বারে বারে হাত ধরে থাকছিল বলে আমার ভারি রাগ হচ্ছিল। এখন আবার এরা আমায় হাত ধরে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে ভিড় ঠেলে, আর বলছে ‘খুকি, কিচ্ছু চিন্তা করোনা, কোনও ভয় নেই’। দুত্তোর, আমি খুকি হতে যাবো কেন? খুকি তো ঠাম্মার ডাকনাম। মাসিঠাম্মা, মানে ঠাম্মার দিদি যখন আসে আমাদের বাড়ি, তখন ডাকে,---‘ও খুকি, আয়রে রেঙ্গুনের গপ্পো করি, ও খুকি আয়রে তোর মাথায় তেল দিয়া দিই’। মাসিঠাম্মা খালি ‘খুকি, খুকি’ করে আর মা মুখে আঁচল চাপা দেয়। কিন্তু আমি বাবার কথা ভাবছি তাই এদের বলতেও পারিনা যে আমার নাম খুকি নয়, আমার নাম নন্দিনী।
একটু পরে আমরা মেলায় একটা প্যান্ড্যালে এসে দাঁড়ালাম। ঐ তো, আমি দীপককাকুকে দেখতে পাচ্ছি। দীপককাকু খুব লম্বা, সবাইকে ছাড়িয়ে দীপককাকুকে দেখতে পাচ্ছি, কিন্তু বাবাকে দেখতে পাচ্ছিনা। বাবা কোথায়? আমি ওনাদের হাত ছাড়িয়ে ছুটে যাই দীপককাকুর দিকে। দীপককাকুও আমাকে দেখতে পেয়ে একটা চীৎকার করে উঠলো, ‘আরে, এই তো, এই তো, পাওয়া গেছে, পাওয়া গেছে’। আমি কিচ্ছু বুঝে উঠতে পারিনা, আমি বলতে থাকি দীপককাকুকে, ‘কিন্তু বাবা কোথায়? তুমি কি বাবাকে দেখেছো?’ এমন সময় বাবা ভিড়ের মধ্যে থেকে ছুটে আসে আমার দিকে, ভীষণ রেগে গিয়েছে বাবা, বুঝতে পারছি আমি।
বাবা এত রেগে গিয়েছে যে চশমার মধ্য দিয়ে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে, কোনও কথা বলছেনা, একটাও কথা বলছেনা আমার সঙ্গে। বাবা শক্ত করে আমার ডানহাতটা ধরে আছে, এবার আমার সত্যি কান্না পাচ্ছে। আমি মনে মনে বলি ‘বাবি, প্লিজ আমার সঙ্গে কথা বল। আমাকে বকা দাও ভুল করে থাকলে, কিন্তু কথা বল’। বাবা কিচ্ছু বলেনা, ভিড় ঠেলে বেরিয়ে আসে আমাকে নিয়ে, আমি যে ভদ্রমহিলা আর ভদ্রলোকের সঙ্গে গিল্ডের অফিস অবধি গিয়েছিলাম তাদের ধন্যবাদ জানায়, তাদের সঙ্গে আর দীপককাকুর সঙ্গে অনেক কথা বলতে থাকে, তাদের ঠিকানাও নেয়, কিন্তু আমার সঙ্গে একটাও কথা বলে না।
আমাকে শক্ত করে ধরে নিয়ে বাবা বেরিয়ে আসে মেলা থেকে, পিছনে পড়ে থাকে বইয়ের উৎসব, জ্ঞানের পসরা। দীপককাকু উত্তর কলকাতায় যাবে। আমরা দক্ষিণের বাসে উঠি। আমি বাসের জানালার সিটে বসি, বাবাও বসে আমার পাশে। আমি আস্তে আস্তে বাবার হাত ধরে ঝাঁকুনি দিই, বাবা কথা বলেনা। শীতের হাওয়ায় বাবার চুল উড়ছে, বাবা বাইরে সন্ধ্যার অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে আছে। বাবা চশমাটা খুলে আমাকে জড়িয়ে ধরে। বাবার ঝোলায় নতুন বইয়ের গন্ধ, বাবার গালের আফটারশেভ লোশনের গন্ধ সব মিলেমিশে যাচ্ছে। আমি কাঁদছি আর বলছি, ‘আয়াম সরি, বাবি, আর কখনও তোমার অবাধ্য হবো না’।
এখনও এই শীতের সন্ধ্যার অন্ধকার, বইমেলার নতুন বইয়ের গন্ধ, এই সবকিছুর মধ্যেই বোধহয় রয়ে গেছে আমার বাবার আদর, আলিঙ্গন। বাবা চলে গেছেন আজ ঠিক আট বছর হল, এই লেখা শেষ করছি ১০ই জানুয়ারি, ২০১৫ -- আজই বাবার মৃত্যুদিন। ভাল থেকো বাবি, নতুন বইয়ের গন্ধে আমাকে জড়িয়ে ধরে থেকো।